নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জন্মসূত্রে মানব গোত্রভূক্ত; এজন্য প্রতিনিয়ত \'মানুষ\' হওয়ার প্রচেষ্টা। \'কাকতাড়ুয়ার ভাস্কর্য\', \'বায়স্কোপ\', \'পুতুলনাচ\' এবং অনুবাদ গল্পের \'নেকলেস\' বইয়ের কারিগর।

কাওসার চৌধুরী

প্রবন্ধ ও ফিচার লেখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। পাশাপাশি গল্প, অনুবাদ, কবিতা ও রম্য লেখি। আমি আশাবাদী মানুষ।

কাওসার চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশে প্রচলিত পীর ও মাজার ব্যবসা (পর্যালোচন)

০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:৪৩


বয়স তখন আনুমানিক দশ-বারো বছর হবে। সময়টা বর্ষাকাল। বন্যার পানিতে চারদিক থৈ থৈ করছে। আম্মা ও বাড়ির দুই চাচী একজন পীরের বাড়িতে নৌকাযোগে যাবেন বলে ঠিক করলেন। যথা সময়ে নৌকা ও মাঝি ঠিক করা হলো। সাথে আমরা চাচাত ভাই-বোন মিলে আরো সাত-আট জন সঙ্গী হলাম। মা-চাচীরা অনেক যত্ন করে পীর সাহেবের জন্য মুরগীর মাংস রান্না করে টিফিনে ভরে রওয়ানা দিলেন। সাথে টাটকা রুই মাছ ভাজি আর বিরুইন চালের গরম ভাত। ঘন্টা দেড়েক নৌকা ভ্রমণ করে যথা সময়ে পীর সাহেবের বাড়িতে পৌছিলাম।

দেখলাম আধপাকা একটি ঘরের বারান্দায় খালি গায়ে প্রায় উলঙ্গ অবস্থায় লুঙ্গি পরে একজন লোক বসে আছে। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, অপরিচ্ছন্ন পোষাক-পরিচ্ছদ, শরীরে দুর্গন্ধ। লোকটি দেখতে উন্মাদের মত হলেও একটু পর পর সিগারেট টানছে। চারপাশে গোল হয়ে বসে আছে তার পরিবারের লোকজন ও দূর দূরান্ত থেকে ছুটে আসা ভক্তরা। ভক্তদের কেউ সিগারেট টানছেন, কেউ লোকটার লাথি-কিল-ঘুসি হাসি মুখে সহ্য করছেন! এতে নাকি রোগ-বালাই, বালা-মুসিবত দূর হয়!!

তাহলে ইনিই পীর!
এত্তো ভক্ত!!
এত্তো কেরামতি তার!!!

ছোটবেলা থেকে পীর নিয়ে অনেক কল্পনা মনের মধ্যে আসলেও, স্বচক্ষে কোনদিন পীর সাহেবদের দেখা হয়নি। এজন্য মনে মনে অনেক কল্পনা করতাম। কিন্তু আমার কাল্পনিক পীরের সাথে এই পীরের তো কোন মিল নেই! কাল্পনিক পীর ছিলেন ধবধবে সাদা পাঞ্জাবী-পায়জামা পরা নাদুস-নুদুশ শরীরের অধিকারী, যার ভুড়ি হবে আলাদীনের দৈত্যের মত। আর লম্বা সফেদ দাঁড়ি। তিনি বসবেন বিশাল রাজকীয় মঞ্চে এবং তাকে ঘিরে গুণ-কীর্তন করবে শত শত ভক্ত। আতর গোলাপজলের গন্ধে মৌ মৌ করবে চারিপাশ।

কাল্পনিক পীরের সাথে এই পীরের মিল খুঁজে না পাওয়ায় আহত হলাম, ভেতরে ভেতরে ধাক্কা খেলাম। তবে লোকটিকে দেখে পীর নিয়ে আমার ছোট্ট মনের সন্দেহ আর কৌতুহল বাড়লো।

