নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাঁউটাল

কাঁউটাল

কাঁউটাল › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক টুকরা ৫ই মে

০৬ ই মে, ২০২৫ ভোর ৫:০৭

কাঁধে করে র&ক্তাক্ত যে মানুষটিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সে আমার বন্ধু সোহেল রানা। তাকে খুব নির্মমভাবে সাপের মতো পে$টানো হয়েছিল। সেই সময় তাকে মারার ভিডিওটা দেখেন নি, এমন মানুষ হয়তোবা খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে।

২০১৩ এর ৫ই মে ফজর থেকে নিয়ে আসর পর্যন্ত সারাদিন আমরা একসঙ্গেই ছিলাম। আসরের পর সোহেল আমাকে ওর কাধের ব্যাগটা দিয়ে আমার থেকে আলাদা হয়ে যায়। তারপর এশার কিছুক্ষণ আগে আমাকে একজন ওর নাম্বার থেকে ফোন দিয়ে বলে, এই নাম্বারটা যার সে এখন ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে পড়ে আছে। সম্ভব হলে তাড়াতাড়ি আসুন।

আমি তখনও বিজয়নগরে। খবর পাওয়া মাত্রই একটা রিক্সার জন্য পাগলের মতো এদিক সেদিক ছুটতে থাকি। যেদিকে যাই সেদিকেই পুলিশ আর হায়েনার দল। প্রায় আধাঘন্টা দৌঁড়ানোর পর একটা রিক্সা পাই। তারপর সেই রিক্সায় করে ঢাকা মেডিকেল যাওয়ার পর যা দেখি, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তা কোনোদিন ভুলতে পারবো না।

ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের অসংখ্য লাশ পড়ে ছিল। যাদের বুক পিঠ বুলেটের আঘাতে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। এত এত লাশের ভেতরে কীভাবে আমি আমার বন্ধুকে খুঁজে পাই? এর কাছে ওর কাছে ছুটতে থাকি, কেউ ওর ব্যাপারে কোন তথ্য দিতে পারে না।
অনেক খোঁজাখুঁজির পর বারান্দার এক কোণায় সোহেলকে খুঁজে পাই। ওর পড়নে থাকা সাদা গেঞ্জিটা (হেফাজতের লগো দিয়ে আমিই প্রিন্ট করে দিয়েছিলাম) রক্তে লাল হয়ে গিয়েছিল। ওর মাথায় এত বেশি পরিমাণে আঘাত করা হয়েছিল যে, মাথাটা ফুলে গিয়ে একটা বড় পাতিলের সমান আকার ধারণ করেছিল।

সোহেলের চোখ বন্ধ। কয়েকবার ডাকার পর একটু একটু করে চোখ মিলে তাকিয়ে বিরবির করে আমাকে বললো, তুমি আসছো? আমি যদি আমারা যাই তাহলে আমার কিছু লোন আছে, সেগুলো পরিশোধ করে দিও। আর কিছু বলতে পারলো না। মুখ দিয়ে রক্ত বমি হতে লাগলো। আমি আবার পাগলের মতো ছুটতে লাগলাম।

উত্তরা হাউজবিল্ডিং থেকে পল্টন পর্যন্ত হেঁটে হেঁটে আসার কারণে আমার পা ফুলে এমন ভয়াবহ অবস্থা হয়েছিল যে, এক কদম সামনে বাড়ার মতো শক্তিও আমার অবশিষ্ট ছিল না। তবুও আমাকে দৌঁড়াতে হয়েছে। কারণ সোহেলকে আমার বাঁচাতে হবে। এটা ছাড়া তখন আমার আর কিছুই মাথায় কাজ করছিল না।

মহান আল্লাহর অশেষ দয়ায় শেষ পর্যন্ত সোহেলকে আমরা বাঁচাতে পেরেছিলাম। হ্যাঁ সোহেল রানা বেঁচে আছে। মাথায় ৩৬ টা ছোড়ড়া গুলি লাগার পরও আল্লাহর দয়ায় সে বেঁচে আছে। তবে তাকে বাঁচানোর জন্য আমাকে কী পরিমাণ পরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়েছে, তা অনেকের জন্য কল্পনা করাও কঠিন হয়ে যাবে। তবে আজ আর সেসব লিখছি না।

ভিডিওটা দেখে অনেকেরই যেহেতু ধারণা হয়েছিল যে, সে হয়তোবা শহীদ হয়ে গেছে (আজও এমন পোস্ট নজরে এসেছে)। তাই সবাইকে জানানোর জন্য আজ এ পোস্টটি লিখলাম।

যে ভাইটি কাঁধে করে আমার বন্ধুকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে গিয়েছিল, ছবিতে তার চেহারা সুস্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। আপনারা কেউ যদি তাকে চিনে থাকেন, অনুগ্রহপূর্বক তার সন্ধান দিবেন। এই মানুষটির কাছে একবারের জন্য হলেও আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই।

- শাবীব তাশফী

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.