![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
1:
'আক্কেলবন্ধ' হওয়ার পর সমাজে ধর্মীয় লেবাছে যে প্রথা বা অনুশাসন প্রথম আমাকে নাড়া দিয়েছিল সেটা হচ্ছে 'হিলা বিয়ে'।
তখন আমি ক্লাস এইট কিংবা নাইনের ছাত্র। বিটিভিতে একটা সাপ্তাহিক নাটক দেখাল 'হিলা বিয়ের' উপর। যারা বিটিভির সাপ্তাহিক নাটকের সাথে পরিচিত (ঐ সময়ের, বর্তমানের কথা বলতে পারছিনা), তারা জানেন যে সেটা কতটা উন্নতমানের হত। গল্পের দিক দিয়ে, দিক নির্দেশনা সহ অভিনয়গুলোও চোখকে ৪৫ মিনিটের মত টিভির পর্দায় আটকে রাখতে সমর্থ। সুতরাং যখন সাপ্তাহিক নাটক হিসেবে 'হিলা বিয়ের' উপর নাটক দেখাল সেটা যে কারো মনে গভীর রেখাপাত করবে নিঃসন্দেহে। নাটকটির থিম ছিল এইরকম- একজন লোক রাগের মাথায় তার স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয়। কিন্তু পরে যখন নিজের ভুল বুজতে পারে তখন স্ত্রীকে ফিরে পাওয়ার আর উপায় থাকেনা। এদিকে সাবেক স্বামী বেচারা বউকে ফিরে পাবার জন্য জন্য পাগল প্রায়। কিন্তু উপায়? হ্যাঁ, উপায় একটা আছে! গ্রামের মোড়ল ও মসজিদের ঈমামসহ গ্রামের লোক ঠিক করল ঐ তালাকপ্রাপ্তা মহিলাকে (গ্রামের বিখ্যাত) একটি পাগলের সাথে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হবে! পাগলের সাথে বাসর হওয়ার পর ঐ পাগল থেকে মহিলাকে তালাক নিয়ে নেওয়া হবে! ব্যাস! সমস্যার সমাধান হয়ে গেল! ধর্ম ঠিক থাকল, সমাজেরও মাথা থাকল!
কিন্তু সমস্থ নাটকটিতে যে আবহ ছিল তাতে যে কারো ধর্মের এই নিয়মটির(?) বিরুদ্ধে এমনকি (আল্লাহ না করুক) ইসলাম ধর্মের প্রতি বিদ্ধেষ আসার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিশেষ করে নাটকটিতে যে মহিলাকে এই তালাক আর হিলা বিয়ের নামে একটি পাগলের সাথে রাত কাটাতে বাধ্য করার যে করুন চিত্র তুলে ধরা হয়েছে, তাতে যে কাউকে ইসলাম ধর্মের প্রতি বিদ্ধেষী করে তুলার জন্য যথেষ্ট!
সে সময় আমি নিজেও কিছুটা ধন্ধে পরে যাই! যে ধর্ম মানবিকতার কথা বলে সেই ধর্মে এই রকম একটা অমানবিক অনুশাসন কি করে থাকতে পারে! যে ধর্ম নারীকে সর্বোচ্চ সামাজিক ও ধর্মীয় স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে সেই ধর্মে কিনা পুরুষের তালাকের দায় নারীকে হিলা বিয়ের মাধ্যমে শোধ দিতে হয়!
এইরকম প্রশ্নের হাজারটা পোকা নিয়ে সে রাতে ঘুমুতে যাই! পরেরদিন বিকেলে আমাদের মাসজিদের হুজুরের সাথে বিষয়টা নিয়ে আলাপ করি। হুজুর প্রথমে হাসলেন! তারপর ব্যাপারটা আমাকে বুজালেন। জানতে পারলাম আসলে হিলা বিয়ে নামক কোন বিয়ে ইসলামে নেই! আমাদের সমাজে যেটা হিলা বিয়ে নামে পরিচিত আসলে সেটা কিছু মুর্খ মানুষের আবিষ্কার! ধর্মীয় অনুশাসনের কিঞ্চিত অংশ বিকৃতভাবে ডুকিয়ে সম্পুর্ন ব্যাপারটিকে নিজেদের স্বার্থে উদ্ধারের জন্য ব্যবহার করা হয়।
আমি কিছুটা ক্ষোভ নিয়ে বললাম - কিন্তু আপনারাও তো সেটার প্রতিবাদ করেন না, বরং সমর্থন করেন!
হুজুর আবার হাসলেন! আমাকে দেখে কি তোমার সেই রকম মনে হয়!
আমি লজ্জা পেলাম!
