![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি এখনও পড়াশুনা করছি। তার সাথে বেশ কিছু দিন ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছি। বাবা মায়ের ছোট ছেলে। ঘোরাঘুরি এবং খাওয়া দাওয়া করতে বেশ পছন্দ করি।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, অথচ র্যাগিং এর নাম শুনে নাই, এরকম কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু, আসলে র্যাগিং কী? র্যাগিং এর নামে কী হয়?
একজন শিক্ষার্থী যখন একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন আসে, তখন চারপাশের সবকিছুই তাঁর কাছে অপরিচিত লাগে। বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয় লেভেলে এসে পরিবার ছেড়ে বাইরে পড়তে আসে। পরিবার এবং পরিচিত পরিবেশ ছাড়া একজন শিক্ষার্থী অনেক অসহায়, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ঠিক এই পরিস্থিতিতে র্যাগিং নামক অত্যন্ত বাজে জিনিস একজন শিক্ষার্থীর মনে কীরকম বাজে প্রভাব ফেলে, এটা ভুক্তভুগী ছাড়া আর কেউ বুঝতে পারে না।
সিনিয়র যারা, তাঁরা মনে করে এটা স্রেফ ফান। কিন্তু একটা জুনিয়রের কাছে এটা মোটেও ফান না। সিনিয়ররা বলে, জুনিয়রদের সাথে ফ্রী আর আন্তরিক হওয়ার জন্য র্যাগিং আবশ্যক। আসলেই কি তাই? আমার তো মনে হয় এতে সিনিয়রদের প্রতি আরও বিরুপ মনোভব জন্মে থাকে জুনিয়রদের।
জুনিয়ররা নতুন, ওরা কোনো নিয়মকানুন জানে না কীভাবে একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলাফেরা করতে হয়। আর এই নিয়মকানুন শেখানোর জন্য সিনিয়ররা জুনিয়রদের উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার করে, যা অত্যন্ত আপত্তিকর। সিনিওররা বলে, ওরা নাকি জুনিয়রদের বড় ভাই বোন।
আচ্ছা, যখন একজন মানুষ পরিবারে বড় হয়, তখন আচার ব্যবহার, ভদ্রতা, চালচলন সবকিছু পরিবার থেকেই শেখে। তো, বাংলাদেশে এমন কোন পরিবার আছে, যে পরিবারে এইসব নিয়মকানুন শেখানো হয় মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের মাধ্যমে?
আমি মনে করি, একজন জুনিয়রকে যদি ভয় না দেখিয়ে তাঁদের সাথে আন্তরিকভাবে কথা বলা যায়, এতেই সম্পর্ক ভালো হবে। যারা র্যাগিং করে, এদের জুনিয়ররা সামনে ভয়ে সম্মান করে, কিন্তু আড়ালে ঠিকই গালি দেয়।
র্যাগিং কখনোই কোনো কিছুর সমাধান হতে পারে না। এটা একপ্রকার মানসিক টর্চার। মানসিক টর্চার অনেকেই সহ্য করতে পারে না। যার ফলে আত্মহত্যার মতো ভয়ংকর উদাহারণের কথাও শোনা যায়। কয়েকজনের শুধু মনের আনন্দ প্রাপ্তির জন্য একটা জীবন শেষ হয়ে যায়। সিনিয়র যারা, তাঁরা জুনিয়রকে কখনোই নিজেদের ভাই বা বোন মনে করে না। কারণ, নিজের ভাই বা বোনের প্রতি কেউই এরকম টর্চার করতে পারে না।
তবে দুই একজন শিক্ষার্থী আছে, যারা অত্যন্ত বেয়াদব। আমার মতে, ওদেরকে প্রথমে বোঝানো উচিত ভদ্রভাবে। এতেও কিছু না হলে তাঁকে ইগনোর করা উচিত সবার। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, সিনিয়র আর সহপাঠীদের সাহায্য ছাড়া কেউ চলতে পারে, এরকম খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। আবার, নিজের এলাকায় সবাই মাস্তান, কিন্তু অপরিচিত জায়গায় সবাই বিড়াল। সুতরাং, আশেপাশের পরিবেশ দেখে, আর নিজের ভালোর জন্য বেয়াদব এমনিই টনটনা হয়ে যাবে। এর জন্য র্যাগিং এর কোনো দরকার আছে বলে মনে করি না।
অনেকেই র্যাগিং এর বিরুদ্ধে লেখালেখি করেছে। তবুও, র্যাগিং কেন কমছে না? “আমি র্যাগ খেয়েছি, তাই র্যাগ দিবো। “ এই নীতি থাকলে র্যাগিং কোনোদিনই কমবে না। তবে, হ্যাঁ, বড়ভাই বড়আপু হিসেবে শাসন করার অধিকার আছে সিনিয়রদের। কিন্তু, শাসন আর র্যাগিং এর পার্থক্যটা আগে বুঝতে হবে।
আমি ব্যক্তিগতভাবে র্যাগ খেয়েছি একবার মাত্র। কিন্তু, আমি একবার কিছু বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে একবার একজনকে র্যাগ দেই । তবে এখন আমি র্যাগিং সমর্থন করি না। র্যাগিং এর ফলে সম্পর্ক বাড়ে না, অবশ্যই নীতিগতভাবে কমে। র্যাগিং এর, মানসিক টর্চার আর শারীরিক বর্ণনা নাই বা লিখি। শুধু বলবো, এগুল বর্বরতা, নির্যাতন আর মানসিক অত্যাচার।
দেশের প্রায় প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়েই র্যাগিং প্রচলিত আছে। তবে, র্যাগিং এ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অনেক বিখ্যাত। কিছুদিন পর আবার হয়তো নতুন ব্যাচদের ক্লাস শুরু হবে। আমি মনে প্রাণে চাই, অন্তত ওরা র্যাগিং মুক্ত থাকুক। এতে করে হয়তো র্যাগিং অনেকটাই কমে যাবে পরবর্তীতে। তবে, আমি একা কিছুই করতে পারবো না। একা কেউ কিছু করতে পারে না।
তবে, আমি স্বপ্ন দেখি, দেশের প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয় হবে র্যাগিংমুক্ত, আন্তরিক, ও বন্ধুত্বপূর্ণ।
©somewhere in net ltd.