নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এখনও পড়াশুনা করছি। তার সাথে বেশ কিছু দিন ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছি। বাবা মায়ের ছোট ছেলে। ঘোরাঘুরি এবং খাওয়া দাওয়া করতে বেশ পছন্দ করি।

কাল্পনিক আমি

আমি এখনও পড়াশুনা করছি। তার সাথে বেশ কিছু দিন ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছি। বাবা মায়ের ছোট ছেলে। ঘোরাঘুরি এবং খাওয়া দাওয়া করতে বেশ পছন্দ করি।

কাল্পনিক আমি › বিস্তারিত পোস্টঃ

পোশাক

০১ লা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১২:১৮

ডিবি অফিসার হানিফ বিরস মুখে তাকিয়ে আছে আদালতের বেঞ্চিতে। তার চেহারাটাই এমন যে কেউ প্রথম দেখাতেই বলত বাধ্য যে তার মাঝে কোন রসকষ নেই। পুলিশের চাকরী করলে মুখ হাসি হাসি করে রাখতে নেই। চোর-ছ্যাচ্চড়দের সাথে উঠা বসা। হাসি মুখ দেখলেই এরা মাথায় চড়ে বসতে পারে। তাই রাগী, বিরস মুখে থাকাটাকেই হানিফ বেঁছে নিয়েছে। এখন তার চেহারাই এমন হয়ে গেছে। হাসি হাসি মুখ করলেই চোয়াল ব্যাথা করে।



আজকের কেসটার সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু তবুও জজ সাহেব শাহাবুদ্দীন আহমেদের অনুরোধে সে এসেছে। দুই সপ্তাহ পর আজই প্রথম শাহাবুদ্দীন আহমেদ প্রথম আদালতে এসেছেন। দুই সপ্তাহ আগে একটা সিরিয়াল কিলারের ফাঁসির রায় দিয়েছিলেন। আসামীর নাম মানিক। সেঞ্চুরিয়ান মানিক। গুনে গুনে একশোটা খুন সে করবে বলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন খুনের পর একটা চিঠিতে লিখে দিত। পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য চিঠিগুলো সে লাশের হাতের তালুতে গুজে দিত। সবগুলো চিঠিই টাইপ করা। তবে মানিক একশোটা খুন করতে পারেনি। বিরাশিটা খুন করে ফিরবার সময় মোহাম্মদপুর থানার ওসির কাছে ধরা পড়ে যায় গত বছর নভেম্বরে। তার বিরাশি নম্বর খুনের টার্গেট ছিল গার্মেন্টস ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান। মাছের বিক্রেতা সেজে রহমান সাহেবের অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে তাকে মাছ কাটার বটি দিয়ে কুপিয়ে খুন করে। খুন শেষে হাতের রক্ত মুছলেও কপালে কয়েক ফোটা রক্ত বেজে ছিল। রক্ত যে কপালে লেগে ছিল তা মানিক জানতো না। কাজ শেষে হনহন করে মাছের খাচা মাথায় বয়ে বেড়িয়ে গেল অ্যাপার্টমেন্ট থেকে। লিফট বেয়ে নামতেই মেইন গেটের সামনে মোহাম্মদপুর থানার ওসি দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি অবশ্য খুনের খবর আগে থেকে পেয়েই সেখানে যাননি। রহমান সাহেবের সাথে তিনি অন্য কাজে এসেছিলেন। তবে মানিকের কপালে লেগে থাকা রক্ত দেখে কিছু একটা আঁচ করেছিলেন। কারণ মাছ বিক্রেতারা কাটা মাছ বিক্রি করে না। আবার ঘরে বসে কেটে দিয়ে আসলেও কপালে রক্ত লাগার কথা না। আর লাগলেও হাত পরিষ্কারের সময় আয়নাতে দেখে সেই রক্ত মুছে ফেলার কথা। কিন্তু আর একটাও যে হয়নি, তার সবই তিনি বুঝলেন কপালে রক্ত লেগে থাকার কারণে। তাহলে কপালে রক্ত আসব কোত্থেকে? তিনি মানিককে ডাকতেই মানিক কোন কথা না বলেই দৌড় দেয়। তারপর তিনিও দৌড়ে তাকে ধরে ফেলেন। তারপর রহমান সাহেবের অ্যাপার্টমেন্টে টেনে হিচড়ে নিয়ে এসে দারোয়ানের ঘরে আটকে রাখেন, তারপর রহমান সাহেবের ঘরে যান। সেখানে গিয়ে দেখেন রহমান সাহেবের নিথর দেহ পড়ে আছে। মেডিক্যাল টিম আর পুলিশ ফোর্সকে ডেকে নিশ্চিত হন যে সেই মাছ বিক্রেতাই ছিল রহমান সাহেবের খুনী। আর তাছাড়া আলামত হিসেবে টাইপ করা চিঠি তো আছেই। তারপর তিনিই বাদী হয়ে কেস করেন আদালতে।



