নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জন্মসূত্রে মানব গোত্রভূক্ত; এজন্য প্রতিনিয়ত \'মানুষ\' হওয়ার প্রচেষ্টা। \'কাকতাড়ুয়ার ভাস্কর্য\', \'বায়স্কোপ\', \'পুতুলনাচ\' এবং অনুবাদ গল্পের \'নেকলেস\' বইয়ের কারিগর।

কাওসার চৌধুরী

প্রবন্ধ ও ফিচার লেখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। পাশাপাশি গল্প, অনুবাদ, কবিতা ও রম্য লেখি। আমি আশাবাদী মানুষ।

কাওসার চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পুতুলনাচ (গল্প)

২৯ শে মার্চ, ২০১৮ বিকাল ৩:১৬


(১)
ঘুম থেকে উঠতে আজ একটু দেরী হলো আরমানের। গতকাল ঢাকায় গিয়েছিল ইন্টারভিউ দিতে। দূরত্ব মাত্র ২১০ কিলোমিটার হলেও বাড়ি ফিরতে সময় লেগেছিল ১১ ঘন্টার বেশি। গাড়ির তুলনায় অপ্রতুল রাস্তার সাথে যুক্ত হয়েছিল গোটা তিনেক এক্সিডেন্ট আর একটি ঝুঁকিপূর্ণ পুরাতন ব্রিজের মাঝামাঝি একটি লরির ঘন্টা দুয়েক আটকে যাওয়া। আসার সময় ইউনিভার্সিটির ঘনিষ্ট বন্ধু অনিককে এয়ারপোর্টে বিদায় জানাতে যাওয়ায় ফিরতে আরো দেরী হয়েছে। ঢাকা থেকে সরাসরি ফ্লাইটে ৬,৭৫০ কিলোমিটার দূরত্বের স্টকহোম পৌছিতে অনিকের সময় লেগেছে সাড়ে দশ ঘন্টা! বাস থেকে নেমে আরমান যখন এদিক-ওদিক উঁকিঝুঁকি দিয়ে রিক্সা খুঁজছে তখনই অনিকের ফোন, 'দোস্ত, আমি এইমাত্র স্টকহোম আরলান্ডা এয়ারপোর্টে পৌঁছেছি, ইমিগ্রেশনের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছি।' অথচ, আরমান বাসে উঠার মিনিট বিশেক পর অনিককে বহনকারী বিমানটি ঢাকা ছাড়ে। শেষ পর্যন্ত ভোর পাঁচটা বেজে চল্লিশ মিনিটে আরমান বাসায় ফিরে।

বাড়ি থেকে ঢাকার দূরত্ব এবং ঢাকা থেকে স্টকহোমের দূরত্ব মাইলের হিসাবে না হোক গতির হিসাবে প্রায় একই। হাতি আর খেঁকশিয়ালের মধ্যে সাইজের বিস্তর ব্যবধান থাকলেও গতির প্রতিযোগিতায় হাতি যোজন যোজন পিছিয়ে। ক্ষমতায় বসে কলম আর কনুয়ের জোরে হারিয়ে দেওয়া মানে বিজয়ী হওয়া নয়, বরং কলমের কালিকে এটমিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে হাঁটুতে শক্তি সঞ্চয় করে একটি জাতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া মানে গতির সূত্রকে নিজের মধ্যে ধারণ করা। শক্তিশালী একটি সিংহকে বিষাক্ত একটি রক্তচোষা পিঁপড়া তার কানের লতিতে মরণকামড় বসিয়ে বেহুশ করে দিতে পারলে এ ক্ষেত্রে শারিরিক শক্তি আর হুংকারের কোন গুরুত্ব নেই; পিঁপড়ার কৌশলের কাছে পরাজয় স্বীকার করতে হয় অদম্য শক্তিকে।

ঈসরাঈল আর সুদানকে যারা আয়তনে মাপেন তারা গতিসূত্র হয় বুঝেন না কিংবা বুঝলেও নিজের মতো করে উল্টো অর্থ দাঁড় করান। সিলিকন ভ্যালি আর বরাক ভ্যালির মাটির ওজন প্রায় সমান হলেও দু'টি ভ্যালিতে হেঁটে চলা মানুষগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি আর ভাবনায় ওজনের ব্যবধান আকাশ-পাতাল। চাঁদের বুঁড়ির হাজারো কাল্পনিক গল্প শুনে কল্পনার রাজ্যে উড়ে বেড়ানো কিংবা চাঁদের বুকে একটু বটবৃক্ষের অস্তিত্ব নিয়ে কল্পনার শিরা-উপশিরা ভরিয়ে দিলে মস্তিষ্কের স্মৃতিসৌধ পূর্ণতা পাবে ঠিকই, তবে এ্যাপোলো ১১ মিশনে যাওয়া নীল আর্মস্ট্রংদের অকুতোভয় অভিযান আর গবেষনায় জীবনকে সপে দেওয়ার মধ্যে ব্যবধান বোধ আর দৃষ্টিশক্তিতে। মানুষের চোখের বয়স আর চোখের পর্দার কার্যকারিতা খুব একটি কমি-বেশি না হলেও অন্তর্দৃষ্টির দূরত্বের ব্যবধান বহুগুণ।

