![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ভালোবাসি দেশকে,তাই দেশের জন্য কিছু করতে চাই।
ট্রেনের জন্য অপেক্ষারত আনেক মানুষের সাথে প্লাটফর্মে দাড়িয়ে আছে জয়,সোহেল ও ইমরান। সোহেল আর জয় হঠাৎ করেই সিলেট যাবার প্রোগ্রামটা করে। ওরা দুজন খুবই ভ্রমন প্রিয় তাই ওদের হতে খুব একটা সময় না থাকলেও ওরা সিলেটের চা বাগান আর প্রথম ট্রেন ভ্রমনের সুযোগটা হাতছাড়া করতে পারল না। তাছাড়া জয়ের এক বান্ধবী রিমু সিলেটের শহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে। তাকে জয় কখনও দেখে নি। তাই জয় ভাবলো এই সুযোগে তার সাথেও দেখাটা হয়ে যাবে। জয় ফোন করে ওর যাবার কথা রিমুকে জানিয়ে দেয়। ওদের সাথে যোগ হল সোহেলের বন্ধু ইমরান। ওদের প্রোগ্রামটা হঠাৎ করে হওয়ায় ওরা ট্রেনের সঠিক সময় না যেনেই রাত দশটার দিকে স্টেশনে হাজির হয়। এসে জানতে পারে সিলেটের লাস্ট এক্সপ্রেস ট্রেন চলে গেছে রাত সাড়ে বারোটায় একটা লোকাল ট্রেন আছে। অগত্যা ওরা লোকাল ট্রেনের ভরসাতেই বসে রইল।
সাড়ে বারোটার ট্রেন এসে পৌঁছায় রাত দেড়টার দিকে। ততোক্ষণে ওদের অবস্থা বেগতিক। কোন মতে একটা কামরায় ঢুকে ওরা বসে পরে। কিছুক্ষন পরেই ট্রেন ছাড়ল। ক্লান্ত শরীরে ওরা একটু ঘুমানোর চেষ্টা করল, কিন্তু ইঁদুর আর মশার দৌরাত্মে ওদের ঘুম আসল না। একটু স্বাভাবিক হবার পর জয় উঠে কামরাটা ঘুরে দেখতে লাগল। কামরাটায় বেশি লোক ছিল না। জয় দেখল ওদের পরের সিটেই বসে আছে একটা বোরকা পরা মেয়ে,সাথে একটা মাঝ বয়সি লোক। একটু পরে মেয়েটা বোরকা খুলে পাশে রেখে দিল। মেয়েটা দেখতে মন্দ নয়,তবে আবার অতি আধুনিকাও নয়। জয় মনে মনে ভাবলো, যাক জীবনের প্রথম ট্রেন জার্নিটা মন্দ হবে না।
কিছুক্ষন পরে জয় সোহেলকে বলে ওদের সিটটা পরিবর্তন করে মেয়েটার বিপরীত পাশের সিটে গিয়ে বসল। মেয়েটার সাথে থাকা লোকটিকে ওদের সন্দেহ হয়। সোহেল বলল যে মেয়েটাকে একা পেয়ে লোকটা হয়তো সুযোগ নিতে চাইছে। ওরা দেখতে লাগল কি হতে যাচ্ছে। আরেকটা লোক এসে মেয়েটার সামনের সিটে বসল। তার সাথে মেয়েটির সাথের লোকটির কথা বার্তায় ওরা বুঝতে পারে মেয়েটি আসলে ওনার বোন হয়।
ট্রেনের একটানা ঝিক ঝিক শব্দ করে ছুটে চলা বেশ লাগছিল জয়ের কাছে। মেয়েটাকে দেখল তার ভাইয়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরেছে। রাতের জ্যোৎস্না দেখতে দেখতে জয়েরও একটু তন্দ্রা এসে যায়।
জয়ের ঘুম ভাংলে সে দেখল ট্রেনটা একটা স্টেশনে দাড়িয়ে আছে। পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা অনুবভ হল,তাই সে স্টেশনে নেমে কিছু খেয়ে নিল। লোকজনের কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে লাইন ক্রসিঙের সমস্যার কারনে ট্রেন থেমে আছে। অপর দিক থেকে একটা ট্রেন আসবে,সেটা ক্রস না হওয়া পর্যন্ত ট্রেন চলবে না। তারমানে কয়েক ঘণ্টা এখানে অপেক্ষা করতে হবে।
