নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি কবি। কবিতা লিখি আর মানুষের সুন্দর কবিতা গুলো দেখে হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছাই হই।

রুবাইয়াত নেওয়াজ

কবিতা লিখি গান গাই মাঝে মাঝে গীটার বাজাই

রুবাইয়াত নেওয়াজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হ্যাপী ভ্যালেনটাইনস ডে

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৩৫

কণার মন খারাপ, সকাল থেকে সাজ্জাদ একবারও কথা বলে নি, ফোন নিয়েই ব্যাস্ত। নতুন ব্যাবসা নতুন ক্লায়েন্ট। সাজ্জাদকেও দোষ দিয়ে লাভ নেই, সংসারে সমস্ত দায়িত্ব তার, বাবা মা, ছোট ভাই বোন সবার চোখ সাজ্জাদের দিকে চেয়ে থাকে মাস ফুরোনোর আগেই। কণা সব বোঝে। কখনও সাজ্জাদকে এ নিয়ে কোন যন্ত্রণা করে না। কিন্তু কণারও ইচ্ছে হয় সাজ্জাদের সাথে কোথাও বেড়াতে যেতে, পার্কে বেঞ্চিতে বসে গল্প করতে। কিন্তু সেটুকু সময়ও সে পায় না ।সাজ্জাদের অনেক দায়িত্ব মাঝে তার এই তুচ্ছ চাওয়া সে লুকিয়ে রাখে। মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস হয়ে বের হয়।আজ সকালে উঠেই কণা পাট ভাঙা লাল সবুজ তাতের শাড়ি পরেছে। কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ আর চোখে কাজল, খুব সামান্য সাজ, কিন্তু কণা জানে তাকে অসাধারণ লাগছে। তার এই অসাধারণ সাজের কারণ আজ সকালেই কণা জানতে পেরেছে যে তাদের সংসারে নতুন মানুষ আসছে। এই দায়িত্বের মাঝে নতুন এক মানুষের দায়িত্ব হয়তো কিছু বেশী, কিন্তু তারপরও মানুষটা তো চলে এসেছে, আজ ভালোবাসা দিবস, তাদের মত মানুষের কাছে ভালোবাসা দিবসের বিলাসিতা নেই, তাতে কী মানুষের আনন্দে নিজের মাঝেও কোথাও যেন আনন্দের বান ডাকে। আজকেই কণা সাজ্জাদকে জানাবে।

গত কয়েকদিন ধরেই সাজ্জাদ খুব চিন্তিত থাকে সারাক্ষণ কাদের সাথে যেন কথা বলে, এবারের ব্যাবসাটা বেশ বড়, অনেক টাকা লগ্নি হয়ে গেছে, মার্কেটে অনেক ধার দেনাও করতে হয়েছে, কিন্তু শীপমেন্টটা ডেলিভারী হয়ে গেলেই এক ধাক্কায় ব্যাবসা অনেক দূর এগিয়ে যাবে। রাতে ঘুম কম হয়, পাওনাদারেরা সব সময় ফোনে কুশলাদি বিনিময় করে, এর অর্থ একটাই আমরা আছি, আমরা পাশে পাশে আছি। বেনাপোল সীমান্তে তার এক ট্রাক মালামাল আটকে ছিল, হরতালে আসতে পারছিল, আজ হরতাল নেই, ট্রাক রওয়ানা হয়েছে। অবশ্য সাথে সাজ্জাদের ছোটবেলার বন্ধু আর এখনকার ব্যাবসার পার্টনার টিপুও আছে। টিপুর টেনশান আরও বেশী সে প্রোডাক্ট হাত ছাড়া করতেই নারাজ একদম্, দিল্লী থেকে কিনে নিজে নিজে গাড়ি বহর করে ফিরছে। টিপু পাগলাটে ভালো মানুষ ধরণের, সব কিছুতেই উত্তেজিত, ওর বৌটা আবার শান্ত শিষ্ট মিষ্টি একটা মেয়ে। ওদের একটা ছোট্ট মেয়ে আছে, নাম রিহা, টিপুর বাবা মা নেই অনেক দিন আগেই মারা গেছে। পরিবার বলতে ছোট ভাই মেডিকেলে পড়ে, বৌ আর ছোট্ট মেয়ে রিহা। সাজ্জাদ যখন টিপুদের বাসায় যায়, ওকে দেখে রিহা চার দাঁত বের করে গা গা করে হাসে আর নিজের মনেই খেলে। বড় মায়া কাড়া। সাজ্জাদেরও ইচ্ছে হয় তারও এমন একটা ফুটফুটে মেয়ে থাকবে, কোলে বুকে থাকবে, খিল খিল করে হাসবে, কিন্তু এখন এই অবস্থায় সেটা সম্ভব না্, সাজ্জাদের মাথার উপর অনেক প্রেশার মার্কেটে অনেক দেনা, এই শীপমেন্টটা ভালো ভাবে করে দিতে পারলেই জীবনটা অন্য রকম হয়ে যাবে। এমন সময় মোবাইল বেজে ওঠে টিপুর ফোন, উচ্ছোসিত কণ্ঠে টিপু বলে - দোস্ত বর্ডার পার কইরা ফেলছি এই তো দশটার মধ্যে কমলাপুর, তুই রিহার মা য়েরে জানায় দে, আমার মোবাইলে বেশী চার্জ নাই। বলেই খট করে ফোন রেখে দেয়। পাগলা টিপু মনে মনে ভাবে সাজ্জাদ।