একটি সরকারি চাকরির ভাইভা ছিল। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় ভাইভা দিতে যাওয়া। ইস্ত্রি করা সার্ট, প্যান্ট আর নতুন কেনা একটি সোনালী রঙের টাইের সাথে নিজের কনফিডেন্সে লেভেলও চকচক করছিলো। জীবনের প্রথম ভাইভা, তাই অনেক প্রস্তুতি নিয়ে ঢাকার পথে রওয়ানা হয়েছিল আরমান। তবে ঢাকার তপ্ত পিচঢালা রাস্তায় পা দিয়ে মানুষ আর জ্যামের ঠেলায় অর্ধেক আত্মবিশ্বাস কমলেও বাকিটুকু ইন্টারভিউয়ের শীতল করা এসির বদৌলতে পুরোপুরি লোপ পায়। চাকরিটা হবে না শতভাগ নিশ্চিত আরমান। ইন্টারভিউ বোর্ডের প্রশ্নকর্তারা এমন কিছু প্রশ্ন ছুঁড়েছেন যা চাকরির সাথে মোটেও সম্পর্কিত নয়। তরুণ, তেজোদ্দীপ্ত রেসের ঘোড়াদের জীবন নিয়ে জুয়া খেলতে বসা স্যারদের মধ্যে বিন্দু পরিমান আন্তরিকতা চোখে পড়েনি। হয়তো নিতে হবে, তাই ইন্টারভিউ নেওয়া। নিয়ম রক্ষার ধারাবাহিক চর্চা হবে হয়তো!

অভিজ্ঞতাটা মোটেও 'খুশিতে, ঠ্যালায়, ঘোরতে' কিসিমের ছিলো না।

তিনজন ভুঁড়িওয়ালা লোক চোখে ভারী চশমা আর মাটির কলসির গলায় গামছা পেঁচিয়ে হাওয়া বন্ধ হওয়ার মতো শক্ত করে টাই বেঁধে একটি নবযৌবনপ্রাপ্ত ঘোড়ায় সওয়ার হওয়ার পরিবর্তে গভীর মনোযোগে পর্যবেক্ষণ করতে কখনো চোখে না পড়লেও একদিন সচিবালয়ের সামনে কয়েকডজন ভরা মাটির কলসি একটি পুঁচকে কাঁককে টেঙাতে দেখেছিল, আরমান। কাকের অপরাধ, টলটলে সচ্ছ কলসির পানিতে কুচকুচে কালো ঠোঁট ডুবিয়ে তৃষ্ণা নিবারন করতে গিয়ে ভরা কলসি দূষিত করেছে; শধু তাই নয়, অভিযোগ আছে পানি পান করার পর দু'খানা টেঙ ভিজিয়ে হিসুও করেছে! কাকের উদ্যেশ্যে ছোঁড়া বেশ কিছু ইট-পাথরের টুকরো পাশের শিক্ষা ভবনের সীমানায় আছড়ে পড়লেও প্রতিবেশী কাকের দল স্বজাতির এই লঘু অপরাধ ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেছে।