জয় আবার নিজের কামরায় ফিরে এলো। সিটে বসতেই তার চোখ যায় পাশের সিটে ঘুমিয়ে থাকা মেয়েটির দিকে। মেয়েটি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে,কিন্তু তার ভাইকে কোথাও দেখা গেল না। জয় ভাবলো মেয়েটির ভাই হয়তো বাইরে কোথাও গিয়ে থাকবে। এমন সময় সোহেলেরও ঘুম ভেঙ্গে গেল। জয়ের কাছে ট্রেন লেট হবার কথা শুনে সোহেল ওকে নিয়ে ফের বাইরে নামল। সময় কাটানোর জন্য ওরা আশপাশের এলাকাটা ঘুরে দেখতে লাগল। রেল লাইনের উপর দিয়ে ওরা দুজন হেটে চললো সামনের দিকে। ভালোই লাগছিল খোলা আকাশের নিচে হেটে বেরাতে,চারপাশে বিস্তীর্ণ মাঠ। এমন সময় হঠৎ বৃষ্টি নামল। ভিজতে ভিজতে ওরা দৌর শুরু করল।ফিরে আসতে আসতে পুরোটাই ভিজে গেল ওরা। ভোর হয়ে গেল,ট্রেন তখনও জায়গাতেই দাড়িয়ে।
কিছুক্ষন পরেই আরেকটা ট্রেন ওদের পাশ কাটিয়ে শো শো করে ছুটে গেল। এরপরেই ওদের ট্রেনটাও ছেড়ে দিল। ওরা তাড়াতাড়ি করে ওদের কামরায় ঢুকে নিজেদের সিটে বসল। ট্রেনের জানালা দিয়ে বাইরের সকালটা দেখতে বেশ লাগছিল জয়ের। রাস্তার দুদিকের গাছগুলো কেমন পেছনের দিকে ছুটে যাচ্ছে,এসব সে আগে শুধু বইতেই পড়েছে। আজ সেটা তার চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছে।
রিমুকে একটা ফোন করল জয়,কিন্তু তাকে পাওয়া গেল না। রিমুর ফোনটা বন্ধ। জয় ভাবলো হয়তো রিমু এখনও ঘুমাচ্ছে তাই ফোন বন্ধ। একটু পরে ট্রেনের মেয়েটির দিকে চোখ যায় জয়ের। অবাক হয়ে গেল সে। মেয়েটা একা জানালার দিকে তাকিয়ে বসে আছে। মেয়েটার সাথে তার ভাই নেই,সামনের সিটে অন্য দুজন প্রৌড় দম্পত্তি বসে আছে। পুরো কামরায় চোখ বুলাল জয়,কোথাও মেয়েটির ভাইকে দেখতে পেল না।
জয় ভাবতে লাগলো কি করে মেয়েটার সাথে পরিচিত হওয়া যায়। সে প্রৌড় দম্পত্তির সাথে যেচে আলাপ শুরু করল। তাদের মাধ্যমে মেয়েটার সাথেও কথা বলার সুযোগ পায়। জানতে পারে মেয়েটার নাম সোনিয়া,বাড়ি চাঁদপুরে। সিলেট যাচ্ছে নানু বাড়িতে বিশেষ একটা কাজে। ঢাকা থেকে তার ভাই সাথে আসছিল। সে নাকি রেলে কাজ করে তাই মাঝপথে নেমে তার কাজে চলে গেছে। ও একাই যাচ্ছে সিলেটে। জয়ও সিলেট যাবে শুনে ওকে একটু সহযোগিতা করতে বলল। জয়ও তাতে সম্মতি জানালো।
দুপুরে আরেকটা জায়গায় ট্রেনটা আবার থামল। এবারও সেই একই ঘটনা,রেল ক্রসিং। নেমে পড়ল জয়। সোহেল ও ইমরানও নামল। পাশেই একটা দোকানে ঢুকে চা আর কেক খেল ওরা। এমন সময় আকাশে মেঘ করে আবার বৃষ্টি নামল। গুরি গুরি বৃষ্টিতে ভিজতে ইচ্ছা করল জয়ের। বৃষ্টি ওর খুব পছন্দ,তাই ভিজতে লাগল বৃষ্টিতে। এমন সময় কে যেন পেছন থেকে ওকে ডাক দিল ওকে। সেদিকে তাকিয়ে জয় দেখল সোনিয়া জানালার পাশে মুখ রেখে ওর দিকে তাকিয়ে ডাকছে। কাছে গেল জয়। সোনিয়া ওকে কিছু খাবার এনে দিতে অনুরোধ করল। জয় দোকান থেকে এনে দিল। তারপর আবার ভিজতে চলে গেল।
ট্রেনটা আবার চলতে শুরু করল। জয় দৌরে এসে ট্রেনে উঠল। ভেজা কাপড়টা ছেড়ে নতুন কাপড় পরে নিল। ফোনটা বের করে রিমুকে আবার কল দিল। এবারও ফোনটা বন্ধ। মনটা খারাপ হয়ে গেল জয়ের। নানান ভাবনা চিন্তা তার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো। রিমু কি ইচ্ছা করে ফোনটা বন্ধ করে রেখেছে? রিমু কি ওর সাথে দেখা করতে চাইছে না?? নাকি রিমুর কোন বিশেষ কোন সমস্যা হল???