সেই কেসের রায়ে এবং আগেও একাশিটা খুনের দায় নিজে স্বীকার করায় বিনা ঝামেলায় মানিককে দোষী করা হয়। শাহাবুদ্দীন সাহেব তাকে মৃত্যুদণ্ড দেন। আর রায় শোনার পরেই মানিক হিংস্র কন্ঠে বলে উঠে, “শালার জজ, তোরে আমি দেইখা নিমু, দেখি কোন জেলে তুই আমারে রাহস?”



মানিকের মতন লোক যে এমনি এমনি এই কথা বলেনি তা অবশ্য শাহাবুদ্দীন সাহেব জানেন। আর তাছাড়া মানিক মানসিক ভারসাম্যহীন একজন মানুষ। সোজা কথায় সাইকো। জগতের সব সাইকো অপরাধীরাই অসম্ভব রকমের বুদ্ধিমান হয়। অবশ্য মানিককে দেখলে তা বুঝা যায় না কথাবার্তাতেও না। কিন্তু গত পাচদিন আগে মানে চোদ্দই সেপ্টেম্বর মানিক কাশিমপুর কারাগার থেকে পালিয়ে যায়। জল্লাদের কারাগার বলে বিখ্যাত কাশিমপুর কারাগার থেকে পালানো চাট্টিখানি কথা না। বিশাল উচু প্রাচীর, চারদিকে অসংখ্য পুলিশ পাহারায় থাকে, গেট কীপার থেকে শুরু করে কারাগারের ভেতর পর্যন্ত সবখানেই কড়া নিরাপত্তা। এরপরেও মানিক কিভাবে পালিয়ে গেল সেটাও একটা প্রশ্ন। এমনকি মানিকের সেলেও তালা ঝুলানো ছিল। গ্রিলও কাটা ছিল না। জেলার সাহেব রীতিমত হতভম্ব মানিকের বুদ্ধি দেখে। যার ফাঁসির রায় দিন দশেক পরে, সেই আসামীকা দিয়ে বাগান পরিষ্কার করানোর কথা না, কিন্তু জেলার সাহেব অনুমতি দিয়েছিলেন। সেই অনুমতিই কাল হয়ে দাঁড়ায়। মানিক বাগান পরিষ্কার করতে গিয়ে হঠাত বারান্দার ভেতরের দরজাটা খোলা পেয়ে ডিউটি ইনচার্জ অফিসারের ঘরে ঢুকে পড়েন। পরে সেখানে ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকে একজন প্রহরীর জন্য। প্রহরী ঘরে ঢোকা মাত্রই সে তার ঘাড় মটকে মেরে ফেলে, তারপর প্রহরীর পোশাক পড়ে সবার সামনে দিয়েই পালিয়ে যায়। প্রহরীর পোশাক পড়াতে তাকে প্রথমে কেউ চিনতে পারেনি। কাউকে কোন কথা না বলেই সে সোজা মেইন গেটের সামনে দিয়েই পালিয়ে যায়। ডিউটি ইনচার্জ অফিসার যখন ঘরে ঢুকেন, তখন তিনি মৃত প্রহরীর লাশ দেখে আতকে উঠেন। পাশেই ছিল মানিকের সিরিয়াল দেওয়া আসামীর পোশাক। সাথে সাথে আলার্ম বাটন টিপে দেন, কিন্তু ততক্ষণে মানিক কারাগারের বাইরে।



