![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মরহুম প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের অসুস্থতা জনিত মৃত্যুর কারনে দলমত নির্বিশেষে সবাই শোকাহত। শোক কাটিয়ে টক শো থেকে সদরঘাট, সব জায়গায় যে ব্যাপারটি নিয়ে চায়ের কাপে সাইক্লোন উঠছে সেটা হচ্ছে কে হতে যাচ্ছেন আমাদের পরবর্তী সাংবিধানিক প্রেসিডেন্ট। সাংবিধানিক বলছি একারনেই যে, বর্তমান রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এবং বাস্তবতায় সর্বদল থেকে গ্রহনযোগ্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সম্ভব নয়। আওয়ামীলীগ কেন, বি এন পিও যদি আজকে সরকারে থাকত, তারাও সেই একই কাজ করতো আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বর্তমান সরকার যেটা করতে যাচ্ছে। কেননা আওয়ামীলীগ, তাদের নিজেদেরই দুই তৃতীয়াংশ আসন রয়েছে যার ফলে কারও মতামত না নিয়েই তারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারবে। আর অন্য যে ব্যাপার, সেটা কিছুটা শ্রতিকটু হলেও সত্য যে, আওয়ামীলীগ এর কি দায় পড়ছে যে এমন একজন কে প্রেসিডেন্ট ‘নিয়োগ’ দিবে যে আওয়ামীলীগ এর কথা শুনবেন না। বিস্তারিত বলছি একটু পর।
সুতরাং এটা শতের উপর আরো এক শত নিশ্চিত যে আমাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট আসছেন দলীয় ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে, আওয়ামীলীগ পরিবার থেকেই।
আমার অবশ্য তাতে বিন্দু মাত্র আহ উহু নেই। খোলাসা করেই বলি। ‘বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট’ নিয়ে আমার জানার দৌড় দশম শ্রেনীতে পড়া পাঠ্য বই। এর পর ইন্টারে পড়ারকালে একদিন পাবলিক লাইব্রেরী থেকে এনে পড়া একটি বইয়ের কয়েকটি বাক্যই প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে আমার ধারনা আমূল পাল্টে দেয়। বইটির পুরো নাম মনে নেই তবে লেখকের নাম মনে আছে; ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম। বইয়ের একপর্যায়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সম্পর্কে উনার বক্তব্য মোটামুটি ছিল এইরকম – বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন এমন একজন ব্যাক্তি যে মনে হবে তিনি ফেরেশতা, অফুরন্ত ক্ষমতার মালিক, তিনি যে করো মৃত্যু দন্ড মাপ করে দিতে পারেন, কোন অন্যায় করলেও কোন আদালত পারবে না তার বিচার করতে বা গ্রেফতার পরওয়ানা দায়ের করতে। কিন্তু সংবিধানের আরেক জায়গায় রাষ্ট্রপতি’র কাজের ক্ষেত্র জানলে মনে হবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি স্রেপ একজন ‘সো পিস’। আসলেই কথা গুলো নির্মম সত্য। ঐ সময়ে হাতের কাছে বাংলাদেশের সংবিধান এর কোন কপি না থাকার কারনে কথা গুলোর সত্যতা যাচাই এর কোন সুযোগই ছিলনা। কিন্তু সৌভাগ্য ক্রমে গত কয়েক মাস আগে ‘বাংলাদেশ সংবিধান’ কপিটি হাতে পাই। এবং আমার কৌতহল দমাতে গিয়ে প্রথমেই ঐ রাষ্ট্রপতি অংশ পাঠ করি।
এই দু এক দিনের রাষ্ট্রপতি বিষয়ক ভিবিন্ন টক-জাল-মিষ্টি কথা বার্তায় পুরনো ক্ষতটা আবার জেগে উঠল।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদটাকে আমার কাছে কেমন বেমানান লাগে। আর তত্ত্ববধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের কারনে রাষ্ট্রপতি পদটা আরো বেশি ‘সিম্পল’। আমি সংবিধান বিশেষজ্ঞ নই। কিন্তু আপনারা অনেকে যে সামান্য বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত আমিও অনেকটা তেমন ই।
