![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি এখনও পড়াশুনা করছি। তার সাথে বেশ কিছু দিন ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছি। বাবা মায়ের ছোট ছেলে। ঘোরাঘুরি এবং খাওয়া দাওয়া করতে বেশ পছন্দ করি।
রাত তিনটা। ফোনের কর্কশ শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আবিরের । সাধারনত এই সময়ে কেউ ফোন করেনা তাকে। তার ঘুমের সমস্যাটার কথা সবারই জানা। রাতে একবার ভেঙ্গে গেলে আর আসেনা।আজ বাকি রাতটা আর ঘুমানো হলনা। একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনের রিসিভারটা উঠালো ও।
-হ্যালো।
-আবির বলছেন ?
-জ্বি বলছি। কে বলছেন প্লিজ।
-আমি মানসিক হাসপাতাল থেকে বলছি।
-জ্বি বলুন।
-নাবিলা নামে আমাদের যে পেশেন্ট টি এক সপ্তাহ আগে ভর্তি হয়েছিল ও পালিয়েছে হাসপাতাল থেকে।
বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল আবিরের ।
-পা...পা... পালিয়েছে মানে?
-রাতে খাবার ও ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছিল ও। একটু আগে আমাদের নার্স টহল দিতে গিয়ে দেখে ও নেই। বেড ফাঁকা পড়ে আছে।
-আপনারা খোঁজ রাখবেন না নিয়মিত? আপনাদের গাফিলতির জন্য যদি আজ কারো ক্ষতি হয় তবে এর জন্য আপনারা দায়ী থাকবেন।
-দেখুন আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি । ওকে খুঁজতে লোক লাগানো হয়েছে ।
-তাড়াতাড়ি খুঁজে বের করুন ।
-যদি আপনার ওখানে যেয়ে থাকে তবে আমাদের জানাবেন।
-ঠিক আছে।
-আচ্ছা রাখি।
-ঠিক আছে রাখছি।
রিসিভারটা নামিয়ে রাখল আবির। রাতে ঘুম না আসার জন্য ঘুমের সমস্যার দরকার হয়না। এরকম দু একটা ফোনকলই যথেষ্ট। নাবিলা পালিয়ে যাওয়াতে আবিরের মনে ভয় জাগ্রত হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে ।
দু বছর আগের কথা।
নাবিলা আর আবির একই ভার্সিটিতে পড়ত । আবির ছিল নাবিলার এক বছরের সিনিয়র । একই ডিপার্টমেন্টে পড়ত ওরা। আবির ও নাবিলা দুজনেই ভালো রবীন্দ্রসঙ্গীত গায়। পরিচয়ের সুত্রটাও গান থেকেই। ডিপার্টমেন্টের নবীণবরণ ও বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার জন্য দুজনেই সিলেক্ট হয়। একসাথে রবীন্দ্রসঙ্গীত গায় ওরা। সবার প্রশংসা কুড়ায় ওদের গান। পরিচয়টা মিলিয়ে যায়নি ওদের। এরপর থেকে বন্ধুত্ব শুরু ওদের। ফোনে কথা হত প্রায়ই। এভাবেই একে অন্যের প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে ওরা। প্রস্তাবটা যথারীতি আবিরের কাছ থেকেই আসে। নাবিলা শুনে বিস্ফারিত চোখে চেয়ে ছিল খানিকটা। কিন্তু এরপরই মুখে হাসির রেখা ফুঁটে উঠে ওর। রাজি হতে আর সময় লাগেনি নাবিলার । তারপর অনেকটা সময় সুখের গেছে ওদের। পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটছে দুজনের ।
একদিনের কথা । লাইব্রেরীতে পড়ছিল দুজন। হঠাত আবির খেয়াল করে একটা ইঁদুর ওর পায়ের কাছ থেকে উঁকি দিচ্ছে। লাইব্রেরীতে ইঁদুর থাকবে স্বাভাবিক। যেখানে বইয়ের অরণ্য সেখানেই ইঁদুরের বাস। যাই হোক। ইঁদুরটা চোখে পড়ে নাবিলার । চোখ দুটো জ্বলে উঠে ওর । খপ করে ধরে ফেলে ইঁদুরটাকে। আবির একটা ধমক দেয় নাবিলাকে। ছেড়ে দিতে বলে প্রাণীটাকে। কিন্তু নাবিলার চোখে চোখ পড়তেই হৃৎপিণ্ডটা লাফ দিয়ে গলার কাছে চলে আসে ওর। এটা কি কোনো মানুষের চোখ? টকটকে লাল হয়ে আছে । যেনো আগুনের ভাটার মত জ্বলছে। আবির ভয় পেয়ে যায়।
-কি হয়েছে তোমার? এরকম করছ কেনো?
কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে আবির। কিন্তু কোনো উত্তর পায়না ও।
একটু পরে স্বাভাবিক হয় নাবিলা। পড়তে থাকে আগের মত করে যেন কিছুই হয়নি। আবিরের দিকে চোখ পড়তেই দেখে বিস্ফারিত চোখে আবির চেয়ে আছে ওর দিকে।
-কি ব্যাপার? পড়াশোনা ফেলে এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো ? কোনোদিন দেখনি নাকি আমাকে ?
- কি...কি...কি হয়েছিল তোমার?
-কই? কিছু হয়নিতো ।
-ইঁদুরটাকে দেখে ওরকম করছিলে কেনো?
-কি করছিলাম?কিছুই তো করছিলাম না। শুধু মাথাটা একটু ঘুরে উঠেছিল এই যা। পড়তো।
কিন্তু আবিরের মন থেকে সন্দেহ যায়না। এরকম করল কেনো নাবিলা ইঁদুরটাকে দেখে ? কি হয়েছিল ওর ? ধীরে ধীরে সন্দেহ দানা বাধতে থাকে ওর মনে। তবে কি নাবিলা? না না তা কি করে হয়? এতো সুন্দর একটা মেয়ে। এরকম হতেই পারেনা । জোর করে চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে আবির । পড়ায় মন দেয় ও । সামনে পরীক্ষা ।
অবশেষে পরীক্ষা শেষ হয় ওর। আজ নাবিলা ওদের বাসায় নিয়ে যাবে আবিরকে। তাই ভদ্র ছেলে হবার আপ্রাণ চেষ্টা করছে ও। আবির এমনিতে ভদ্র। তারপর ও আজ আরো ভদ্র হবার চেষ্টা করছে । বিকেলে দেখা হয় ওদের। নাবিলাকে আজ অনেক সুন্দর লাগছে। কালো রঙয়ের একটা শাড়ি
পড়েছে ও । সাথে ম্যাচিং করে কালো ব্লাউজ , কালো জুতা। এমনিতে ফর্সা মানুষদের কালো কাপড়ে ভালো লাগে। কিন্তু নাবিলাকে অতিরিক্ত ভালো লাগছে।
নাবিলাদের বাসার সামনে এসে গাড়ি থেকে নামলো ওরা। পুরোনো ধাঁচের একটা বাড়ি । গেটটাও পুরোনো ।কালো রঙয়ের । ঠেলতেই ক্যাঁচ ক্যাঁচ করে উঠল । বাড়িটাতে আর কেঊ থাকে বলে মনে হল না আবিরের। কেমন জানি থমথমে আর গুমোট ধরনের পরিবেশ । পা বাড়ালো ও নাবিলার সাথে। সোজা বসার ঘরে নিয়ে গেল নাবিলা ওকে । শুরুতেই নাবিলার বাবার সাথে দেখা হল ওর । ভদ্রলোক এই বয়সেও অনেক স্মার্ট । কালো রঙয়ের একটা গাউন পড়ে আছেন । মুখে পাইপ। একটু পর পর টান দিচ্ছেন । বেশ আভিজাত্যের বৈশিষ্ট্য পুর্ণ ।
-বাবা, ও আবির। যার কথা বলেছিলাম তোমাকে।
-ও হ্যাঁ । তাহলে তুমিই আবির?
-জ্বি আঙ্কেল।
-পুরো নাম কি?
