![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি এখনও পড়াশুনা করছি। তার সাথে বেশ কিছু দিন ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছি। বাবা মায়ের ছোট ছেলে। ঘোরাঘুরি এবং খাওয়া দাওয়া করতে বেশ পছন্দ করি।
বাংলাদেশের প্রতিটা স্টেশনই ধান্দাবাজদের বিরাট জায়গা। যেই স্টেশন যত বড় ধান্দাবাজির পরিমাণও তত বড়। কমলাপুর এদিক দিয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে। হরেক রকমের মানুষ, হরেক রকমের ধান্দা। কারোর ভালো, কারোর মন্দ। ধান্দা ধান্দাই।
ঈদের পরের ঢাকা শহর এখন আর নেই। আবার সেই চিরচেনা রূপ। রাস্তাঘাটের যানজটও পুরনো রূপে। এই যানজটের শহরে বাসে করে সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌছুনো এখন রূপকথা। কেবল ট্রেনেই সেই রূপকথার কিছুটা দেখা মেলে। সকাল সকাল জয়দেবপুর স্টেশন থেকে একতা এক্সপ্রেসে কমলাপুর গেলাম। ভাগ্য ভাল থাকায় টাইমলিই স্টেশনে পৌছালাম। সিটসহ টিকিট কাটা ছিল, তাই টিটিরা কোন ধান্দা করতে পারেনি। স্টেশন থেকে বের হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছি বাসের জন্য। একজন পুলিশ অফিসার, দেখতে শুনতে বেশ তাগড়া। যেমন লম্বা, তেমনি বডি ফিটনেস। চেহারাটাও একেবারে ফিল্মের হিরোর মতো। তাঁর এমন হিরো হিরো টাইপ চেহারার সামনে আমার উষ্কো-খুষ্কো চুল আর পাগলাটে দাঁড়িতে নিজেকে রীতিমত ব্যাক্কল ব্যাক্কল লাগছিল। সিনেমার হিরোরা যেভাবে ভিলেনের দিকে এগিয়ে আসে, তিনি সেভাবে না এসে, বেশ ঠাণ্ডা ভঙ্গিতে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন,
-নাম কি?
-সার্জিল।
-এটা কি নাম?
-মুসলমান নাম।
-মানে কি?
-জানি না।
-কে রাখছে?
-নানা।
-মুখে দাঁড়ি কেন? নাকি এটাও নানাই রেখে দিয়েছে?
-বলতে পারেন, আমার নানা-দাদা দুইজনেরই বেশ বড় দাঁড়ি ছিল।
-ট্রেনে আসছেন?
-জ্বি।
-টিকিট কাটছেন?
-জ্বি (এই বলে আমি টিকিট পকেট থেকে বের করে দেখালাম। মনে মনে ভাবছি, টিটির সঙ্গেকার হাবিলদারের ডিউটি কি রাস্তার মাঝেও পড়লো নাকি?)
-বাসা কই?
-গাজীপুর।
-এখানে কি?
-পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি।
-সঙ্গে কাগজ পত্র আছে?
-আমি তো গাড়ি/বাইক চালাই না।
-না মানে পরীক্ষার কাগজ পত্র আছে?
-হ্যাঁ আছে।
-দেখান।
আমি ব্যাগ থেকে কাগজ পত্র বের করতে লাগলাম। অফিসার ওয়াকিটকিতে কান রাখলেন। খুব গুরুত্বপূর্ণ কোন তথ্য তাঁর কাছে আছে এবং তিনি সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজটি বেশ নিষ্ঠার সাথে করছেন বলেই জানালেন ওয়াকিটকিতে।
-এই যে নিন।
-হুমম। ছবিতেও দাঁড়ি। এখানেও দাঁড়ি। ডোন্ট মাইণ্ড শিবির করেন নাকি?
-ধর্ম বিশ্বাস নিয়েই মাঝে মাঝে কনফিউশনে পড়ি। কেন বলুন তো? (জান বাঁচানো ফরজ কাজ। ফরজ কাজের জন্য মিথ্যা বললেও তাতে ফরজ কাজ। ফরজ কাজ কেবল মুসলমানরাই করে।)
-না কিছু না। আচ্ছা একটু এদিকে আসেন।
এই বলে তিনি সামনে চলতে থাকলেন। আমি বাধ্য ছেলের মতো তাঁর পেছন পেছন যাচ্ছি। তিনি পুলিশ বুথের সামনে এসে থামলেন। পুরো পুলিশ বুথ ফাঁকা।
-আপনার মুখে দাঁড়ি কেন?
-একবার তো বলেছিই।
-একবার বললেই যে বারবার বলা যাবে না এমন না। যা জিজ্ঞেস করবো, স্ট্রেট জবাব দিবেন। আমাদের অনেক কাজ আছে।
-ঈদের আগে রেজারের ধার চলে গেছিল। হাজার টাকার কম রেজর ইউজ করি না। দশটাকা পাঁচ টাকার রেজর দিয়ে শেভ করলে গাল কেটে যায়। এরপর ঈদের চাঁদ উঠে গেল, সুন্নতের জন্য দাঁড়ি রেখে দিলাম। এরপর দেখলাম দাঁড়িতে ভালোই লাগে। তাই আর কাটলাম না।
-তো। দাঁড়ি কি আর কাটবেন না?