যথারীতি আমাদের সাক্ষাৎকার পর্ব শুরু হলো। আমি একটু তফাতে বসে পীর সাহেবের মতি গতি পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম। ভয়ে পাশে বসলাম না। পীর সাহেব ভক্তদের কাউকে লাথি মারছেন, তো কারো চুলের মুষ্টি ধরে টানছেন, কারো মুখের উপর আবার থুথুও দিচ্ছেন! কোন কোন ভক্ত মহব্বতের সাথে বিড়ি/সিগারেট জ্বালিয়ে পীর সাহেবের মুখে গুজে দিচ্ছে। দর্শনার্থীদের সাক্ষাতের সময় পীর সাহেব বিড় বিড় করে কি যেন বলছেন আর হাত-পা নাচিয়ে চোখ বড় বড় করে ভক্তের দিকে অগ্নীদৃষ্টি নিক্ষেপ করছেন। পাশাপাশি সমান তালে চলে গালি-গালাজ পর্ব। তবে এসব গালি ভক্তরা থোড়াই কেয়ার করছেন। এটা নাকি পীর সাহেবের আশীর্বাদ! ভক্তদের মধ্যে যে বেশী লাত্তি-গালি খাবে তিনিই তো কামিয়াব। এতে নাকি পাপ মোচন হয়!

আমি অনেক চেষ্টা করেও পীর সাহেবের কথার মাথামুণ্ডু কিছুই বুঝতে পারি নাই। এমনকি যারা তার দর্শন নিতে এসেছেন তাদের কেউ বুঝেছেন বলে মনে হলো না। তবে পীর সাহেবের পাশে বসা (খাদিম) লোকটি ঠিকই সবাইকে বুঝিয়ে দিচ্ছে তিনি কি বলেছেন। লোকটি কাউকে বলছে পীরের দরবারে গরু দিতে হবে, আবার কাউকে বলছে ছাগল দিতে। এছাড়া হাঁস-মুরগী ও নগদ টাকা পয়সার কথা তো আছেই। যারা পীর সাহেবের আশীর্বাদ নিতে এসেছেন তারা লোকটির কথা বিনা বাক্যে মেনে নিচ্ছেন নিজেদের সমস্যা থেকে মুক্তির আশায়। বয়স অল্প হলেও ব্যাপারটি আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না, কেন যেন মনে হচ্ছিল লোকটি পাগল। এই পাগলকে সাজিয়ে পরিবারের লোকজন ব্যবসাপাতি খোলে বসেছে।


!!!----------আসুন পীর নিয়ে একটু আলোকপাত করি। পীর একটি ফার্সি শব্দ। যার অর্থ জ্ঞানী বা পণ্ডিত ব্যক্তি। বিশদ অর্থে বলতে গেলে পীর হচ্ছেন ইসলামী জ্ঞানে সমৃদ্ধ ব্যক্তি, যার কোরআন ও হাদিসের উপর অগাধ পাণ্ডিত্য আছে। তিনি ইসলামের রীতি-নীতি ভালভাবে জানেন এবং নিজে তা পালন করেন। মানুষকে তিনি ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তালিম দেন। তিনি পরহেজগার, নির্লোভ, পরোপকারী ও উত্তম চরিত্রের অধিকারী হবেন। তাঁর চলাফেরা এবং বেশভূষা হবে পরিচ্ছন্ন ও ভদ্র। তিনি মানুষকে ধর্মীয় বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেবেন বিনা পারিশ্রমিকে। ইসলামী শিক্ষা দেওয়ার জন্য, মাহফিল করার জন্য কোন টাকা-পয়সা চার্জ করতে পারবেন না----------!!!

