নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কেন্দ্রীয় মুসলিম সাহিত্য সংসদ, সিলেট

প্রাচীনতম সাহিত্য প্রতিষ্ঠান। ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত

কেমুসাস

প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাহিত্য আড্ডা জমে। সবাই আমন্ত্রিত।

কেমুসাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেমুসাসের ৭৭৩ তম সাহিত্য আসর

০৫ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:৩০

বুধ-বৃহস্পতি দুদিন লাগাতার হরতালের পরও জমে যায় ২৮ মার্চ কেমুসাসের ৭৭৩তম সাহিত্য আসর। এই আসরে মূখ্য আলোচক ছিলেন আশির দশকের অন্যতম কবি মুকুল চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন কেমুসাসের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক সৈয়দ মবনু। অন্যান্যদের মধ্যে আলোচনা করেন কবি মুহিত চৌধুরী, কবি বাছিত ইবনে হাবিব ও লেখক জাহিদুর রহমান চৌধুরী। মামুন হোসেন বিলালের পরিচালনায় এবং কামাল আহমদের কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত স্বরচিত কবিতা পাঠে অংশ নেন Ñতাসনিম যাহেদ, গোলাম মাহদী, মামুন হোসেন বিলাল, কয়েস আহমেদ মেহদী, মীম হুসাইন, সৈয়দ কামরুল হাসান, মাজেদুল হক চৌধুরী, মিনহাজুর রহমান ফয়সল, আমিনা শহীদ চৌধুরী মান্না, মাসুদা সিদ্দিকা রুহী, মিজান ইবনে আজিজ, শামীমা কালাম, মাহমুদুজ্জামান জামী, ফয়সল আহমদ, সৈয়দ আহমদ মুজাদ্দিদ, সৈয়দ মুক্তাদা হামিদ, মুহিত চৌধুরী। ছড়া পড়েন আতাউর রহমান বঙ্গী। গল্প পড়েন সৈয়দ মবনু, রূপক রহমান। স্মৃতিচারণ পড়েন ইঞ্জিনিয়ার নাসির উদ্দিন। সবশেষে অসুস্থ কবি কালাম আজাদের জন্য দোয়া করা হয়।

স্বরচিত লেখা পাঠের পর শুভেচ্ছা বক্তব্যে কবি বাছিত ইবনে হাবিব বলেনÑপ্রথমে ভেবেছিলাম আসর জমবে না। ধারণা ছিলো দশ-বারোজন হবে। কিন্তু পরে দেখি অত্যন্ত জমজমাট হয়ে উঠেছে। আমি আজকের লেখকদেরকে বলবোÑবেশি বেশি করে পড়বেন এবং বেশি বেশি করে লিখবেন। সবাই নিজকে প্রশ্ন করতে হবেÑআমি কেনো লিখি? উত্তর হতে হবেÑআমি আমার কথা আমার পরিবারের বাইরে সমাজে, রাষ্ট্রে, বিশ্বে পৌঁছানোর জন্য লিখি। নাম প্রচারের জন্য লেখা নয়। প্রাকৃতিক নিয়মে লিখতে হবে। আজকের আসরের লেখাগুলো শোনে আমার মনে হয়েছে বেশিরভাগ লেখকই প্রাকৃতিক নিয়মের লেখক।

কেমুসাসের নির্বাহী সদস্য জাহিদুর রহমান চৌধুরী সাহিত্য সম্পাদককে ধন্যবাদ দেন ফেইসবুক এবং ব্লগের মাধ্যমে সাহিত্য আসরের সংবাদকে চারদিকে পৌঁছানোর উদ্যোগ এবং সাহিত্য আসরে লুকিয়ে থাকা সাহিত্যিকদেরকে খুঁজে এনে আলোচক করার উদ্যোগ গ্রহণের জন্য। হরতালে আতংক ছিলো সাহিত্য আসর হবে কি না। আসরে এসে জমজমাট দেখে আশান্বিত হলাম। আজ এমন সময় এসেছে অনেক লেখক সাদাকে সাদা এবং কালো কে কালো বলছেন না। আমরা আশা করি আপনারা সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলবেন।