- আবির হাসান।
- ভালো নাম।
এরপর ওর আর ওর পরিবার সম্পর্কে খোঁজ নিলেন উনি। এরপর নাবিলার মাকে ডাক দিলেন নাস্তা দেবার জন্য। নাবিলার মাকে দেখে ও যথেষ্ট সুন্দরী মনে হল। ভদ্রমহিলা এই বয়সেও রুপ ধরে রেখেছেন । উনি একটা কালো রঙয়ের সালোয়ার কামিজ পড়ে আছেন । একটা জিনিস খেয়াল করল আবির। এই বাড়িতে এখন পর্যন্ত যা কিছু দেখেছে সবই কালো রঙয়ের । সবার পোষাক থেকে শুরু করে বাড়ির মেঝে আসবাব সব কিছুই কালো রঙয়ের । হঠাত মেঝে র দিকে তাকালো ও। কতগুলি বিচিত্র ধরনের নকশা চোখে পড়ল ওর। কালো রঙয়ের কালিতে আঁকা। কালো মার্বেল পাথরের মেঝে বলে সহজে চোখে পড়েনা। একটু ভালো করে খেয়াল করলে চোখে পড়ে । যা হোক। নাবিলার মায়ের কথায় ফিরে আসা যাক । ভদ্রমহিলা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আবিরকে দেখছেন বলে মনে হল আবিরের। চা নিতে গিয়ে আবির খেয়াল করল মহিলার মুখে ফুটে উঠেছে করুণার ভাব। যেন করুনা করছেন ওকে। বিষয় গুলোকে তেমন পাত্তা দিল না আবির। গল্প করতে করতে হঠাত সময়ের কথা খেয়াল হল ওর। সন্ধ্যা হয়ে গেছে । যেতে হবে। বিদায় চাইল আবির । দরজার কাছে পৌছে হঠাত মনে হল নাবিলার কাছে বিদায় চাওয়া হয়নি । কিন্তু ঘোরার আগেই দড়াম করে মাথায় একটা বাড়ি খেল ও। সাথে সাথেই জ্ঞান হারাল ও।
ধীরে ধীরে চোখ খুলল ও। মাথার পিছনটা ভিজা ভিজা লাগছে। রক্ত নাকি ? হাত দিয়ে দেখবে বলে হাতটা তুলতে গেল ও। কিন্তু পরক্ষণেই বুঝতে পারল হাতটা কোনো কিছুর সাথে বাঁধা। পা নাড়াতে গিয়ে দেখে পায়েরও একই অবস্থা। জোর করে পুরোটা চোখ খুলল ও। বিস্ফারিত চোখে দেখল ও সামনে নাবিলার বাবা , মা , নাবিলা আর অচেনা একটা লোক একটা আগুনের কুন্ডলীর পাশে বসে কি যেন বিড়বিড় করছে। ওকে চোখ খুলতে দেখে হাসল নাবিলা ।
-কি জ্ঞান ফিরেছে?
-এখানে কি হচ্ছে কি নাবিলা? আর আমার হাত পা এমন ভাবে বাঁধা কেনো? এটা কি ধরনের আচরণ ? তাড়াতাড়ি খুলো। বাড়ি যেতে হবে আমাকে।
একটা ক্রুর হাসি হাসল নাবিলা।
-বাড়ির কথা ভুলে যাও আবির । তোমার আর বাড়ি ফেরা হবেনা ।
-কেনো?
-তোমাকে এখন মহান শয়তানের উদ্দেশ্যে উতসর্গ করা হবে।
-মা...মা...মানে?
-মানে তো খুব সোজা। মহান শয়তানের আত্মাকে খুশি করার জন্য তোমাকে এখন শয়তানের উদ্দেশ্যে বলি দেয়া হবে।
শুনে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হয়ে গেল ওর। শুরুতেই সন্দেহ হয়েছিল ওর। এত কালোর সমাহার দেখে। নাবিলার পুরো পরিবার হল শয়তানের উপাসক ।
মেঝেতে যে নকশা দেখেছে ও তা আসলে শয়তানের চিহ্ন। ওকে এখন শয়তানের উদ্দেশ্যে বলি দেয়া হবে।
-নিয়ে এসো ওকে।
অপরিচিত লোকটা হুকুম দিল।
-জ্বি হুজুর
বলে ওর দিকে এগুলো নাবিলার বাবা। লোকটাকে দেখে বিষিয়ে উঠল ওর মন। ওর হাত পায়ের বাধন খুলে দিয়ে ওকে জোর করে ধরে এগুলো। আগুনের কুন্ডলীর দিকে।
