নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জন্মসূত্রে মানব গোত্রভূক্ত; এজন্য প্রতিনিয়ত \'মানুষ\' হওয়ার প্রচেষ্টা। \'কাকতাড়ুয়ার ভাস্কর্য\', \'বায়স্কোপ\', \'পুতুলনাচ\' এবং অনুবাদ গল্পের \'নেকলেস\' বইয়ের কারিগর।

কাওসার চৌধুরী

প্রবন্ধ ও ফিচার লেখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। পাশাপাশি গল্প, অনুবাদ, কবিতা ও রম্য লেখি। আমি আশাবাদী মানুষ।

কাওসার চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন মেয়র আনিসুল হক (স্মরণ/ব্যক্তিত্ব)

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৬:৩২


মেয়র আনিসুল হক। আপনি একদিন গল্প শোনালেন, যারা অবৈধভাবে রাস্তা দখল করবে, তাদেরকে প্রথম দিন হাতে ধরবো। পরের দিন বলবো- স্যার, এটা সরকারি জায়গা, দয়া করে ছেড়ে দিন। তৃতীয় দিন পায়ে ধরবো। বলবো- স্যার, এটা জনগণের জায়গা, সাধারণ নাগরিকের হাঁটার জায়গা প্লীজ ছেড়ে দিন। আপনিও তো এদেশের নাগরিক। আপনার সন্তানও এ ফুটপাত দিয়ে হাঁটবে। সুন্দর, পরিচ্ছন্ন আর সুস্থ পরিবেশে বেড়ে উঠবে। আমাদের সন্তানদের কাছে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এটা আমাদের দায়, এটা আমাদের কর্তব্য। আপনি চান না আপনার সন্তান কোন রকম বাঁধা-বিপত্তি ছাড়া ফুটপাত দিয়ে হাঁটা-চলা করুক?

চতুর্থ দিন গিয়ে যদি দেখি আপনি জায়গা ছাড়েন নাই, তবে বুলডোজার চালিয়ে দেবো। কারণ আপনি দেশের স্বার্থ দেখেন না, নাগরিক অধিকার নিয়ে মাথা ঘামান না, নিজের সন্তানেকে ফুটপাত দিয়ে হাঁটার অধিকার দিতে চা না। আপনি অবশ্যই দেশপ্রেমিক নাগরিক না, হতে পারেন না। আপনি দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল না। আশা করেছিলাম আপনি দেশের মানুষের স্বার্থে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জায়গাটি ছেড়ে দেবেন। কিন্তু তা করলেন না। এজন্য দুঃখ পেলাম।

আমরা ভাবলাম এরকম সবাই বলে! কত শত গলাবাজি দেখলাম, নেতা দেখলাম, মেয়র দেখলাম কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সব ফাঁকা বুলি। কারণ বড় বড় মিথ্যা আশ্বাস শুনতে শুনতে আমাদের মাঝে এক রকম অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়েছিল। এছাড়া ফুটপাতের এসব দোকানদারীতে প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ, সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা/কর্মচারী, পুলিশ আর শ্রমিক সংগঠনগুলো জড়িত। এদের চান্দাবাজির মূলোৎপাটন করা সহজ নয়। লাগে সাহস আর সদিচ্ছা।

কয়েক দিন পর দৈনিক পত্রিকায় বুলডোজারসহ বড় বড় করে লেখা- গুলশান ১ এ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ! আনন্দে চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো আমাদের। আমরা আশাবাদী হয়ে উঠলাম। বিশ্বাস করতে শুরু করলাম। আরেকদিন আপনি তেজগাঁও বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থেকে অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করলেন। ট্রাক চালকেরা, তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতারা সারাদিন আপনাকে আটকে রাখলো কিন্তু আপনি পিছু হাটলেন না। নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল থাকলেন। একজন মেয়র হিসাবে, একজন নগর পিতা হিসাবে দায়িত্ব পালন করলেন, নাগরিকের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হলেন। অবশেষে দখলদাররা বাধ্য হয় আপনার নীতির কাছে, যুক্তির কাছে হার মানতে। আমরা তো এমটাই চেয়েছি, এমন একজন নেতা এতদিন থেকে খুঁজেছি। যিনি নিজের পকেট ভরবেন না, আমাদের পকেট ভরে দেবেন উন্নয়ন করে। আমাদের নগরটাকে দখলমূক্ত করবেন দৃঢ় মনোবল দিয়ে, নিজের দায়িত্ববোধ থেকে।


