![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাহিত্য আড্ডা জমে। সবাই আমন্ত্রিত।
সাত ফেয়ারীর সাথে আমার জীবনের অনেক কিছুই জড়িয়ে আছে। বিশেষ করে ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে আমার জন্ম হওয়ায় দিনটির গুরুত্ব আমার কাছে বেরে যায়। আমি কোনদিনই আমার জন্ম দিবস পালন করি নি। কাউকে করতেও বলি নি। কেউ করতে বললেও সহযোগিতার আশ্বাস দিতে পারিনি। কারণ আমি মনে করি না আমার জন্ম পৃথিবীর ইতিহাসের দিক থেকে খুব গুরুত্বপূর্ণ কোন ঘটনা। তবু কেউ কেউ ভালোবাসার পরশে প্রতি জন্মদিনে আমাকে স্মরণ করিয়ে দেন আজ যে আমার জন্মদিন। আমার খুব লজ্জা হয় একথা ভেবে-জন্ম না হলেই তো ভালো ছিলো। সিলেট কেন্দ্রিয় মুসলিম সাহিত্য সংসদের ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের কার্যকরি কমিটিতে সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদকের দায়িত্ব লাভের পর আমি যখন প্রথম সাহিত্য আসর করতে যাচ্ছি সেদিন বৃহস্পতিবার, সাত ফেব্রুয়ারী ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ। আসরটা ছিলো সাত শ সাতষট্টি তম আসর। আমার পূর্বে এই দায়িত্ব যারা পালন করেছেন তারা হলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় মাওলানা নুরুল হক, কবি রাগিব হোসেন চৌধুরী, আব্দুল হামিদ মানিক, সেলিম আউয়াল, নাজমুল আনসারী। শ্রদ্ধেয় সেলিম আউয়াল এবং স্নেহভাজন আব্দুল মুকিত অপি চেয়ে ছিলেন আমার শুরুর দিনে আসরে একটু রজনীগন্ধা ঘ্রাণ ছড়াতে। এটাই বর্তমান পৃথিবীর রুসূম। আমার কাছে বিষয়টি কেমন যেনো ভালো লাগলো না। আমি সেলিম ভাইকে বিনয়ের সাথে বললাম যদি আমি দায়িত্ব পালনে সফল হই তবে বিদায় দিনে রজনীগন্ধার বাজার বসিয়ে দেবো ইনশাল্লাহ। আজ না। সেলিম ভাই অন্য রকমের একজন সুন্দর মনের মানুষ। তাঁর আমার প্রায় ঝগড়া হয়, দ্বিমত হয়, কিন্তু হিংসা হিংসি হয় না। এই গ্রহে আমাকে যারা অকৃতিম ভালোবাসেন আমার বিশ্বাস সেলিম আউয়াল তাদের একজন। প্রেমিক যখন প্রেমিকাকে আঘাত করে তখন সে ঝুনুক নিরবে সহে যায়। সেলিম ভাই মাঝেমধ্যে আমাকে আঘাত করলে আমি কিন্তু নিরবে সহে যাই না, বলে ফেলি। কারণ নিরবে সহে গেলে তাঁর সাথে আমার দূরত্ব হয়ে যাবে। আর, তার আমার দূরত্ব মানে মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশে কিছুও না হয় ক্ষতি হওয়া। সেলিম ভাইকে যখন আমি রজনীগন্ধার বিষয়টি বাদ দিতে বললাম তখন তিনি কিছুটা নারাজ হলেন। গুরুজনকে নারাজ করতে নেই, তাই ক্ষমা চাইলাম। আমার খুব ইচ্ছে ছিলো প্রথম দিনে-ই আসরটি সময় মতো শুরু করবো। কিন্তু তখনও মামুন হোসেন বেলাল আর বাসিত ইবনে হাবিব ছাড়া কেউ আসেন নি। অতঃপর একজন একজন করে মনসুর মোস্তফা, আসিফ আযহার শিপু, আব্দুন নুর, মাহবুব হোসেন, সেলিম আউয়াল, আমিনা শহিদ মান্না, নাজমুল আনসারী, মুকুল চৌধুরী, আতোয়ার রহমান, মাহমুদ পারভেজ, রূপক রহমান, শাহ নজরুল ইসলাম, শামীমা কালাম প্রমূখ আসলেন।