যাক এবার আরমানের ইন্টারভিউয়ে ফিরে আসা যাক। বোর্ডের একজন সদস্য ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বেশ কিছু বিষয় জানতে চাওয়ার পর সবশেষে প্রশ্ন করলেন-
-- আপনার বাবা কী করেন?
আরেকজন কোন রাখঢাক না করে জানতে চাইলেন-
-- পারিবারিক বিষয়-সম্পত্তি কেমন?
তৃতীয় অর্থাৎ শেষ 'স্যার' জানতে চাইলেন-
-- নিউটনের বাবার নাম কী?
এমনভাবে প্রশ্নবান নিক্ষিপ্ত হলো কোনটি রেখে কোনটির উত্তর দেবে বুঝতে পারছিল না আরমান। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল ধারাবাহিক নাটকের সিরিয়াল মেইনটেন করেই উত্তর দেবে। তবে এটা বুঝেছিলো ইন্টারভিউয়ের নামে তার সাথে ইয়ার্কি-মশকরা হচ্ছে। এটা বুঝতে যে কেউ ইন্টারভিউ অভিজ্ঞ না হলেও চলবে।
-- স্যার, আমার বাবার নাম আবেদনপত্রে দেওয়া আছে। তিনি কী করেন কিংবা তার পেশা/ব্যাবসা কী তা জানতে চাওয়া বোধহয় অপ্রয়োজনীয়। এটা নিশ্চয়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয় হওয়ার কথা নয়।
আর, পারিবারিক সহায়-সম্পত্তির খবর নিয়ে কী করবেন? যদি আর্থিক সামর্থের প্রমাণ স্বরুপ ব্যাংক সলভেনসি সার্টিফিকেট প্রয়োজন হয় তাহলে চাকরির সার্কুলারে থাকার কথা। এমন কোন শর্ত আমার চোখে পড়েনি, স্যার।
প্রতিউত্তরে দাঁত কটমট করে, চোখের লেন্সের পাওয়ার আর তীক্ষ্ণ করে দু'জন বললেন,
-- বাছা, গায়ে গতরে তাগড়া যুবক হলেও গাঁধা আর ঘোড়ার মধ্যে পার্থক্য এখনো বুঝতে পারোনি। রক্ত এখনো গরম। চাকরির ইন্টারভিউতে এসব লাগে বাছাধন, লাগে। সরকারি চাকরি পেতে বাবা-চাচা-খালু আর 'মামুর' জোরটাই আসল। বুঝবে বুঝবে, শুরুটা হলো মাত্র। কত ইন্টারভিউ জীবনে বাকি আছে। অভিজ্ঞতায় 'অভিজ্ঞতা' বাড়বে নিশ্চয়ই!
তৃতীয়জনের প্রশ্নের উত্তরে বলেছিল--
-- স্যার, নিউটনের গতিসূত্র সম্বন্ধে জানি। আপনি জানতে চাইলে বলতে পারি। কিন্তু বিশ্বাস করেন বিজ্ঞানী নিউটনের বাবার নামটি কোনদিন শুনিনি, স্যার। আদৌ তার বাবা ছিলেন কি না তাও জানি না! আর নিউটনের বাবা কিছু আবিষ্কার-টাবিষ্কার করেছিলেন বলেও তো কোন চাকরির নির্দেশিকায় পড়িনি।

একটু কেশে গলার স্বর উঁচু করে স্যার উত্তরে বললেন, 'আপনি কি বলতে চান নিউটন একজন জারজ সন্তান? একজন পৃথিবী বিখ্যাত বিজ্ঞানীকে নিয়ে এমন মন্তব্য করা মোটেও প্রত্যাশিত নয়। আপনারা নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছেন অথচ, পূর্বসূরি জ্ঞানী-গুণীদের বিষয়ে কোন শ্রদ্ধাবোধ নেই। এখন যদি জিজ্ঞেস করি, 'আচ্ছা, নিউটনের বউয়ের নাম কি? উত্তরে বলবেন, তিনি তো জীবনে বিয়ে করেননি, লিভ টুগেদার করছেন একাধিক সঙ্গিনীর সাথে; এখন কয়জনের নাম বলবো!'

ইন্টারভিউ দিয়ে বের হয়ে মোবাইলটা পকেট থেকে বের করতেই চোখে পড়লো মায়ের অনেকগুলো কল। মোবাইল সাইলেন্ট থাকায় খেয়াল করেনি, তাছাড়া ইন্টারভিউ দিতে গেলে স্যারদের সামনে মোবাইল বেঁজে উঠা নাকি বেয়াদবী। চাকরি পাওয়া নিরানব্বই ভাগ নিশ্চিত হলেও রিংটোনের অবেলায় গান শুনানোর চেষ্টা চাকরির সম্ভাবনাকে এক ধাক্কায় জিরোতে নিয়ে আসে। যদিও আজ তিনজন স্যারের মোবাইল পরপর বেজেছিল, কল রিসিভও হয়েছে। আকারে ইঙ্গিতে আর নীচু স্বরে চলতে থাকা স্যারদের আলাপ খুব একটা না বুঝলেও তার ধারণা মোবাইল সাইন ল্যাংগুয়েজ বলে কিছু একটা আছে নিশ্চিত।