কাজ করতে করতে আর কুলাচ্ছিলো না, দেহ ঘড়িতে জং ধরতে শুরু করলো। তাই একটু বিনোদন, একটু অবসর আর প্রিয় সন্তানের সান্নিধ্য পেতে ছুটে গেলেন লন্ডনে। বলে গেলেন মাত্র কয়টা দিন থাকবো, ওখান থেকে সব খোঁজ খবর রাখবো, নগরীর উন্নয়ন কোন অবস্থাতে আটকে থাকবে না, সেখান থেকেই কাজের অগ্রগতির তদারকি করবো। কিন্তু না, নিয়তি তা হতে দিল না। লন্ডন থেকে আমাদের মাঝে ফিরলেন লাশ হয়ে। যা আমরা চাইনি।

আপনি কী জানেন, এই শহরে চার হাজার পাবলিক বাস ইহ জনমে আর হয়তো নামবে না। ফুটপাত আবার দখল হবে, তেজগাঁও বাস স্ট্যান্ড চলে যাবে মাস্তানদের আয়ত্বে। মশার ঔষধ ছিটানো হবে না আর। সেই টাকা চলে যাবে ধান্ধাবাজদের পকেটে, আমলা-রাজনীতিবিদরা পকেট ভারী করবে। নগরীর উন্নয়ন প্রকল্পের কোটি কোটি টাকা লুটপাট হবে। কেউ দায় নেবে না, ভুল হলে জনসমক্ষে এসে 'স্যরি' বলবে না। দিনের পর দিন রাস্তা ভাঙ্গা অবস্থায় পড়ে থাকবে, কেউ মেরামত করার প্রয়োজন বোধ করবে না। আরেকজন আনিসুল হকের জন্য শুধু অপেক্ষা বাড়বে। অপেক্ষা।

আপনি কী জানেন গত এক বছরেও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কোন মেয়র পায়নি! আপনার 'স্বপ্নের ঢাকা প্রকল্প' এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। এখন নতুন কোন স্বপ্নবাজ নেই, অভিভাবক নেই।

মেয়র হয়েও আপনি কোনদিন সরকারী কোন সুযোগ সুবিধা নেননি। যতটুকু জানি, নিজের বেতনের টাকা অধঃস্তন কর্মচারীদের মাঝে বিতরণ করে দিতেন। তাদেরকে বলতেন, কখনো টাকা পয়সা প্রয়োজন হলে আমাকে বলবে, কখনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবে না। আপনি ছিলেন তাদের রুল মডেল। আদর্শ নেতা ও অভিবাবক।

আপনি ছিলেন হাজারো তরুণের অনুপ্রেরণা, প্রিয় ব্যক্তিত্ব। আপনি বলতেন, মানুষের স্বপ্ন কোন কোন সময় নিজের কল্পনার চেয়েও বড় হয়। তাই সবাইকে স্বপ্ন দেখতে উৎসাহ দিতেন। নিজে মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছেন বলে গরীব ও সাধারন পরিবারের স্বপ্নবাজ তরুণদের উৎসাহ দিতেন, স্বপ্ন দেখতে বলতেন। বলতেন, তোমরাও একদিন আনিসুল হকের চেয়ে বড় হবে। পৃথিবীর সেরা সাইন্টিস্ট, দার্শনিক, চিকিৎসক, প্রযুক্তিবিদ আর খেলোয়াড় তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ হবে। তোমাদের চেষ্টা করতে হবে, লেগে থাকতে হবে। হতাশ হলে চলবে না। মনে রাখবে, ব্যর্থতা হলো সফলতার প্রথম ধাপ। পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যারা সফল হয়েছে তাদের বেশিরভাগের প্রাথমিক জীবনে ব্যর্থতা ছিল। তাঁরা হতাশ না হয়ে নতুন উদ্যোমে কাজ করে গেছেন আপন খেয়ালে। তোমাদেরও তাই করতে হবে। প্রতিযোগীতায় ঠিকে থাকতে হলে পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই।

