![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খাওয়া ও পান করা একটি স্বাভাবিক বিষয় এবং সব মানুষের জন্যেই খাদ্যগ্রহণ একটি মৌলিক চাহিদা। ইসলাম যেহেতু একটি কমপ্লিট জীবন ব্যবস্থা তাই খাওয়া ও পান করার ব্যাপারেও আছে সু-নির্দিষ্ঠ নীতিমালা যা অনুসরণ করলে মানুষ নানাবিধ ক্ষতি থেকে বাঁছতে পারে।
মানুষ যেমন খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ করে অনুরূপ শয়তান ও জিন জাতিও খাদ্য গ্রহণ করে। হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “ইবলিস বলেছে: হে আমার রব, আপনার এমন কোন মখলুক সৃষ্টি নেই যার রিযক ও জীবিকা নির্বাহ আপনি নির্ধারিত করেন নি, কিন্তু আমার রিযক কী? তিনি বললেন: যে ব্যক্তি আল্লাহর নেয়ামত হালাল খাদ্য গ্রহনের পূর্বে আল্লাহর নাম (বিসমিল্লাহ হির রহমানীর রহিম) বলতে ভুলে যায়, সেই খাদ্যের মাঝেই তোমার অংশ।
[আবূ দাউদ, দারেমী]
অর্থাৎ আল্লাহর নামে (বিসমিল্লাহ বলে) খাওয়া শুরু করলে সেই খাবারে শয়তান হাত দিতে পারে না। শুধু খাবার না, যে কোন কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বললে সেই কাজে শয়তান হস্তক্ষেপ করতে পারে না। এবং তাতে অনেক বরকত পাওয়া যায়।
আমরা অনেক সময় বিভিন্ন ধর্মালম্বী ভাইদের বিয়ে খেতে যায় অথচ আমরা জানি না ঐ সব পশু কী আল্লাহর নামে জবাই করা হয়েছে, বা সঠিক নিয়মে জবাই করা হয়েছে নাকি তাদের ইচ্ছামত অন্য কোন দেব দেবীর নামে জবাই করেছে। অথচ আল্লাহ বলেছেন; যেসব জন্তুর উপর আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয় না, সেগুলো থেকে ভক্ষণ করো না; এ ভক্ষণ করা গোনাহ। নিশ্চয় শয়তানরা তাদের বন্ধুদেরকে প্রত্যাদেশ করে-যেন তারা তোমাদের সাথে তর্ক করে। যদি তোমরা তাদের আনুগত্য কর, তোমরাও মুশরেক হয়ে যাবে। (Al-An'aam: 121)
আর মানুষের খাবার কোনভাবেই অপব্যয় করা যাবে না, কারণ আল্লাহ তায়ালা নিজেই বলেছেন; নিশ্চয় অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ। (Al-Israa: 27)
পশু খাদ্য গ্রহণ করে উদর ভরাট করার জন্য, সে কোন হালাল-হারামের বিচার করে না, কিন্তু মানুষ হালাল-হারাম বিচার করে খাদ্য গ্রহণ করে। যেভাবে আল্লাহ বলেছেন; "হে মানবজাতি! পৃথিবীতে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র খাদ্য আছে, তা তোমরা আহার কর, তবে শয়তানের পথ অনুসরণ কর না, নিঃসন্দেহে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।" (২:১৬৮)
আর শয়তান কীভাবে মানুষের ক্ষতি করে আল্লাহ নাম না নেওয়ার কারণে তাই দেখানো হয়েছে আমাদের এই নাটিকাটিতে। দেখুন এখানে। https://www.youtube.com/watch?v=1L6AdSJPH6Q