মাকে এবার কলবেক করলো, আরমান। মায়ের উদগ্রীব কণ্ঠ শুনে মনটা ব্যাকুল হয়ে উঠলো। মা অতো শিক্ষিত নয়, এজন্য মানুষের মনোজগতের অলিগলিতে চাষ হওয়া কথামালার উল্টো দিক বুঝেন কম। মুখ আর মুখোশের পার্থক্য শুধু বাস্তবে মুখোশপরাদের দেখলেই আঁচ করেন। কিন্তু মুখোশ না পরেও ইস্পাত কঠিন মুখোশ পরে মানুষের সামনে দিব্বি ঘুরে বেড়ানো যায় তা জানা নেই মায়ের। ইন্টারভিউ বিষয়ে মায়ের সাথে কথা বেশ না বাড়ালেও দুপুরের খাবার ঠিক সময়ে খেয়েছে এটা নিশ্চিত করতে ভুল করেনি আরমান।

'বাপজান, হুনছি ঢাহা শহর খুব সুন্দর। কত্তো মানুষ থাহে। বড় বড় দলান। বড় বড় রাস্তা আর টাহার উড়ানি। মাইনসের নাকি টাহার পাহাড় থাহে। তোর চাকরি হইলে মাকে এখবার নিয়া যাবি? ঢাহা নিজ চুকে দেহতে ছাই। নিবি তো? কথা কস না ক্যান, বাপ'!

(২)
পড়াশোনার জন্য আরমান জেলা শহরে একটি মেসে থাকলেও মা আর ছোট বোনটা গ্রামের বাড়িতে থাকে। মনে পড়লো আদরের পিচ্চি বোনটা দু'দিন আগে ফোনে বলেছিলো, 'ভাইয়া আগামী শনিবার স্কুলের পিকনিক, পাঁচশত টাকা লাগবে, মা দিতে চায় না; তুমি মাকে রাজি করাইবা আর টাকাটা পাঠায়া দিবা।' বোনটা তার অনেক আদরের, কথা বলে অভিমানের সূরে। বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো বোনটার এই আবদার এতো দূর পর্যন্ত আসতো না। বিকালে টিউশনিতে যাওয়ার সময় মায়ের মোবাইলে টাকাটা পাঠিয়ে মাকে বুঝিয়ে বলবে। ছোট ভাইটা এবার এসএসসি পাশ করায় শহরের একমাত্র পলিট্যাকনিক্যাল কলেজে ভর্তি করে দিয়েছে। দুই ভাই একই মেসে একই রুমে পাশাপাশি খাটে থাকে।

ইন্টারভিউয়ের ঘোরে সারাদিন কাটলেও পয়লা পয়লা ফাল্গুনের কথা ঠিকই মনে ছিল। তবে তারিনের সাথে পরিচিত হওয়ার আগপর্যন্ত এসব বিশেষ দিবস-টিবস খুব একটা মনে থাকতো না। একটি আবেগহীন লাজুক ছেলের জীবনে টিউশনি আর মাসে শেষে যোগ-বিয়োগের ফলাফল মিলিয়ে চলা যেখানে কঠিন সাবজেক্ট সেখানে এসব দিবসের মর্যাদা খুব একটা থাকার কথা নয়। তারিনকে খুশি করতে গতকাল মোবাইলে একটি ম্যাসেজ দিয়েছিলো 'ফুল ফুটুক আর না ফুটুক আজ বসন্ত'। তারিনের পাল্টা এসএমএস ছিলো, এত্তো কিপটা ক্যান, তুমি? আধা লাইনের একটি ম্যাসেজ! নেই কোন রুমান্টিক অভিব্যক্তি। একদম পানসে একটি প্রাণী তুমি। ঢাকায় ছেলে-মেয়েদের হই-হুল্লড় আর ঘোরাঘুরি দেখে অবাক হয়েছিল আরমান। পার্ক আর বড় রাস্তার মোড়ে মোড়ে মাইকে শুনেছে-

আহা, আজি এ বসন্তে এত ফুল ফুটে,
এত বাঁশি বাজে, এত পাখি গায়
সখীর হৃদয় কুসুম-কোমল
কার অনাদরে আজি ঝরে যায়।

কবিগুরুর লেখা এই গানটি ভীষণ প্রিয় আরমানের। বসন্তের সাথে ফুল ফোঁটার কোন সম্পর্ক না থাকলেও এদিনের উজ্জল ফুলগুলোর মর্যাদা অনেক। আর্থিক সামর্থ্যের সাথে বয়স আর আবেগের কোন দ্বন্দ্ব নেই। বয়স আঠারো হলেই যৌবন আর হৃদয়ের কপাট খোলে অবধারিতভাবে। টাকা-পয়সা মানুষের বয়সকে প্রভাবিত করতে না পারলেও হৃদয়ের কপাটকে প্রভাবিত করতে পারে সহজেই। যৌবনের আদর-অনাদর আর সম্পর্কের স্থায়িত্বের সাথে মনের কোনে কল্পিত চাহিদার ফর্দ সম্পর্কগুলোকে যোগ-বিয়োগের সমীকরণে দাঁড় করায়।