প্রকৃত পক্ষেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি পদটা যতটা না কাজের তারচেয়ে বেশি আনুষ্টানিকতার। ‘প্রেসিডেন্টের আর কি কাজ, মাজার জিয়ারত, ভিবিন্ন দিবসে ফুল দেওয়া আর বিদেশি মেহমানদের সাথে চা নাস্তা খাওয়া’ এই রকম একটা কথা বলে কোন এক প্রেসিডেন্ট মনের ক্ষোভ ঝেড়েছেন বলে শুনেছি। আর আমি কোনভাবেই এই রাষ্ট্রপতি পদটাকে প্রয়োজনীয় মনে করিনা। আমাদের মত গরিব দেশের এটা অনেকটা গরীবের হাতি পালনের মত।
রাষ্ট্রপতি বিষয়ক কয়েকটি অনুচ্ছেদ তুলে ধরছি, আপনারা নিজেরাও ব্যাপারটা বুজতে পারবেন।
রাষ্ট্রপতির দায় মুক্তি:
৫১। (১) এই সংবিধানের ৫২ অনুচ্ছেদের হানি না ঘটাইয়া বিধান করা হইতেছে যে, রাষ্ট্রপতি তাঁহার দায়িত্ব পালন করতে গিয়া কিংবা অনুরুপ বিবেচনায় কোন কার্য করিয়া থাকিলে বা না করিয়া থাকিলে সেই জন্য তাঁহাকে কোন আদালতে জবাবদিহি করতে হবে না, তবে এই দফা সরকারের বিরুদ্ধে কর্যধারা গ্রহনে কোন ব্যক্তির অধিকার ক্ষুন্ন করিবে না।
(২) রাষ্ট্রপতি কার্যভারকালে তাঁহার বিরুদ্ধে কোন আদালতে কোন ফৌজাদারী কার্যধারা দায়ের করা বা চালু রাখা যাইবে না এবং তাঁহার গ্রেফতার বা কারাবাসের জন্য কোন আদালত হইতে পরোয়ানা করা যাইবে না
ক্ষমা প্রদর্শনের অধিকার :
৪৯। কোন আদালত, ট্রাইবু্যনাল বা অন্য কোন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত যে কোন দন্ডের মার্জনা, বিলম্বন ও বিরাম মনজুর করিবার এবং যে কোন দন্ড মওকুফ, স্থগিত বা হ্রাস কেইবার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির থাকিবে।
কি মনে হচ্ছে না আমাদের রাষ্টেপতি যিনি হবেন তিনি রাষ্ট্রীয় অসীম ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু আসল চমকটা তো এখানেঃ
(৩) এই সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (৩) দফা অনুযায়ী কেবল প্রধানমন্ত্রী ও ৯৫ অনুচ্ছেদের(১) দফা অনুসারে প্রধান বিচারপ্রতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত রাষ্ট্রপতি তাঁহার অন্য সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কার্য করিবেন :
তবে শর্ত থাকে যে, প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে আদৌ কোন পরামর্শদান করিয়াছেন কিনা এবং করিয়া থাকলে কি পরামর্শ দান করিয়াছেন, কোন আদালত সেই সম্পর্কে কোন প্রশ্নের তদন্ত করিতে পারিবেন না।
অর্থ্যাৎ একটু সরস কথায় বললে বুজায় প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন অন্যান্য মন্ত্রীর মতই উচ্চ পদস্থ সাংবিধানিক ব্যাক্তি যিনি তাঁর কাজের জন্য প্রধান মন্ত্রীর কাছে জবাবদিহিতা করতে হবে।
এই সহজ অর্থ বুজতে পারেন নই বলেই হয়ত ২০০১ সালে বি এন পি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বদরোদ্দজা চৌধুরী কে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ‘অপসারন’ করা হয়েছিল।
আশা করি আমার ভেতরের ক্ষোভটা কে কিছুটা হলেও ব্যাক্ত করতে পেরেছি।
শুভেচ্ছা সবাই কে।
©somewhere in net ltd.