সমাজে কিছু বিরল ব্যক্তিত্ব আছেন যাদের চেহারা দেখলে বিশ্বাস করতে মন চায়। কথা শুনতে মন ব্যকুল হয়ে উঠে। সমাজকে পরিবর্তন করার মতো উপযুক্ত মনে হয়। দায়িত্ববান ও কর্তব্যপরায়ন মনে হয়। অতি আপনজন তথা নিজেদের পরিবারের একজন প্রতিনিধি মনে হয়। আপনি সেই বিরল মানুষদের একজন ছিলেন। যাদের বক্তৃতা ঘন্টার পর ঘন্টা শুনলেও বিরক্ত লাগে না। মানুষটাকে মিথ্যাবাদী মনে হয় না, ধান্দাবাজ মনে হয় না, বাচাল মনে হয় না। একজন আদর্শবান ও দেশপ্রেমিক হিসাবে তাকে বিশ্বাস করতে মন চায়। নিজেদের আস্থার জায়গা মনে হয়।


যেখানে সমস্যা সেখানেই সমাধান নীতিতে চলতে গিয়ে আপনি অনেক প্রভাবশালীদের বাঁধার সম্মুখিন হয়েছেন। অপমানিত হয়েছেন। নিজের মেধা আর যোগ্যতায় এসব ঠান্ডা মাথায় সমাধান করেছেন। প্রতিনিয়ত ছুটাছুটি করতে গিয়ে নিজের প্রতি নজর দেওয়ার সময় ছিল না। যখনই টিভিতে দেখতাম মনে হত রাজ্যের ক্লান্তি চোখে মুখে স্পষ্ট। কিন্তু যেহেতু স্বপ্ন ছোয়া শেষ হয়নি তাই অবসর নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। কাজ পাগল, দায়িত্ববান এ মানুষটির বিরামহীন ছুটে চলতে গিয়ে কখন যে নিজের শরীরে অসুখটা গেঁড়ে বসেছিল খেয়াল হয়নি। অনেক বছর থেকে জমানো জঞ্জাল সরাতে গিয়ে নিজের প্রাণশক্তি ক্ষয়ে ক্ষয়ে নিঃশ্বেষ হয়েছিল অজান্তই।

আপনি সব সময় নিজের গাড়ি সরকারী কাজে ব্যবহার করতেন। সরকারের দেওয়া গাড়ির সুবিধা কখনো নিতেন না। ড্রইভার ও তেল খরছ নিজের পকেট থেকে দিতেন। এমনকি অফিসে অতিথি আপ্যায়ন করতেন নিজের টাকায়। আপনার ব্যক্তিগত ছয়-আট জন আর্কিটেক্ট ছিলেন, যারা ঢাকা শহর নিয়ে প্লানিং করতেন। তাদের বেতন ভাতাও নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে দিতেন। একজন মেয়রের এমন সততা, দেশপ্রেম আর দায়িত্ববোধ আমাদের মুগ্ধ করেছে প্রতিনিয়ত।

আপনি কী জানতেন লন্ডনে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির খবর শুনে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিনিয়ত আপনার জন্য দোয়া করেছেন। প্রতিনিয়ত খবর রেখেছেন। সবাই আশাবাদী ছিলাম একদিন সুস্থ হয়ে আপনি আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন। আমরা এ মৃত্যু চাইনি, এখনও মানতে পারিনি। আমাদের এ প্রদীপ অনেকদিন আমাদের আলোকিত করুক, এটাই চেয়েছিলাম। আমরা প্রিয় এ মানুষটাকে যুগের পর যুগ আমাদের মাঝে চেয়েছিলাম। তাঁর স্বপ্নের সাথে নিজেদের স্বপ্নকে একাকার করে আশার আলো দেখছিলাম। আপানাকে হারিয়ে আমরা যে কষ্ট পেয়েছি তা সহজে ভুলার নয়। ভুলতে পারবো না।

