নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, সিলেট

প্রাচীনতম সাহিত্য প্রতিষ্ঠান। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত

কেমুসাস

প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাহিত্য আড্ডা জমে। সবাই আমন্ত্রিত।

কেমুসাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

কবিতার জন্য আমাদেরকে সমকাল ধারণ করতে হবে-----কবি শিকদার মুহাম্মদ কিবরিয়া

২৯ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১:১৮

২১ মার্চ বৃহস্পতিবার ২০১৩ খ্রিস্টাব্দে সন্ধ্যায় কেমুসাসের ৭৭২তম সাহিত্য আসর শুরুর আগে ‘উপসংহার’ নামক একটি সাহিত্য কাগজের মুড়ক উম্মোচন করা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন কেমুসাসের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক সৈয়দ মবনু। প্রধান অতিথী ছিলেন কেমুসাসের সাধারণ সম্পাদক এবং দৈনিক সিলেট ডাকের নির্বাহী সম্পাদক আবদুল হামিদ মানিক। অতঃপর মামুন হোসেন বিলালের পরিচালনায় এবং সৈয়দ মবনুর সভাপতিত্বে শুরু হয় স্বরচিত লেখাপাঠের আসর। আজকের আসরের মূখ্য আলোচক নব্বই দশকের শক্তিমান কবি শিকদার মুহাম্মদ কিবরিয়া। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি মুকুল চৌধুরী, গল্পকার সেলিম আউয়াল, কবি মুহিত চৌধুরী, জিটিভির সিলেট প্রতিনিধি এমদাদ হোসেন দিপু। লেখাপাঠের শেষে যথাক্রমে আলোচনা করেন এমদাদ হোসেন দিপু, কবি মুহিত চৌধুরী, গল্পকার সেলিম আউয়াল, কবি মুকুল চৌধুরী, কবি শিকদার মুহাম্মদ কিবরিয়া। সবশেষে সভাপতির বক্তব্য।

জিটিভির সিলেট প্রতিনিধি এমদাদ হোসেন দিপু ১৯৯১- ৯২ থেকে কেমুসাসের সাথে সম্পর্ক এবং সাংবাদিকতার শুরুর দিকটা স্মৃতিচারণ করে বলেন- এই সাহিত্য সংসদ ভাবলে কিছু মানুষের চেহরা চোখে ভেরেস উঠে। আমার সংবাদিকতার শুরুর দিকে যাকে পেয়েছিলাম তিনি হলেন গল্পকার সেলিম আউয়াল। অতঃপর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে কাজ করে আজ জিটিভিতে আছি। আজ আমার অনুভতিটুকু ভাগাভাগি করতে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়েছি। আজকে দেশে অবস্থার প্রেক্ষাপটে আমি আমার আত্মপরিচয় খুঁজতে এই সংসদে আসি। এখানে এলে আমি আমার দর্পণটি পাই, আমি আমার উচ্চারণটি শোনতে পাই। আমি দীর্ঘ সময় থেকে এখানে বসে বিভিন্নজনের লেখা শোনছিলাম আর নীরবে বসে নিজকে আবিস্কার করছিলাম। আমি বিশ্বাস করি আপনারা লেখক-সাহিত্যিকেরা হলেন এদেশের সুস্থ্য সংস্কৃতির উজ্জল প্রতিনিধি। আমরা আপনাদের লেখা পড়তে চাই। আপনাদের বিশ্লেষণ জানতে চাই। এই যে সুস্থ্য এবং অসুস্থ্যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে এতে সুস্থ্যকে জয় করতেই হবে। আজকে আমাদের সাংবাদিকরাও অনেকটা জিম্মি কর্তৃপক্ষের কাছে। দেখা যায় ১২ জনের অনুষ্ঠান কভারের জন্য ২৪জন সাংবাদিকের উপস্থিত থাকতে হয়, আর লাখ লাখ মানুষের সমাবেশও রেকর্ড করে পাঠালে কভার পাচ্ছে না। এভাবে তো চলতে পারে না। এখানে সবাইকে দাঁড়াতে হবে। আমি আমার অনুভতিটুকু প্রকাশ করতে এখানে আজ এসেছি। স্মরণ রাখবেন, মুসলিম সাহিত্য সংসদ যে নৌকার কাণ্ডারী, আমিও সেই নৌকার একজন যাত্রী। সেলিম আউয়াল, মুহিত চৌধুরী, সৈয়দ মবনু’রা এই নৌকার কান্ডারী হয়ে দূর্গমপথ অতিক্রমের চেষ্টা করছেন। আমিও আছি এই পথে আপনাদের সাথে।

