![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একজন পান্না মাষ্টার ও একটি নপুংশুক সমাজ
ভিডিওটা দেখেছেন হয়তো। মানে একুশের রিপোর্টের ভিডিওটি। কার কি অনুভূতি সেটা জনে জনে জানা সম্ভব না হলে আমার কিছু অনুভূতি আছে সেগুলোই আগে বলি।
'গাজী ট্যাংকের' একটা এড ছিল এমন: 'দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ভাবতে ভালোই লাগে...।।'
আসলেই, আমাদের চারপাশের সবকিছু এগিয়েই যাচ্ছে, দেশে ধর্ষণের সেঞ্চুরি হল, এখন হল সিরিজ, শ'য়ের অধিক। এ থেকে একটা ব্যাপার আমার কেমন জানি বিশ্বাস হতে চলছে, এই ধর্ষণ বাংলাদেশের জন্য এক অপার সম্ভাবনা এনে দেবে। কারণ, যা দেশের জন্য মঙ্গল, যা দেশকে এগিয়ে নেয়, সেটিই তো প্রসারিত হয়, রাষ্ট্রতো সেটাকেই অনুপ্রেরণা দেয়। বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ ধর্ষণ সংঘটিত হচ্ছে, আমার খুব ধারনা, আমাদের প্রধানমন্ত্রী খুব শীঘ্রই এই ধর্ষণকে উন্নয়নের একটি বিরাট খাত হিসেবে ঘোষণা করবেন, এবং সরকার বাহাদুর 'ধর্ষিত জনগণের’ টাকা থেকে এ খাতে কত বরাদ্ধ রেখেছেন বা রাখবেন, সেটাও উল্লেখ করবেন। এবং সামনে বসা আমাদের মোছ ওয়ালা বড় বড় বুদ্ধিজীবীরা, শিক্ষাবিদরা হাততালীতো দিবেনই, মুখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে শিষ দেয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায়না।
প্রধানমন্ত্রীর কথা এজন্য উল্লেখ করলাম, কারণ উনি আবার এই সব বিষয়ে খবর টবর রাখেন ভাল। ইন্টারনেট, ফেইসবুক, ভালই বুঝেন। তবে একটা অনিশ্চয়তা কিন্তু থেকেই যায়। প্রধানমন্ত্রী একজন নারী। নারীর প্রতি উনার মমতা অপরিসীম থাকারই কথা, কিন্তু কিছুটা 'জেলাস' বা এই ধরনের কোন ফিলিং যদি আসে, তবে উনি এই বিষয়ে কথা নাও বলতে পারেন। অন্তরঙ্গ মুহূর্তের কোন দৃশ্য দেখলে যে কারোই ‘ইয়ে’ হওয়ার কথা। যেমন হচ্ছে আমাদের ‘নারী ভাদীদের’, নারী নেন্ত্রীরা, আমাদের প্রগতিশীল আর সুশীলদের। তাদের অনেকেই 'পান্না মাষ্টারের' সেই সব নীল দৃশ্য দেখে হয়ত বলছেন-'ব্লাডি লাকি ডগ।'
...............