আপনি ফিরলেন না বলে আমাদের স্বপ্নগুলো ডালপালা মেলতে পারলো না। আরেকজন আনিসুল হকের জন্য আমাদের অপেক্ষা বাড়তে থাকলো! অনন্ত নক্ষত্রবীথির মাঝে খুঁজতে থাকবো আমরা আপনার ছায়াকে। জানি কারো বিকল্প কেউ হতে পারে না। তারপরও বিশ্বাস করি, আরেকজন আনিসুল হক আমাদের স্বপ্নগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন। আশাবাদী হই। নতুন প্রজন্মের মাঝে এই সম্ভাবনা দেখতে পাই। নিশ্চয় কেউ না কেউ আপনার স্বপ্নগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আশাহত নাগরিক নতুন করে আশাবাদী হবে, নতুন আশ্রয় খুঁজে পাবে।


ব্যক্তিগতভাবে আপনার সাথে আমার কোন পরিচয় ছিল না। তারপরও আপনি কখন যে আমার আত্মার আত্মীয় হয়ে গেলেন বুঝতে পারিনি। আপনার প্রতিটি বক্তৃতা শুনার চেষ্টা করতাম। প্রতিটি উদ্যোগকে দূর থেকে সমর্থন দিতাম। সব সময় চাইতাম আপনি যাতে সফল হোন। আপনার চাওয়া, আপনার পরিকল্পনাকে নিজের মধ্যে ধারণ করতাম। আশাবাদী হতাম। স্বপ্ন দেখতাম।

আপনি ছিলেন সফল টিভি উপস্থাপক। ভাল বক্তা। সুদর্শন ও আত্মবিশ্বাসী একজন মানুষ। ছিলেন সফল ব্যবসায়ী। দেশের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআই এর সফল প্রেসিডেন্ট। সর্বশেষ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র। আপনার এত পরিচয়ের মাঝে আমি মেয়র আনিসুল হককে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতাম। হয়তো স্থানিক দুরত্ব বাড়লো আপনার সাথে! তবুও আপনি আশাহীন, অসহায়, নির্যাতিত ও ভেঙ্গে পড়া লাখো নাগরিকের হৃদয়ের মনিকোঠায় আসন পাকা করে নিলেন চিরদিনের জন্য। আপনি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালবাসা গ্রহণ করুন। আপনি চিরদিন আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন অুপ্রেরণা হিসেবে।

আপনার মৃত্যুর সংবাদ শুনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জনাব সাঈদ খোকন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। কত গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা থাকলে এমন হয় তা বুঝানো সম্ভব নয়। কত লক্ষ মানুষ যে আপনার মৃত্যুতে নীরবে কেঁদেছেন তা কী জানেন? অনেক স্বপ্ন হোচট খেয়েছে আপনার এমন নীরব চলে যাওয়ায়।

আমাদের জীবনটা ক্ষণিকের স্বপ্নের মতো। অতি অল্প এ সময়ে আমরা দূর্ণীতি, ডাকাতি, অন্যায়-অত্যাচার কত কিছুই না করি। আমরা অন্যায় ভাবে যে সম্পদ আহরণ করি তা কি পুরোটা ভোগ করতে পারি? শেষ বয়সে কি আমরা নিজেদের এসব অপকর্মের জন্য অনুশোচনা করি না? হ্যাঁ, করি। তখন অনেক দেরী হয়ে যায়। নিজেদের শুধরানোর আর কোন উপায় থাকে না।

ভাল থাকুন পরপারে। প্রিয় আনিসুল হক। প্রিয় মেয়র। প্রিয় মানুষ। আপনার প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে শ্রদ্ধা রইলো।