আর দেরী করা যায়না। যা করার এখনই সময়। মনে মনে ভাবল আবির । কাজ হোক না হোক বাঁচার শেষ চেষ্টা তো করতে হবে । যেমন ভাবা তেমন কাজ। উনার হাতটা ধরে একটা মোঁচড় দিল ও। যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠলেন তিনি। এরপর গোটা দুয়েক লাথি ছুটল তলপেট বরাবর। লোকটা সাথে সাথে অজ্ঞান। এরপর নাবিলা আর ওর মা ছুটে এলো। দুজন মহিলা কে ধরাশায়ী করতে বেশী বেগ পেতে হলনা ওকে। হুজুরের বিস্ফারিত মুখের দিকে তাকিয়ে এক টানে দরজাটা খুলে বাইরে বেরিয়ে গেলো ও। ছুটতে ছুটতে একেবারে থানায় । পুলিশ নিয়ে এসে দেখে হুজুর উধাও। নাবিলা ,ওর বাবা আর মাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তদন্তে বের হয়ে আসে আরো অনেক লোমহর্ষক কাহিনী। ফাঁসি হয় দুজনের। নাবিলা কে দেয়া হয় যাবজ্জীবন। মাঝখানে মাথায় একটু সমস্যা দেখা দেয়ায় নাবিলাকে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকেই পালালো আজকে।
ভয় লাগছে আবিরের। ওর মা বাবার মৃত্যুর জন্য ওই দায়ী। পুলিশকে ওই খবর দিয়েছিল। তাই ওর উপর প্রতিশোধ নিতে এখানে আসতে পারে নাবিলা। তাড়াতাড়ি ফোন করে পুলিশকে জানায় ও। ওর বাড়িতে আসতে বলে। মিনিট বিশেক পরে হঠাত কলিং বেলের শব্দে চমকে উঠে ও। মনে হয় পুলিশ এসেছে । তাড়াতাড়ি দরজা খুলে ও। কিন্তু সাথে সাথে একটা বাড়ি খায় মাথায়। জ্ঞান ফেরার পর আগের মত হাত পা বাঁধা অবস্থায় আবিষ্কার করে নিজেকে। সামনে আগুনের কুন্ডলী। পাশে নাবিলা আর সেই হুজুর। কি যেন বিড়বিড় করছে ওরা। হঠাত ওর দিকে তাকায় নাবিলা। চোখগুলো আগুনের ভাটার মত জ্বলছে। সেই লাইব্রেরীতে ইঁদুর দেখে যেরকম হয়েছিল। ধীরে ধীরে আবিরের কাছে এসে বসে ও।
-আমার বাবা মাকে মেরে ফেলেছিস তুই। কি মনে করেছিস? বেঁচে গেছিস? তোকে আজ মহান শয়তানের উদ্দেশ্যে বলি দেয়া হবে।
বলে একটা ছুরি নিয়ে এগিয়ে আসে নাবিলা । আবিরের চুলের মুঠি চেপে ধরে ও। গলায় হালকা করে একটা পোঁচ দেয়। রক্ত বেরিয়ে আসে অনেকটা।
-কি? কষ্ট হচ্ছে? মৃত্যু ভয় হচ্ছে? হা হা হা । দাঁড়া তোর ভয় দূর করে দিচ্ছি। এই বলে ছুরিটা উলটো করে ধরে বসিয়ে দিতে যায় আবিরের বুকে। সাথে সাথেই একটা গুলির আওয়াজ। নাবিলার হাত থেকে ছুরিটা পড়ে যায়। মুখ থুবড়ে পড়ে যায় ও। হুজুর পালাতে গিয়েও পারেনা। পুলিশ এসে যায়। ধরা পড়ে হুজুর। নাবিলা তৎক্ষণাৎ মারা যায়। আবিরকে একটা স্ট্রেচারে তোলা হয়। যেতে যেতে নাবিলার দিকে তাকায় ও। মায়া হয় মেয়েটার জন্য । যাই হোক একসময় ভালোবেসেছিল মেয়েটাকে। পুরোপুরি মিলিয়ে যায়নি এখনো ভালোবাসা। একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে ওর বুক চিরে। হয়ত সেটা নাবিলার জন্য। বা নিজের জন্য। অন্ধকার হয়ে আসে চারদিক। ধীরে ধীরে চোখ বুঁজে ও।
২| ১০ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৩৩
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভালো হয়েছে তন্ত্র মন্ত্র গল্প
শুভেচ্ছা অনেক
১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:৫৬
কাল্পনিক আমি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য
৩| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ২:৪৭
কলমের কালি শেষ বলেছেন: :#> :#> :#>ভয় পাইছি ।
৪| ১১ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:৫৭
কাল্পনিক আমি বলেছেন: ভয় পাওয়ার কোন কারণ নাই
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:৪৪
বিদ্রোহী সত্ত্বা বলেছেন:
:!>