কবি মুহিত চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে ভূমিকার শেষে জিটিভির সিলেট প্রতিনিধি এমদাদ হোসেন দিপুর বক্তব্যের সাথে সহমত প্রকাশ করে বলেন-আসলেই আমরা একটা র্দুসময় অতিক্রম করছি। আজ গোটা দেশের মানুষ বিভিন্নভাবে জিম্মি হয়ে আছে প্রভাবশালীদের কাছে। আমরা সরকারী সুযোগ-সুবিধার লোভে হলুদ সাংবাদিকতা করছি। আজও আমাদের সঠিক সংবাদ জানার জন্য বিদেশী মাধ্যমের আশ্রয় নিতে হয়। আমি আজ এখানে যা পাঠ করেছি তা যেমন ছিলো অমলোবচন, এখন কিছু অমলোবচন কথাও বলতে চাই। আজকে এখানে যারা লেখা পাঠ করেছেন তা সার্বিকভাবে ভালো হয়েছে। বিশেষ করে আমার কাছে ভালো লেগেছে। বিশেষ করে লিটেলম্যাগের আলোচনা করেছেন যে বন্ধু তিনি অত্যন্ত সাহসী কিছু উচ্ছারণ করেছেন তার লেখায়। এই লেখা তিনি আমাদের লেখালেখিতে সিলেটি উচ্চারণের যে ত্র“টির কথা বলেছেন তার সত্যতা আমি স্বীকার করছি। কিন্তু আমি তাকে এবং সবাইকে বলবো, আপনারা যখন বাংলা উচ্চারণ করেন তখন সে সময় শুদ্ধতার দিকে একটু নজর রাখবেন। অনেকের ভালো লেখাও শোনতে ভালো লাগেনি শুদ্ধ উচ্চারণের অভাবে। যেমন আমাদের অনেকে ভালোবাসার উচ্চারণে বালোবাসা করেছেন। স্মরণ রাখতে হবে, একটি লেখা যদি সুন্দরভাবে পাঠ করা যায় তবে তা মানুষের হৃদয় স্পর্শ করবে। আজকের জমজমাট সাহিত্য আসরে যারা এসেছেন আমি সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

সেলিম আউয়াল বলেন আজ আমরা বিরাট সংকটে আছি। তবুও সত্যের পথে আমাদেরকে দৃঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। মিডিয়া সম্পর্কে আজ এমদাদ হোসেন দিপু সাহস নিয়ে যে কথা বলেছেন তা আমাদেরকে ভাবতে হবে। মিডিয়াগুলো আজ একটি গ্রুপের ছোট সংবাদকে বড় করে দেখাচ্ছে আর অন্য গ্র“পের বড় সংখ্যাকে ছোট করে দেখানো হচ্ছে। আমি তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আশির দশকের শক্তিমান কবি মুকুল চৌধুরী আজকের সাহিত্য আসরকে জমজমাট উল্লেখ করে আনন্দের সংবাদ দেন কবি আফজাল চৌধুরীর ‘জালালউদ্দীন রুমীর কবিতা’ গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে বলে। তিনি আজকে পঠিত লেখাগুলোর অধিকাংশকে ভালো উল্লেখ করে মুহিত চৌধুরীর সাধুভাষায় লিখিত ব্যঙ্গ রচনাকে ব্যতিক্রমধর্মী এজন্যই বলেন যে, এখন আর কেউ সাধুভাষায় লিখে না। তিনি বলেনÑএক সময় দৈনিক ইত্তেফাকে সংবাদ থেকে সম্পাদকীয় পর্যন্ত সাধুভাষায় লিখা হতো, বর্তমানে শুধু সম্পাদকীয়টা সাধুভাষায় লেখা হয়। ব্যঙ্গ রচনার জন্য যে তীর্যকতা প্রয়োজন, এতে হয়তো তা নেই কিন্তু তবুও সমসাময়িক ঘটনার উপর বেশ কিছু তীর্যক কথা আছে। সালেহ আহমদ ফুয়াদের লিটেলম্যাগ নিয়ে আলোচনার সমালোচনায় কবি মুকুল চৌধুরী বলেনÑলিটলম্যাগের আলোচনা মূলগ্রন্থ থেকে একটু বেশি হয়ে যায়। সালেহ আহমদ ফুয়াদকে বলবোÑকম কথায় বেশি কথা বলার চেষ্টা করতে হবে। তিনি পশ্চিম বঙ্গের কবিতার সাথে আমাদের কবিতার ব্যাপক ব্যবধান উল্লেখ করে বলেন- আমাদের গল্প এখনও পশ্চিম বঙ্গ ঘেষা। সবশেষে তিনি আগামী সহিত্য আসরগুলোকে এমন জমজমাট হওয়ার প্রত্যাশা রেখে বক্তব্য শেষ করেন।