'এই যন্ত্র লইয়া আমি কি করিব' - আনিসুল হকের এই প্রবন্ধটি আমার খুব ভালো লেগেছিল। সত্যিই, আধুনিক গেজেটগুলো আমাদের সমাজের বিরাট এক অংশের মানুষ হাতে পেয়ে এক একটা ফ্রাংকেষ্টাইন হিসেবে আত্ব প্রকাশ করছে। পশুর থেকেও অনেক নিকৃষ্ট এক একটা জীব আমাদের মত আকৃতি নিয়ে, আমাদের ভাষা, পোষাকে আমাদের মাজেই বেড়ে উঠছে। আচ্ছা, এই সব নিকৃষ্ট জীবকে কারা প্রতিপালন করছে? কারা আদর করে, পিঠে হাত বুলিয়ে বড় করছে? একটি পশু কখনই নিজ নিজ থেকে একটি সমাজে বেড়ে উঠতে পারেনা, পারলেও টিকে থাকতে পারেনা। দুইয়ে দুইয়ে যোগফল হচ্ছে - আমাদের মাজেই সেই সব 'পশু প্রেমিক' রয়েছে যারা সেই সব পশুকে সমাজে, পরিবারে, সংস্কৃতিতে বেড়ে উঠতে সাহায্য করছে, সময় সুযোগে পানি সার দিচ্ছে, পশুকে 'প্যাট' বলে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু তাতেই কি পশু তার পাশবিকতা ভুলে যায়? কার দায় বেশি, পশুটার, নাকি প্যাটগুলোর মালিকের, যারা সমাজের প্রতিটি খোপে পৌঁছে দিয়েছে এই সব প্যাট নামক পশুগুলোকে।
.........
কথাটা শুনতে একটু তিক্ত হলেও বলি: পান্না মাষ্টার যে সবাইকে ধর্ষণ করেছে, সেটা পুরোপুরি আমি মানতে নারাজ। ধর্ষণের সংজ্ঞায় কি বলে সেটা সবাই জানি, ব্যাখ্যা কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন। তাই অনেক ক্ষেত্রে সেটা প্রতারণা হলেও ধর্ষণ নয়। একুশের ২য় পর্বের ভিডিওটা দেখে আমার সে রকমই মনে হয়েছে। অনেকের কাছেই মনে তেমনই হবার কথা। অনেকটা 'গিভ এন্ড টেক' এর ব্যাপার।
কিন্তু ব্যাপারটা সে রকম হওয়ার কথা ছিলনা। আমাদের তো অন্য এক খেলার কথা বলা হয়েছিল। মুক্ত মনা হতে, সংকীর্ণতা থেকে, ধর্মীয় ট্যাবু থেকে বের হয়ে আসতে। ফলে আমরা পাবো একটি আলোকিত সমাজ। কিন্তু এ আমরা কোন আলো দেখছি? 'বেড রুমের নীল আলো' দেখানোর কথা ছিলনা, হে প্রগতিশীল পিতারা!
_____
গার্লফ্রেন্ড/বয়ফ্রেন্ড ধারনা আজকে সমাজে বেশ আয়েশী আসন পেতেছে। এক সময় ছিল ক্লাস মেইট, তার পর বন্ধু, এখন ছেলে বন্ধু, মেয়ে বন্ধু এবং সর্বশেষ গার্ল ফ্রেন্ড, বয় ফ্রেন্ড। (সামনে অবশ্য আরেকটা আসবে 'পার্টনার' এখনও সেটা আছে কোনায় কাচায়, সময় হলে সেই পরিচয়গুলোও প্রকাশ্যে আসবে) কেউই মিথ্যে বলেনা, আসলে তো এই সব সম্পর্কের অপর নাম হচ্ছে শারীরিক সম্পর্ক। শারীরিক সম্পর্কটাই আসল। আমাদের চতুর সমাজপতিরা, প্রগতিশীলরা সেটাকে 'প্রেম' বলে বেশ ঝাকিয়ে চালিয়ে দিচ্ছেন। কিছু বোকা প্রেমিক প্রেমিকা যে নেই তা নয়, তবে কর্পোরেট প্রেমের কাছে আজ গার্ল ফ্রেন্ড বয় ফ্রেন্ডই জয়ী।
_______
শিক্ষা মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি করে। খুবই কাজের কথা। এবং খুশির খবর হচ্ছে দেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর পারদ যে কোন সময়ের চেয়ে অনেক বেশি উপরে। সেটা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে শত থেকে হাজার গুন। সরকারী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ডক্টরেটদের সংখ্যাও বাড়ছে। এই হিসেবে আমাদের সমাজ পূর্বের তুলনায় অনেক বেশি সুস্থির আর সরল হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবে চিত্র ভিন্ন। বরং সমাজ ও রাষ্ট্রে চরিত্র হয়ে পড়েছে জটিল এবং অবোধ্য। শিক্ষা সমাজ কে এগিয়ে নিয়ে যায়, এটা তো নিপাতনে সিদ্ধ, তবে বাংলাদেশে কেন সেটা কাজ করছেনা?
