নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অর্ণব

কাল মানব

কাল মানব › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিমু ও নীল খাম

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:০৭

(রিপোস্ট)"হিমু ও নীল খাম"
তারিখ-১৩ ফ্রেব্রুয়ারী।সময় রাত
১১.৪৫।মারুফ মামার দোকানের চা টা
খেয়ে অর্থাৎ গলদকরনই বলা যায়।ওটা
করে গেলাম মিসির আলী সাহেবের
বাসায়।ঘরের দরজা খোলাই ছিলো।
গিয়ে দেখলাম ঘরের ভিতরে পুর্ব
দিক করে চেয়ারে হেলান দিয়ে
সিগারেটে হেলান দিয়ে কি যেন
ভাবছেন।আমাকে দেখেও কোন
ভাবান্তর হল না তার। তাঁকে দেখে
কেমন জানি বিপর্যস্ত মনে হচ্ছে।
বোঝা যাচ্ছে ভয়ংকর কোন রহস্যে
আটকা পরেছেন।কোন ভাবেই সেই
রহস্য ভেদ করতে পারছেন না।
কয়েকদিন ধরে রুপার কথা খুব মনে
পড়ছে।অনেকদিন রুপাদের বাসায়
যাওয়া হয় না। ভেবেছিলাম একবার
গিয়ে দেখে আসবো। তাঁর বাবার
কথা ভেবে যাওয়া হয়নি।লোকটা
আমাকে সহ্য করতে পারেনা।আমাকে
দেখলেই তাঁর মাথা গরম হয়ে যায়।
রুটি বেলে মাথায় রাখলে রুটি
ভাজা হয়ে যাবে, অনেকটা সেইরকম
গরম।আমি উপস্থিত হয়ে গরমের মাত্রা
আরো বাড়াতে ইচ্ছে হলনা।তাই
যাওয়া হয়নি। সেই জন্যে মন ভিষন
খারাপ। যাকে বলে ভয়াবহ টাইপের।
এমন ভয়াবহ মন খারাপ কখনো ছিলনা।
আজ বিকেলে আমি এই নিয়ে অনেক
ভেবেছি।মন ভালো করার জন্য।কিন্তু
কিছুতেই পারছি না।তার মন খারাপ
হওয়ার কোনই কারণ নেই।তখন হঠাত
বাবার লেখা ডায়েরীর কথা মনে
পড়ল।তিনি ডায়রীতে লিখে
গিয়েছিলেন, "বাবা হিমু,জগতে
চলার পথে তুমি নানা মায়ার বন্ধন
দেখিতে পাইবে।কিন্তু সাবধান,
মায়াতে জড়াইবে না।মনে রাখিবে
মহাপুরুষেরা মায়ামুক্ত।তোমাকেও
মায়ামুক্ত হইতে হবে।প্রকৃতি চলিবে
তার নিজস্ব নিয়মে।সেই নিয়ম নিয়া
কখনও উদ্বিগ্ন হইবে না।তুমি হইবে
সর্বপ্রকার দুশ্চিন্তামুক্ত,মায়ামুক্ত।
অন্যথায় একটা পশুর সহিত তোমার কোন
প্রভেদ থাকিবে না।" কিন্তু আমি
কিছুতেই দুশ্চিন্তা দূর করতে পারছি
না।রুপার কাজল চোখ দুটি আমার
বারবার মনে পড়ছে।
বুঝতে পারলাম আমি এখনো মায়ামুক্ত
হতে পারিনি।হয়তো আমি মহাপুরুষ
হতে পারবো না।মিসির আলী
সাহেবের কাছে এখন জিজ্ঞাসা
করলে তিনি হয়তো বলবেন,"তোমার
অবচেতন মন রুপাকে ভালোবাসে"।
কিন্তু এই যুক্তি টা বুঝতে পারি না
আমি। আমি বোঝার চেষ্টা চালিয়ে
যাই। লাভ হয় না।হওয়ার সম্ভাবনাও
নেই।ইদানিং আমি সবকিছু কেমন
যেনো গোলমাল পাকিয়ে ফেলছি।
