নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকৃতির মাঝে তুমি হে, সপ্নীল হয়ে মনে-- কারিমুল হাসান লিখন

কারিমুল হাসান লিখন

কারিমুল হাসান লিখন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সরুগাং থেকে সরুগ্রাম

০৪ ঠা জুন, ২০১৭ বিকাল ৪:১০

"সরুগাং থেকে সরুগ্রাম"
প্রকৃতি ও সুন্দরের লিলাভুমি
কারিমুল হাসান লিখন-
সরু শব্দের অর্থ ক্ষিণ এবং গাং শব্দের অর্থ -
নদি। এ দু'য়ের সমন্বয়ে এলাকাটির নাম করন হয় সরুগাং। এটি বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলা হতে ৮ কিঃমিঃ উত্তরে অবস্থিত। এই গাং এলাকায় ১৮৭৩ মতান্তরে ১৯০৩ খ্রীষ্টাব্দের দিকে সরুগাং এর পাশে হিন্দু সম্প্রদয়ের ঘোষ এবং মন্ডল বংশ ধরের পুর্বপুরুষ শ্রী গয়েশ্বর মন্ডল বসতী গড়ে তোলেন। সে সময় সুফি সাধক নামে ক্ষ্যাত ফকির মজনু শাহ এর বংশদ্ভুত কোন এক গোষ্টি এ অঞ্চলে বসবাস শুরু করে। সরুগাংটি ছিলো হিন্দু মুসলিম সম্প্রদয়ের মিলিত গাং। মুসলিম সমাজের সবাই অজু করতো এই গাং এ, অন্যদিকে গাং স্নান করতো হিন্দু বসবাসকরীরাও। তাদের দু'য়ের মাঝে কোন বিরোধ ছিলোনা। সে সময় হিন্দু মুসলিম সবার নামের শুরুতে শ্রী যুক্ত হতো। শ্রী গয়েশ্বর মন্ডলের মৃত্যুর পর তার নাতী সরুগাং হতে ১ কিঃমিঃ দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে নতুন করে বসতি শুরু করে। সেই স্থানের নাম বর্তমানে হাঁসখালী নামে পরিচিত। বর্তমানে সেখানে হিন্দু সম্প্রদয়ের লোকেরা স্থায়ী ভাবে বসবাস করে আসছে। অন্যদিকে অনুমানিক ১৯২৫ সালের দিকে ফকির মজনু শাহ এর গোষ্টির একাংশ অন্যত্র চলে যায়। এ গাংটি পাশ্ববর্তী বাঙ্গালী নদির প্রাচীন মহনা নামে ক্ষ্যাত ছিল। কালের বিবর্তনে এই গাংটি এখন শুধুই পরিত্যাক্ত খাল। বন্যার মাঝে কিছুটা প্রাণ ফিরে পায় এই ঐতিহাসিক গাংটি। ধীরে ধীরে দু'পাশ গড়ে ওঠে জনবসতী, ঘর-বাড়ী ইত্যাদি। ১৯৪৩ এর দুর্ভিক্ষ, ৫২ এর ভাষা আন্দোলন ও ৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধের পর সরুগাং পরিবর্তন করে নতুন নামকরন করা হয় "সরুগ্রাম"। জনশ্রুতিতে আছে, ১৮১৫ - ১৮২০ খ্রীষ্টাব্দের দিকে কোন এক সময় আর্য্য বংশ ও মোঘল বংশের কিছু গোষ্টি এ অঞ্চলে এসেছিল। -
-এ এলাকার অধিক প্রতিপত্তি, সম্পদের অধিকারী, শতশত একর জমি ছিল এক এক মুসলিম মন্ডলের মুষ্টিবদ্ধ। রাজত্ব ছিলো একমাত্র মন্ডল বংশের। আজও সরুগ্রামের মন্ডল বংশ ধরেরা গৌরবের সহিত মাথা উঁচু করে বাস করছে। সরুগ্রামের স্কুল, মাদ্রাসা, মাঠ, বাজার, যাত্রামঞ্চ, যত কিছু হয়েছে তার পেছনে রয়েছে মন্ডলদের অসামান্য অবদান। -