মানিকের কথামত আজকেই সে শাহাবুদ্দীন সাহেবকে খুন করবে। মানিকের কেস স্টাডি করলে দেখা যায় তার প্রত্যেকটা খুনের পিছনেই আগের খুনের ইতিহাস আছে। আর প্রত্যেকের সাথেই তার কমবেশি শত্রুতা আছে। যেহেতু শাহাবুদ্দীন সাহেব তাকে ফাঁসির রায় দিয়েছে, সেহেতু পূর্বপরিচয় না থাকলেও তার সাথে তার একটা শত্রুতা সৃষ্টি হয়ে গিয়েছে।



যেভাবেই হোক মানিক যে আজকে শাহাবুদ্দীন সাহেবকে খুন করবে তার নিশ্চয়তা একশো ভাগ। হয় আদালতে ঢুকার সময় কিংবা আদালত থেকে বের হওয়ার পথে। অতএব সে আসবে আদালতের মধ্যেই। তাই হানিফ চোখ কান খোলা রেখেছে। চারদিক একটু পর পর শকুনে দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। অন্যদিনের মতোই বোঝাই হয়ে আছে বিশাল ঘরটা। টু শব্দ নেই। হানিফ আর তার সহকারী জীবন বাবু বসে আছে সামনের দিকটায়। যেখানে সরকারী পক্ষের আইনজীবিরা বসে। এখান থেকে জজ সাহেবকে ভালমত দেখা যায়।



আজকে যেই মামলার মিমাংসা চলছে সেটা একটা জমিজমা বিষয়ক। এক কোটিপতি বৃদ্ধের মৃত্যুর পর কোন কিছুই কাউকেই দান বা উইল করে যায়নি। সেই কোটিপতির ছেলেমেয়েরা নিজেদের মাঝে ঝগড়া বিবাদ করে আদালত পর্যন্ত ঝামেলা নিয়ে এসেছে। এরা যে কোটিপতি এটা বুঝার জন্য শার্লক হোমস হতে হয় না। এদের বেশভূষাই বলে দিচ্ছে এরা অসম্ভব রকমের ধনী। বৃদ্ধের নাতি-নাত্নীরাও এসেছে এই কেসের ফলাফল জানতে। মেয়েগুলো হালের হাই-প্রোফাইল ফ্যাশনেবল ড্রেস পড়ে এসেছে। সেজেছেও প্রচুর। বিত্তবান হলেই যে প্রচুর সাজতে হয় এ ধারণা যে কে আবিষ্কার করেছে হানিফের তা জানা নেই। তবে মেয়েগুলোকে যে খারাপ লাগছে না তা না।



এছাড়া আশেপাশে যারা বসেছে তাদের সবাইকেই বেশ স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। পুরুষ মহিলা, বৃদ্ধ, তরুণ বয়সী সব ধরণের মানুষই আছে। এর মধ্যে কে যে মানিক তা বুঝা যাচ্ছে না। হানিফের বিশ্বাস সে পিস্তল ব্যবহার করবে। ছুরি জাতীয় কিছু নিয়ে তার কাছে পৌছাতেই পারবে না সে। যদিও আদালত চত্বরের গেটের কাছ থেকেই কঠিন তল্লাশী চালানো হয়েছে। তাছাড়া শাহাবুদ্দীন সাহেবকে ঘিরে কঠোর প্রহরা সাজানো হয়েছে। এরপরেও মানিকের উপরে ভরসা নেই। সে যেভাবেই হোক পিস্তল নিয়েই ঢুকবে।



হানিফ আবারো তাকালো সেই পরিবারটির দিকে। দাড়িওয়ালা গোমড়ামুখে এক লোক বসে আছে। মাথায় টাক। গায়ে কালো কোট, পেটটা ফোলা। কোলের উপরে রাখা একটা হাতব্যাগ। ওর মধ্যে পিস্তল থাকতে পারে। লোকটা সন্দেহজনক।



