![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি এখনও পড়াশুনা করছি। তার সাথে বেশ কিছু দিন ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছি। বাবা মায়ের ছোট ছেলে। ঘোরাঘুরি এবং খাওয়া দাওয়া করতে বেশ পছন্দ করি।
সকালে অফিসে আসছিলাম, মিরপুর ১ নাম্বার গোলচত্তর পুলিশবক্স এর পাশেই একটি ছোট্ট জটলা। এক ঝলক তাকালাম সেদিকে, এক জোড়া কপোত কপোতী ঝগড়া করছে বেশ উচ্চস্বরে। মেয়েটার ডান হাত ছেলেটা খামচে ধরে আছে আর বাম হাত থেকে মোবাইলটা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে প্রানপ্রনে। মেয়েটা চিৎকার করছে...কিন্তু বাইকের পিছনে বসে থাকার কারণে কিছুই তেমন পরিষ্কার বোঝা গেলনা।
মনটা হঠাত করেই খারাপ হয়ে গেল। ছোটদার বাইকের পিছনে বসে বসে চিন্তা করতে শুরু করলাম ঘটনা কি হতে পারে ?
হয়ত কাল রাতে এই মোবাইলে কল করেই ছেলেটা মেয়েটার ফোন বিজি পেয়েছিল অনেক্ষন। কিংবা ছেলেটা অন্য কোন মেয়ের সাথে কথা বলেছিল রাত জেগে? আর তাই সাত সকালে দুজনের মোবাইল নিয়ে ঝগড়া!!!
ঘটনা হয়ত তেমনটি নাও হতে পারে, হতে পারে ছেলেটা ফেইসবুকে অন্য কোন মেয়ের সাথে জমিয়ে আড্ডা মারছে, ফোন নাম্বার দেয়া নেয়ার পর সেটা আরেকটি প্রেমের দিকে গড়াতে শুরু করেছে, যেটা মেয়েটা মেনে নিতে পারছেনা!!
হতে পারে মেয়েটাকে কাল বিকেল থেকে ছেলেটা ট্রেইস করতে পারেনি। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রেখে মেয়েটা অন্য কোন ছেলের হাত ধরে ঘুরে বেড়িয়েছে কোন মায়াবি আলোর রেস্তোরা, নয়তো কোন শপিংমল, কিংবা হুকা লাউঞ্জ?
কত কিছুই তো হতে পারে? তাই বলে নিজের সবচে প্রিয়মানুষটির সাথে হাজার মানুষকে দর্শক বানিয়ে আমরা কেন এমন নাটক করি? কেনইবা ঐ মুহূর্তের আগে কাটানো হাজার ঘন্টা সুসময়কে ভুলে এঁকে অপরের শত্রু হয়ে উঠি ক্ষণিকের ব্যাবধানে?
আমি জানি ঐ ঘটনার শেষটুকু কি হবে। দুজন দুজনের গায়ে হাত তুলে ফেলবে খুব সহজেই। মোবাইল গুলো সল্প সময়েই বলি হবে এক অমানুষী খিপ্রতার। দুটি সুন্দর মানুষের বাচ্চা পেয়ে যাবে গরু, সুয়োর, কুত্তার বাচ্চার সার্টিফিকেট। তারপর কোন এক অচেনা বিবেকবান রিকশাওয়ালা কিংবা বাস কনডাক্টর এগিয়ে আসবেন... দুজনকে দুদিকে পার করে দিবেন...। মানুষজন গাল ভরা হাসি দিয়ে দুনিয়ার বিশ্রী সব মন্তব্য ছুড়ে জিভে জল এনে ফেলবে, তাদের মধ্যে কেউ কেউ মেয়েটার প্রতি কাম ভরা দৃষ্টি নিয়ে বলবে " দেখছেন???, দেখতে কেমন ... মত লাগে? গতর দেখছেন????? তারপর?????
আপনি ভাবছেন, প্রেমের এখানেই শেষ??? আপনি তাহলে মহাবোকা। ভাং এ ডুবে থাকা মাতালের মত চিন্তা করছেন।
এই কপোত কপোতীর দুজনই একটু দেরি করে বাড়ি ফিরবে। বাড়ি ফেরার পথে রক্ত হিম হয়ে যাওয়া দুজনার চোখে ভেসে উঠবে তার কিছু সময় আগে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো, প্রিয় মানুষটির প্রতি ক্রোধের নংরা বহিঃপ্রকাশের ভাসা ভাসা চিত্র। আর তখনি দুজন দুই মেরুতে থেকে ছি ছি করতে থাকবে নিজেদের। পরের বাক্যটা অবশ্যই ... আমি অনেক সরি...
। কিন্তু সেই সরি বলার সৎ সাহসটা তখন কারো নেই।
এরপর???