নব্বই দশকের শক্তিমান কবি শিকদার মুহাম্মদ কিবরিয়া বলেন-সাহিত্য হলো আত্ম-উপলব্ধির শৈল্পিক মাধ্যম। আর সাহিত্যের সবচাইতে শ্রেষ্টতম শিল্প হচ্ছে কবিতা। শ্রদ্ধেয় কবি আল-মাহমুদ বলেছেন-কবিতা হচ্ছে কবিতা হচ্ছে আত্ম-উপলব্ধির শৈল্পিক ভাষায়ন। শুধু মনের ভাষাকে ছন্দবদ্ধ করে প্রকাশ করার নাম কবিতা নয়। তা অতি প্রাচীনকালে ছিলো। আপনারা জানেন গদ্যের জন্ম সা¤প্রতিককালে। এর আগে আমাদের কেচ্ছা-কাহিনী, গল্প পদ্যাকারে লেখা হতো। আর এগুলোই সাহিত্য বলে স্বীকৃতি পেয়েছে। আজ আর ছন্দমিল-আন্তমিলের সরল বক্তব্য দিয়ে কবিতা বা সাহিত্য হয় না। সমকালে কবিতা অনেক কিছু। কবিতার জন্য আমাদেরকে সমকাল ধারণ করতে হবে। সমকালের কবিতার কৌশল রপ্ত না করে কবিতা লিখলে সেগুলো অবশ্যই টিকে থাকবে না। আমি কিছুদিন থেকে লক্ষ্য করছি, বিশেষ করে আমাদের সিলেটের দৈনিক পত্রিকাগুলোর সাহিত্যপাতায় যে সব কবিদের কবিতা প্রকাশ হয় তা পড়ে মনে হয় আমাদের লেখকেরা খুব চর্চা না করেই, খুব একটা লেখাপড়া না করেই কবিতা লিখে যাচ্ছেন। আর সাহিত্যপাতার সম্পাদকেরা কোন বাচ-বিচার না করে, তাদের সম্পাদনার কলম ব্যবহার না করেই এগুলো প্রকাশ করে যাচ্ছেন। যার ফলে সাহিত্যপাতায় যেসব কবিতা ছাপা হচ্ছে সেগুলোতে অনেক দুর্বলতা, অনেক দন্যতা থেকে যাচ্ছে। অনেকে দৈনিক পত্রিকায় কবিতা ছাপা হলেই মনে করেন কবিতা হয়ে গেছে, তা কিন্তু নয়। এদিক থেকে আমি পরামর্শ দেবো যারা কবিতা চর্চা করছেন তাদেরকে, তারা যদি সাহিত্যের ছোট কাগজগুলো পড়েন তবে তারা কবিতার সমসাময়িকতা, কৌশল, শৈল্পিকতা ধারণ করতে পারবেন। যাক আমি ফিরে আসি লেখার আলোচনায়। আমার হাতে প্রথম যে লেখাটি রয়েছে তা মাহবুব হোসেনের লেখা ‘আমার সাহিত্য আসর’, এলেখা নিয়ে আমি খুব একটা আলোচনা করতে চাই না, কারণ সময় অনেক চলে যাবে। এই লেখাটি মূলত প্রতিবেদনধর্মী লেখা। তা কোন একটি সাহিত্য আসরকে নিয়ে লেখা। এই প্র”েষ্টা যদিও প্রশংসনীয় তবে লেখককে বলবো গদ্যের মানকে আরেকটু উন্নত করার চেষ্টা করতে হবে। এরপর কবিতা রয়েছে আব্দুশ শহীদ মাটি’র ‘স্বাধীনতা’। এই কবিতাটি আমাদের সমসাময়িক জাতীয় যন্ত্রণার প্রেক্ষাপটে লেখা। তিনি এত চেষ্টা করেছেন সমকালিন সমস্যাগুলোকে চিহ্নত করতে। এতে তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে সময়ের ঘটনাগুলোর মূল্যায়ন আমরা লক্ষ্য করি। কবিতাটি খুব যে ভালো হয়েছে তা আমি বলবো না। তবে একবারে ফেলনা নয়। সে লিখে গেলে আরো ভালো লিখতে পারবে