![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইসলামে পর্যটন ও ভ্রমন
-- কারিমুল হাসান লিখন
আরবি 'রিহলাহ’ ও ‘সাইর’ শব্দের অর্থ হলো ভ্রমন বা সফর। যেমন বলা হয় : গাদান রিহলাতুনা যার অর্থ ‘আগামীকাল আমাদের ভ্রমণ বা ফ্লাইট।’ আর ‘সাইর’ অর্থ সফর করা, স্থান ত্যাগ করা, ভ্রমণ করা, এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া ইত্যাদি। তবে আল কুরআনে ভ্রমণের প্রতিশব্দ ‘সাইর’ ব্যবহার করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন : হে রাসূল! আপনি (মানুষকে) বলুন, তোমরা পৃথিবীতে ‘সাইর’ (ভ্রমণ) করে দেখ [সূরা নামল : ৬৯]। ভ্রমণ করা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। শুধু মানুষই নয়, পৃথিবীর সব কিছুই ভ্রমণরত অবস্থায় আছে। চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র সদা-সর্বদা পরিভ্রমণ করছে নিজ নিজ কক্ষপথে। মানুষ পৃথিবীতে ব্যক্তিগত ও পেশাগত কর্মব্যস্ততা, পারিবারিক ও সামাজিক দায়দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। নানা দুঃখ-কষ্ট, মানসিক অশান্তি, কর্মের একঘেয়েমিপূর্ণ জীবন ক্ষণিকের জন্য হলেও খানিকটা বিশ্রাম, কিছুটা তৃপ্তি পেতে চায়। চোখ যেন খুঁজে পেতে চায় একটি ভিন্ন জগৎ। যেখানে আছে প্রকৃতির অপরূপ সাজ। পাখপাখালির কলরব। মন ভোলানো, চোখ জুড়ানো, হৃদয় কাড়া মনোরম পরিবেশ। বিষয়টি আমরা অনুধাবন করি আর না-ই করি, আমাদের মন ঠিকই জীবনের এ কর্মব্যস্ততার মাঝে মুক্তবিহঙ্গের মতো দূরে কোথাও যেতে চায়। নিজ গণ্ডি পেরিয়ে দূরে কোথাও ঘুরতে বা বেড়াতে যাওয়া মোটেও দোষণীয় নয়। বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ সুনান আবু দাউদে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মরুভূমির বিভিন্ন প্রান্ত ভ্রমণে বের হতেন। সাহাবায়েকিরামও মরুভূমিসহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনে বের হতে ভালোবাসতেন মর্মে বর্ণনা পাওয়া যায়। মানব সভ্যতায় ভ্রমণের ইতিহাস অতিপ্রাচীন। আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে অদ্যাবধি ভ্রমণের ধারা অব্যাহত রয়েছে। মূলত সৌর জগৎসহ পৃথিবীর সব কিছুই ভ্রমণ করছে। পৃথিবীর আদি মানব আদম আলাইহিস সালাম ও তাঁর অর্ধাঙ্গিনীকে সৃষ্টি করার পর তাঁদের জান্নাতে যাওয়া, জান্নাত থেকে বের হওয়া, পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরির পর আরাফাতের ময়দানে উভয়ের একত্র হওয়ার ঘটনা ভ্রমণ ইতিহাসের প্রাথমিক রূপ হিসেবে গণ্য। পৃথিবীর আদি থেকে অদ্যাবধি ইতিহাসের পাতায় অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী, পণ্ডিত, নবী-রাসূলের নাম পাওয়া যায়, যাঁরা পৃথিবীর নানা প্রান্ত ভ্রমণ করে ভ্রমনেতিহাসে অমর হয়ে আছেন। মূসা আলাইহিস সালাম জ্ঞান অন্বেষণের জন্য একজন সালিহ বান্দার সাথে ভ্রমণে বের হয়েছিলেন। জ্ঞান অন্বেষণের জন্য রাসুল সাঃ ভ্রমণের প্রতি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন : ‘যে ব্যক্তি জ্ঞান অন্বেষণে রাস্তায় বের হবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে যাওয়ার পথ সহজ করে দেবেন। পর্যটন শিল্প, দর্শনীয় স্থান, ভ্রমণ সাহিত্য ও ভ্রমণ ইতিহাস একটি চমকপ্রদ বিষয়। মুসলিমদের মধ্যে সুলায়মান সায়রাফী, ইবন বতুতা, আলবেরুনি, আরবের হিরোডটাস নামে খ্যাত আল মাসউদি বিখ্যাত পর্যটক ও ভ্রমণ ইতিহাসবিদ হিসেবে বিশ্বনন্দিত। তারা ভ্রমণ সাহিত্য রচনা করে খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করেছেন। ভ্রমণে বনজঙ্গলে, ফুল বাগানে, পার্কে ও দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনেক। ঐতিহাসিকভাবে জানা যায়, যুগে যুগে আলিম-উলামা, মুসলিম মনীষীগণ আত্মিক প্রশান্তি ও জ্ঞান অন্বেষণের জন্য বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করেছেন। পর্যটন স্পট ও প্রকৃতির অপরূপ আবাস ভ্রমণের বহু উপকারিতা রয়েছে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপকারিতা হলো : আত্মার প্রশান্তি ও মানসিক অবস্থার পরিবর্তন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও স্থান সম্পর্কে ধারণা লাভ, মানুষের নানামুখী স্বভাব-চরিত্রের সাথে পরিচিত হওয়া, নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন ও যোগ্যতার বিকাশ সাধন, সর্বোপরি সৃষ্টিজগৎ সম্পর্কে নানামুখী জ্ঞান অর্জন করা। পর্যটন স্পট বা দর্শনীয় স্থান ভ্রমন করতে আল্লাহ উৎসাহ দিয়েছেন এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা ভ্রমণ করে তাঁর (আল্লাহর) অভিনব সৃষ্টিরাজি অবলোকন করো। [সূরা আনকাবুত : ২০] বিভিন্ন স্থান, দেশ বা পর্যটন স্পট ভ্রমনে যে সকল শিক্ষা অর্জিত হয় তাদের মধ্যে বিভিন্ন দেশের জাতি গোত্রের সাথে ভাষা পরিচিতি জানা। তাই তো আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে আসমানসমূহ ও পৃথিবী সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। নিশ্চয়ই এর মধ্যে জ্ঞানী ব্যক্তিদের জন্য নিদর্শন রয়েছে- [সূরা রূম ২২। ] পর্যটন স্পট, প্রকৃতি, প্রাচীন স্থাপত্য ভ্রমনে মানব অন্তরে বোধ শক্তির উদয় ও উন্নতি ঘটে আল্লাহ তা‘আলা কোরআনে বলেন, তিনি তোমাদের কাজে নিয়োজিত করেছেন রাত্রি, দিন, সূর্য এবং চন্দ্রকে। তারকা সমূহ তাঁরই বিধানের কর্মে নিয়োজিত রয়েছে। নিশ্চয়ই এতে বোধশক্তি সম্পন্নদের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে’ (নাহল ১৬/১২)।
(কারিমুল হাসান লিখন)
সরুগ্রাম,ধুনট,বগুড়া।
©somewhere in net ltd.