নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রযুক্তিকে ভালবাসি। তাই প্রযুক্তি সম্পর্কিত ব্লগ পড়তে ও লিখতে ভালোবাসি। আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও অর্থনীতি এবং ভূরাজনীতি সম্পর্কে খবরাখবর রাখতে ভালো লাগে।

কাউসার আহমাদ

কাউসার আহমাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বয়স্কভাতা নিয়ে একটি পর্যালোচনা; সামাজিক সুরক্ষার গুরুত্ব।

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:০৮

একজন মানুষ যতদিন কর্মক্ষম থাকে ততদিন সে কাজ করে দেশের উন্নতিতে অবদান রাখে। সে সরকারকে ট্যাক্স দেয়। তার ট্যাক্সের উপর দেশের অর্থনীতির চাকা সচল থাকে।
কিন্তু একটা সময় তার কর্মক্ষমতা কমে যায়। সে তখন সমাজের জন্য বোঝা হয়ে যায়। অবসর গ্রহণ করার পর থেকেই তাকে বেচে থেকেও মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে হয়। ছেলেমেয়েরা ভালো হলে হয়ত কেউ কেউ একাকিত্বটা তেমন অনুভব করেনা। কিন্তু বর্তমানের এই কর্পোরেট দুনিয়ায় কয়জন বয়স্ক মানুষ তার সন্তানদের পরিবারে ঠাই পায়? বেশিরভাগ সন্তান এখন বাবা-মাকে গ্রামে রেখে শহরে চলে যায়। ফলে তারা বৃদ্ধ বয়সে নাতি-নাতনি থাকা সত্ত্বেও একাকী দিন কাটায়।

উন্নত দেশগুলোতে একটা মানুষ অবসর গ্রহণ করার পর থেকেই সরকারি বয়স্ক ভাতা চালু হয়ে যায়। এবং সেই টাকার পরিমাণটাও খুব কম নয়। বয়স্ক ভাতা হিসেবে তারা সরকারি কোষাগার থেকে যে টাকাটা পায়, তা দিয়ে দিব্যি পুরো মাস চলতে পারে। তাও আবার মাস শেষ হলেই তাদের ব্যাংক একাউন্টে টাকা চলে আসে। তারা তাদের ইচ্ছেমত একসময় গিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে আনতে পারে।

অথচ আমাদের দেশে বৃদ্ধ জনগোষ্ঠী চরম অবহেলিত। প্রতি তিন মাস পরপর ১৫০০ টাকা দেয়া হয়। অর্থাৎ প্রতি মাসে ৫০০ টাকা দেওয়া হয়। এত কম টাকা দিয়ে একটা লোকের পক্ষে ৭ দিনের ব্যয় বহন করাও সম্ভব নয়।
আবার সেই টাকা তুলতে সোনালী ব্যাংকে গিয়ে সারাদিন লাইন ধরে কত বেইজ্জতি হতে হয়। কোন ভদ্র মানুষ কখনো সেই টাকা তোলার জন্য সোনালী ব্যাংকে যাবে না। এর চেয়ে যাকাতের টাকার জন্য কোন ধনীর বাড়ির সামনে লাইন ধরা অনেক সহজ। এছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের দৌরাত্ম তো আছেই। বাংলাদেশে কোন্ ব্যক্তির বয়স্কভাতা প্রয়োজন, এটা জানার চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়- কোন ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয় কি?
অথচ বয়স্ক ভাতা বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর প্রতি রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদর্শিত কোন অনুগ্রহ নয়। এটা তাদের অধিকার। তারা যতদিন কর্মক্ষম ছিল, রাষ্ট্রের জন্য কাজ করেছে। সুতরাং যখন তাদের কর্মক্ষমতা শেষ হয়ে যাবে, তখন তাদের ভরণপোষণের ব্যয় বহন করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব।

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ১৯৯৭-১৯৯৮ অর্থবছরে আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক বয়স্কভাতা চালু করা হয়। প্রাথমিকভাবে প্রতি ওয়ার্ডে ৫ জন পুরুষ ও ৫ জন মহিলাসহ মোট ৪,০০,০০০ ব্যক্তিকে মাসিক ১০০ টাকা করে প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে সেই টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে পেতে ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে ৩০০ টাকায় উন্নীত হয়। ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে আরও একদফা বাড়িয়ে মাসিক ৪০০ টাকা করা হয়।

সর্বশেষ ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে এই টাকার পরিমাণ আরও এক দফা বৃদ্ধি করে ৫০০ টাকা করা হয়। এবং সুবিধাভোগীর সংখ্যা ২৫,০০,০০০ থেকে বাড়িয়ে ৪০,০০,০০০ করা হয়। চলতি অর্থবছরে এ খাতে ২,৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের একটা উল্লেখযোগ্য সাফল্য। তবে এর পরিসর আরও বৃদ্ধি করা উচিত। আরও অধিক বৃদ্ধকে এই বয়স্ক ভাতার আওতায় আনা উচিত। বিশেষ করে যাদের প্রকৃতই বয়স্ক ভাতা প্রয়োজন তাদেরকেই প্রদান করা উচিত। আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক। কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ের দূর্নীতির কারণে প্রকৃত অভাবী লোকেরা বঞ্চিত হয়।

বাংলাদেশ এখন আর দরিদ্র রাষ্ট্র নেই। এখন আমাদের অর্থনীতির আকার যথেষ্ট বড় হয়েছে। বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। আমাদের সরকারের সদিচ্ছা থাকলে এই অঙ্কের পরিমাণ ২,৪০০ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫,০০০ কোটি টাকা করা সম্ভব। এটা সামাজিক সুরক্ষার জন্য খুবই জরুরী।

আমি আশা করবো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। এর পাশাপাশি বাংলাদেশের নাগরিকদের অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করবেন।


কাউসার আহমাদ
[email protected]

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.