এই আশা করি। এরপর আমরা শোনেছি সালেহ আহমদ ফুয়াদের ‘মুক্তস্বর লিটলম্যাগ বা রাত যখন নিগ্রো যুবতির ঠোঁটের মতো’ সমালোচনামূলক লেখাটি। এই লেখা অবশ্যই অনব্ধ হয়েছে। আমরা তার বক্তব্যের সাথে একমত প্রকাশ করে মুকুল চৌধুরীর সাথে সুর মিলিয়ে বলবো-একটি লিটেলম্যাগের সমালোচনা যদি লিটেলম্যাগ থেকে বড় হয়ে যায় তা মানানসই হয় না। লেখককে আরেকটু যতœশীল, আরেকটু সতর্ক হতে হবে। এরপর আমরা শোনেছি মুহিত চৌধুরীর লেখা চমৎকার একটি রম্যলেখা। তিনি মূলত কবি। আমি তাঁর কোন গদ্য এই প্রথম পড়লাম। তিনি তা সাধু ভাষায় রচনা করেছেন। রম্য রচনা সাধু ভাষাতেই লিখতে হবে তা আমার জানা নেই। তবে অনেকদিন পর সাধুভাষা শোনে বেশ ভালো-ই লাগলো। তবে আমার সাথে কেউ দ্বিমত প্রকাশ করলেও আমি বলবোÑজীবন ও জগত হচ্ছে প্রগতিশীল, আমাদের সাহিত্যও কিন্তু এগুচ্ছে। এই সময়ের অভাবের দিনে আমরা সাধুভাষা চর্চা করে আমাদের সময়কে নষ্ট করতে চাই না। তাই আমি মনে করি সাধুভাষায় যদি কিছু লিখতে হয় তাতে সময়, কালি, কাগজ ইত্যাদির অপচয় হয়। তাই এবিষয়ে আমি আর আলোচনা করতে চাই না। ইত্তেফাককে আমরা সাধুবাদ জানাই তারা সাধু ছেড়ে চলিতে আসার জন্য। এরপর আমরা আমিনা শহীদ চৌধুরী মান্নার ‘স্বাধীনতা মাসে’ কবিতা শোনেছি। তিনি তার লেখায় সমসাময়িক বিষয়কে আমাদের ধর্মের আলোকে উপস্থাপিত করতে চেয়েছেন। তার কবিতাটি সরল এবং সাবলিল। এখানে কবিতার মুন্সিয়ানার অভাব আছে, তিনি আরেকটু যতœশীল হলে ভালো হবে আশা করি। এরপর আমাদের হাতে রয়েছে রাশেদ মাসুদ অনিদের কবিতা। তার কবিতায় সাবলিলতা আছে, উত্তরাধুনিকতার কিছুটা হলেও ছোঁয়া আছে। তবে শব্দ প্রয়োগ, বানান, উপমা প্রয়োগ এবং বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে, বানানের ক্ষেত্রে আরও যতœশীল হতে বলবো। এরপর আমরা আলোচনা করবো শরিফ আবু বকরের ‘শব্দের বিলবোর্ডে মায়াবী মুখ’। তাঁর কবিতায় শব্দ প্রয়োগ খুবই সাবলিল। উত্তরাধুনিক কলাকৌশল রপ্ত করতে তিনি খুব ভালোই চেষ্টা করেছেন। আমি তার কবিতায় সম্ভাবনা দেখছি। মামুন হোসেন বিলালের ‘শহর থেকে একটু দুরে' শীর্ষক কবিতা একটু সরল আঙ্গিকের। তিনি তার নিজস্ব অনুভতি ব্যক্ত করার চেষ্টা করেছেন। তাকে বানান এবং ছন্দের দিকে আরো যতœশীল হতে হবে। যেমন তিনি লিখেছেন ‘ শাপলা গোলাপ যুই চ্যামেলী/ চারদিকে রয় ভরে/ যেদিকে, রাখবে যে চোখ/ মনটা সুখে ভরে।’ এই যে ‘ভরে' দিয়ে অন্তমিল দিতে চেষ্টা করেছেন তা একটি দুর্বল প্রচেষ্টা। তিনি এখানে ভিন্ন একটি শব্দ ব্যবহার করতে পারতেন। ছন্দে যারা লিখেন তাদেরকে আমি বলবো ছন্দের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। শুধু ভরে, ধরে, নড়ে ইত্যাদির মিল দিলেই ছন্দ হয়ে যায় না। অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্তের ব্যবহারের নিয়মগুলো জানতে হবে। ‘আর কত নিভে যাব আমি’ কবিতায় শাহাবুদ্দিন আহমদ বলেছেন-‘ আর কত নিভে যাব আমি/ জ্বলন্ত প্রদীপ ছিলাম/ এখন পরন্ত সূর্য্যাস্তের মত হয়ে গেছি আমি/ এসে দেখো প্রিয়তমা/ সব শেষ।’ এখানে ‘পরন্ত’ বানান ভুল। শুদ্ধ হলো-পড়ন্ত। এই কবি গদ্যের আঙ্গিকে একটি ছন্দবদ্ধ কবিতা লেখতে চেষ্টা করেছিলেন বলে আমার মনে হচ্ছে। যদিও খুব ভালো হয়েছে বলা যাবে না। তাকে আরেকটু যতœশীল হতে হবে। দেশাত্মবোধক কবিতা ‘দূর্বার তরুন’ লিখেছেন মজলুম কবি সৈয়দ কামরুল হাসান। এই কবি নিজকে কেনো যে মজলুম হিসেবে সনাক্ত করেছেন সেটা অবশ্য আমার জানা নেই। তিনি লিখেছেন- আমরা নবীন দীপ্ত অরুণ/ আমরা তরুণ দল/ সোনার স্বদেশ গড়তে সবাই/ এগিয়ে যাই চল।’ শোনতে বেশ ভালোই লাগলো। কিন্তু তাকে স্মরণ রাখতে হবে এটা নজরুল কিংবা সুকুমার রায়ের যুগ নয়। আমি তাকে বলবো আধুনিককে ধারণ করে ছন্দ ব্যবহার করতে হবে। মাসুদা সিদ্দিকা রুহী’র কবিতা ‘নীল সময়’। তার এ কবিতা এবং আমার পড়া অন্যান্য কবিতায় দেখেছি একনিষ্টতা আছে, নিমগ্নতা আছে। তবে তাকে আরেকটু নিমগ্ন হতে হবে, যতœশীল হতে হবে। সুফিয়া জেইমিন ডেইজির ‘অন্তরাত্মার সেলাই’ কবিতা কিংবা তার অন্যান্য কবিতা পড়ে আমার যতটুকু মনে হয়েছে এই কবি চিত্রকল্প নির্মানে তিনি বেশ দক্ষতা অর্জন করেছেন। একটি দিকে তার বেশ ঘাটতি সবার দৃষ্টিতে লাগছে, তা হলো বাক্য গঠনের ক্ষেত্রে। আশা করি আমার বোনটি নারাজ না হয়ে বিষয়টির দিকে দৃষ্টিপাত করলে একদিন বাংলা সাহিত্যে শক্তিমান কবি হিসেবেই টিকে থাকবেন। ইন্জিনিয়ার নাসির উদ্দিন লিখেছেন ‘ কেমুসাস’ শীর্ষক কবিতা। তিনি আমার অত্যন্ত পরিচিতজন, ভালো গদ্য লিখেন। আমি তাকে বলবো ভাই কবিতার জগতে আমরা আছি, আপনি এখানে এসে আর ধাক্কাধাক্কি করবেন না। গদ্য চালিয়ে যান। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি, আপনার চিন্তার খবর আমরা গদ্যের মধ্যদিয়ে ভালোই পাবো বলে আমি বিশ্বাস রাখি। ‘ভালোবাসা’ নামক কবিতা লিখেছেন সৈয়দ মুকতাদা হামিদ। ভালোবাসা শব্দকে তিনি যেমন সহজভাবে শিরোনাম করেছেন তেমনি তার কবিতাটাও সহজ। তিনি তার সাবলীল বক্তব্যের মধ্যদিয়ে কবিতাটি লিখতে চেয়েছেন, তবে কবিতার কৌশল, কবিতার ভঙ্গিমা তাকে আরেকটু রপ্ত করতে হবে। শামীমা কালামের ‘কপাটক’ কবিতায় তিনি তার অন্তরগত কষ্টের কথা বলতে চেয়েছেন। অন্তরগত কষ্টের কথা বলতে গিয়ে তিনি ক্ষেত্র বিশেষ নিজস্ব ভঙ্গিমা ব্যবহারের চেষ্টা করেছেন। আমি মনে করি তিনি উপমা প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরেকটু যতœশীল হলে ভালো কবিতা লিখতে পারবেন। আমার হাতে সর্বশেষ কবিতা ‘তালের রস’, যা আমাদেরকে চমৎকার রস দিয়েছে। আমি এই কবিতার কবি সৈয়দ মবনুর কবিতার অনেক আগেই পাঠক। তিনি অনেক গবেষণাধর্মী লেখালেখি করেন। তার অনেকগুলো বইয়ের মধ্যে দুটি কবিতার বইও রয়েছে। গদ্যে যেমন তার হাত রয়েছে, কবিতায়ও তার হাত রয়েছে। আজকের কবিতা সহ তার আরো বেশ কিছু কবিতায় আমি লক্ষ্য করেছি যে, উত্তরাধুনিক কবিতার যে কিছু বৈশিষ্ট্য আছে, বিশেষ করে কবিতার মধ্যে ধর্মীয় মিথের ব্যবহার (সবগুলো হয়তো মিথ নয়, কোন কোনটা হয়তো সত্য ঘটনা)। যেমন তিনি বলেছেন-‘ জলচোখে তারে খুঁজে বেফানা ফানাফিল্লা হই’, এই যে বেফানা ফানাফিল্লার ফ এবং ফ’র মধ্যে একটা অনুপ্রাস আছে, শব্দ ঝংকার আছে। এটা ব্যবহারের দিক থেকে যেমন খুবই পন্ডিত্যের অধিকারি আবার ‘বেফানা ফানাফিল্লা’ হলো উত্তরাধুনিক শব্দ। উত্তরাধুনিক কবিতার আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিক্ষিপ্তভাব, বিক্ষিপ্ত চিন্তা। আমরা সৈয়দ মবনুর কবিতায় এটাও লক্ষ্য করি। আমরা আরো লক্ষ্য করি তার কবিতায় আঞ্চলিক শব্দের সফল ব্যবহার, যা উত্তরাধুনিকতার আরেকটি বৈশিষ্ট্য। যেমন ‘তালের রসে’ তিনি বলেছেন-‘অনুরাগে ঘুরি, কান্দাকুটি করি,’ এই ‘কান্দাকুটি’ শব্দটি সিলেটের আঞ্চলিক। আমরা দেখতে পাই এই আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কবিতার শিল্পে, ছন্দে, কবিতার কৌশলে, কবিতার অঙ্গে কোন মানহানী হয়নি। বরং কবিতার সুন্দর্য আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই উত্তরাধুনিকতার দিকে ‘তালের রস’ একটি উন্নত কবিতা বলে আমি মনে করি।

সবশেষে সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ মবনু বলেন-শিকদার ভাইরা নিজেদেরকে গোপন করতে করতে হারিয়ে যাচ্ছেন। আমরা কেমুসাসের পক্ষ থেকে এই আত্মগোপনকারীদেরকে বের করে এনে দেশ-জাতির সামনে উপস্থাপন করতে চাই। ধন্যবাদ সবাইকে এই সংকটময় মূহুর্তেও যে সাহিত্য আসরে এসে উপস্থিত হচ্ছেন।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.