নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকৃতির মাঝে তুমি হে, সপ্নীল হয়ে মনে-- কারিমুল হাসান লিখন

কারিমুল হাসান লিখন

কারিমুল হাসান লিখন › বিস্তারিত পোস্টঃ

পর্যটন শিল্পে, “সম্ভব না” হোক সম্ভাবনা

০৬ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৪০

পর্যটন শিল্পে, “সম্ভব না” হোক সম্ভাবনা
কারিমুল হাসান লিখন

আমরা ইচ্ছা শক্তি দিয়ে “সম্ভব না” কে সম্ভাবনায় পরিনত করতে পারি তাহলে পর্যটনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতীক চাকা সচল করার পাশাপাশি বেকার সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সম্পদের লীলাভূমি পর্যটন শিল্পের এক অপার সম্ভাবনাময়ী দেশ। এদেশে ছড়িয়ে আছে অপরিমেয় সৌন্দর্য। দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশ প্রাকৃতিক, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, ঐতিহ্যিক সব সম্পদেই সমৃদ্ধ। এ কারণে যুগ যুগ ধরে বিদেশি পর্যটকদের কাছে চির সবুজ ঘেরা বাংলাদেশ এক স্বপ্নের দেশ হিসেবে বিবেচিত। পর্যটকদের আকৃষ্ট করার মতো এদেশে রয়েছে প্রাচীন সভ্যতার নির্দশন।

বিশ্ব অর্থনীতির অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও পর্যটন শিল্পের অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে ১৯৯৯ সালে পর্যটন খাত থেকে বাংলাদেশের আয় হয়েছিল ২৪৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং ২০০৮ সালে এই আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬১২ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজার টাকা। ২০১৫ সালে পর্যটন খাতের মোট আয়ের ৯৮ দশমিক ৩ শতাংশ ছিল স্বদেশীয় আর বৈদেশিক পর্যটক আয় মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ। যা ২০১৪ সালে ছিল যথাক্রমে ৯৭ দশমিক ৯ ও ২ দশমিক ১ শতাংশ। ২০১৫ সালে জিডিপিতে এই খাতের প্রত্যক্ষ অবদান ২ দশমিক ৪ শতাংশ বা ৪০৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন টাকা এবং প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ মোট অবদান ৮০৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন টাকা বা মোট জিডিপির ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। যা ২০১৪ সালে ছিল ৪ দশমিক ১ শতাংশ। ২০১৬ সালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল জিডিপিতে এই খাতের অবদান বেড়ে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বা স্বদেশী মুদ্রায় ১ হাজার ৫৯৬ বিলিয়নে দাঁড়াবে আর মোট জিডিপিতে অবদান রাখবে ৫শতাংশ।

সরকার বিশ্বব্যাপী পর্যটন শিল্পের দ্রুত বিকাশ ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনুধাবন করে দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের জন্য মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে যা যুগোপযোগী পদক্ষেপ। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে পর্যটন শিল্প অন্যতম প্রধান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতে পরিণত হবে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকার ২০১১ সাল পর্যন্ত সারাদেশে খুঁজে পাওয়া ২২’শ পর্যটন কেন্দ্রকে অত্যাধুনিক ও আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে তিনধাপে প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যুগে যুগে ভ্রমণকারীরা মুগ্ধ হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবে এ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশে পর্যটন শিল্প উন্নয়নের সম্ভাবনা অপরিসীম। নতুন করে কৌশল ঠিক করে সম্ভাবনার সবটুকুকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পর্যটনে মডেল হতে পারে। তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ স্বল্প আয়তনের দেশ হলেও বিদ্যমান পর্যটক আকর্ষণে যে বৈচিত্র্য তা সহজেই পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে। পৃথিবীতে পর্যটন শিল্প আজ বৃহত্তম শিল্প হিসেবে স্বীকৃত। পর্যটন শিল্পের বিকাশের ওপর বাংলাদেশের অনেকখানি সামগ্রিক উন্নয়ন নির্ভর করছে। দেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটলে কর্মসংস্থান ঘটবে ও বেকারত্ব দূরীকরণের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচন সফল হবে। ভিন্ন ভিন্ন দেশের প্রাচীন যুগের ইতিহাস ও শিল্প, সাহিত্য, কালচার ও প্রথার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ঐতিহাসিক স্থান দেখার জন্যও পর্যটকরা নিজ দেশের সীমানা পেরিয়ে দূর-দূরান্তে ছুটে চলে প্রতিনিয়ত। পর্যটন হলো একটি বহুমাত্রিক শ্রমঘন শিল্প। এ শিল্পের বহুমাত্রিকতার কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সম্ভাবনা তৈরি হয়। ফলে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারি অনুদান ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে যথাযথ সমন্বয় সাধন করার পাশাপাশি উন্নত অবকাঠামো, সঠিক পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীল অবস্থা দরকার পর্যটনের জন্য। পর্যটন শিল্পের উপাদান ও ক্ষেত্রগুলো দেশে ও বিদেশে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপনের মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের অধিকতর বিকাশ ঘটানো সম্ভব।