কেন জানি মনে হয় মহাপুরুষ হওয়া
আমার পক্ষে সম্ভব নয়।জানালা দিয়ে
বাইরে তাকিয়ে দেখলাম হলুদ রঙের
জোছনা যেন থইথই করছে।কিছুদিন
আগে নীল জোছনায় হাঠাহাঠি
করেছিলাম কিন্তু হলুদ জোছনা এর
আগে কখনও দেখিনি।খানিক্টা অবাক
হলাম।তারপরই আবার মনে মনে
বললাম,কোন কিছুতে অবাক হতে নেই-
প্রকৃতি চলবে তার নিজস্ব নিয়মে।
মিসির আলী সাহেব এখন গভীর
ধ্যানে আছেন।আমি অপেক্ষায় আছি
ধ্যান ভাঙার জন্যে। উনি ধ্যান করুক
আমি বরং রুপার কথা ভাবি।ইদানিং
রুপার কথা অনেক বেশি ভাবছি।
ভাবতেও ভালো লাগে।কেন এমন
হচ্ছে জানিনা। মিসির আলী
সাহেবকে জিজ্ঞেস করে এর রহস্য
বের করতে হবে। আগে কখনো এমন
হতো না। ইচ্ছে করলেই ভুলে থাকতে
পারতাম। এখন পারিনা। কেন
পারিনা তা জানিনা। জানার
ইচ্ছেও হয় না। আমি নিশ্চিত, আমাকে
মহাপুরুষ বানানোর জন্যে বাবা যে
ডাইরি রেখে গেছেন সেখানে এই
সম্পর্কে কোন সূত্র আছে। কিন্তু
প্রব্লেম হলো বাবার রেখে যাওয়া
ডাইরিটা সংগে নিয়ে আসি নি।
আমি উনাকে ধ্যানে রেখেই
বেড়িয়ে পড়লাম।
অনেক দিন পর মধ্য রাতে বিজয় সরণীর
রাস্তা ধরে হাঁটছি। কোন উদ্দেশ্য
নেই। খুব জানতে ইচ্ছে করছে রুপার
কেমন আছে। জানতে
পারলে ভালো হতো। একটা টেনশন
থেকে অন্তত মুক্তি পাওয়া যেত। এই
মেয়েটাকে এই মুহুর্তে ভুলে থাকার
চেষ্টা করছি। কিন্তু পারছি না।এমনটা
আগে হয়নি। আগে ইচ্ছে করলেই
পারতাম। যতই চেষ্টা করছি ততবেশী
মনে পরছে।রুপা মেয়েটি আমাকে
অনেক ভালবাসে। এ পর্যন্ত যতগুলো
মেযে আমাকে ভালবেসেছে
তাদের মধ্যে সবছে বেশি ভালবাসে
রুপা। আমি যে ভালবাসিনা তা না।
আমিও বাসি। তবে রুপাকে কখনো
বুঝতে দেইনি। মহাপুরুষদের রমনীর
প্রেমে পরতে নেই। আমার বাবার
যতগুলো কঠিন আদেশ ছিল তার মধ্যে
এটি ছিল অন্যতম। আমার বাবা তার
ডাইরিতে লিখে যাওয়া এই কথাটি
মনে আছে।তিনি লিখে গেছেনঃ
"রমনীর প্রেমের আকর্ষণ পৃথিবীর অন্যসব
বস্তুর আকর্ষণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক
বেশি।যে এই আকর্ষণ ক্ষমতা থেকে
মুক্ত থাকতে পারবে তার পক্ষে
মহাপুরুষ হওয়ার সম্ভাবনা ততবেশী”।
ঢাকার কৃত্রিম আলোর মাঝে
জোৎস্না দেখা যায়না। সোডিয়াম
বাতির আলোয় সবকিছু হলুদ হয়ে আছে।
রাস্তার ধারের
গাছপালা,পিচঢালা পথ, পাশের
বিল্ডিং,আমার গায়ের রং সবকিছুই।
হলুদ পাঞ্জাবিতে আরো বেশি হলুদ
লাগছে। রাত কয়টা বাজে জানিনা।
একটু জানতে পারলে ভালো হত।
কাউকে পাচ্ছিনা সময় জানার মত।
রুপার দেয়া হলুদ পাঞ্জাবি গায়ে।
পকেট শুভ্রর চশমা।সাধারণত আমার