বাংলাদেশে অনেক প্রজাতির পীর আছেন যাদের সবাই নিজেদের আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অধিকারী বলে প্রচার করেন। এসব পীরদের বেশিরভাগের সাথে ফার্সি পীর শব্দের কোন মিল নেই। বাংলাদেশে মূলত চার ধরণের পীরের অস্তিত্ব আছে।
............যেমন---
(১) উত্তরাধিকার সূত্রে পীর অর্থাৎ বাপ-দাদার ধারাবাহিকতায় তিনিও পীর। এসব পীর মূলত মাজার কেন্দ্রিক হয়।
(২) হঠাৎ করে গজিয়ে উঠা পীর। এদের পরিবারে আগে কেউ পীর ছিলেন না। তাদের মধ্যে আবার দু'টি ভাগ আছে।
(ক) প্রথম পক্ষ..... ধনী ও প্রভাবশালী পীর। এরা ভক্তদের টাকায় দামী গাড়ি দৌড়ান ও সুবিশাল অট্টালিকা বানান। সুন্দর পরিপাটি পোশাক পরেন। এরা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকেন এবং আধুনিক জীবনযাপন করেন। এদের বিশাল মুরীদ শ্রেণী থাকে।
(খ) দ্বিতীয় পক্ষ..... এরা তুলনামূলক ভাবে অল্প শিক্ষিত। এরা মদখোর, গাজাখোর, লম্পট ও পাগলাটে হয়। এদের ধর্মীয় জ্ঞান নেই বল্লেই চলে।
(৩) আরেকটি পক্ষ হল লালসালু উপন্যাসের মজিদের মত। কার কবর, কবে লোকটি মরেছে তার কোন ঠিক-ঠিকানা নেই। হঠাৎ কেউ একজন দাবী করে বসে এখানে আল্লাহর এক ওলির কবর আছে! তিনি স্বপ্নযোগে মাজারের সন্ধান পেয়েছেন। তাই মাজারের খেদমতে নিজের জীবনকে সপে দিতে চান।
(৪) সবশেষে- যারা জন্মগত ভাবে অথবা জন্মের পরে মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। এদের অনেকেই কথা বলতে পারেন না বা বল্লেও কথা স্পস্ট নয়। অনেকে আবার খোঁড়া ও ল্যাংড়া। হাঁটা-চলা করতে পারেন না। এদের বেশিরভাগের ধর্মীয় ও সামাজিক কোন জ্ঞান নেই। মূলতঃ পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এসব প্রতিবন্ধী মানুষদের পীর সাজিয়ে ব্যবসা করে।

উপরে উল্লেখিত পীর সাহেব সর্বশেষ (৪ নাম্বার) প্রজাতির। পীরদের প্রকারভেদে ভিন্নতা থাকলেও উনাদের উদ্দেশ্য এবং কর্ম পরিধি এক ও অভিন্ন।

আমাদের দেশের পীরভক্ত সাধারন মানুষ এসব পীরদের কথা চরম সত্য বলে মনে করে। বাংলাদেশের অতি পরিচিত এক পীর সম্প্রতি প্রকাশ্যে নিজেকে রাসুল (সাঃ) এর মেয়ের জামাই বলে দাবী করেছেন (নাউযুবিল্লা)। এমনকি মহান আল্লাহ তা'য়ালার সাথে তার নিয়মিত মোলাকাত হয়, কথা-বার্তা হয়, দেখা-সাক্ষাৎ হয় এটাও প্রচার করেন। অবাকের বিষয় লোকটির হাজার হাজার ভক্তদের একজনকেও তার এমন কুফরি কথার প্রতিবাদ করতে দেখিনি। অনেক নারী ভক্ত আছেন যারা সন্তান পাবার আশায় অনেক পীরের সাথে রাত্রী যাপন করেন। তার শরীর টিপে দেন, প্রচুর টাকা পয়সা দান করেন। পীরের পায়ে সেজদা করেন। বেশিরভাগ পীরের আস্তানায় তার সেবা করার জন্য একাধিক নারী ভক্ত থাকে। পাশাপাশি চলে মদ, গাঁজা ও জোয়ার আসর। অনেক পীরের বিরুদ্ধে তার অল্প বয়সী খাদিমের সাথে সমকামিতারও অভিযোগ পাওয়া যায়। পানি পড়া ও তাবিজের পাশাপাশি জ্বীন তাড়ানো ও বালা-মুসিবত দূর করা সহ এমন কিছু নেই যা পীর সাহেব পারেন না। যদিও এগুলো ভূয়া। ইসলামে এগুলো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