-না ভাবছি সন্ন্যাস নিব।
-কিসে পড়েন?
-ইঞ্জিনিয়ারিং।
-এই বয়সেই সন্ন্যাস নিবেন। বাকী জীবন তো পড়েই আছে। আগে পড়াশোনা শেষ করেন।
-দেখি। আজ আছি কাল নেই।
-আমরা চাকরী করি। সরকারি ডিউটি। আমরা বুঝি জীবন কি?
-জ্বি। জীবন সবাই বুঝতে পারে না, বুঝতে বুঝতেই জীবনের শেষ চলে আসে।
-রাইট। আপনি সন্ন্যাস হতে পারবেন। আপনার কথায় দার্শনিক দার্শনিক ভাব আছে।
-দোয়া করবেন।
-আমাদের জীবন যে কত কষ্টের, সেটা আপনারা কল্পনাও করতে পারবেন না। সারাদিন রোদ বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে ডিউটি করা লাগে। এরমাঝে আন্দোলন টান্দোলন হলে ঠিক নাই বাঁচি কি মরি। প্রতিদিন এত কাজের মাঝেও আপনাকে সময় দিলাম। পরামর্শ দিলাম। ভাল পরামর্শ।
-জ্বি, আপনি অনেক ভালো। দেখতেই বেশ ভালো মনে হয়। আজকাল কেউ ভালো পরামর্শ দেয় না।
-তো আমাদের দিকটাও বুঝতে হবে।
-জ্বি।
-সকালে নাস্তা করেছেন?
-না।
-চলেন দুই ভাই মিলে নাস্তা করে নেই।
-স্যরি, আমার যে সময় নেই। এক্সাম শুরু দশটায়। আপনি করে নিন।
-আরে ভদ্রতা রাখেন।
-জ্বি না আমার সিরিয়াসলি সময় নেই। আপনিই করে নিন।
-আচ্ছা। তাহলে আমিই নাস্তা করে নিচ্ছি।
নাস্তা করার অর্থ কি আমি বুঝতে পারছি। ইণ্ডাইরেক্টলি তিনি আমার কাছে নাস্তার বিল চাচ্ছেন। (ঘুষ বলা ঠিক হবে না) আমি তাঁর গুরুগম্ভীর কথার মর্মার্থ বুঝে উত্তর দিলাম,
-স্যরি আমার কাছে যে ভাংতি নেই।
-কিসের ভাংতি? আপনার কাছে ভাংতি চেয়েছে কে?
-মানে?
-মানে কিছু না। তেহারী ভালো লাগে না। গরুর মাংসে হাই প্রেশার হয়। চিকেন বিরিয়ানীই বেশি খাই।
-জ্বি। আচ্ছা আমার কাছে তো এখন মাত্র দুইশো টাকা আছে। বাকী টাকা অফিস থেকে বেতন তুলে দিব।
-কিসের বেতন? আপনি না স্টুডেন্ট?
-জ্বি, স্টুডেন্ট কাম জার্নালিস্ট।
-কোন পত্রিকার?
-প্রথম আলো। এসিস্টেন্ট ক্রাইম রিপোর্টার। গত সেপ্টেম্বরে জয়েনি করেছি।
-ও। (এই বলে তিনি পেটে হাত দিয়ে ঢেঁকুর তুললেন।)
-কি হল?
-কিছু না। পেটে গ্যাস ফর্ম করেছে। খেতে ইচ্ছে করছে না।
-আচ্ছা আমার কাছে লসেকটিল আছে, ভালো গ্যাসের ওষুধ।
-না থাক লাগবে না। আদা চাবিয়ে নিব।
-আচ্ছা ভাই আসি। একই লাইনের লোক তো প্রায়। আসা হবে প্রায়ই। আপনার ফোন নাম্বারটা দেন। এরপর এদিকে আসলে একসাথে বসে চিকেন বিরানী খাবো।
-01*********
-আচ্ছা ইব্রাহীম ভাই, আজ আসি।
-জ্বি জ্বি।
অফিসার ইব্রাহীম সাহেবকে পাশ কাটিয়ে আমি ছয় নম্বর বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। তিনি তাঁর ডিউটি পালনের জন্য আবারো ওয়াকিটকি হাতে নিলেন। তাঁর দৃষ্টি যে আমার দিকেই আছে, সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারছি। নেমপ্লেট দেখেই যে তাঁকে ইব্রাহীম ভাই ডেকেছি তিনি হয়তো বা ধরতে পারেননি। কিংবা ধরতে পারলেও আমি যে ধান্দাবাজি করেই পার পেয়েছি সেটা বুঝতে পারেননি। কে জানে? আমার ধান্দাবাজি বুঝতে পারলে হয়তো বা পকেটের দুইশো টাকার সাথে সাথে শিবির সন্দেহে কিংবা ইয়াবা ডিলার হিসেবে লক-আপে ভরে দিতেন। জায়গাটা কমলাপুর। স্টেশন মাত্রই ধান্দার জায়গা।
২| ৩১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৫৭
কাল্পনিক আমি বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:২০
পৌষ বলেছেন: পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