সেলিম ভাই এসে-ই বাসিত ইবনে হাবীবের দিকে দৃষ্টি দিয়ে আমাকে আঘাত করলেনÑপয়লাদিনই পাইনশা করি দিলায়। অপরাধ স্বীকার করে নীরবতা অবলম্ভন করলাম। আমাকে সভাপতি করে শুরু হলো আসর। যদিও তা আমার সভাপতিত্বে প্রথম আসর নয়, ইতোপূর্বে এখানে আমি অসংখ্য আসরে সভাপতিত্ব করেছি। তবে এই দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম। মনসুর মোস্তফার কোরআন তেলায়াতের মাধ্যমে আসরটি শুরু হলো। প্রথম পর্বে স্বরচিত লেখা পাঠ করলেন লেখকেরা। রূপক রহমান পাঠ করলেন তাঁর ‘অসমাপ্ত ধারাবাহিক’ শীর্ষক গল্পটি, আমিনা শহীদ চৌধুরী মান্না পাঠ করেন তাঁর ‘মনোহর পাখি’ শীর্ষক কবিতা, ছোটবন্ধু খান মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন পাঠ করেন তাঁর ‘কেমুসাস’ শীর্ষক কবিতা, মামুন হোসেন বেলাল পাঠ করেন তাঁর ‘ মোদের নবী’ শীর্ষক কবিতাটি। শামীমা কালাম সহ আরও কেউ কেউ কবিতা পাঠ করলেও তা আমার হাতে না পৌঁছায় আমি উল্লেখ করতে পারছি না বলে দুঃখিত।
দ্বিতীয় পর্বে শুরু হলো অনুভুতি প্রকাশ এবং আলোচনা সভা। উপস্থাপক মামুন হোসেন বিলাল প্রথমেই তাঁর অনুভুতিতে বলেন-মাগরিবেব নামাজের সাথে সাথে আসর শুরু করতে পারলে ভালো হয়। মাঝেমধ্যে আসরের আলোচক পরিবর্তন করলে ভালো হয়। আল-ইসলায় সাহিত্য আসর থেকে লেখা প্রকাশ যেনো করা হয়। মনসুর মোস্তফা বলেন-লেখার সমালোচনায় চুলচেরা বিশ্লেষণ হলে লেখকরা উপকৃত হতেন। রূপক রহমান বলেন-মাঝেমধ্যে অগ্রজরা বসে অনুজদের বক্তব্য শোনলে বুঝতে পারতেন অনুজদের চোখে অগ্রজরা কেমন। আসিফ আযহার শিপু বলেনÑসাহিত্য আসরের আরো প্রচার প্রয়োজন। মাহমুদ পারভেজ বলেন-সময় মতো আসর শুরু করতে পারলে ভালো হয়। মাহবুব হোসেন বলেন-অনুজদেরকেও কথা বলার সুযোগ দিয়ে যোগ্য করে গড়তে হবে এবং লেখার রিভিউ শিখাতে হবে। আতোয়ার রহমান বলেন-নিগূড় তত্ত্ব কথা আলোচনায় আসা প্রয়োজন। শামীমা কালাম বলেন-সবাই যেনো স্বাধীনতা ভোগ করে এবং আসরে সবাইকে যেনো সুযোগ দেওয়া হয়। আমিনা শহীদ মান্না বলেন-মুসলিম সাহিত্য সংসদে মুসলমানী থাকতে হবে। তাই কোরআন তেলাওয়াতের পাশাপাশি যেনো এখানে হাদিস থেকেও কিছু পাঠ করা হয়। অতঃপর নির্ধারিত আলোচকদের আলোচনার পালা।
বাসিত ইবনে হাবিব তাঁর বক্তব্যের শুরুতে শিক্ষক সুলভ অভ্যাসে আসরের সর্বকণিষ্ট সদস্য খান মুহাম্মদ মঈন উদ্দিনকে দাঁড় করিয়ে তাঁর ‘কেমুসাস’ কবিতার জন্য প্রশংসা করে বলেন-বাংলাদেশের একজন বিশিষ্ট্য ছড়াকার খান মোহাম্মদ মঈন উদ্দিন, আমরা আশাকরি তুমিও তাঁর মতো বড় সাহিত্যিক হবে। তোমার ‘কেমুসাস’ কবিতার মধ্যে মৌলিকত্ব আছে। শামীমা কালাম চলে যাওয়ার কথা বলায় বাসিত ইবনে হাবিব একটু রসালু নারাজি প্রকাশ করে বলেন-আমি আপনার কবিতার আলোচনা এখন করবো না। আজকের দিনে আপনি বলতে পারলেন চলে যাওয়ার কথা, তা খুব-ই দুঃখজনক। অতঃপর তিনি আমিনা শহীদ চৌধুরী মান্নার ‘মনোহর ফুল’ কবিতার আলোচনা করেন। এই কবিতা