অষ্টম শতাব্দী থেকে ভারত উপমহাদেশে ইসলামের আবির্ভাব হলেও মূলত বার'শো শতাব্দীতে সুলতানি আমলে ব্যাপক ভাবে আমাদের উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার শুরু হয়। এসময় আরব ও পারস্য থেকে প্রচুর মুসলিম ব্যবসার উদ্দেশ্যে ভারত উপমহাদেশে আসেন। পাশাপাশি রাশিয়া, তুর্কি, ইরাক ও ইয়েমেন থেকে অনেক সূফী ও দরবেশ ইসলাম প্রচার করতে আসেন। সতের'শো শতাব্দীতে ভারতের উত্তর প্রদেশে অবস্থিত বিখ্যাত দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর আনুষ্ঠানিক ভাবে উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার শুরু হয়। আর আরব থেকে সুফিদের আগমনের পর তাদের মাজারকে কেন্দ্র করে শুরু হয় মাজার কেন্দ্রীক ধর্ম ব্যবসা। যা অতি লাভজনক ব্যবসা হিসাবে আমাদের দেশে আজ প্রচলিত। এমনও অনেক মাজার আছে যেখানে কবরের অস্তিত্বের কোন ইতিহাস নেই, শুধুমাত্র সরলপ্রাণ মানুষের বিশ্বাসকে পুঁজি করে যুগ যুগ ধরে মাজার সাজিয়ে ও বিভিন্ন আলৌকিকতার গোজব ছড়িয়ে এরা ব্যবসা করছে।


বাংলাদেশের পীরেরা মূলত দেওবন্দ ও ফুরফুরা পন্থী। তবে অনেকে আছে এদের কোনটই মানে না। এদের একটা বড় অংশ পবিত্র কোরআন ও হাদিসের প্রচারও প্রসারের নামে বড় বড় মাহফিল দিয়ে তৈরী করে বিশাল মুরীদ শ্রেণী। তাদের গুণ-কীর্তনও মিথ্যা আলৌকিকতা প্রচার করার জন্য থাকে একদল তোষামোদকারী। অনেক পীর সাহেব আবার রাজনৈতিক দলও গঠন করেন। পীর সাহেব জীবদ্দশায় সুকৌশলে নিজের এক বা একাধিক সন্তানকে তার উত্তরাধিকারী বলে ঠিক করেন। যাতে তার মৃত্যুর পরও সিলসিলা বহাল থাকে, পারিবারি বিশাল ইনকামের পথ খোলা থাকে। এদের একপক্ষ উরস পালন করে, অন্যপক্ষ এটিকে বেদা'আত বলে।

!!!----------এরা সারাদিন ইহুদী-নাসারা বলে পশ্চিমাদের গালি দিলেও সেসব দেশের পাউন্ড-ডলার তাদের খুব প্রিয়। অনেকের বাড়িতে আবার পশ্চিমাদের এনজিও আছে। এরা এসব এনজিওর পয়সায় কোটি টাকার গাড়ি দৌড়ায়, প্রাসাদপম বাড়ি বানায়, টাকার কুমির হয়। ভক্তদের টাকায় পরিবার-পরিজন নিয়ে আরাম আয়েশে জীবন কাঁটায়।----------!!!

আমাদের দেশে অনেক মানুষ মনে করে পীর না ধরলে বা পীর সাহেবের মুরীদ না হলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না। এজন্য পীরের উসিলা নিতে এবং তাকে খুশি রাখতে প্রচুর টাকা-পয়সা, সহায়-সম্পত্তি উপটৌকন হিসাবে দেন। এ সুযোগে পীর সাহেবরা ইসলামের নামে বানিয়ে বানিয়ে বিভিন্ন কেচ্ছা-কাহিনী ও কাল্পনিক ডর ভয় দেখান যাতে মানুষ তার অনুগত হয়। অথচ পীর সাহেব নিজেও জানেন না তিনি বেহস্তে যাবেন কি না, তাঁর গুনাহ্ মাফ হবে কি না। এরা মানুষের আবেগকে পুঁজি করে টাকা কামায়, বিলাসী জীবন-যাপন করে। বংশ পরম্পরায় ব্যবসা করে।