লোকটার ঠিক পিছনেই বসেছে স্ট্রাইপের কাপড়ের শার্ট পড়া একজন মাথায় মাফলার পেঁচানো। এই গরমের মাঝে মাফলার পড়ার কারণটা কি সে ঠিক বুঝতে পারছে না। একটু পর পর উসখুস করছে। এই লোকটাকেও সন্দেহজনক মনে হচ্ছে হানিফের কাছে।



পুরো ঘরে একবার চক্কর দিয়ে এসে হানিফের পাশে আবার এসে বসলো জীবন বাবু। মাথা নেড়ে নীরবে বুঝিয়ে দিল মানিক আশেপাশে কোথাও নেই।



জজ সাহেবের দিকে আবারো তাকাল হানিফ। লোকটা বৃদ্ধ। যেকোন সময় কপালে বা বুকে গিয়ে লাগতে পারে বুলেট। এই ভয় নিয়েও বিচার করতে এসেছেন। শান্ত মাথায় রায় দিয়ে চলেছেন।



হানিফ আর জীবন বাবু যেদিকটায় বসেছিল, তার দুই চেয়ার পরেই সেই বাদী পক্ষের পরিবার। সেই দাড়িওয়াল লোক, গলায়, কানে মাফলার পেঁচানো লোকটার ঠিক ডান পাশেই বসেছে এক সুন্দরী মহিলা। হাতব্যাগ খুলে বারবার ঠোঁটে লিপস্টিক লাগাচ্ছে। যেন অগ্রাহায়ন মাসে ফ্যানের বাতাসেও তার ঘাম গলে লিপস্টিক গলে পড়ে যাবে। পৃথিবীতে কিছু মেয়ে মানুষ আছে, তাদের সামনে যদি আজরাইল এসে বলে তোমার জান এখন কবচ করবো, তখনো সে দুই মিনিট সময় চাইবে সাজগোজের জন্য। যেন পরপারে গিয়ে এই সাজ-সজ্জা নিয়েই যাবে, শেষ সাজ যাকে বলে।



এটা যে একটা মানসিক রোগ এটা অনেক মহিলাই জানে না। এই ভাবতে ভাবতেই হানিফ একটা মৃদু হাসি হাসল। হানিফ খেয়াল করলো সে যখন মহিলাটার দিকে তাকিয়েছিল তখন তার চোখে চোখ পড়তেই মহিলাটা নড়েচড়ে বসলো। ব্যাগটা কোলের উপরে রেখে আড়ষ্ট ভঙ্গিতে এক পায়ের ওপর আরেক পা তুলল। গায়ে লাল শাড়ি। নিচে শায়াটা গাড় নীল রঙের।



হাঁচি দিল পাশের দাড়িওয়ালা লোকটা। ফিরে তাকাল হানিফ। লোকটা রুমাল দিয়ে নাক মুছছে। কথাটা মনে পড়াতেই হঠাৎই যেন হানিফের শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল। একটা মুহুর্ত দেরী না করেই লাফিয়ে উঠে প্রায় জীবন বাবুর কোলের উপর দিয়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো মহিলাটার উপরে। কোন রকম সুযোগ না দিয়ে গায়ের সমস্ত শক্তি দিয়ে চোয়ালে একটা ঘুষি মেরে দিল। অন্য কেউ হলে চোয়ালের হাড্ডিই ভেঙ্গে যেত। কিন্তু মহিলার হাড্ডি ভীষণ শক্ত। চোখের পলকে লাফ দিয়ে তার হাত থেকে বেড়িয়ে এল একটা রিভলবার। হানিফকে সাহায্যের জন্য জীবন বাবুও এগিয়ে এসে থাবা দিয়ে ফেলে দিল মহিলার হাতের রিভলবার।