হিসাবটা ঠিক মিলছিল না জয়ের। সে জানালায় মুখ রেখে বাইরে তাকিয়ে এসব ভাবছিল। জয়ের মন খারাপ দেখে সোহেল এসে ওকে কারন জিজ্ঞাসা করে। জয় সব খুলে বলে। সোহেল ওকে সান্তনা দিয়ে বলে, হয়তো রিমু কোন সমস্যায় পরেছে। সমস্যা কাটলে নিশ্চয়ই ফোন করবে।
ওরা সবাই গল্প করে সময় কাটানো শুরু করল। এবার ওদের গল্পে যোগ দিল সোনিয়াও। নানা বিষয়ে আড্ডাবাজি চলছিল। সোনিয়ার কিছু অজানা ব্যাপারও ওরা জানতে পাড়ল। সিলেটে সে তার বাবার একটা জমি সংক্রান্ত কাজে যাচ্ছে। ওরা তিন ভাই বোন,ও সবার বড়। ও এবার ক্লাস নাইনে পড়ছে। এই কথাটা শুনে ওরা সবাই অবাক হল। নাইনে পড়া একটা মেয়ে এভাবে একা একা চাঁদপুর থেকে ঢাকা হয়ে সিলেট যাচ্ছে। তার যাওয়াটা কি এতই জরুরি যে তার বাবা মা তাকে একাই পাঠিয়ে দিল??
বিকেল হয়ে গেল ওরা সবে মাত্র মৌলোভিবাজার ক্রস করল। রাস্তার দুপাশে এবার আর গাছ নয় পাহাড়ের দেখা মিলল। জীবনে প্রথম পাহাড় দর্শন,সেই সাথে পাহাড়ের গায়ে বিস্তীর্ণ জায়গা জুড়ে চা বাগান জয়কে মুগ্ধ করল। বাকিরা সবাই আগে সিলেটে গেছে তাই তাদের কছে এটা নতুন কিছু না।
সন্ধ্যা প্রায় ঘনিয়ে আসছে। রিমুর ফোনটা এখনও বন্ধ। এবার আর জোর করেও মনটা ভাল রাখতে পারলনা জয়। সিলেটে যাবার ইচ্ছেটা ওর মন থেকে উঠে যেতে শুরু করে। তাছাড়া ট্রেনটাও অনেক লেট করে ফেলেছে। ওরা ভেবেছিল হয়তো আজ দুপুরের আগেই সিলেটে পৌছতে পারবে। সেখানে ইতোমধ্যে সন্ধ্যে হয়ে গেছে,রাত দশটার আগে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তাই ওরা সিদ্ধান্ত নিল যে ওরা যাবে না সিলেটে। পরক্ষনেই জয়ের মনে পড়ল সোনিয়ার কথা। তাকে তো কথা দিয়েছে তাকে পৌঁছে দেবে। কিন্তু আবার এটাও ভাবলো যে তার কথাই তো একজন না রেখে ফোন বন্ধ করে রেখেছে,তাহলে সে কেন সল্প পরিচিতা একজনের কথা নিয়ে এত ভাববে? তাই জয় তার সিদ্ধান্তে অটুট থাকলো,সামনের কোন স্টেশনে নেমে ফিরতি ট্রেনেই ঢাকা ফিরে যাবে।
সোনিয়াকে জয় ওদের ফিরে যাবার কথা বলল। সোনিয়া ওদের যেতে নিষেধ করল তবে অত জোড়াল ভাবে নয়। এমন সময় ট্রেনটা আরেকটা স্টেশনে থামল। সেখানেই ওরা দেখলো ঢাকা যাবার একটা ট্রেন দাড়িয়ে আছে। ওরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল ওই ট্রেনেই ফিরবে ঢাকা। সোনিয়াকে একা ফেলে আসতে বিবেক বাধা দিচ্ছিল জয়ের। সোহেল আর ইমরান ততোক্ষণে ঢাকার ট্রেনে উঠে গিয়ে জয়কে ডাকছে।