পাঞ্জাবির পকেট থাকেনা। কিন্তু
এই পাঞ্জাবির পকেট আছে। টাকাও
ছিলো, খরচ হয়ে গেছে।এখন কোথাই
যাবো বুঝতে পারছিনা।জোছনা
দেখতে গেলে কেমন হয়?জোছনা
দেখতে হলে নির্জন কোথাও যেতে
হবে। নুহাশ পল্লীর মতো নির্জন
কোথাও। সাদা জোছনায় জোনাকি
পোকা উড়ছে। সাথে রুপা থাকলে
ভালো হতো। আচ্ছা দুজনে মিলে
জোছনা স্নান করলে কেমন হতো? কি
আশ্চর্য আমি কল্পনা করতে পারছি।রুপা
আমার হাত ধরে গায়ে হেলান দিয়ে
বসে আছে। চারপাশে অজস্র
জোনাকি পোকা উরছে। জোনাকি
পোকাগুলা মাঝে মাঝে আমাদের
গায়ে চুমু দিয়ে যাচ্ছে।
সাদা রংগের একটি গাড়ি আমার
পাশে এসে দাঁড়াল। গাড়ির দিকে
আমার মন নেই। ভাবছিও না। এখন আমার
রুপার কথা ভাবতে ভালো লাগছে।
আমি এখন রুপাকে নিয়ে থাকতে চাই।
---এই ছেলে তুমি এতো রাতে এখানে
কি করছো?ঘাড় ঘুরিয়ে বাকের ভাই
কে দেখতে পাচ্ছি। আমি তাকে
দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। আমি
কিছু বলার আগেই আবার বললেনঃ
---তোমাকে আমি সারা ঢাকা
খোঁজে বেড়াবো কেন? তুমি কি
পেয়েছ? হ্যাঁ?
বাকের ভাই আমাকে ধমকাচ্ছেন।আমি
আস্তে আস্তে বললাম-
---আমি আবার কি করেছি বাকের
ভাই?
--তুমি কি করোনি? তুমি কি ভেবেছ
পাগলামি করে মহাপুরুষ হবা? আজ
তোমার মহাপুরুষ গিরি আমি ছুটায়ে
দিবো।থাবরায়ে দাঁত ফেলে দিব।
ফাজিল কোথাকার।সবাই বাকের
ভাইকে প্রচন্ড ভয় পায়।কেন ভয় পায়
জানি না। আমি কখনো উনাকে ভয়ন্কর
রুপে দেখিনি। আজকে বাকের
ভাইকে অনেক ভয়ন্কর দেখাচ্ছে। মনে
হচ্ছে আমার উপর প্রচন্ড ক্ষেপে আছে।
কেন ক্ষেপে আছেন ধরতে পারছিনা।
আমি অপ্রকৃতস্থ ভাবে দাঁড়িয়ে
রয়েছি।বুঝতে পারছিনা কি করবো।
কেনইবা বাকের ভাই আমার উপর
রেগে আছেন।বুঝতে পারলে রিলেক্স
হওয়া যেতো। তার কোন উপায় নেই।
বাকের ভাই আমাকে সেই সুযোগ
দিচ্ছেন না। আমি কোন কথা বললাম
না।উনি আবার বললেন
-এই খাম টা নাও।
ভয়ন্কর টাইপ মানুষের সাথে যত বেশি
কথা বলা যায় ততো বিপদে পরার
চান্স থাকে। কথা যত কম বলা যায়
বিপদে পরার চান্স তত কম।আমি
তাড়াতাড়ি খাম টা হাতে নিলাম।
খাম টা নীল রঙের।ভেতরে একটি
চিঠি।বাকের ভাই গাড়ি নিয়ে চলে
গেলেন।মাথা কেমন যেন ভন ভন
করছে। কিছুই বুঝতে পারছিনা।খামটা
কাপা কাপা হাতে খুললাম।চিঠি টা
খুলে দেখি রুপার হাতের লিখা।সে
আমাকে লিখেছে।
"প্রিয় হিমু ভাই,
আপনি কি ভেবেছেন আপনি মহাপুরুষ
হতে পারবেন?আপনি মহাপুরুষ নন।আপনি
হিমু।আপনি জানেন আপনাকে কতটা
আমি পছন্দ করি। আপনি ভেবেছেনটা