-আজ সরুগাং এর এর সেই গাং এখন কচুরি বাগান, মশাদের অভয়াশ্রম, মেটে মাছের আবাসস্থল, ডাহুকের বাসস্থান সব মিলিয়ে অন্য জগতের অন্য গাং।
গাং এর দু'পাশে ছাঁয়া ঘেরা গ্রাম্য পড়া, সবুজ শ্যামল প্রকৃতি, বাঁশ ঝাড়ে বসে থাকা সাদা বকের কুয়াকু ডাক, সন্ধ্যা ও ভোরে শালিকের কলরব। কখনো বাঁশ বাগানে মাথার উপর পুর্ণমার চাঁদের ঝলকানো হাসি। গাং এর দক্ষিনে পারাপারের ছোট ব্রিজ, তারপর সু-বিশাল দিগন্ত জোড়া মাঠ, সবুজের সমারোহ। মাঠের পশ্চিমে ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপিঠ- নাম সরুগ্রাম বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, স্থাপিত ১৯৫৯ ইং। বেশ গরম পড়েছে, সন্ধ্যাবাতী হিসেবে হারিকেন বা কুপি জ্বালানো সবার ঘরে ঘরে। মিতালীতে ব্যাস্ত কখনো উইপোকা, কখনো আড়াটি, কখনো বা ধান ক্ষেতের ঝিঝি পোকা। মাঠে বসে একা, আমি লিখন একা একাই। মাথার উপরে বিশাল আকাশ, জমিনে বিছানো সবুজ লিলাভুমি, জোৎনা মাথার উপর। বিক্ষিপ্ত ভাবে ছুটে চলেছে মেঘেরা, কখনো এপাস কখনো ওপাস। তারকার মিটি মিটি হাসিতে ভরে যায় প্রাণ। জৈষ্ঠের কর্মতা শেষে ক্লান্ত কৃষান, গা এলিয়ে মাঠের উপর, দৃষ্টি আকাশ পানে। নয়ন জোড়ানো মন ভরানো শীতল বাতাশ। শান্ত হইলো তাহার পরসে মাতৃভুমি আমার মা, আমার গ্রাম, সরুগ্রাম। বাঁশের বাঁশি কে যেন বাজায়, মন হারিয়ে যায়, চেনা সুর চেনা মুখ কখনো অচেনা হয়। ধীরে ধীরে শীতের সকাল কুয়াশা ঢেউ খেলে যায় লিখনের কোল বেয়ে, কখনো পরিজনের আঁচল ছুঁয়ে। পানকৌড়ীর কালো রূপ এখন আর দেখা যায় না। ভোরের সকাল কৃষানের কাঁধে নাঙ্গল জোঁয়াল, গ্রামের কুয়াশা ভেজা মেঠোপথ, পালের গরু কখনো ডানে কখনো বাঁয়ে ছুটে চলা অবারাম। বাংলার মুখ আমি দেখি নাই, দেখেছি গ্রামের লাবন্য। দাদাকে দেখিনি দাদিকে হারিয়েছি জন্মের আগেই। গল্প শোনা হয়নি কখনো। যেটুকু শুনেছি বাবার মুখে, বাবা গত হলো তারপর দেখেছি লিখনের চোখে। আজ অবধি গ্রামের দৃশ্যপট হতে হারিয়েছে অনেক কিছু, তবুও আছে লিখনের স্মৃতির পাতায় হজারও দেখা অদেখা স্মৃতির সমিকরন। এটাই আমার গ্রাম ছিলো, ছিলো ভালোবাসার সুঘ্রাণ। আজ হাহাকার একি হাল, গ্রামের চলাচাল। স্মৃতিময় স্বপ্ন গুলো আজও উঁকি দেয় মনের জানালায়।
মনে করে দেয়, এটাই তোর গ্রাম এটাই তোর স্মৃতির পাতা, লিখনের জন্মস্থান মনেরেখ ইতিহাস বলে কথা।
(কারিমুল হাসান লিখন)
সরুগ্রাম, ধুনট, বগুড়া।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.