জয় ভাবতে লাগলো কি করবে সে। এখন চলে গেলে সোনিয়ার সাথে আর কোন দিন হয়তো দেখাও হবে না। আর সোনিয়ার কোন ফোন নাম্বারও জয়ের কাছে নেই,কারন সোনিয়া ফোন ব্যবহার করে না। শেষ মুহূর্তে জয় মানিব্যাগ থেকে একটুকরো কাগজ বের করে তাতে তার নাম ও নাম্বার লিখল। সোনিয়ার কাছে গিয়ে বিদায় চাইল। সোনিয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে জয়ের চোখের দিকে,কিছু বলছে না। জয় সাহস করে সোনিয়ার দিকে হাতটা বাড়িয়ে দেয়। ওদিকে ঢাকা যাবার ট্রেনটা চলতে শুরু করে দেয়। সোনিয়াও হাত বাড়ায়। হাতে হাত মিলানোর সময় জয় আস্তে করে সোনিয়ার হাতে কাগজটা গুজে দেয়। তারপর নেমে পরে দৌড়ে গিয়ে কোন মতে নাগাল পায় ট্রেনের। ট্রেনের দরজায় মুখ বাড়িয়ে জয় দেখল সোনিয়া জানাল দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সোনিয়া হাত নেড়ে জয়কে বিদায় জানাচ্ছে। জয়ও হাত নাড়ল। ট্রেন দুটো বিপরীত দিকে চলতে থাকলো আর ওদের দূরত্বও বাড়তে থাকল। জয় ভাবল ওদের হয়তো আর কখনোই দেখা হবে না।
......ট্রেনের শব্দে জয়ের কল্পনায় ছেদ পড়ল। একটা ট্রেন প্লাটফর্মে এসে থামলো। জয়ের দিকে একটা মেয়ে এগিয়ে আসছে। জয় তাকিয়ে আছে নেকাবে ঢাকা একটা মুখের দিকে,চোখ দুটো তার ভীষণ চেনা মনে হলো। হ্যাঁ,সোনিয়াই এগিয়ে আসছে তার দিকে। তার কাছে এসে খুলে ফেললো নেকাবটা। জিজ্ঞেস করল, চিনতে পারছেন আমাকে??
জয়ঃ চিনবো না কেন?
সোনিয়াঃ চলুন তাহলে,জাওয়া যাক।
জয়ঃ চলো,কোন অসুবিধা হয়নি তো আসতে??
সোনিয়াঃ না।
জয়ঃ কল দিয়েছিলে কার ফোন দিয়ে? ফোন কিনলে নাকি??
সোনিয়াঃ না,ওটা ট্রেনের একটা লোকের ফোন থেকে কল দিয়েছিলাম।
রাজু আর সোনিয়াকে নিয়ে জয় যখন রাস্তায় বের হলো দেখতে পেল সোহেল ভাই সেখানে ওদের জন্য অপেক্ষা করছে। সোনিয়ার সাথে সোহেলের আলাপ শেষ হলে জয় দুটো রিক্সা ডাকলো। জয় আর সোনিয়া একটায় উঠলো আরেকটায় রাজু আর সোহেল।
চলবে.......
১ম পর্ব
২| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:৪১
সঞ্জয়ওঝা বলেছেন: দেব,একটু অপেক্ষা করেন।
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:০৮
shaontex বলেছেন: পরের পর্ব দেন