ফটো ক্রেডিট,
গুগল।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৮ ভোর ৪:২৭

তপোবণ বলেছেন: এমনিতেই আনিসুল হককে খুব ভালবাসি, তিনি মেয়র হওয়াতে আমি সেদিনই বলেছিলাম ঢাকা একজন খাঁটি মানুষকে মেয়র হিসেবে পেল, যেমন আমরা পেয়েছি আইভি রহমানকে নারায়ণগজে। সত্যি বলছি ভাই শত বছরের সাধনাতেও এমন মানুষ মেলেনা জাতির জন্য। আপনার লেখা পড়ে খুব আপ্লুত হলাম। চোখেন কোণ ভিঁজে উঠেছিল লেখাটি পড়তে পড়তে।

আপনার লেখা খুবই সুপাঠ্য, লেখার ভাবধারাও খুব পরিষ্কার। প্রিয়তে গেলেন।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:১৭

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:
ধন্যবাদ আপনাকে। মন্তব্য শুনে ভাল লাগলো। আমি প্রতিটা লেখা অনেক সময় নিয়ে লেখি যাতে কোয়ালিটি ভাল হয়। পাঠক কষ্ট করে পড়ে পাঠ উদ্ধার করতে পারেন, সুখ পাঠ্য হয়। মনমতো না হলে কোন লেখা পোস্ট করি না। সময় থাকলে আমার গল্পগুলো পড়বেন। মার্চে লেখা।

আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা। ভাল থাকবেন সব সময়।

২| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৪

খায়রুল আহসান বলেছেন: হৃদয়ছোঁয়া এ শ্রদ্ধাঞ্জলি পড়ে অভিভূত হ'লাম!
মেয়র আনিসুল হক সাহেব আমার এক ঘনিষ্ঠ সহপাঠীর বড়ভাই ছিলেন। ওনার চেহারা এবং ব্যবহারে সর্বদাই এক স্নেহপ্রবণ বড়ভাই বড়ভাই সুলভ ছাপ ছিল। ওনার চেহারা দেখলেই মনে হতো, ওনার কাছে গেলে আদর পাওয়া যাবে।
উনি সৎ, এটা জানতাম। তবে ওনার সততা সম্বন্ধে যতটা বলে গেলেন, ততটা জানা ছিলনা। বিশেষ করে সাত আটজন স্থপতি দিয়ে ঢাকা শহরের প্ল্যানিং করিয়ে তাদের পারিশ্রমিক তথা সম্মানীভাতা সিটি কর্পোরেশন থেকে পরিশোধ না করে নিজস্ব ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান থেকে পরিশোধ করানোর ব্যাপারটা।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:২৭