আরমান মনে করে, ঢাকার মেয়েরা অনেক বেশি স্মার্ট ও সুন্দরী। এই বাসন্তি রংটাই আরমান আগে চিনতো না, তারিনই তাকে চিনিয়েছে। গত বছর পয়লা ফাল্গুনের ঠিক আগের সন্ধায় বাসন্তি রং হাতে কলমে শেখাতে শহরের নামকরা এটি শাড়ির দোকানে নিয়ে গিয়েছিল। সাড়ে তিন হাজার টাকায় চেনা বাসন্তি রংটা প্যাকেট করতে করতে দোকানী বলেছিল, 'ভাইজান, এই শাড়িতে ভাবীরে পরীর লাহান লাগবো, আফার পসন্দ কুব বালা।'। দু'টি টিউশনির পুরো মাসের কামাই গচ্চা দিয়ে প্রিয়জনের প্রিয় রং চিনতে পারাও কম নয়। চোখে রঙের পরিস্ফুটনে কোন ঘাটতি না থাকলেও পকেটের উপচেপড়া রঙে ঘাটতি থাকলে মনের রঙে জং ধরে সহজেই। জীবনের সাদা-কালো দিকটিই সবচেয়ে বেশি দেখা হয়েছে আরমানের। স্কুল ড্রেসে সাদা সার্ট আর কালো প্যান্ট ছিল। মাধ্যমিক স্কুলের পাঁচটি বছর দুই সেট ড্রেসই ছিল ভরসা। আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে গেলেও এই রঙের হেরফের হতো না।

মেয়েরা হয়তো ছেলেদের চেয়ে রঙ ভালো বুঝে। আমাদের সমাজে পারিবারিক প্রথায় অধিকাংশ সংসারের ঘানি বাবাদের টানতে হয় বলে হয়তো মায়েদের চেয়ে বাবাদের মনের রঙে একটু হলেও ঘাটতি থাকে। বাবাকে দেখেছে শত অভাবের মাঝেও মায়ের জন্য পছন্দের শাড়ি কিনে আনতে। কিন্তু বাবা মারা যাওয়ার পর মাকে কোনদিন রঙিন শাড়িতে দেখেনি আরমান। সাদাকালো।

টুং করে বেজে উঠা মোবাইলের টেক্সট ওপেন করতেই বেঁজে উঠল 'ম্যারেল টুইন্সের' গাওয়া ভ্যালেন্টাইন ডে'র বিখ্যাত গানটির প্রথম চারটি লাইন-

'ইটস ভ্যালেন্টাইনস ডে
এ ডে টু বি হ্যাপি হোয়েন ইউ হ্যাব এ বে
ইটস ভ্যালেন্টাইনস ডে
এ ডে টু রিমাইন্ড ইউ দ্যাট হোয়েন ইউ হেব এ্য বে।'

সাথে আরেকটি টেক্সট; আই ওয়েট টিল থ্রি ও'ক্লক লাস্ট নাইট বাট ইউ ডিড নট সেন্ড মি ভেলেন্টাইনস উইসেস। দ্যাটস নট গুড এট অল বেইবি। ইউ আর স্টিল বেক ডেটেড। হাউ ক্যান ইউ ফরগট ইট? টুটালি আন এক্সপেক্টেড। .......... খ্যাত একটা!

আরমানের মনে পড়লো গতকাল সারা দিন ঢাকার রাস্তায় জ্যাম, গাড়ির হর্ণ আর ধূলাবালিতে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছিল তার। রাতে বাসে উঠে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে খেয়াল নেই। তারিনকে ভেলেন্টাইন ডের উইশ করা উচিৎ ছিল। যতদিন থেকে আরমানের সাথে তারিনের ভাব-ভালবাসা তখন থেকে আরমান জানে নিউ ইয়ার, ভেলেন্টাইনস ডে এবং ক্রিসমাস ডে আসলে তারিন অনেক এক্সাইটেড থাকে। এমনকি ইস্টার হলিডেতেও। কিন্তু পহেলা বৈশাখ, একুশে ফেব্রুয়ারি, ষোলই ডিসেম্বর ইত্যাদি দিবসগুলোতে তার তেমন আগ্রহ নেই। হয়তো ইংরেজি মাধ্যমে পড়েছে বলে এই দিবসগুলোর প্রতি আগ্রহ কম। স্কুলেও হয়তো বা দিবসগুলোর গুরুত্ব তেমন একটা ছিলো না, উদযাপনও কম হতো হয়তোবা।