অনেকে শয়তানের বা জিনের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কারণ তাদের দেখা যায় না। অথচ আল-কুরআনে এ ব্যাপারে স্পষ্ট উল্লেখ আছে। অনেক তরঙ্গ দৈর্ঘ্য যেমন অবলোহিত, মাইক্রো ওয়েভ, ঢ-জধু, গামা রশ্মি আমরা খালি চোখে দেখতে পাইনা। জ্বীন ফেরেশতা হয়ত এমন কোন সূক্ষাতি সুক্ষ তরঙ্গ যাদেরকে কোন যন্ত্রপাতি দ্বারাও দেখা যাবে না। জ্বীন শব্দের মোটামুটি অর্থ গুপ্ত, অদৃশ্য, লুকায়িত। শয়তানরাও হল একপ্রকার জ্বীন যারা আল্লাহর অবাধ্য এবং এরা অভিশপ্ত ইবলিশের বংশধরদের অন্তর্গত।
জিন জাতি সম্পর্কে ইন্টারনেটের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন উদ্ভট তথ্য আছে যার কিছু কিছুর সত্যতার দলিল থাকলেও অনেক কিছুর সত্যতার কোন মাপকাঠি আমি আজো পাইনি। তার পরেও এখানে কিছু উল্লেখ করা হল যার কিছুটা হুবুহু, কিছুটা আমার (সাইফুল বিন আ. কালামের) সম্পাদিত; “জ্বীন জাতিকে সৃষ্টি করা হয়েছে হযরত আদম আঃ এর ২০০০ বছর পূর্বে। জ্বীন জাতির আদি পিতা (আবূল জিন্নাত) সামূমকে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা আগুণের শিখা দ্বারা তৈরি করার পর আল্লাহ সামূমকে বলেন তুমি কিছু কামনা কর। তখন সে বলে আমার কামনা হল আমরা মানুষ কে দেখব কিন্তু মানুষরা আমাদের দেখতে পারবে না। (এখানে আমার প্রশ্ন হলো, যেহেতু তখন মানুষ সৃষ্টিই হইনি তাহলে জিন্নাত পিতা সামূম মানুষ সম্পর্কে জানল কীভাবে!) আর আমাদের বৃদ্ধরাও যেন যুবক হয় মৃত্যুর পূর্বে। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা তায়ালা জ্বীন দের এই দুইটি ইচ্ছাই পূরণ করেন। জ্বিনরা বৃদ্ধ বয়সে মৃত্যুর পূর্বে আবার যুবক হয়। অনেকের মাঝে একটা প্রশ্ন আসে যে জ্বীনরা যদি আগুনের তৈরি হয় তাহলে কিভাবে জিনরা জাহান্নামের আগুনে পুড়বে। আমি প্রথমেই বলেছি যে জ্বীনদের আদিপিতা আগুন দ্বারা তৈরি হলেও জ্বীনরা মূলত আগুণ নয়। জীনদের শরীর মূলত খুব সূক্ষাতি সূক্ষ। জ্বীনরা চাইলে যেকোন কঠিন পদার্থের বাধা অতিক্রম করতে পারে। তাই জাহান্নামের আগুন দ্বারা জিনদের ঠিকই কষ্ট হবে যেভাবে মাটি দ্বারা মাটির মানুষকে আঘাত করা যায়। জিনদের কে আল্লাহপাক বিশেষ কিছু কথা ও কাজ শিখিয়ে দিয়েছেন যার দ্বারা জিনরা চাইলে এক আকার থেকে আরেক আকারে রূপান্তরিত হতে পারে। তবে জিনদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় আকার হল সাপের আকার। জিনরা বেশিরভাগ সময় সাপের আকারে চলাফেরা করতে পছন্দ করে। জিনদের খাবার হল শুকনা হাড় ও গোবর। সহীহ হাদীসে শুকনা হাড় ও গোবর দ্বারা এসতেঞ্জা (পাইখানা-প্রস্রাবে ব্যবহার) করতে নিষেধ করা আছে। হাদিসে বলা হয়েছে এ দুটো হল জিনদের খাবার। জিনদের সাথে মানুষের বিয়ে হওয়া সম্ভব। সহীহ হাদিসে বলা আছে যে রাণী বিলকিসের পিতা মাতার মধ্যে একজন ছিল জিন। তবে জিনদের সাথে মানুষের বিয়ে হালাল না হারাম এ নিয়ে আলেমদের মাঝে মতবিরোধ আছে।