না, এর পর আর কোন সন্দেহ নেই! বিষয়টা পরিষ্কার। তবে এই বিষয়টা আমি আমার dairy-তে লিখে রেখেছিলাম! আজ অনেকদিন পর সেই দিনের কথা মনে পড়ল।
সেই ১৪-১৫ বছরে আগের কথা! কিন্তু আজ এখনো শোনা যায় হিলা বিয়ের রসালো গল্প! অনেক ক্ষেত্রে সেটা গোপনেও হয়! ধরে নেওয়া হয় এটি লজ্জার ব্যাপার হলেও ধর্মীয় দৃষ্টিতে শুদ্ধ!
কাউকে দোষ দেই না। বরং এইরকম পরিস্থিতে পড়লে যে কেউ হিতাহিত জ্ঞান হাড়িয়ে এইরকম একটি অধর্মীয় কাজ করতে পারেন। বর্তমানে সমাজে তালাক ব্যাপারটার যথেচ্ছা প্রয়োগ ও অপপ্রয়োগের কারনে ইসলামিক এই অনুশাসনকে অনেকটা 'তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের' পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। ইউকে'তে লাইভ অনুষ্টানে অনেক ভাই বোন কে এই বিষয়ের উপর প্রশ্ন করতে শুনি। প্রায় ক্ষেত্রেই তৃতীয়পক্ষ হিসেবে প্রশ্ন করেন। তবে আমার মনে হয় প্রশ্ন কর্তা বা কর্ত্রী নিজেই এর ভুক্তভোগী! কিন্তু খারাপ লাগে উত্তরদাতার অস্পষ্ট, কোন কোন ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিমুলক উত্তর শুনে। আমি বলিনা উত্তরদাতা প্রশ্নের উত্তর দিতে অসমর্থ বা ঐ রকম কিছু। আসলে তালাক বিষয়টা অনেক ব্যাপক, শুধু পান্ডিত্য বা সুবচন দিয়ে লাইভ অনুষ্টানে একটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য যে সময়টুকু পাওয়া যায় তাতে সেটা ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করা সম্ভব নয়। আমি মনে করি এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন কর্তা বা কর্ত্রীকে স্থানীয় ভাল আলেমের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া!
আমার এ বিষয়ে লেখার অন্যতম একটি কারন হচ্ছে- এখনো কিছু 'উচ্চ মার্গের' লোক এই বিষটাকে টেনে এনে ইসলামের ছিদ্রান্বেষনে প্রবৃত হন। কয়েকমাস আগে মাসূদ আখন্দের সাথে উনার হিলা বিয়ের একটি মর্মান্তিক ঘটনা নিয়ে লিখলে পড়ে আমি ঐ পোষ্টে কমেন্ট করি। এই নিয়ে কমেন্ট চালাচালী হয়! তবে তিনিও শেষে বলেছেন তিনি হিলা বিয়ে সম্পর্কে ইসলাম কি বলে সেটা যানেন না, কিন্তু ধর্ম নিয়ে উনার 'ঘাড় ত্যারামি' অবসান হয়েছে বলে মনে হলনা! তার কথায়-যেহেতু এটি ধর্মীয় ব্যাপার হিসেবে চলে আসছে সেহেতু অবশ্যিই সেটি ধর্মিয়শুদ্ধ, ইসলাম ধর্মে সেটি কোথাও না কোথাও অনুমদিত আছে!! হ্যাঁ, এরকম হাজার হাজার উচ্চ মার্গের লেখক, বুদ্ধিজীবী, ফেইসবুকার,ব্লগার আছেন যারা ইসলামী অনুশানের কয়েকটি বাহ্যিক রুপ দেখে ও পড়ে অতি প্রগতিশীলতা দেখাতে গিয়ে বিভ্রান্ত হন এবং ইসলামি জ্ঞান না থাকা শত শত বিশ্বাসী মুসলিমকে তার বিশ্বাস থেকে বিচ্যুত করেন।
আশা করব, আমরা যে যেখানেই এই রকম জঘন্য প্রথা ইসলামের নামে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে দেখব সেখানেই সেই বিষয়টিকে আটকে দিব। অমানবিক এই প্রথাকে সে ধর্মীয় কিংবা সামাজিক হোক, কোন ট্যাগ দিয়ে জায়েজ করার সামান্য সুযোগ নেই।
এবার দেখা যাক ধর্মীয় দৃষ্টিতে এই কুপ্রথা সম্পর্কে কি বলা আছে! যে প্রথা ধর্মের দোহাই দিয়ে আমাদের নাকের সামনে পেন্ডুলামের মত নৃত্য করছে, তার পোষ্টমর্টেম ধর্মের ছুড়ি দিয়েই করা উচিত!
2.