সকালবেলায় কণাকে শাড়িতে দেখে মন ভালো হয়ে গেছে সাজ্জাদের। মেয়েটা কী চমতকার, ওর দিকে শুধু তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে, সাধারণ সাজেও রূপ কী অসম্ভব সুন্দর ভাবে ফুটে উঠেছে। মনে হচ্ছে যেন স্বর্গের দেবী, তবে কণার শরীর টা একটু রোগা হয়ে গেছে, ওর কোন খোজ নেয়া হয় না, এত ব্যাস্ততা। একটাবার ব্যাবসাটা দাঁড়িয়ে গেলেই সব ঠিক হয়ে যাবে, মনে মনে ভাবে সাজ্জাদ। কণা কে নিয়ে দেশের বাইরে যাবে বেড়াতে, তবে সবার আগে যাবে কক্সবাজার কণা এখনও সমূদ্র দেখে নি। সাজ্জাদ ওকে নিয়ে যাবে।

সাজ্জাদের ফোন বেজে উঠল, টিপুর ফোন। ওহহো ওর বৌটাকে জানানো হয় নি, ভুল হয়ে গেছে। ভাবতে ভাবতে ফোন ধরে বল্ল হ্যালো টিপু?? ওপাশ থেকে অপরিচিত কণ্ঠ আর খুব আওয়াজ আর কোলাহল, বুকটা ছ্যাত করে উঠল সাজ্জাদের। কন্ঠ স্বরটি খুব চিতকার করে বলতে থাকল, সাজ্জাদ সাহেব বলছেন?? সাজ্জাদ সাহেব?? এই মোবাইল যার সে যেই গাড়িতে ছিল সেইটাতে বোমা মারছে, উনি আর ড্রাইভার পুইরা মারা গেছে। সাথে আরও দুইটা বাস পুরাইছে। অনেক জখম। আপনি আসেন, আর নইলে উনার আত্মিয় স্বজনরে খবর দেন। সাজ্জাদ বিছানায় বসে পরল। হাত থেকে ফোন পরে গেল, পাশেই কণা ছিল, দৌড়ে এসে জিজ্ঞাসা করল কী হয়েছে কী হয়েছে? সাজ্জাদ কণার দিকে তাকালো ওর চোখ ভর্তি পানি। কণাকে বল্ল কণা সব শেষ, টিপু নাই। কণা বসে পরল।

সাজ্জাদ নিজেকে সামলে শার্ট গায়ে চোখ মুছতে মুছতে বের হয়ে গেল, পেছন থেকে মা চিতকার করে ডাকল বাবা নাস্তা খেলি না?

কণা চুপ করে বসে রইল, তার বুকটা ভেঙে যাচ্ছে। সে জানে এই অবস্থায় আর নতুন মানুষ আনা যাবে না। তাকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তাদের সব শেষ হয়ে গেছে, সাজ্জাদ হয়তো সামলে উঠতে পারবে না। কণা কাঁদতে থাকল, কান্না শেষ করেই সে যাবে পাশের মাজেদা ক্লিনিকে, আগেও দুইবার গিয়েছে কী করতে হয় সে জানে। খুব সাধারণ, কষ্টহীন একটা কাজ। কণা নিজেকে সময় দিল, কাঁদতে থাকল আর মনে মনে চাইতে থাকল কান্নাটা যেন খুব তাড়াতাড়ি থেমে না যায়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.