নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এখনও পড়াশুনা করছি। তার সাথে বেশ কিছু দিন ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছি। বাবা মায়ের ছোট ছেলে। ঘোরাঘুরি এবং খাওয়া দাওয়া করতে বেশ পছন্দ করি।

কাল্পনিক আমি

আমি এখনও পড়াশুনা করছি। তার সাথে বেশ কিছু দিন ধরে লেখালেখির সাথে যুক্ত আছি। বাবা মায়ের ছোট ছেলে। ঘোরাঘুরি এবং খাওয়া দাওয়া করতে বেশ পছন্দ করি।

কাল্পনিক আমি › বিস্তারিত পোস্টঃ

পেট্রোলে পোড়া স্বপ্ন (ছোটগল্প)

০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৬

খোরসেদ মিয়া খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠে গেলেন। ফজরের নামাজের শেষে দু রাকাত নফল নামাজ আদায় করলেন। দুহাত তুলে মোনাজাতের মধ্যে কি বিড়বিড় করলেন, তা খোরসেদ মিয়াই ভালো জানেন। পাশের ঘরটায় তখনো অঘোরে ঘুমুচ্ছে তার তিন বছর বয়সী মেয়ে খাদিজা।

শীতের রাত, কুয়াশায় ঢেকে গেছে চারদিক। উঠোনের কোনে কাচা চুলোয় আগুন জ্বালানোর বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছেন খোরসেদ মিয়ার বিবি হনুফা। কুয়াশায় খড়গুলো ভিজে গিয়ে আর আগুন জ্বলছেনা বলে রাজ্যের গালি খাচ্ছেন কুয়াশা বেগম ও।

উঠোনে চুলোর একপাশে বসে খোরসেদ মিয়া তখন চিন্তা করছেন,আর কার কার কাছ থেকে বিদায় নেয়া হয়নি, কার কার দেনা গুলোর কথা বউকে বলা হয়নি, বড় ভাইকে ফোন করে পাওয়া যায়নি কাল রাতে ,তাকে আরেকবার ফোন করবেন কিনা... এমন হাজারো প্রশ্ন তখন খোরসেদ মিয়ার মাথায়।

ততক্ষনে সকাল হয়ে গেছে। খোরসেদ মিয়ার মালিকের দেয়া ৮০০টাকার মোবাইলটা হঠাত ঝনঝন করে বেজে উঠল... “কিরে খরসেইদ্দা, আর কতক্ষন লাগবো, যাইবি? নাকি অন্য কাউরে দেহুম?”। না ওস্তাদ আইতাছি... বইলাই খোরসেদ মিয়া উঠে পড়ে। তার ব্যাস্ততা বেরে যায় কয়েকগুন। হরতাল- অবরোধে কোন ড্রাইভারই এখন গাড়ি নিয়ে বের হতে চাইছে না। ভাল একটা খ্যাপ পাওয়া গেছে। ঠিকমত গাড়ি নিয়ে পৌঁছাতে পারলেই হল। খোরসেদ মিয়াকে আর আগামী ১৫ দিনের নাওয়া খাওয়ার চিন্তা করতে হবেনা।


শেষ বারের মত খোরসেদ মিয়া ঘুমন্ত মেয়ের দিকে চেয়ে নিল। মেয়ের গা থেকে সরে যাওয়া নোংরা কাঁথাটা টেনে দিল একটু। পিছনে দাড়িয়ে তার বিবি। ভিজে ওঠা ঝাপসা চোখে প্রানপ্রিয় স্বামীকে একবার দেখে নিলেন। শাড়ীর আঁচলে মুছে নিলেন দুচোখ । চোখের পানিতে নাকি স্বামীর অমঙ্গল হয়,তাই সে টা সে খোরসেদ মিয়াকে দেখতে দিতে চায়না।