তবে বেশিরভাগ আলেমদের মতে জিন বিয়ে করা মাকরুহ। অনেক অন্ধ বুযুর্গ জিন মেয়েকে বিয়ে করেছেন। যেন সফরে ঐ বুযুর্গের হাটা চলায় সুবিধা হয়। তবে জ্বীনরা যদি চায় তাইলেই মানুষ জিনদেরকে দেখতে পারে। জিনদের সাথে মানুষের উটাবসা, বিয়ে শাদি এটা পুরাটাই জিনদের ইচ্ছা। মানুষের মাঝে যেমন বিভিন্ন ফেরকা, মাযহাব আছে ঠিক তেমনি জিনদের মাঝেও বিভিন্ন দল মত আছে। অনেক জিন সাহাবী ছিলেন। সীরাতে ইবনে হিশামে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পরে প্রথমে ফেরেশতারা এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সালাম দেয় এরপরে জিনেরা এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে সালাম দেয়।
কুরআন অনুসারে জিন জাতি মানুষের ন্যায় আল্লাহ্ তা’য়ালার এক সৃষ্ট একটি জাতি যারা পৃথিবীতে মানব আগমনের পূর্ব থেকেই তারা ছিল এবং এখনো তাদের অস্তিত্ব রয়েছে। তবে মানুষের চর্মচক্ষে তারা দৃষ্টিগ্রাহ্য নয়। তবে জিনরা মানুষকে দেখতে পায়। তারা বিশেষ কিছু শক্তির অধিকারী। তাদের মধ্যেও মুসলিম এবং কাফির ভেদ রয়েছে। তারা মসজিদে নামাজ পড়তে আসে। তাদেরও সমাজ রয়েছে। তারা আয়ূ মানুষের চেয়ে অনেক বেশি। উদাহরনস্বরূপ, তারা ৩০০ বছর বয়সে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। ঈমাম ইবনে তাইমিয়ার মতে জিন জাতি তাদের অবয়ব পরিবর্তন করতে পারে।
ইসলামের মতে জিন জাতি এক বিশেষ সৃষ্টি। কুরআনের ৭২তম সুরা আল জিন এ শুধু জিনদের নিয়ে কথা বলা হয়েছে। এছাড়া সূরা আন নাস এর শেষ অংশে জিন জাতির উল্লেখ আছে। কুরআনে আরো বলা আছে হযরত মুহাম্মদ (সা কে জিন এবং মানবজাতির নবী হিসেবে প্রেরণ করা হয়েছে। হযরত সুলায়মান (আ
এর সেনাদলে জিনদের অংশগ্রহণ ছিল বলে কুরআনে উল্লেখ আছে। ইসলামে আরো বলা আছে “ইবলিশ” তথা শয়তান প্রকৃতপক্ষে জিন জাতির একজন ছিল। ইসলামের মতে, শয়তান হচ্ছে দুষ্ট জিনদের নেতা। ইবলিশ বা শয়তান ছিল প্রথম জিন যে আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণ করেছিল। কুরআনে উল্লেখ আছে যে, ইবলিশ এক সময় আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা ছিল । কিন্তু আল্লাহ যখন হযরত আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করলেন, তখন হিংসা ও অহংকারের বশবর্তী হয়ে ইবলিশ আল্লাহর হুকুম অমান্য করে। এ কারণে ইবলিশ কে বেহেশত থেকে বিতাড়িত করা হয় এবং এরপর থেকে তার নামকরণ হয় শয়তান। ইসলাম পূর্ব আরব উপকথা গুলোতে জ্বিন সদৃশ সত্ত্বার উল্লেখ আছে। প্রাচীন সেমাইট জাতির জনগণ জিন নামক সত্ত্বায় বিশ্বাস করতো। তাদের মতানুসারে নানাপ্রকারের জিন পরিলক্ষিত হয়। যেমন, ঘুল (দুষ্ট প্রকৃতির জিন যারা মূলত কবরস্থানের সাথে সম্পর্কিত এবং এরা যেকোন আকৃতি ধারণ করতে পারে), সিলা (যারা আকৃতি পরিবর্তন করতে পারতো) এবং ইফরিত (এরা খারাপ আত্মা)। এছাড়া মারিদ নামক এক প্রকার জিন আছে যারা জিন দের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী।