## এক হাদীসে রাসূল সাঃ এরশাদ করেনঃ ধার করা ষাঁড় কে তা কি আমি তোমাদের বলবো? জনগন বলেন, হ্যাঁ বলুন। তিনি বলেন যে হালালা করে অর্থ্যাত যে ব্যাক্তি কোন তালাক প্রাপ্তা মহিলাকে এজন্য বিয়ে করে যেন সে তার পুর্ব স্বামীর জন্য হালাল হয়ে যায়।' যে ব্যক্তি এরুপ করে তার উপর আল্লাহর লানত এবং যে ব্যাক্তি নিজের জন্য তা করিয়ে নেয় সেও অভিশপ্ত। (সুনানে ইবনে মাজাহ),
একটি বর্ননায় রয়েছে যে এরুপ বিয়ে সম্বন্ধে রাসূল সাঃ জিজ্ঞাসিত হলে তিনি বলেনঃ 'এটা বিয়েই নয় যাতে উদ্দেশ্য থাকে এক এবং বাহ্যিক হয় অন্য এবং আল্লাহর কিতাবকে নিয়ে খেল তামাশা করা হয়। বিয়ে তো কেবল তো ওটাই যা আগ্রহের সাথে হয়ে থাকে।'
## মুসতাদরিক-ই- হাকীমের মধ্যে রয়েছে যে, এক ব্যাক্তি হযরত ওমর রাঃ কে জিজ্ঞাস করেনঃ এক ব্যাক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়ে দেয়। এর পর তার ভাই তাকে (ঐ স্ত্রীকে) বিয়ে করে যেন সে তার ভাইয়ের জন্য হালাল হয়ে যায়। এই বিয়ে কি শুদ্ধ হয়েছে? তিনি (হযরত ওমর) উত্তর করলেনঃ কখনও নয়, আমরা এটাকে নবী সাঃ এর কালে ভ্যবিচার হিসেবে গন্য করতাম। বিয়ে ওটাই যাতে আগ্রহ থাকে। এই হাদীসটি 'মাওকুফ' হলেও এর শেষের বাক্যটি একে মারফু'র পর্যায়ে এনে দিয়েছে। এমনকি অন্য একটি বর্ননায় রয়েছে যে, আমীরিল মু'মিনীন হযরত ওমর রাঃ বলেছেন ঃ যদি কেউ এরুপ কাজ করে বা করায় তবে আমি উভয়কে ভ্যবিচারের শাস্তি দিব অর্থ্যাত 'রজম' করে দিব।
হযরত উসমান রাঃ এর খেলাফতকালে এরুপ বিয়ের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা আনয়ন করেন। এই রকমই হযরত আলী রাঃ, হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ সহ বহু সাহাবাকেরাম রাঃ থেকে বর্নিত আছে।
## মুসনাদে আহমেদের মধ্যে রয়েছে যে, যে স্ত্রী উল্কি করে এবং যে স্ত্রীলোক উল্কি করিয়ে নেয়, যে স্ত্রী লোক চুল মিলিয়ে দেয় এবং যে চুল মিলিয়ে নেয়, যে হালালা করে এবং যার জন্য 'হালালা' করিয়ে নেয়া হয়, যে সুদ গ্রহন করে এবং যে সুদ প্রদান করে, এদের উপর রাসূল সাঃ অভিসম্পাত করেছেন। ইমাম তিরমিযি রাহিঃ বলেন যে সাহাবী রাঃ-দের আমল এর উপরই রয়েছে। হযরত ওমর রাঃ হযরত ওসমান রাঃ এবং হযরত ইননে ওমর রাঃ এর মাজহাবও এর উপর ছিল। হযরত আলী, হযরত ইবনে মাসুউদ রাঃ ও ইবনে আব্বাস রাঃ এর এটাই উক্তি। তাবেঈ ধর্মশাস্ত্রীয়গনও এটাই বলেন।} {তত্ত্ব সুত্র ঃ তাফসীরে ইবনে কাসীর, সুরা বাকারা তাফসীর পৃঃ ৬৪৫ ও অন্যান্য। }
## মুহাম্মদ ইবনে বাশার রাহিঃ হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্নিতঃ রাসূল সাঃ হালালকারী ও যার জন্য হালাল করা হয় উভয়কে (লানত) অভিসম্পাত করেছেন। হাদীস নংঃ ১৯৩৪ আবু দাউদ নিকাহ অধ্যায়.
## মোহাম্মদ ইবন ঈসমাইল ইবন বখতরী ওয়াসিতী রাহিঃ হযরত আলী রাঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেনঃ রাসূল সাঃ হালালকারী ও যার জন্য হালাল করা হয় (উভয়কে) লানত করেছেন। পুর্বোক্ত হাদীস নং ১৯৩৫.
## ইয়াহইয়া ইবন ওসমান ইবন সালীহ মিসরী রাহিঃ উকবা ইবন আমীর রাঃ থেকে বর্নিত। তিনি বলেনঃ রাসূল সাঃ বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে ভাড়াটে পাঠার ব্যাপারে খবর দিব নাকি? তাঁরা বললে, হ্যাঁ ইয়া রাসুলাল্লাহ। তিনি বললেন, সে হল হালালকারী। আল্লাহ হালালকারী ও যাকে হালাল করা হয় এবং যার জন্য হালাল করা হয়, উভয়কে লানত করেছেন।
পুর্বোক্ত হাদীস নং ১৯৩৬.
©somewhere in net ltd.