হই-চই শুরু হয়ে গেল মুহুর্তের মাঝেই। আশেপাশের প্রহরীরাও এগিয়ে এল। হানিফ কাউকে পাত্তা না দিয়ে কোন দিকে না তাকিয়েই হ্যাঁচকা টানে মহিলার উইগ খুলে ফেলল। খামচি দিয়ে নাকে বসানো রবার খুলে আনলো। যে চোয়ালে ঘুষি মেরেছিল সে চোয়ালের চামড়া খুলে গিয়েছিল। অপরপাশের গালের নকল চামড়া আর কপালের নকল চামড়া পর পর দুই টানে খাবলে খুলে ফেলল হানিফ। বেড়িয়ে এল একটা পুরুষের মুখ। মানিককে আগে দেখেনি হানিফ। তাই চিনতে না পারলেও বুঝতে পারলো যে এই লোকই মানিক।



জীবন বাবু আনন্দিত কন্ঠে চিৎকার করে বলতে লাগলেন,



-এই তো। এই লোকটাই মানিক।



জীবন বাবুর চিৎকার শুনে জজ সাহেব শাহাবুদ্দীন আহমেদ এগিয়ে এলেন। তিনি ভাবলেশহীন অবস্থায় একবার মানিকের দিকে তাকাচ্ছেন আরেকবার হানিফের দিকে তাকাচ্ছেন। আমতা আমতা স্বরে হানিফের কাছে জিজ্ঞেস করলেন,



-আপনি কিভাবে চিনলেন এ মানিক?



মুখে প্রশান্তির একটা ছাপ মিশিয়ে হাসি হাসি মুখে হানিফ উত্তর দিল,

-মানিক ছোট্ট একটা ভুল করে ফেলেছিল।

-কি ভুল?

-আচ্ছা চলুন, আগে একে গার্ডদের হাতে তুলে দেই, নাহলে যদি এ আবার পালিয়ে আসে, তখন সে এই ভুল আর করবে না।



মানিককে পুলিশ অফিসার সানাউল্লাহ হকের কাছে তুলে দিয়ে আদালতের বারান্দায় হানিফ দাঁড়িয়ে আছে নির্ভার ভাবে। খুবই খোশ মেজাজে আছে এটা যে কেউই তার মুখ দেখে বুঝতে পারবে। এতক্ষণ আদালতের মাঝে সিগারেট ধরাতে পারেনি। কিভাবে সিগারেট ছাড়াই এত কিছু চিন্তা করল সে নিজেই বুঝতে পারছে না। এখন সিগারেট খেয়ে মাথার জট খুলার দরকার নেই, তবুও মনকে স্বান্তনা দেওয়ার জন্য একটা মার্লব্রো সিগারেট ধরাল। আয়েশি ভঙ্গিতে কয়েক টান দিয়ে ধোঁয়া ছাড়ার পর জীবন বাবু আর জজ সাহেব তাকে ঘিরে প্রশ্ন করলো,



-কোথায় বললেন না যে কি এমন দেখলেন যে নিশ্চিত হলেন ঐ’ই মানিক?

-দেখুন, একজন ফ্যাশন সচেতন মহিলা যিনি কি না গরমে ঘামে সামান্য লিপস্টিক গলে যাওয়ার জন্য কোর্টরুমে বারবার লিপস্টিক দিয়ে ঠিক করে সেই মহিলা আর যাই হোক, তার বেশভূষাতেও কোন অসঙ্গতি রাখবে না। অথচ সেই মহিলাই কি না লাল রঙ্গের শাড়ির সাথে নীল রঙের শায়া পড়েছে তাও আবার পেছনের দিকে অনেকখানি ছেড়া।

-তো এটা দেখে কিভাবে বুঝলেন যে সে মহিলা না। একজন পুরুষ মহিলা সেজেছে?

-কারণ সেই ছেড়া ছায়ার তল দিয়ে জিন্সের প্যান্ট দেখা যাচ্ছিল।



জীবন বাবু রসিকতা করে বললেন,

-তা আপনার চোখ কি ওদিকেও যায় নাকি?

মুখে স্মিত হাসির রেখা টেনে কোমরে গুজে রাখা পিস্তলটি জীবন বাবুর কপালে তাক করে বললেন,



-আপনি যদি এরকম একটা সুযোগ তাকে করে দেন তাহলে আমিই বা ওদিকে তাকাবো না কেন?