সুন্দর সুযলা সুফলা শষ্য শ্যামলা আমাদের এই বাংলাদেশ। প্রকৃতির আঁচরে আঁকা বাংলাদেশের বগুড়া জেলার দর্শনীয় স্থান তথা পর্যটন স্পট। বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানসমুহের মধ্যে উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার সার্কের রাজধানী ক্ষাত বগুড়া জেলা পর্যটন এলাকা হিসেবে ব্যাপক পরিচিত। সম্প্রতি ২০১৬ সালে বগুড়ার ট্যুরিষ্ট ক্লাব বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও সম্ভাব্য পর্যটন স্পট চিহ্নিত করে। এসকল সম্ভাব্য পর্যটন স্পটে পর্যটকের তেমন আসা যাওয়া লক্ষ করা যায়না। বগুড়া জেলার প্রত্যেক উপজেলাতে কোন না কো সম্ভাব্য পর্যটন স্পট লক্ষ করা যায়। যা কখনো দেশ ও দেশের মানুষের তথা পর্যটন প্রেমীদের নজরে আসেনি। বগুড়ার শুধু মাত্র কয়েকটি স্থান ছাড়া সবই অজানা। বগুড়ার মহাস্থানগড়, নবাববাড়ি, গোকুলের মেধ বা বেহুলা লক্ষিন্দারের বাসর ঘর, ভাসুবিহার, মহাস্থান যাদুঘর, বগুড়ার শেরপুরে মোঘল আমলে নির্মিত খেরুয়া মসজিদ, কয়েক’শ বছরের পুরানো রানী ভবানী মন্দির, সাউদিয়া পার্ক, মসল্লা গবেষণা কেন্দ্রসহ কয়েকটির নাম সবার জানা থাকলেও উল্লেখিত দর্শনীয় স্থানগুলোতে এখন দেশী-বিদেশী পর্যটক বা ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণা নেই বললেই চলে। যার মুল কারন হলো, পরিচিতির জন্য নেই ভালো প্রচারনা। প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসে বগুড়াসহ উত্তরের জেলাগুলোতে পিকনিক আমেজ বয়ে যায়। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো স্কুল, কলেজ ছাত্রদের নিয়ে শিক্ষা সফর করে থাকে। পাড়া মহল্লার তরুণ-যুবকরা দল বেঁধে বগুড়ার মহাস্থানগড়সহ আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভ্রমণ করতে আসতো। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারি, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন, সামাজাকি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও ভ্রমণ করতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে কয়েকটি পিকনিক বা শিক্ষা সফর ছাড়া তেমন কোন আনন্দময় পরিবেশ লক্ষ করা যায়না। দেশীয় এসব সংগঠনের পাশাপাশি বগুড়ায় মহাস্থানগড়, ভাসু বিহার, গোকুল মেধ বা বেহুলা লক্ষিণদার এর বাসর ঘর, বগুড়ার শেরপুরে সুপ্রাচিন রাণীভবানীর মন্দির, মোঘল আমলে নির্মিত (কথিত) খেরুয়া মসজিদসসহ আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোতে বিদেশী পর্যটকও আসতো। বর্তমান সময়ে প্রচারনার অভাবে যেমন পর্যটকদের উপস্থিতি কমে গেছে তেমনি পর্যটন ও দর্শনীয়স্থানগুলোকে ঘিরে গড়ে ওঠা শতাধিক হোটেল মোটেল ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা প্রতিনিয়ত লোকসান গুনছেন। যেখানে পর্যটন শিল্পকে কাজে লাগিয়ে দেশের অন্যান্য জেলা গুলো আর্থনৈতীক ভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশের বগুড়া জেলা অনেকাংশে পিছিয়ে রয়েছে। বগুড়ার পর্যটন প্রেমী ও ভ্রমন পিপাসুরা যদি স্ব স্ব অবস্থান থেকে নিজেদের এলাকার সম্ভাব্য পর্যটন স্পট গুলোর প্রচারনা ঘটায় তাহলে শুধু বগুড়া জেলা নয়, বগুড়ার প্রত্যেকটি উপজেলা এক একটি পর্যটন মিল্প হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। ধুনট উপজেলার বিলচাপড়ী বাঙ্গালী নদীর মহনা, বৈশাখীর চর, বাবু পার্ক সিটি, যমুনার চরসহ বেশ কিছু স্থানকে পর্যটন স্পট হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। আর এসকল স্খানে পর্যটকদের সমাগম হলে এলাকার উন্নয়ন ও বেকার সমস্যা সমাধান তরান্নিত হবে। চাই শুধু সৃজনশীল সুস্থ সংস্কৃতিক মানসিকতা ও দেশের জন্য কিছু করার প্রবল ইচ্ছা। আমার যে সকল স্থানকে পরিত্যাক্ত বা অবহেলায় ফেলে রেখেছি সেই স্থানকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। আমরা ইচ্ছা শক্তি দিয়ে “সম্ভব না” কে সম্ভাবনায় পরিনত করতে পারি তাহলে পর্যটনের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতীক চাকা সচল করার পাশাপাশি বেকার সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

আসুন আমরা স্ব স্ব অবস্থান থেকে পর্যটন স্পট গুলোকে দেশ ও দেশের বাইরের মানুষদের কাছে তুলে ধরে বগুড়াকে একটি সমৃদ্ধশালী পর্যটন নগরী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে, বেকারত্ব দুরীকরনসহ অর্থনৈতীক স্ববলম্বীতা অর্জন করি।

(কারিমুল হাসান লিখন)
]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.