!!!----------পীরের ছেলে পাগল হলেও পীরে কামেল হয়, নামের সাথে বড় বড় টাইটেল লাগায়। যারা এসব ভন্ডামীর বিরুদ্ধে কথা বলেন তাদেরকে ওহাবী বলে তিরস্কার করা হয়। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে পীরের কোন অস্থিত্ব নেই। আরবরা পীরদের বেদাতী বলে। সৌদি আরবে পীর তন্ত্র কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।----------!!!

পবিত্র হাদিসে মুরীদ নয়, সহবতের কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ যাদের ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে অগাধ জ্ঞান আছে তারা সাধারন মানুষকে জমায়েত করে ধর্মীয় বিষয় জ্ঞান দেবেন, গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। কিন্তু আমাদের দেশের অনেক পীর সাহেব সহবতের পরিবর্তে বিশাল মুরীদ শ্রেণী গড়ে তুলেন, যা মোটেও কাম্য নয়। এরা তাবিজ ও পানি পড়ার ব্যবসা করেন। অন্য মতের আলীমদের বেদা'আতী বলেন। যারা পীরদের ব্যবসার বিরুদ্ধে কথা বলেন তাদেরকে পীরের অনুসারীরা গালি-গালাজ করেন। অনেক সময় শারিরিকভাবে লাঞ্চিতও করেন।

আমাদের দেশে অনেক খ্যাতনামা ইসলামী ব্যক্তিত্ব আছেন। ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য তাদের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁরা হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মানুষকে প্রতিনিয়ত ইসলামী শিক্ষা দিয়ে সচেতন করছেন। পবিত্র কোরআন ও হাদিসের উপর তাদের অগাধ পান্ডিত্ব আছে। তাঁরা ইসলামের রীতিনীতি ভালভাবে বুঝেন এবং পালন করেন। মানুষকেও প্রতিনিয়ত কোরআন ও হাদিসের আলোকে শিক্ষা দেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য উনাদের কারো কারো নামের সাথে পীর শব্দটি জুড়ে দেওয়ায় অনেক মানুষ তাদেরকে না জেনে, না বুঝে "ভন্ডপীর" বলে তিরস্কার করে। আমি আশা করবো অন্তত নিজেদের মান-সম্মানের কথা চিন্তা করে আপনারা নামের সাথে জুড়ে দেওয়া পীর শব্দটি বাদ দেবেন। আপনারা নিশ্চয় চাইবেন না ভন্ড পীরদের সাথে আপনাদের নামটিও উচ্চারিত হোক। এতে ইসলামেরও মঙ্গল নিহিত।


পীরদের অধিকাংশ মাজারে চলে মদ, জুয়া ও গাঁজার আসর। আর উরুস হলে তো কথাই নেই। সারা দেশ থেকে পীরের শিষ্যরা এসে মাজারে জমায়েত হয়, প্রচুর টাকা-পয়সা উঠে। এসব মাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। মাজারের খাদিম নামধারী কিছু লোক টাকার মূল ভাগটা পায়। তবে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ এবং প্রশাসনও টাকার একটি অংশ ভাগ হিসাবে নেয়। প্রতিটি মাজারে থাকে এক বা একাধিক দান বক্স, পীরের অনুসারীরা এসব বক্সে টাকা দেন, মাজারে মোমবাতি-আগরবাতি জ্বালান এবং কবরে গোলাপজল ছিটিয়ে দেন। যদিও এসব কর্মকাণ্ডের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই, তবুও কিছু সরলপ্রাণ মানুষের ধর্ম বিশ্বাসকে ভিত্তি করে এরা টাকা কামায়। নিজেদের আখের গোছায়।