জীবন বাবু পরাজিত, হতাশ ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছেন। জজ সাহেব শাহাবুদ্দীন আহমেদ অবাক আর বিস্ময় মাখা মুখে থ হয়ে গেছেন। আমতা আমতা স্বরে হানিফকে জিজ্ঞেস করলেন,



-মানে কি হানিফ সাহেব?

-মানে খুবই সোজা, এই লোকের সাহায্যেই মানিক পালাতে পেরেছে আবার এরই সাহায্যে মানিক আদালতের ভিতরেও রিভলবার নিয়ে ঢুকতে পেরেছে।

-কিন্তু কিভাবে?

-আমি খোজ নিয়ে জেনেছি, মানিক যেদিন পালায়, তার ঘন্টাখানেক আগে ডিবির একজন সদস্য তার সাথে দেখা করতে যায়। সেই লোকই তার কাছে সেলের চাবির ডুপ্লিকেটটা মানিকের কাছে দেয়। আর মানিক বাগান পরিষ্কার করার সময় পালায়নি, আর বাগান পরিষ্কার করতে গিয়ে কাউকে খুনও করেনি। তবে সেন্ট্রীর পোশাক পড়ে পালিয়েছে এটা সত্যি। কারণ সেই সেন্ট্রীকে খুন করে এই জীবন রায়। যিনি কি না ডিবিতে কাজ করছেন প্রায় পাঁচ বছর হল। সেই সেন্ট্রীর পোশাকের ডুপ্লিকেটও সে বানিয়ে এনে মানিকের কাছে দিয়ে রেখেছিল। ডিউটি ইনচার্জ যখন আলার্ম বাজায়, তখন সবাই ছুটে বেড়াচ্ছিল যার যার জায়গায়। সে সময় মানিকও কাপড় বদলে সবার সঙ্গে দৌড়ে পালিয়ে বের হয়ে যায়।



শাহাবুদ্দীন সাহেব হাতে আস্তে করে তালি দিয়ে বললেন,

-বাহঃ তারপর!

-আর এইখানে অস্ত্র নিয়ে ঢুকার সময় আমি খেয়াল করেছিলাম এই মহিলাকে তল্লাশী করছিলেন আমাদের জীবন বাবুই। যেখানে একজন মহিলা হিসেবে তাকে তল্লাশী করার কথা একজন মহিলা পুলিশ সেন্ট্রীর। এমনকি তাকে মেটাল ডিটেক্টরের ভেতর দিয়েও যেতে দেননি জীবন বাবু। তখন আমার সন্দেহ হয়।

-বাহঃ তাহলে একই সাথে দুইজন আসামী ধরা পড়ল।

-হুমম। তা জজ সাহেব, এই আসামীর কি সাজা হওয়ার কথা? আইনের লোক হয়েও এ আইন ভঙ্গে সাহায্য করায়?

-অবশ্যই মৃত্যুদন্ড।

-তা এই লোকও যদি পালিয়ে যায়?

-তখন আর কি! তখন আপনি তো আছেনই।

-আমিই যদি পরবর্তী খুনী হই?



এই বলেই দুজন প্রচন্ড শব্দ করে হাসতে শুরু করলেন। ততক্ষণে জীবন বাবুকে ঘিরে পুলিশরা দাঁড়িয়ে আছে। একজন এসে পেছন থেকে তার দুই হাতে হাতকড়া লাগিয়ে দিয়েছে।



ক্রুর দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে আছে জজ সাহেব শাহাবুদ্দীন আর ডিবি অফিসার হানিফের দিকে। কিন্তু তার দৃষ্টি ম্লান হয়ে গেছে তাদের দুজনের বিজয়ের হাসিতে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ২:১১

ঘরপোড়া গরু বলেছেন: লেখাটা পড়ে ভাল লেগেছে। ক্রিয়েটিভিটির একটা ছাপ আছে। তবে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে আপনার একটা বানান ভুল ধরিয়ে দিতে চাই। সঠিক বানানটা হবে পোশাক, পোষাক নয়। এটা আমাদের দেশের সবচেয়ে ভুলভাবে ব্যবহৃত শব্দগুলোর একটি।

২| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ রাত ১:৫০

কাল্পনিক আমি বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার মতামতের জন্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.