মালবোঝাই ট্রাক নিয়ে ছুটে চলেছেন খোরসেদ মিয়া। পাশের আসনে বসা সহকারী জালাল অনেক কথাই বলে চলেছে। যে কথাগুলো বেসির ভাগই খরসেদ মিয়ার জানা। ফেনীতে ট্রাকে বোমা ছুঁড়ে মারছিল কেউ, তাতে পুড়ে মরেছে দুই জন, সাতকানিয়াই কয়েকটা গারিতে আগুন দিয়েছে অমানুষের দল,সেখানেও মরেছে কয়েকটা... এমন গল্প এখন শূনতে চায় না খোরসেদ মিয়া। “চুপ থাক খান...... পোলা” বলে থামিয়ে দেয় জালাল কে।


এমনিতে খোরসেদ মিয়া খুব আমুদে মানুষ। মদ গাঁজার অভ্যাস না থাকলেও পান খাইতে পছন্দ করেন খুব। অন্য সময় সারা রাস্তা জালালের সাথে গপ মারতে মারতে গেলেও আজ তার কি হয়েছে, সেটা জালাল বুঝে উঠতে পারছেনা...।।

অনেকটা পথ পেরিয়ে এসেছে খোরসেদ মিয়ার গাড়ি। রাস্তায় মানুষজন আর গাড়িঘোড়া দুটোই খুব কম। মাঝে মাঝে হুইসেল বাজিয়ে ছুটে যাওয়া পুলিশের গাড়ি দেখে খোরসেদ মিয়ার মনের ভিতরটা কেন যেন অজানা আশঙ্কায় ভরে উঠে। আর সেই সময়টা সে চিন্তা করতে থাকে মেয়ে খাদিজার কথা। আজ টাকা গুলো পেলে সে মেয়ের জন্য একটা উলের জ্যাকেট কিনবে, ঠিক মালিকের মেয়ের পরনে যে জ্যাকেটটা ছিল তার মত। বউয়ের জন্য একটি লম্বা জ্যাকেট কেনার ইচ্ছা তার। অমন জ্যাকেট সিনেমায় সাবনুরকে পরতে দেখেছে সে,চিন্তা করতেই খরসেদ মিয়ার মুখ লাল হয়ে যায়। লজ্জা ভাংতে চিৎকার করে উঠে “ওই জালাইল্লা, ঘুমাইছস নাহি? হারামজাদা, আওয়াজ লাগা... বামে দিয়া গাড়ি ঢুকছে, দেহস না খান...... পোলা?

কথায় কথায় জালাল কে গালি দিলেও খরসেদ মিয়া জ্বালালকে অনেক পছন্দ করে। আজ টাকা পেলে সে ঠিক করেছে জালালের জন্য ও একটা কিছু কিনবে।জালালের প্রতি হতাথ একটা টান অনুভব করে সে


হঠাত করেই গাড়ির সামনে একটা গাছের গুড়ি দেখতে পেয়ে জালাল ওস্তা......দ বলে চিৎকার করে উঠে। নিমিষেই খোরসেদ মিয়া জোরে ব্রেক কষে , গাড়ি থেমে যায়। বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যখন চোখ বন্ধ করে আল্লাহর প্রতি শুক্রিয়া জানাচ্ছে দুজনে, তখনি বিকট এক শব্দ। মুহূর্তের মধ্যেই ট্রাকের ভিতরটা আগুনে ভরে গেল। জালাল আর খরসেদের বাচাও বাঁচাও আর্তনাদ পৌঁছে গেল রাস্তার দু পাশের গ্রামের ভিতর পর্যন্ত। আগুনে পুড়তে থাকা শরীরটাকে খোরসেদ মিয়া কোনমতে টেনে বাইরে নিয়ে আসতে পারলেও জালাল নিজেকে সঁপে দিয়েছে চিতার আগুনে। দগ্ধ দেহে তিব্র জ্বালার মধ্যেও খরসেদ মিয়া তখন বিড়বিড় করছে ,জা...লা...ল, জা...লা...।


ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের বিছানায় নিথর দেহে শুয়ে আছে খোরশেদ মিয়া। শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে নিঃশ্বাসটাকে টেনে নিচ্ছে ভিতরে। অক্সিজেন মাস্ক লাগানো মুখটা পুড়ে এমন দেখাচ্ছে যে, সেটা এখন আর মানুষের মুখ বলে মনে হচ্ছেনা । মাথার কাছে পাথর মুখ করে বসে আছে খোরসেদ মিয়ার স্ত্রী। সকালে স্বামীকে বিদায় দিতে গিয়ে যে চোখ ভিজে গিয়েছিল শত অশ্রু বিন্ধুতে, সেটি এখন শুষ্ক মরুভুমি হয়ে আছে। কাদতে ভুলে গেছে সে। মায়ের পাশেই নাক বেয়ে গড়িয়ে পড়া সিকনি নিয়ে বসে আছে খাদিজা। পরনে লাল টকটকে সুয়েটারটা যেন তার বাবার রক্তক্ষরণের প্রতিচ্ছবি হয়ে আছে।


ভোর হয়ে আসছে। ব্যাস্ত ঢাকার রাতের নিরবতা আঁধারের সাথে মিলিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। হালকা আলোয় ভরে উঠছে চারদিক। বার্ন ইউনিটে ডাক্তারদের তখন অস্থির ছুটোছুটি । খরসেদ মিয়ার শ্বাসপ্রশ্বাস দ্রুত কমে যাচ্ছে।

ডাক্তার আর নার্সদের উদ্বিগ্ন মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্ট। কিন্তু পায়ের কাছে বসে থাকা হনুফা বেগমের মুখে সে উদ্দিগ্নতার ছিটেফোঁটা ও নেই। বড় বড় চোখ করে মৃত্যুপথযাত্রী স্বামীর দিকে তাকিয়ে আছে সে। সে কঠিন দৃষ্টিতে কোন দয়া নেই, মায়া নেই, স্বামীর জীবন বাঁচাতে কারো প্রতি কোন আকুতি নেই। কঠিন চাহনিতে তখন সীমাহীন ঘৃণা, এক অদৃশ্য হিংস্রতা।


খরসেদ মিয়ার বিছানার ঠিক পাশের বিছনায় নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে ছোট খাদিজা। না ফেরার দেশে পাড়ি জমাতে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা প্রিয় বাবাকে বিদায় দেয়ার কোন তাড়া নেই তার।


পাশের কোন এক মসজিদ থেকে ফজরের আজানের ধনি ভেসে আসছে। সুস্থ হতে চলা কোন এক রোগী সে আজানের সাথেসুর মিলিয়ে চলছে অস্ফুট স্মরে “আচ্ছালাতু খাইরুম মিনান নাওম”। খরসেদ মিয়ার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে খুব। তার মনে হচ্ছে প্রতিটি শ্বাস নেয়ার সময় কলিজাটা ভিতর থেকে ছিঁড়ে বের হয়ে আসবে। বাহির থেকে আসা আজানের আওয়াজ তার কানে আসছে, কিন্তু খরসেদ মিয়া ভাবছে সে সপ্নে দেখছে। যে আজান দিচ্ছে সে তার বাড়ির পাশের মসজিদের মুয়াজ্জিন মউলোভী ইয়াসিন। সে দেখছে নতুন কিনে দেয়া লম্বা সুয়েটার পরে স্ত্রী হনুফা বেগম উঠোনে পায়চারী করে বেড়াচ্ছে। হনুফা বেগমকে দেখতে এখন অনেকটা শাবনুর এর মতই লাগছে। তার সুয়েটারের পিছনের দিকটা ধরে হাঁটছে মেয়ে খাদিজা। তার পরনে নতুন কিনে দেয়া কমলা রঙের উলের জ্যাকেট।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:১৩

সত্যের পথে আরিফ বলেছেন: ফযরের পরে সুর্য উঠার আগ পর্যন্ত নামাজ পড়া ঠিক না

২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২৩

সকাল হাসান বলেছেন: গল্পটা খারাপ না ভালোই! তবে খুব দ্রুত শেষ করে দিয়েছেন, এটার জন্য তেমন একটা আকর্ষন ছিল না গল্পে! তবে চেষ্টা করে গেলে এর থেকে ভাল লিখা লিখতে পারবেন! শুভকামনা রইলো!

আর ভাইয়া বানানের দিকে খেয়াল রাখবেন!

৩| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৩

কাল্পনিক আমি বলেছেন: আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.