কেমুসাসের নির্বাহী সদস্য কবি মুহিত চৌধুরীও তাঁর বক্তব্যে বলেনÑআমার ধারণা ছিলো আজকের আসরে কয়েকজন থাকবে। আমরা আসবো আর যাবো। তেমন কোনো আসর হবে না। কিন্তু এসে আসরকে জমজমাট দেখে ভালোই লাগছে। অতঃপর মুহিত চৌধুরী আতাউর রহমান বঙ্গীর কবিতার আলোচনায় বলেনÑতিনি যদি তাঁর কবিতায় বারবার ‘স্বাধীনতা’ শব্দ ব্যবহার না করে ‘তুমি’ শব্দ ব্যবহার করতেন তবে ভালো হতো।

আসরের মূখ্য আলোচক, আশির দশকের অন্যতম শক্তিমান কবি মুকুল চৌধুরী সবাইকে সালাম জানিয়ে বলেনÑকেমুসাসের ৭৭৩তম সাহিত্য আসরকে আমি এজন্যই সমৃদ্ধ বলবো যে, টানা দুদিন হরতালের মধ্যেও এতো লোকের সমাগম একটি সাহিত্য আসরে, তাছাড়া আমার হাতে আলোচনার জন্য যে ১৭টি ছড়া-কবিতা, দুটি গল্প এবং একটি স্মৃতিচারণ রয়েছে তা বেশ সমৃদ্ধ। অতঃপর তিনি তাসনিম যাহিদের কবিতা ‘দয়াদর্শন’ হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করেন কবি কোথায়। কবি চলে গেছেন জেনে আলোচক আলোচনা থেকে বিরত থাকেন। সৈয়দ কামরুল ইসলামের ‘ক্ষমতালোভী’ কবিতা সম্পর্কে তিনি বলেনÑএকজন কবি কি কথা বলবেন তা তার বিষয়, কিন্তু তিনি যদি তার বক্তব্যকে কবিতা বলেন তবে তা হতে হবে কবিতার আঙ্গিকে। কামরুল ইসলামের কবিতায় কবিতার আঙ্গিক অনুপস্থিত। কয়েছ আহমদ মাহদিও ‘জেগে আছে তারা’ আট লাইনের একটি সুন্দর ছড়া। এই ছড়ায় তিনি যে শব্দগুলো ব্যবহার করেছেন তা ভালোই হয়েছে। বক্তব্যও সুন্দরভাবে ফূটে উঠেছে। দুটি জায়গায় সংশোধন প্রয়োজনÑ‘একাত্তরে দেশের তরে / জীবন দিলো যারা / ইতিহাসের সোনার পাতায় / জেগে আছে তারা।’ এখানে ‘জেগে আছে’র জায়গায় সমার্থক অন্য শব্দ দিলে বক্তব্য আরো সুন্দর ও মধুর হতো। আবার তিনি যেখানে বলেছেনÑ‘তাদের দানে জগত জানে / আমরা বীরের জাতি / যুগে যুগে জীবন দিয়ে / জ্বালি দেশের বাতি।’ এখানে ‘জ্বালি’ শব্দটা সংশোধন হওয়া প্রয়োজন। অতঃপর তিনি মাজেদুল হকের কবিতা হাতে নিয়ে অনুপস্থিত বলে রেখে মীম হোসেনের ‘দাঁতফুল হাসি’ কবিতা সম্পর্কে বলেনÑআমি লেখকের কাছ থেকে জেনে নিয়েছি তা জাহেলযুগের আরব কবি ইমরাউল কায়সের অনুবাদ। ইমরাউল কায়স অশ্লিলতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তাই হযরত রাসুল (স.) তাকে বলেছেন দোজখি কবিদের সর্দার। তবে হযরত ওমর (রা.) কবিতার আঙ্গিক, পঠন-পাঠন বুঝার জন্য তরুণদেরকে ইমরাউল কয়েস পড়তে উৎসাহিত করেছেন। কবি ইমরাউল কয়েসের কবিতা দুনিয়ার সব ভাষায়ই অনুবাদ হয়েছে। বাংলা ভাষায়ও কবি আব্দুস সত্তার অনুবাদ করেছেন। মীম হোসেনের অনুবাদ সুন্দর হয়েছে। তবে আমি তাকে বলবো আরবী সাহিত্যে আরো কবি থাকতে তিনি এই কবিকে কেনো পছন্দ করেছেন? যাদের কবিতা অনুবাদ করলে আমাদের তরুণরা উপকৃত হবে তাদের কবিতা অনুবাদ করুন। আরবী-ফার্সী থেকে কবিতা তেমন অনুবাদ হচ্ছে না। অতঃপর আলোচক গোলাম মাহদী’র ‘আর ছোঁবনা তোমায়’ কবিতার আলোচনায় বলেনÑসুন্দর হয়েছে। তবে কিছু জায়গায় আমার বক্তব্য আছে। যেমন-‘আমি পরিনি তোমার উদাচল ধরে রাখতে।’ এখানে ‘উদাচল’ না বলে ‘উদাচলে ধরে রাখতে’ বললে যথার্থ হতো। আপনি কবিতা, গল্প যাই লিখেন, আপনাকে বাংলা ভাষার ব্যাকরণ মেনে চলতে হবে। আপনি নতুন শব্দ বানাতে পারবেন, কিন্তু ব্যাকরণ মানতে হবে। এভাবে আরো কিছু জায়গা আছে, আমি চিহ্নিত করে দিয়েছি। আমিনা শহীদ চৌধুরী মান্নার কবিতা আগ থেকে উন্নত হয়েছেÑহঠাৎ উত্তাল সমুদ্্েরর গর্ভ থেকে জন্ম নেয় / পাঁচমুখি স্বর্ণের বিশাল দ্বীপ।’ এখানে কবি আমাদের বদ্বীপের কথা বলছেন। আবার এই কবিতার শেষে আছেÑ‘ঘুরে আসে হৃদয়ে রঙ দিয়ে আঁকা স্বপ্ন/ নেই কাক্সিক্ষত বাতাসের পিঠে দাঁড়ানো দিল রোজ / ভালোবাসার রাতে সাজানো স্বাধীনতা ২৬ শে মার্চ।’ এই কবিতায় শুরু এবং শেষ সুন্দর, মধ্যখানে কিছু সুন্দরের কমতি আছে। লেখক সেদিকে দৃষ্টিপাত করলে ভালো হবে। মামুন হোসেন বিলাল লিখেছেন ‘স্বপ্ন’। তার কবিতায় সরল স্বীকারোক্তি দেখা যায়। তার কবিতার ভাষাও সহজ-সরল। তাকে স্মরণ রাখতে হবে কবিতা শুধু বক্তব্যের নাম নয়। কবিতায় বক্তব্যের সাথে কাঠামো থাকবে, শিল্প থাকবে, উপমা থাকবে, নান্দিকতা থাকবে। মাসুদা সিদ্দিকা রুহীর ‘ছায়া-মায়া-প্রেম’ কবিতা পড়ে মনে হলো তিনি রূপকাশ্রয়ী। এরকমের কবিদের কবিতা একেকজনের কাছে একেক ব্যাখ্যায় উপস্থিত হয়। শামীমা কালামের ‘পতাকায় মতিবিবি’ পড়ে মনে হলো তার অবস্থাও তাই। শামীমা কালাম উর্দু কবিদের মতো একেক লাইনকে বারবার উচ্চারণ করেন। তবে তাদের দু’জনেরই কিছু শব্দ ও বাক্যের কারণে কাব্যিকতা গৌণ হয়ে যায়। তারা যদি সেদিকে দৃষ্টি দেন তবে কবিতা উত্তির্ণ হয়ে যাবে। তাদের দুজনেরই নিজস্ব কাব্যভাষা আছে। আমরা তাদের প্রতি আশাবাদি। কবি আজিজ ফয়সলের ‘স্বাধীনতা মানে’ কবিতা হাতে নিয়ে অনুপস্থিত বলে রেখে আতাউর রহমান বঙ্গীর ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতার আলোচনায় বলেনÑকবি শামসুর রহমানের পর এই রকমের কবিতা আর লেখার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। সাহিত্যে অনুসরণÑঅনুকরণ বলে একটা কথা আছে। সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে অনুকরণ করা যাবে না, অনুসরণ করতে পারবেন। স্মরণ রাখতে হবে ‘স্বাধীনতা তুমি’ শামসুর রহমানের বিখ্যাত একটি কবিতা। মাহমুদুজ্জামান জামী’র কবিতা ‘নিখোঁজ বিজ্ঞাপন’ সম্পর্কে মুকুল চৌধুরী বলেনÑতার কবিতা সুন্দর হয়েছে। এই কবি’র কবিতা লিখার গুণ আছে। শাহ মিজান ইবনে আজিজের ‘কমদামী ছড়া’ সুন্দর হয়েছে। কিন্তু তিনি যখন বলেনÑ‘এটার, ওটার কিংবা সেটার / সবটারই দাম বেড়েছে / বাংলাদেশের মানুষগুলোর / ক্রয় ক্ষমতা কেড়েছে’ তখন আমি বলবো এখানে ‘কেড়েছে’ না বলে ‘কমেছে’ বললে ভালো হয়। সৈয়দ আহমদ মুজাদ্দিদ নতুন লেখক, বয়সে ছোট। তার কবিতা ‘প্রভু রহম করো’ কবিতা হয়ে উঠেছে বলা যাবে না। তবে চেষ্টাকে প্রশংসা জানাতে হয়। তাকে আরো ঘষামাজা করতে হবে, পড়তে হবে। সৈয়দ মুক্তদা হামিদ লিমেরিক লিখেছেন। লিমিরিকের একটা নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। যে যতো ভালো অন্তমিল দিবেন সে ততই ভালো লিমিরিক লিখতে পারবেন। সৈয়দ মুক্তদা হামিদকে বলবো শব্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরো সচেতন হতে হবে। কবি মুকুল চৌধুরী বলেনÑবাসিত ইবনে হাবিবের কবিতা সুন্দর হয়েছে বলেই আমরা সবাই হাততালি দিয়েছি। এরপর তিনি বলেনÑইঞ্জিনিয়ার নাসির উদ্দিন শিল্পচার্য জয়নুল আবেদিনের চিঠি নিয়ে লিখেছেন। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য তিনি চিঠিগুলো হারিয়ে ফেলেছেন। সৈয়দ মবনু’র গল্প ‘ভাঙা কাঁচ এবং সুমনের ভাঙা মন’ আর রূপক রহমানের ‘যন্ত্র এবং যন্ত্রনা’ এখানে পাঠ হয়েছে। অতঃপর মুকুল চৌধুরী বলেনÑরূপক রহমানের গল্পের ভাষাÑভঙ্গি গীতল এবং উপমা সমৃদ্ধ। রূপককে বলবো গল্প চালিয়ে যেতে। সৈয়দ মবনু ভালো গল্প লিখেন। আল-ইসলায় তার একটি গল্প কিছুদিন আগে পড়েছি। আমি সেই গল্পে কিছুটা মনোক্ষুন্ন হয়েছি কিছু অশ্লীলতা ছিল বলে। আমি তাকে বলেছিও আপনি অশ্লীল গল্প কেমনে লিখেন? যদিও সাহিত্যে শ্লীলতা-অশ্লীলতা কোন বিষয় নয়, তবে প্রত্যেক জিনিসের একটা সীমা আছে। সবাইকে এই সীমা মেনে চলতে হবে। সৈয়দ মবনু এই গল্পটি বেশ দ্রুত শেষ করে নিয়েছেন। তিনি ইচ্ছে করলে তা আরো লম্বা করতে পারতেন। এই সময় সৈয়দ মবনু তার গল্পকে ‘অনুগল্প’ বললে কবি মুকুল চৌধুরী বলেনÑতা হলে ঠিক আছে। অনুগল্প এমন ছোট পরিসরেই হয়।

সব শেষে সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ মবনু বলেনÑসাহিত্য দেশ ও জাতির প্রাণ। যতই প্রতিকূলতা আসুক না কেনো আমাদেরকে সাহিত্যচর্চা চালিয়ে যেতে হবে। সাহিত্যচর্চা বন্ধ হলে জাতির নেতৃত্ব মেধাশূন্য হয়ে যাবে। সিলেটের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এবং মাদরাসায় এই সাহিত্য আসরের দাওয়াত পৌঁছানো আমাদের সবার দয়িত্ব।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.