কি? আমাকে সবসময় এভাবে কষ্ট
দিবেন? আপনার সবকিছু আমি সহ্য
করবো?"
এরপরের অনেকটা অংশ খালি।খালি
কেন?হয়তো পত্রটি লেখার সময় রুপা
কেদেছিলো। এই পাগলি মেয়েটার
এই এক স্বভাব, আমাকে একটুবকা দিয়েই
অঝোরে কাঁদবে।পত্রের পাতার
শেষের দিকে লেখা "হিমু ভাই আমি
আপনাকে ভালোবাসি।হয়তো আপনি
আমাকে ভালোবাসেন না।কিন্তু
আমি জানি আপনার মনের কোনায়
একটু করে আমার জন্যে ভালোবাসা
আছে।আমি আপনাকে অনেক বেশি
ভালোবাসি,হিমু ভাই।
ইতি
আপনারই
রুপা।"
হঠাত আমার চোখ দিয়েও পানি
পরছে।আমার তো কাঁদার কথা না।
জীবনে কখনো কি আমি কেঁদেছি?
মনে পরছে না। আমি রাস্তায়
সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।আমার
কাছে মনে হচ্ছে আমি কোন কষ্ট
পাচ্ছিনা। আমার কষ্ট পাবার কথা।
মহাপুরুষদের কারো জন্য কোন পিছুটান
থাকার কথা না।কোন রমনীর জন্য
ভালবাসাও থাকার কথা না। কিন্তু
কি আশ্চর্য এই মুহুর্তে আমার আনন্দ হচ্ছে।
সোডিয়াম বাতির হলুদ আলোও
জোছনার মতো লাগছে। এতোক্ষণ
আশপাশের কোথাও জোনাকি
পোকা দেখিনি। কি আশ্চর্য দুটি
জোনাকি পোকাও পাশ দিয়ে উড়ে
গেলো।হঠাত দেখলাম সামনে একটি
মেয়েমূর্তি দাঁড়িয়ে আছে।এইতো
রুপা না,হ্যা এইতো রুপা।সামনে
এগিয়ে গেলাম।রুপা কাদছে।আমি
কিছু বলতে পারছি না। শুধু রুপাকে
দেখছি। মনে হচ্ছে বিয়ের সাজ।
পরনে নীল শাড়ি।আমার প্রিয় রঙ।রুপা
আমার দিকে আস্তে আস্তে চোখ
মেলে তাকাল।আমি হঠাত নিজেকে
অবাক করে দিয়ে বলে ফেললাম,রুপা
আমি তোমায় ভালোবাসি।আমি
রুপার দিকে তাকিয়ে রয়েছি।তার
চোখে এখন দেখছি আনন্দ অশ্রু।আমি
দেখতে পাচ্ছি রুপার ঠুটের কিনারায়
মোনালিসার হাসির মতো একবিন্দু
হাসি।হাতে নিয়ে সেই নীল খাম।
তারিখ-১৪ই ফ্রেব্রুয়ারী,সময়-রাত ২.২০।
(হুমায়ূন আহমেদ স্যারের কাছে ক্ষমা
প্রার্থনা করে লিখেছি।হিমুকে
অনেক বছর ধরে একা দেখছিলাম তাই
আর ভালো লাগছিলো না।তাই সেই
একাকীত্ব আমি কিছুটা কাল্পনিক
ভাবে দূর করলাম)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৫:১৫

দেবজ্যোতিকাজল বলেছেন: ভাল লাগল

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১:০৫

কাল মানব বলেছেন: ধন্যযোগ

২| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৪১

প্রামানিক বলেছেন: ভালো লাগল।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:২৮

কাল মানব বলেছেন: ধন্যযোগ প্রামাণিক ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.