প্রতি নিউ ইয়ার ও ভেলেন্টাইন ডে-তে তারিনকে দামী গিফট করে আরমান। ইচ্ছে করতো বাংলা সাহিত্যের সেরা লেখকদের বইগুলো উপহার দিতে। কিন্তু তারিন তো বাংলা ঠিকমতো পড়তেই পারে না। অনেক গল্পের বই স্কুল থেকে সাজেস্ট করতো কিন্তু কোনটিই বাংলা ছিলো না। এতে কষ্ট পেলেও আরমান মানিয়ে নিয়েছে। তার সাথে তারিন বাংলায় প্রেম করছে এটাই বা কম কিসে! দামী গিফটের আইটেম কিনতে কষ্ট হলেও তারিনের পছন্দকে মেনে নেয় হাসিমুখেই। এবারের ভেলেন্টাইনে একটি পিঙ্ক কালারের বড় টেডি বিয়ার গিফট করেছে। তবে তার ইচ্ছায় নয়, তারিন চেয়েছে তাই। টিউশনি থেকে প্রতি মাসে কিছু টাকা জমিয়ে রাখে ভালবাসার মানুষটির জন্য। সত্যি অনেক ভালবাসে তারিনকে। তবে কোনদিন তারিনের কাছ থেকে কিছু চায়নি আরমান। তারিন আরমান নামটি কাটছাট করে 'এ্যারন' নামে ডাকে।

তারিনের সাথে পরিচয়টা হয়ছিল রং নাম্বারে ডায়াল থেকে। বেশ কয়েক মাস তাদের মধ্যে দেখা হয়নি শুধু কথা হতো। আরমানের কথা শুনতে খুব ভাল লাগতো বলে তারিনই তাকে বেশি কল দিত। দেখা হওয়ার পর আরমানকে বলেছিল; 'ইউ আর সো লাকি, না দেখে প্রেমে পড়েছিলাম বলে এমন পরীর সন্ধান পেয়েছো। কথাটিকে ফান হিসাবে নিয়েছিল আরমান, গুরুত্ব দেয়নি। তারিন এ-লেভেল শেষ করে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রী। বাবা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী।

ভাবনার ফাঁকে ক্রিং করে তারিনের আরেকটি টেক্সট; "বেইবি, আই কোড নট মিট উউথ ইউ দিস আফটার নুন, উই আর গয়িং টু হোয়াইট স্টোন, ইটস এ ফেমেলি ট্যুর, উইথ ডেডি-মাম্মি এন্ড কাজিনস। প্লিজ ডন্ট ফিল বোর, কিপ স্মাইলিং অল ডে। কল ইউ বেইবি হোয়েন বেক। হোপ, উই ক্যান ব্যাক বিফোর সানসেট। উই ক্যান মিট এন্ড টেক ডিনার এট এইট থার্টি ইন 'পার্টি ইন' রেস্টুরেন্ট।...... উ-উ-ম.....পা-প্পি.......। লাভ ইউ বেব।"

আরমানের মন একটু খারাপ হলো। তবে প্রতি সপ্তাহে যেহেতু দেখা হয় সেহেতু এটা কোন ব্যাপার না। তাছাড়া ভ্যালেন্টাইন ডে-টে তার তেমন ভাল লাগে না। শুধু ভালবাসার মানুষটিকে খুশি রাখতেই এ দিবসগুলো পালন করে, এই যা। হঠাৎ আরমানের খেয়াল হলো বন্ধু আরিফ অনেক বছর পর লন্ডন থেকে দেশে ফিরেছে, বিকালে তাদের দেখা করার কথা। আরিফ তার নেংটা কালের জানে দোস্ত। বেশ কয়েক বছর হলো পরিবারের সাথে দেশান্তরীত। গত পরশু দেশে এসেছে। ভালই হলো বিকালে বন্ধুর সাথে দেখা করা যাবে, জমিয়ে আড্ডা মারা যাবে।