মূলত প্রথমে-ই সেলিম আউয়াল এই দিনকে সুন্দরদিন বলে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন কিশোর বন্ধু খান মোহাম্মদ মঈন উদ্দিনকে তাঁর ‘কেমুসাস’ কবিতার জন্য। তিনি তাঁকে বই পাঠের প্রতি উৎসাহিত করে বলেনÑলেখালেখির পূর্ব শর্ত বই পড়া। তুমি পাঠ্য পুস্তকের পাশাপাশি মুসলিম সাহিত্য সংসদ থেকে বই নিয়ে পড়বে। সেলিম আউয়াল আরো বলেন-‘আজকে সবচাইতে সৌভাগ্যবান ব্যক্তি হলেন মুহিত চৌধুরী নয়, সৈয়দ মবনু। যদিও তাদের দু’জনের নামের শুরুতে ‘ম’ অক্ষর আছে। কিন্তু সৈয়দ মবনুর ‘ম’টা আজকে বড়ই মধুর। মধুর এজন্য, সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক হওয়ার পর সৈয়দ মবনু প্রথম যে সাহিত্য আসরের সূচনা করছেন তার শুরুতেও লাকি সেভেন এবং শেষেও লাকি সেভেন। বিষয়টি আমাকে আকর্ষন করেছেন শামীমা কালাম। জানি না এখানে সৌভাগ্যের কি আছে? দেখা যাক। লাকি সেভেন, ভালোবাসা দিবস ইত্যাদি এই বাংলাদেশের সংস্কৃতি নয়, তা পাশ্চাত্য থেকে আবিস্কার করেছেন যায়যায়দিনের সম্পাদক শাফিক রেহমান। আরেকটা লাকি সেভেন হলো সাত ফেব্র“য়ারী সৈয়দ মবনুর জন্মদিন।’ সবাই হাততালি দিতে শুরু করলেও সেলিম আউয়াল আলোচনাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে গেলেন রূপক রহমানের ‘অসমাপ্ত ধারাবাহিকতা’ শীর্ষক গল্পের সূত্রধরে। তিনি রূপক রহমানের পাঠের প্রশংসা করে বলেন-প্রকৃত অর্থে পড়ার স্টাইলটা খুব জরুরী। আমরা অনেকে করি কি এখানে বসে জটপট চার লাইন লিখে পাঠের চেষ্টা করি, তা আসলে উচিৎ না। পঠনটা খুব জরুরী। শামীমা কালাম যখন কবিতা পাঠ করে তখন মনে হয় যেনো হৃদয়ের তাওে স্পন্দন তোলে তিনি পড়ছেন। তা আমার খুব ভালোলাগে। সবার উচিৎ নিজের লেখাকে আগে-ই পাঁচ-সাতবার পাঠ করা। সৈয়দ শামসুল হকের মতে কবিতা উচ্চসুরে পড়তে হবে। মোটকথা আবৃত্তিটা খুব জরুরী। পঠনপদ্ধতিটা খুব জরুরী। রূপক রহমান গল্পে প্রচুর আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার করায় সেলিম আউয়াল তার প্রশংসা করে বলেন-এই গল্পে গল্পকার কাহিনী রচনায় সফল হয়েছেন। একটা মাতাল লোক মাতলামী করতে করতে তার স্ত্রীকে তালাক দিলে প্রশ্ন আসে হিল্লার। সেলিম আউয়াল তখন মাতালের তালাক এবং হিল্লার বিষয়টি মাওলানা শাহ নজরুল ইসলামের কাছে ইসলামী ব্যাখ্যা চেয়ে ভিন্ন প্রসঙ্গে গিয়ে বলেন-আমাদের জীবনটাকে আমরা যেনো সংসদ কেন্দ্রিক করতে পারি। অতঃপর তিনি উপস্থাপক মামুন হোসেন বেলালকে বলেন লুকিয়ে রাখা ফুলের তোরা নিয়ে আসতে। বেলাল অফিস থেকে ফুলের তোরা নিয়ে আসলে সেলিম ভাই আমার জন্মদিনকে শুভ করলেন সবকে নিয়ে এই তোরা আমার হাতে দিয়ে। সাথে আমিনা শহীদ চৌধুরী মান্না আমাকে ও নাজমুল আনসারীকে বেশ কিছু কলম উপহার দিলেন। আমিও কিন্তু গোপনে প্রচুর কলম নিয়ে ছিলাম লেখকদেরকে উপহার দিতে। তা বের করে বিতরণ করলাম। সত্যি আমি আশ্চর্য হলাম সেলিম ভাইয়ের এই গোপন প্রেমে।
©somewhere in net ltd.