_____
স্থানীয় সালিশ বা বিচার কাজ হত আগে সমাজের নামী এবং ইজ্জত ওয়ালা লোকদের দ্ধারা। এখন হচ্ছে দলীয় পদবি দ্ধারা। রাজনৈতিক ব্যাক্তি দ্ধারা। এবং আমরা এটাও জানি যে সমাজের যারা গুনি, যারা সম্মানীয় তারা এইসব রাজনীতি থেকে সহস্র মাইল দুরে। এবং তিক্ত হলেও, একজন গুনি মানুষকে তার ন্যায় অধিকার পাবার জন্য এখন হর হামেশাই সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, টেন্ডার বাজ, চাটুকার রাজনৈতিক নেতার /ছাত্র নেতার কাছে যেতে হচ্ছে। আমরা তো বিশ্বাস করতেই পারি, 'পান্না মাষ্টারের' ভিকটিম হওয়া কোন মেয়ের বাবা সেই রকম কোন নেতার কাছে গিয়েছিলেন এবং সেই সব নেতারা মেয়ের বাবাকে 'মান সম্মানের' জটিল বোধের সরল সমীকরণ বুজিয়ে দিয়েছে। (বাংলাদেশের কোর্ট কাচারী আর পুলিশ এইসব না হয় এখানে নাই বললাম।
__________
আমি জানি না, কি এক অবোধ্য কারণে রাষ্ট্র যন্ত্র অন্যায়ের কাছে, অসততার কাছে সব সময় মাথা নত করে রাখেন। অন্যায়কে যুক্তি দিয়ে, কারণ দেখিয়ে রাষ্ট্রের জন্য 'হালাল' করে নিতে বাধ্য হন। রাষ্ট্র যন্ত্রে যারা থাকেন তাদের ন্যায় অন্যায় বোধ ও আমাদের ন্যায় অন্যায় বোধে কেন এত তফাত?
অন্যায় করাটা বেশি পাপ নাকি অন্যায়ের সুযোগ করে দেয়াটা বেশি পাপ? এই ব্যাপারটা নিয়ে প্রায় সব সময় ভাবি। অধিকাংশ পাপের সম্পর্ক যেহেতু মনের সাথে, সেখানে একজন পাপী নিজের মনকে ইচ্ছা করলেই সরিয়ে আনতে পারে, কিন্তু একটি অন্যায়ের সুযোগ করে দেয়া পেছনের ব্যক্তি কখনই নিজেকে সেই অন্যায় কাজের সাথে নিজেকে ‘সম্পৃক্ত’ হিসেবে ভাবেনা। কারন যে অন্যায় করে, সেই সাজা পায়, সমাজে সেই পাপী। এবং সেই বিশ্বাস নিয়ে পাপের পথ করে দেয়া মানুষগুলোও নিজেদের পাপকে দেখেতে পায় না, সমাজও তাদের নিয়ে ঘাটায় না। তাই অন্যায় আর পাপ, সমাজে তার সরবরাহ থাকে নিরবচ্ছিন্ন এবং যথেষ্ট।
_______
বর্তমান সময় আমাদের এ বোধ দেয় যে উচ্চ ডিগ্রী না নিলে, উচ্চ পেশা না পেলে, সমাজের লোকদের কাজ থেকে বাহবা আর হাততালি না পেলে তুমি 'সফল' নও। তাই এ নিয়ে একই সমাজে শ্রেণী বিভাজনের মানদণ্ড নতুন নতুন ক্যাটাগরি সৃষ্টি করেছে। সফলতা কাম্য অবশীই তবে সেটা উন্মুক্ত নয়। একজন খুনি যখন অন্য একজন মানুষকে খুন করে এবং আইনের হাত থেকে বেঁচে যায় তখন সে তার ঐ কাজে সফল। কিন্তু সে সফলতা কি কাম্য হতে পারে কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের কাছে?