(৩)
বিকাল চারটায় নির্দিষ্ট রেস্টুরেন্টে বন্ধু আরিফকে দেখে হতবাক আরমান। এই ক'বছরে অনেক সুন্দর আর হ্যন্ডসাম হয়েছে আরিফ। মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি। একদম ভারতীয় সিরিয়ালের নায়কদের মত লাগছে। গলায় ব্রেসলেট। হাতে দামি ঘড়ি ও মোবাইল। আলাপচারিতার ফাঁকে আরিফ জানালো, 'আজ আমার ভালবাসার মানুষটির সাথে দেখা হবে। বিদেশ থেকে ইমো/হোয়াটসআপে নিয়মিত দেখা হলেও সরাসরি এই প্রথম। তোকে সারপ্রাইজ দিতে এখানে এনেছি, একটু পরে সে আসবে, আগামী পরশু আমাদের এনগেজমেন্ট।' এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে থামলো, আরিফ।
-- কনগ্রেচুলেশন বন্ধু, আমার অনেক খুশি লাগছে, তোর বিয়েতে অনেক মজা করবো।
'এবার তোর কথা বল, পড়াশুনা কেমন চলছে?' জানতে চাইলো আরিফ।
-- এইতো চলছে। বলতে পারিস, ভালাই। নিজের কামাই দিয়েই চলি।
এবার টেবিলে র্যাপিং করা কিছু গিফটের প্রতি ইঙ্গিত করলো, আরিফ-
-- দেখ তো কেমন হয়েছে? তোর হবু ভাবীর জন্য ভেলেন্টাইন গিফট। পছন্দ করবে তো?
-- 'অনেক সুন্দর হয়েছে, দোস্ত । কী আছে এতে?'
গিফটগুলো হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতে আরিফের জবাব-
-- তেমন কিছু না। সেনেলের এটা পারফিউম, একটি ডায়মন্ডের আংটি আর কিছু চকলেট। এই যা। বিয়ের গিফট আলাদা আছে। এগুলো আজকের জন্য। বিদেশ থেকে বিভিন্ন সময়ে তার ফর্দমতো গিফট পাঠালেও এই আইটেমগুলো নিজের পছন্দে কিনেছি সারপ্রাইজ দেবো বলে!
-- শুভ কামনা রইলো দোস্ত। ভাবী অনেক ভাগ্যবতী তোর মতো উদার আর হাতখোলা হাজবেন্ড পাচ্ছে। কত বছর হলো তোদের রিলেশন?
-- তিন বছরের মত হবে। আমাকে খুব ভালবাসে। কেয়ার করে। সি ইজ রিয়েলি এ গুড গার্ল। অলসো বিউটিফুল, চারমিং এন্ড কমিটেড। মাই জুলিয়েট। এতো দেরী করছে কেন? আধাঘন্টা লেট!
-- দোস্ত, টেনশন নিছ না। তোর জুলিয়েট এখনই এসে পড়বে। মনে হয় জ্যামে আটকে গেছে। এছাড়া বাসা থেকে বের হতে সমস্যা হচ্ছে হয়তো; ভেলেন্টাইন ডে'তে শুনেছি মায়ের মেয়েদের উপর গোপনে গোয়েন্দাগিরি করেন। তবে, সত্য মিথ্যা জানি না, দোস্ত!
-- তুই কিযে বলিস? আমাদের সবকিছু পারিবারিকভাবে ঠিকঠাক হয়ে গেছে। আমার সাথে আজ দেখা হবে এটা তার পরিবার জানে। তবে একটু দেরীতে আসুক সমস্যা নেই। তোর সাথে সময়টা কিন্তু ভালই কাটছে, বন্ধু।
-- তুই ওয়েট কর, এই ফাঁকে একটু ওয়াশ রুম ঘুরে আসি।

ওয়াশরুম থেকে ফিরে আরমান দেখলো বন্ধুর প্রেয়সী চলে এসেছে। উল্টো দিকে বসে আছে বলে মুখটি দেখতে পায়নি। কাছে যেতেই আরিফ ডাক দিল, 'কাম ওন দোস্ত, সি ইজ ওয়ান এন্ড ওয়ানলি মাই জুলিয়েট। মাই লাভ। তারিন লুক, মাই মোস্ট বজম ফ্রেন্ড আরমান। লেটস টক ইউথ হিম। আই'ম কামিং বেক ফ্রম ওয়াশরুম উইথিন টু মিনিটস, প্লিজ।

কনগ্রেচুলেশন মিস তারিন। উইশিং এ ভেরি হ্যাপি ভেলেন্টাইনস ডে। হোপ, লাভ এন্ড কেয়ার ইওর এক্সপেক্টেড টেডি বিয়ার ফর এভার। অলসো এডভান্স চিয়ার্স ফর ইওর কনজুয়াল লাইফ। বি হ্যাপী, টেক কেয়ার। বাই।