দুদিন পারস্পরিক নেটওয়ার্কের তার ছিঁড়া । যোগাযোগের উপর খোদার ঠাডা। দুই মেরুতে দুই জনের খানাপিনায় তখন কে যেন ধুতরার বিষ ছিটায় দিছে।দুজন তখন বাসায় বসে বসে চোখের পর্দায় নিজেদের অভিনীত সিনেমা দেখে। ......... বোটানিক্যাল পার্ক। একটি মোটা হিজল গাছ.. জনমানবহিন এক দুপুর...।. প্রেমিকার জবুথবু চোখ, হুট করে সে চোখ বন্ধ হয়ে আসে... ব্লা ব্লা ব্লা...।
এরপর কেউ একজন সেলফোন হাতে তুলে নেবে। কাপা হাতের চাপে ভুল বানানে লিখে যাবে ...। “আমি অনেক সরি জানু” ... হা হা হা ...
আসলেই, এটাকেই বলে নিঃস্বার্থ ভালবাসা। কিন্তু সেই ভালবাসা গুলোয় যদি মিরপুর ১ এর মত চিত্র গুলো না থাকত!!!
সময় পাল্টেছে। পারস্পরিক স্রদ্দাবধ, নিগুড় ভালবাসা, আর পাওয়া না পাওয়ার হিসেবের পারথক্যের দরুন একই ছাদের নিচে বসবাসের আয়স্কালগুলো ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। মানুষ বুঝতে শিখেছে ভালবাসার মর্মার্থ। সম্পর্কের কঠিন সময়গুলোতে নিজেদের সোনালি অতিতকে মনে করে কেউ কেউ নবজীবনে পা দিচ্ছে, কেউ বা আবার সেই সোনালি সময়কে রক্ষায় পারস্পরিক আলোচনার মধ্যে দিয়ে আলাদা হয়ে যাচ্ছে, ব্যাস্ত জীবনের ফাঁকে নিজেকে একটু আড়াল করে ফেলে আসা সেই সুখগুলোকে সৃতির ভাণ্ডার থেকে তুলে নিয়ে নোনাজলে ভাসিয়ে দিচ্ছে চোখ। এইতো হওয়া উচিত ।!!!!!!
দুজনার যে সময়গুলো আজ ভালবাসাময়, সময়ের ব্যাব্ধানে কাল সেটি নাও থাকতে পারে। আজ পারস্পরিক অনুভূতিগুলো যেমন প্রেমময়, কাল সে অনুভূতি গুলো অনুভুত হতে পারে অন্য কারো প্রতি... পারেই... জোর করে সে অনুভুতির মিরতু ঘটানোতে কোন বীরত্ত নেই, আছে নীচতা। প্রিয় মানুষের মঙ্গল কামনাইতো সত্যিকারের প্রেম হওয়া উচিত। বদ্ধ প্রেমে তো কোন সুখ নেই, সুখ নীল আকাশে ভেসে বেড়ায়... সেখানে হরেক রঙ্গের সুখের নাচন... কেউ একা হাটে সে সুখের পিছে... কেউ কেউ সাথে নেয় প্রিয় মানুষটিকে।
ঠিক এভাবেই ক্ষণিকের ভুলে ভালবাসা থেকে হারিয়ে যায় ভাল কিছু সময়, সচ্ছ মনে দাগ কাটে কিছু ক্লেস চিত্র। নিজের প্রিয় মানুষটিকে তিক্ত ঘটনাগুলোর জন্য কখনো কখনো দুরের মনে হয়। হয়ত, ঘটনার দিন সকালেই দুজন একসাথে কলেজ ফাকি দিয়ে ঠিক করেছে ফ্যান্টাসি কিংডম ঘুরতে যাবে, রোলার কোস্টারে চড়ার মুহূর্তে ভয়ার্ত প্রেমিকার হাত ছেলেটি সক্ত করে চেপে রাখবে পরম আন্তরিকতায়, কিন্তু ক্ষণিকের রাগ আর ক্ষোভের আগুনে পুড়েছে সব।
রুপালি পর্দার ক্রেজি নায়ক অনন্ত জলিল সাহেব বছর দুই আগে একবার বাংলার ষোল কোটি মানুষকে “ হোয়াট ইজ লাভ” প্রশ্ন করে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছিলেন। সে সময় আমরা লুঙ্গির কোঁচা তুলে মান ইজ্জত নিয়ে দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দিয়েছি। আসলেইতো? লাভ মানে কি? লা লা লা লা লা করে পপকরন চিবোতে চিবোতে সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখা? নাকি রাস্তাঘাটে নোংরা মারামারি? নাকি অন্য কিছু।
বহু চিন্তা করে উত্তর খুজে না পেয়ে যখন আমরা মাথাবনত করে বসে আছি, ঠিক তখন জলিল সাহেব নিজেই এর একটা বিহিত করলেন ... লাভ মানে হল “ নিঃস্বার্থ ভালবাসা”।আজ যদি জলিল সাহেবের সাথে আমার দেখা হইত, আমি উনাকে আমার লেখাটা পড়তে দিতাম।
©somewhere in net ltd.