আপনি আমি যদি আমাদের চারপাশে তাকাই, তবে দেখব আজকাল সফল লোকদের সংখ্যাই বেশি। তবে সফলতার মানদণ্ড যাই হোক না কেন, এটা কিছুটা কষ্ট সাধ্য। কিছুটা কপালগুণের স্পর্শ লাগে। কিন্তু হাততালি আর আর বাহবা পেতে বোধহয় ততটা লাগেনা। কেননা উন্মুক্ত মাঠে গলায় দড়ি বাধা বাঁদরের বাঁদরামি দেখেও আমরা বাহবা দেই। হাততালিও দেই।
বর্তমান মেয়েদের কেউ কেউ এই সহজ পদ্ধতিটাই অপেক্ষাকৃত বেশি বেছে নিচ্ছে। (আমি বলছিনা তারা বাঁদরামি করছে।) বলতে লজ্জা নেই, আমাদের সমাজে, পরিবারে মেয়েরা পরাধীনই থাকে, অর্থনৈতিক দিক থেকে, পারিবারিক সম্পর্কের দিক থেকেও। আমাদের সমাজে একটি ছেলে সন্তানের আর্থসামাজিক মূল্য যতটা, একটি মেয়ে সন্তানের ততটা নয়। আমি এটাকে সরাসরি লিঙ্গ বৈষম্য না বললেও ব্যাপারটা 'বৈষম্যের'তো বটেই। এই পরিবেশেই ‘মেয়েসমাজ’ তাদের ধরন বুজতে পেরেছে এবং ধরেই নিয়েছে এই মেয়ে পরিচয়েই তার আসল সাফল্য। (একটি মেয়ে যত তাড়াতাড়ি তার মেয়ে পরিচয়ের সাথে মিত্রতা করে অন্য কিছুতে ততটা নয়, একটি মেয়ের শরীরই বলে দেয়, সে ব্যতিক্রম; সমাজে, তার প্রভু পুরুষদের কাছে। একটি মেয়ের শরীর সচেতনতার চিত্র সারা দুনিয়ায় জুড়ে এক)
আমাদের কিছু নপুংশুক 'মিডিয়া কর্তাব্যক্তিরা’ ও তাদের চেলা চামুন্ডরা সে মোক্ষম সুযোগটা নিয়েছে। (মিডিয়ার এ চরিত্র সারা বিশ্বেই সমান)
আর, এখন আসলে সব ইতিহাস, সফলতা আসছে, ক্যারিয়ার হচ্ছে চক চকে, বিল বোর্ডে আর রাম্পে একচ্ছত্র সম্রাজ্ঞী এককালের আমাদের প্রিয় বাঙ্গালী লাজুক আনমনা মেয়েরা। কি থেকে কি, আমাদের সদা ভাল কামনাকারী পিতা মাতাও দেখলেন, মেয়েকে ক্ষেতের মাজখানে নিঃসঙ্গ বিশাল বিলবোর্ডে মেয়ের উড়নাহীন বক্ষ আর রহস্যময় হাসিতে বাহবা পাওয়া যায়, সমাজের উঁচু উঁচু চেয়ারের লোকেরা হাই হ্যালো বলে, তখন তারাও সেটাকে 'স্মার্টনেস' বলে ঢোক গিলেন। কিন্তু বিপত্তি ঘটে যখন মেয়ে ফান পার্টি করে গভীর রাত্রিতে ঘরে ফিরে, যখন তখন পরিচিত অপরিচিত গাড়ি বাসায় লিফট দিয়ে যায়, হ্যাঁ, তখন সেটা হয় পার্সোনাল লাইফ। বাবা মাও মানতে বাধ্য হন, পিতা হিসেবে, মা হিসেবে, তাদের আসলেই কিছু করার নেই, একবিংশ শতাব্দীর নাগরিক হয়ে কারো ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে মাথা ঘামানো শুধু অনুচিতই নয়, অন্যায়ও বটে। কিন্তু একটা হিসেব আমাদের সচেতন ‘পেরেন্টসরা’ মিলাতে পারেন না, মিলাতে পারেন না এই শহরে গর্ভপাতের হার দিন দিন কেন বাড়ছে, কারা যায় ওইসব ‘পাপের ফসল’ খালাস করতে?