!!!----------সিলেটের হযরত শাহজালাল (রহঃ) ও শাহপরাণ (রহঃ) মাজারে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ জিয়ারত করতে আসেন। অনেকে বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে পরিত্রাণ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির জন্য মাজারের উসিলা নিয়ে দোয়া করেন, মাজারে টাকা-পয়সা দান খয়রাত করেন। এসব ভক্তদের অনেকই জানেন না কারো উসিলা নিয়ে আল্লার কাছে কিছু চাইলে, এই দোয়া আল্লাহ কবুল করেন না। যা চাইবেন সরাসরি আল্লার কাছে চাওায়াই শরীয়তের বিধান। হযরত শাহজালাল (রহ) এর মাজারে বিশাল বড় দুইটি ডেকচি আছে। মূলত ভক্তরা দানের টাকা এসব ডেকচিতে দেন। আছে একটি প্রাচীন ঝর্ণা। অনেক ভক্ত মনে করেন কুয়াটির সাথে পবিত্র মক্কা নগরীর আমজমজমের কূপের সংযোগ আছে। বলা হয় পুকুরে সোনার কৈ, মাগুর ও গজার মাছ আছে। আসলে এগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও গুজব।----------!!!

হযরত শাহজালালের মাজারটি পরিচালনা করে অনেকগুলো পরিবার। যারা স্থানীয়ভাবে খাদিম হিসাবে পরিচিত। প্রতিদিন একটি করে পরিবার মাজার থেকে টাকার ভাগ নেয়ে। এভাবে চক্রাকারে পরিবার থেকে পরিবারে মাজারের চাবি ঘোরতে থাকে। একদিনের ইনকাম দিয়ে এক একটি পরিবার সারা বছর চলতে পারে। অনেকটা আলাদীনের চেরাগের মতো! এছাড়া হযরত শাহজালালের সফর সঙ্গী ৩৬০ আউলিয়াদের কবর যেখানে আছে সেসব স্থানেও রমরমা মাজার ব্যবসা চলছে। যদিও এদের কারো কোন কেরামতির তথ্য আমাদের জানা নেই।

অনেক পীর সাহেব ও তার অনুসারীরা প্রায় সময় আব্দুল কাদির জিলানী (রহঃ) কে বড় পীর বলে সম্বোধন করেন এবং সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে উনার অনেক কেরামতির কথা প্রচার করেন। অথচ ইরাকে আব্দুল কাদির জিলানী (রহ) এর কবরটি অত্যন্ত সাদামাটা ভাবে তৈরী। জীবদ্দশায় তিনি কখনো নিজেকে পীর বলে পরিচয় দেননি, এমনকি আজ অবদি উনার উত্তরাধিকার কেউ তিনি পীর ছিলেন এমনটা দাবী করেননি। তিনি ছিলেন হাম্বলি মাজহাবের একজন আলীম। অত্যন্ত পরহেজগার, নির্লোভ, চরিত্রবান ও ইসলামী জ্ঞানে সমৃদ্ধ একজন ধর্মপ্রাণ মুসলিম ছিলেন। উনার মাজারে কোন লালসালুর অস্তিত্ব নেই। এমনকি মাজারটিকে কেন্দ্র করে কোন খাদিম পরিবার গড়ে উঠেনি। কবরের পাশে কোন দান বাক্সও নেই। স্থানীয় মানুষের কাছে তিনি একজন অত্যন্ত সম্মানী ইসলামী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। ইরাকে উনার মাজারকে কেন্দ্র করে ব্যবসা করার সাহস কারো নেই।