আগে কখনো এই রেস্টুরেন্টে আসেনি আরমান। শহরের সবচেয়ে দামী খাবার পাওয়া যায় বলে পয়সাওয়ালাদের আনাগোনা বেশি এখানে। ডান পাশের নতুন দোকানটি বেশ পরিপাটি, দামী ব্রান্ডের দোকান, বাহারি ডিজাইনের জুতাগুলো খুব যত্ন করে সাজিয়ে রাখা, ক্রেতা আকৃষ্ট হতে বাধ্য। বাম পাশে একটি মোবাইল শপ। এটা বিদেশি ব্রান্ডের। ভ্যালেন্টাইন ডে'র বাহারী ফেস্টুন দোকান ঝুলে আছে। জোড়ায় জোড়ায় ভ্যালেন্টাইন দূত আসা-যাওয়া করছে। বের হওয়ার সময় হাতে সুদৃশ্য প্যাকেট আর ভ্যালেন্টাইন গিফট বক্স।

'মামা একটা বই নিন। ফুটপাতে বিক্রি করছি বলে বইগুলোকে অবহেলা কইরেন না, দামী বই। ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষে ৫০% ছাড়! সুযোগটা কাজে লাগান। সব রকম কালেকশন আছে নিন একটা। ভাবীরে গিফট কইরেন। খুশি হইবেন তিনি। বুঝলেন মামা, আজকাল বিক্রি বাট্টা ভালো যাচ্ছে না। দশ বছর আগেও ফুটপাতে বই বিক্রি করে ভালোমতো সংসার চালাতে পেরেছি। আর এখন তো খরছই উঠে না। সপ্তাহে মোটে দু'দিন এখানে বসি। দীর্ঘদিনের অভ্যাস তাই ছাড়তে পারি না। কোন কোন হপ্তায় আসি না একদিনও। পোলাপান এসে চটি গল্পের বই খুঁজে। লজ্জা লাগে। মামা, ফুটপাতে বই বিক্রি করলেও নীতিতে ছাড় দেই না। বাকি দিনগুলোতে অন্য কাজ করি।"

বিক্ষিপ্ত মনে জীবনের হিসাব মেলাতে মেলাতে কখন যে রাস্তা পার হয়ে উল্টা দিকের ফুটপাতের বইয়ের দোকানের সামনে এসেছে খেয়াল নেই আরমানের। 'মামা' ডাক শুনেই খেয়াল হলো। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'পুতুল নাচের ইতিকথা' আছে আপনার কাছে? বইটি কয়েক বছর আগে পড়েছিলাম, অনেকটা ভুলে গেছি। নতুন করে পড়লে ভালো লাগবে হয়তোবা।

ধূঁলোবালির আস্তরণ থেকে খুঁজে বের করে ঝেড়ে বইটি হাতে দিতে গিয়ে দোকানীর সহজ স্বীকারোক্তি, 'এসব বই এখন কেউ পড়ে না, মামা। চাহিদাও নেই। কয়েক কবছর আগে নীলক্ষেতের ফুটপাত থেকে কিনে এনেছিলাম, এখনো আছে। মলাটের সাদা রঙটি এখন বাদামী হয়ে গেছে, কিছু অংশ ছিড়ে গেছে। বইটি আপনাকে ৭০% ছাড়ে দেবো। সর্বমোট ষাট টাকা দিলেই চলবে।'

পকেট থেকে এক'শো টাকার একটি কড়কড়ে নোট দোকানীর হাতে গুজে দিয়ে পুরোটা রেখে দিতে ইঙ্গিত করলো আরমান। একযুগ আগে বুঝে না বুঝে পড়া বইটি এখন আগের চেয়ে সুপাঠ্য আর বোধগম্য হবে নিশ্চয়ই। হিসাব কষলো, পার্টি ইনে দু'জনের রাতের খাবারের বিল কমপক্ষে এক হাজার টাকা হতো; সাথে বাড়তি আবদার যুক্ত হলে তো কথাই নেই! পছন্দের বইটি কিনেও এখন ন'শো টাকা সেভ।



ফটো ক্রেডিট,
গুগল।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুলাই, ২০১৮ দুপুর ২:৫৯

খায়রুল আহসান বলেছেন: সেলফোনের কল্যানে মিথ্যে বলাটা আজ কত না সহজ হয়ে গেছে!
শেষের ছবিটা অর্থবহ।
বেনিয়াদের লক্ষ্যই থাকে এইসব বিভিন্ন "ডে" উদযাপন করে টু পাইস কামানোর প্রতি।

০৬ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৮

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা স্যার। আপনি খুঁজে খুঁজে আমার আগের গল্পটি পড়েছেন দেখে খু ব খুশি হয়েছি। আপনি ঠিকই বলেছেন, প্রযুক্তি আমাদের অনেক দিয়েছে; পাশাপাশি অনেক নীতি নৈতিকতাকে হারাতে সহযোগীতা করছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.