_____
আমাদের সমাজে পান্না মাষ্টার কি শুধু একজন? স্বীকার করবেন, না একজন নয়। কিন্তু আসলে কীড়ক হিসেবে আমি একজন পান্না মাষ্টারের কথা বলছি না। আমি বলছি ছায়া হয়ে বাস করা আমাদের সমাজে পরিবারে হাজার হাজার, লাখ লাখ পান্না মাষ্টারের কথা। কোন কোন ক্ষেত্রে হয়ত তারা পান্না মাষ্টারের চেয়েও বেশি লম্পট, এবং কুৎসিত। একজন মাষ্টারের লাম্পট্য কিন্তু সমাজের এক শ্রেণীর মানুষ গ্রহণ করছে। নিজের কাছে রাখছে। প্রিয় মুঠোফোনে ‘সঞ্চয়’ করে রাখছে। মেনে নিচ্ছে। মনোবিজ্ঞান এটাকে ‘পর্ন এডিকশন’ বললেও আমি বলব এটি শুধু একটি এডিকশন ই নয়, এটি একটি বিকৃতি, মানুষ হিসেবে। আর মানুষ হিসেবে যখন কারও বিকৃতি ঘটে তখন সে আর মানুষ থাকেনা পশুও না, এমন একটি ‘কিছু’ হয়ে উঠে যা পৃথিবীর ইতিহাসে অনন্য। মানুষ যখন তার স্বপরিচয়ে স্বচ্ছন্দবোধ না করে, তখনই অন্য পান্না মাষ্টারদের ‘আইটেম’ তাদেরকে ‘মানুষ ফিল’ এনে দেয়। আরেকটি ব্যাপার, ভয়ঙ্কর তো বটেই, সেটা হচ্ছে পান্না মাষ্টারের লাম্পট্যের প্রতি তাদের ঘৃনাবোধ না আসা। তার মানে হচ্ছে সমর্থন, অর্থাৎ ‘সুযোগ পেলে আমিও ছাড়বনা’ টাইপের একটা জেদ চাপে এবং অবধারিতভাবে কেউ না কেউ তার ভিকটিম হয়, এবং সমাজের ছায়ায় আরেকজন পান্না মাষ্টার বেড়ে উঠে। আর হুমায়ূন আজাদ যেটাকে বলেন পুরুষতান্ত্রিক পীড়ন, সেটাই হয়ত প্রকাশ পায় সমাজের একটি বিরাট অংশের মধ্যে।
____
জানি, পৃথিবী ছোট না হলেও পৃথিবীতে পরিভ্রমণ করাটা এখন সহজ। মাধ্যমও এখন অনেক। তাই আজ ইউরোপ বা আমেরিকায় যা আত্ব প্রকাশ করে, তার সাথে পরিচিত হতে আজ আমাদের মিনিট কয়েক সময় লাগে। আগে ইউরোপের বাজারে যেকোনো একটি পণ্য আসলেও সেটা অনুন্নত দেশে তৎক্ষণাৎ সহজ লভ্য হত না। এখন হচ্ছে। দুটো কারণ হয়ত বলা যায় অন্যতম হিসেবে। ভোক্তা শ্রেণীর বিকাশ এবং উৎপাদনকারীদের বাজার বাড়ানোর আগ্রহ থেকে।
এই চিত্রটার একটা ব্যাখ্যা দেই। এই পণ্যের দুটি দিক আছে। উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতি একনিষ্ঠ বিশ্বস্ততা, দুই উৎপাদিত পণ্যের প্রতি দুর্বলতা। এখন আমি যদি ওয়েস্টার্নদের কে উৎপাদনকারী এবং তাদের কালচারকে পণ্য হিসেবে দেখি তবে আমাদের কাছে ব্যাপারটা খুবই সহজ হয়ে যায়। আমরা ওয়েস্টার্নের কোনটির প্রতি দুর্বল- পণ্যের নাকি স্বয়ং প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্নের প্রতি?