উল্লেখ্য যে, আরব্য রজনীর কাহিনীর মতো সবসময় জিন অসাধ্য সাধন করতে পারে না। কেননা ঝড়-বাদলের দিনে জিনরা চলতে পারে না। কারণ তারা আগুনের তৈরি বিধায় বৃষ্টির সময় আয়োনাজাইশেন ও বজ্রপাতের তীব্র আলোক ছটায় তাদের ক্ষতি হয়ে থাকে এবং কোন ঘরে যদি নির্দিষ্ট কিছু দোয়া-কালাম ও কাঁচা লেবু থাকে, তাহলে ঐ ঘরে জিন প্রবেশ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। আর একটি কথা মানুষ মাটি দিয়ে সৃষ্টি হলেও, শেষ পর্যন্ত এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি। কারণ মানুষ মূলত মাটি, পানি, বায়ু ও অগ্নির সংমিশ্রণ। আর তাই জিন আগুনের শিখা দিয়ে পয়দা হলেও তাদের দেহে জলীয় পদার্থের সমাবেশ লক্ষণীয়। এর স্বপক্ষে যুক্তি হলো: রসুল (স.) একদা উল্লেখ করেছিলেন যে, শয়তান বলে একটি জিন একদা নামাজের সময় তাঁর সাথে মোকাবিলা করতে এলে তিনি ঐ জিনকে গলা টিপে ধরলে, সেইক্ষণে জ্বিনের থুথুতে শীতলতা অনুভব করেছিলেন।[সুরা সাদ ৩৮:৩৫] এতে প্রতীয়মান হয় যে, জিন যদি পুরোপুরি দাহ্য হতো, তাহলে ঠান্ডা থুথুর থাকার কথা নয়। এদিকে জিন তিন প্রকারের আওতায় বিদ্যমান, প্রথমত. জমিনের সাপ, বিচ্ছু, পোকা-মাকড়, ইত্যাদি; দ্বিতীয়ত. শূন্যে অবস্থান করে এবং শেষত সেই প্রকারের জিন, যাদের রয়েছে পরকালে হিসাব। পূর্বেই বলেছি, এরা সূক্ষ্ম, তাই স্থূল মানুষ বা পশু-পাখি জিনদের দেখতে পারে না। তবে কুকুর ও উট এদের হুবহু দেখতে পারে। এ প্রেক্ষাপটে উল্লেখ্য যে, রাতে কোন অপরিচিত বস্তু বা জীব চোখে না দেখা গেলেও কুকুর কি যেন দেখে ছুটাছুটি ও ঘেউ ঘেউ করলে তাতে জ্বিনের আবির্ভাব হয়েছে বলে বুঝতে হবে। জিন বহুরূপী। এরা মানুষ, পশু-পাখি, ইত্যাদি যে কোন সুরত ধরতে পারে। সেই ক্ষণে উক্ত জীবের বৈশিষ্ট্যের আদলে তার ঘনত্ব কম-বেশি হয়ে থাকে এবং মানুষের দৃষ্টির মধ্যে আসে।
জিনদের মিষ্টি খুব প্রিয় এবং যা শখ করে খেয়ে থাকে। আর এটা পবিত্র আল-কোরআন ও হাদিস দ্বারা সমর্থিত। তবে জিনদের সম্পর্কে কাজী আবু ইয়ালা (রহঃ) বলেছেন যে, জিন মানুষের ন্যায় খাওয়া-দাওয়া করে থাকে। এরাও চিবিয়ে এবং গিলে খায়। তাছাড়া জিনের খাওয়া-দাওয়া নিয়ে ইয়াবীদ বিন জাবির বলেছেন যে, মুসলমান জিন মানুষরা বাড়িতে যে খাবার রাখে, আর সেই বাড়ির চালে কিম্বা ছাদে বসবাসরত ঐ জিনরা নেমে এসে সে খাবার খেয়ে থাকে। অনেক সময় মানুষের সাথে বসেও খায়, অথচ মানুষ স্থূল বিধায় অতসব খেয়াল করতে পারে না। আর এসব জিনরা মানুষদের বালা-মুসিবত ও মন্দ-জিন থেকে রক্ষা করে থাকে। এদিকে খারাপ জিনরা সাধারণত নাপাক নোংরা জায়গায় থাকে, যেমন-ময়লার গাদা, আঁস্তাকুড়, নর্দমা, গাছের ঝাড়, গোসলখানা, পায়খানা, ইত্যাদি। মূলত জিনের প্রধান খাদ্য হলো- হাড়, গোবর, কয়লা ইত্যাদি। তিরমিযী হাদিসে উল্লেখ আছে যে, নবী করীম (স.) বলেছেন, “তোমরা দুটি জিনিস অর্থাত্ হাড় ও গোবর দিয়ে ইন্তিজা করো না, কেননা ওগুলো হলো তোমাদের জিন ভাইদের খাদ্য”। আর তারা শখ করে পরম আদরে মিষ্টি খেয়ে থাকে।
©somewhere in net ltd.