ইসলামের আবির্ভাবের পর থেকে আজ অবধি আরব দেশগুলোতে শত শত মনিষীর জন্ম হয়েছে। এরা ছিলেন এক-একজন অগাধ জ্ঞানের অধিকারী। এসব মনিষীরা কখনো নিজেদের পীর বলে দাবি করেননি। তাদের মাজারকে কেন্দ্র করে কোন ব্যবসা হয়না। এমনকি পীর শব্দটি যে দেশে প্রচলিত সে দেশে অর্থাৎ ইরানে পীর ও মাজার ব্যবসার কোন অস্তিত্ব নেই। সাতজন হাদিস বিশারদ, যাদের সম্মান ও মর্যাদা মুসলিম উম্মাহর কাছে সীমাহীন উনারাও কোনদিন নিজেদের পীর বলে দাবী করেননি। এমনকি ইসলামের চার ইমামের কেউও নয়। অতএব, ইসলামের খেদমত করার জন্য পীর নাম ধারণ করার প্রয়োজন নেই। যারা এসব করেন তাদের উদ্দেশ্যের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। নামটির সাথে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি ও পরিবারের প্রতিষ্ঠা পাওয়া এবং লোভ ও ভোগ জড়িত।।



ফটো ক্রেডিট,
গুগল।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:৪১

খায়রুল আহসান বলেছেন: একটা ধর্মীয় বিশ্বাসের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন, স্পর্শকাতর হলেও যা নিরপেক্ষ পর্যালোচনার দাবী রাখে। আপনার পর্যালোচনাটি ভালই লাগলো। + +
আমি মনে করি, সৃষ্টি এবং স্রষ্টার মধ্যকার সম্পর্কটা ডাইরেক্ট; মাঝখানে কোন ভায়া মিডিয়ার প্রয়োজন নেই। আল্লাহ রাব্বুল 'আ-লামীনই সর্বশ্রেষ্ঠ শ্রোতা, এবং ত্রাতা। সুতরাং, যা কিছু চাওয়ার তাঁর সমীপেই নিবেদন করা উচিত।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩৮

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইলো, স্যার ৷আপনি আমার মত সাধারন একজন মানুষের লেখা খুঁজে খুঁজে পড়ছেন এজন্য অনেক খুশি হয়েছি ৷আপনি অনেকদিন আগে কমেন্ট করলেও নটিফিকেশন না পাওয়ায় দেখিনি ৷এজন্য প্রতি উত্তর দিতে বিলম্বিত হল ৷ইসলাম ধর্ম নিয়ে ভারত উপমহাদেশে যা হচ্ছে তা দেখে খুব কষ্ট লাগে ৷এদেশে ইসলাম হলো অনেকের কাছে টাকা কামানোর একটি হাতিয়ার ৷এজন্য নামের সাথে পীর, দরবেশ, বাবা জাতীয় কিছু লাগাতে পারলে লালে লাল ৷কোটি কোটি টাকা আসবে অটোমেটিক ৷এগুলো বন্ধ হওয়া উচিৎ ৷

২| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ ভোর ৪:৫৩

উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: বাংলাদেশ পীর আর মসজিদের ব্যাবসা এজন্য লাভ জনক যে এই নামে সরকারী জায়গা খুব স হজেই দখল করা যায় এবং সে জায়গা আর উদ্ধার করার চান্স নেই। যদি খাস জমি কোনো সরকার উদ্ধার করা শুরু করে তাহলে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মসজিদ গুড়িয়ে ফেলতে হবে।

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৯:৫২

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



আমি খুবই দুঃখিত, নোটিফিকেশন না পাওয়ায় আপনার কমেন্ট দেখতে পাইনি। আশা করি, বিষয়টি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আসলে আমি ধর্মীয় বিষয়গুলো নিয়ে, বিভিন্ন ধর্মের নীতি ও আদর্শ নিয়ে কৌতুহল থেকেই কিছু পড়াশুনা করেছি। কিছুটা জানার চেষ্টা করেছি, হয়তো জেনেছিও!! আসলে এ বিষয়গুলো নিয়ে লেখতে গেলে অনেক সমস্যা আছে, এজন্য কোন কিছু না বলে, না লেখে চুপ করে থাকি।

আমি আপনার প্রতিটা পোস্ট মনযোগ দিয়ে পড়ি, আর নিজের ভাবনা ও জানাশুনার সাথে মিলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি। ভাল থাকুন, সব সময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.