এই ব্যাপারটাই ঘটেছিল অষ্টাদশ শতাব্দীতে কলকতার সমাজ ব্যবস্থায়। একদিকে গোঁড়া সমাজ ব্যবস্থা অন্যদিকে ‘বাবু’ আর ‘ভদ্রলোক’ হয়ে উঠার প্রাণান্ত চেষ্টা। শরৎচন্দ্রের ভিবিন্ন উপন্যাসে তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার চিত্র পাওয়া যায় সহজেই। বাবুদের কে পুঁজি করে গড়ে উঠেছিল শত শত ‘প্রমোদকানন’। কাকনবালারা হয়ে উঠেছিল বাবুদের ঘরের শোভা।
যাইহোক, কিন্তু ইতিহাস সাক্ষী, কলিকাতা কলিকাতাই রয়ে গেছে, ব্রিটিশদের কাছে সেই ‘বাবুই’ রয়ে গেছে, রায় বাহাদুর, মহারাজা, ইত্যাকার উপাধি দিয়ে নিজ সমাজে বড় মুখ হলেও, যারা উপাধিগুলো দিয়েছে তাদের কাছে কি হের ফের হয়েছে। ব্যাক্তির ইংরেজদের প্রতি আনুগত্য কিংবা দুর্বলতা যেমন ছিল রাজা রামমোহনের তেমনি ছিল রবীন্দ্রনাথের। অথচ ব্যক্তি ইংরেজ নয়, ইউরোপীয় রেনেসাঁর মানস স্পর্শেই গোঁড়া বাঙ্গালী সমাজের চিত্ত দোয়ার উন্মুক্ত হয়েছে।
আজকের স্বাধীন বাংলাদেশে যেন চলছে সেই শতবর্ষের পূর্বের সামাজিক ক্লাইম্যাক্সের দৃশ্যায়ন। ফলাফল তো আমাদের চোখের সামনে দেখছি। আগে শুধু ‘টানবাজার’ গুলো ঘড়ে উঠত নদীর পাশে, এখন তথাকথিত সভ্য নাগরিক সমাজের সাথেই ঘড়ে উঠছে, ছাঁদে ছাঁদ লাগিয়ে। জীবনের একটা লক্ষ্যই যাদের উপভোগ করা তাদের কাছে এটি অবশ্যই ‘মানবিক’, উচ্চ স্ট্যাটাসের অংশ। কিন্তু তারা হয়ত ভুলে গেছেন কলকাতা যেমন ‘বাবু’ আর ভদ্রলোকদের নিয়ে ক্যালকাটা থেকে কলকাতা হয়েছে তেমনি ঢাকাও যে নাম আর পরিচয় খুব বেশি পরিবর্তন করতে পারবে, সেটা বোধহয় ভাবা ঠিক নয়। শুধু এখন এটা হয়ত বলা যাবে ‘আগে কাকনবালারা আসত পতিতালয় থেকে এখন আসে (স্কুল, কলেজ) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।’ তাই, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, ভাবতে বেশ ভালই লাগে। হাজার হাজার পান্না মাষ্টার চড়িয় ছিটিয়ে থাকুক, সমাজে, পরিবারে।
©somewhere in net ltd.