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



ধন্যবাদ, স্যার।

৩| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৩

খায়রুল আহসান বলেছেন: কোন রাজনৈতিক পদ আঁকড়ে ধরে না থেকেও গণমানুষের প্রতি দরদী ও সহানুভূতিশীল থাকা যায়, তাদের কল্যাণ সাধন করা যায় যদি সদিচ্ছা থাকে, এটা মেয়র আনিসুল হক তার কার্যাবলী দিয়ে প্রমাণ করে গেছেন। কৃতজ্ঞ বাঙালীও জানে, যারা তাদের উপকার করে, যারা তাদেরকে ভালবাসে, যারা দেশের জন্য কাজ করে যায়, তাদেরকে কিভাবে ভালবাসতে হয়, সম্মান জানাতে হয়।
আর্মি স্টেডিয়ামের বিশাল পরিসরে অনুষ্ঠিত মরহুম মেয়র আনিসুল হক এর জানাজার নামায পড়ে বাড়ী ফিরে এসে আমার ফেইসবুক পেইজে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। আপনার এ পোস্টটা পড়ে সে কথাগুলো আবার মনে পড়লোঃ
আর্মি স্টেডিয়ামের মাঠ পরিপূর্ণ ছিল, মাঠ উপচে গ্যালারীতেও মানুষ কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। দূর দূরান্ত থেকে মানুষ এসেছে, বাস ভরে, অন্য যানবাহনে করে এবং বহু মানুষ এমনকি ৮/১০ কিঃমিঃ পথ পায়ে হেঁটেও এসেছে। জানাজার পর ফেরত যাবার সময়েও এয়ারপোর্ট রোড ধরে গণমানুষের ঢল স্রোতের মত ভেসে যাচ্ছিল। অনেকটা বিশ্ব এজতেমার সময় যেমনটা দেখা যায়, সাময়িকভাবে সেরকমই। আমি স্টাফরোড ফ্লাইওভারের কাছাকাছি এক জায়গায় গাড়ী রেখে বাকীটা পথ পায়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। ততক্ষণে যানজট বেঁধে রাস্তা ও ফুটপাথ দিয়ে পায়ে হেঁটে যাওয়াও কঠিন হয়ে গিয়েছিল। একই পথ ধরে বহু লোক দ্রুত হেঁটে যাচ্ছিল। হাঁটতে হাঁটতে তাদের মধ্য থেকে একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তি কি ভেবে যেন আমাকে সালাম জানালেন। আমি সালামের উত্তর দিয়ে সবিনয়ে তার পরিচয় জিজ্ঞেস করলাম। নিজ পরিচয় দিয়ে তিনি জানালেন, তিনি মিরপুর থেকে হেঁটে আসছেন জানাজায় অংশ নিতে। কেন, জিজ্ঞেস করাতে তিনি জানালেন- "এক কথায়, তিনি খুব ভাল মানুষ ছিলেন"। জানাজা শেষে ফ্লাইওভারের কাছে ফিরে দেখলাম, যান ও জনের জটিল এক যট। বুঝলাম, মাগরিব এর নামাজের আগে গাড়ী সেখান থেকে বের করা সম্ভব হবেনা। তাই ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থেকে চলাচলরত মানুষ আর স্থবির যানবাহন দেখছিলাম। দেখা হলো ৫৮ বছর বয়সী কমলাপুর থেকে আসা বাছিরুদ্দিন বাচ্চুর সাথে। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি এতদূর থেকে কেন এসেছেন। তিনি জানালেন, উনি একজন শুধু ভাল মানুষই ছিলেন না, একজন করিৎকর্মা, যোগ্য মেয়রও ছিলেন। শুধুমাত্র তেজগাঁর সরকারী জমি থেকে ট্রাক স্ট্যান্ড উচ্ছেদ করার জন্য তিনি তাঁকে সম্মান জানাতে এবং তাঁর রূহের মাগফিরাত কামনা করতে এসেছেন, যে কাজটি ইতোপূর্বে বহু ক্ষমতাধর রাজনৈতিক নেতা এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা শত চেষ্টা করেও করতে পারেন নি।

আমাদের মাঝ থেকে একজন ভাল মানুষ চলে গেলেন, একজন কর্মোদ্যোগী, দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী ব্যক্তি চলে গেলেন, যিনি মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে পারতেন এবং তিনি নিজে সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে দেখাতে পারতেন। আল্লাহ রাব্বুল 'আ-লামীন তাঁর জীবনের সকল ছোট বড় গুনাহ মা'ফ করে দিন, তাঁকে শান্তিপূর্ণ ক্ববর দান করুন, শেষ বিচারের দিনে তাঁকে জান্নাত নসীব করুন! তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যগণকে সবর ও শক্তি দান করুন। তাঁর ৯৬ বছর বয়সী পিতাকে এই দুঃসহ শোক বইবার ক্ষমতা দিন! তাঁর স্ত্রী, সন্তান সন্ততি, ভাইবোনসহ পরিবারের অন্যান্য সবাইকে হেফাজত করুন!

ঢাকা
০২ ডিসেম্বর ২০১৭



৪| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৭

খায়রুল আহসান বলেছেন: শিরোনামে কোন বানান ভুল কাম্য নয়। শিরোনামে একটা ভুল বানান একটা সুলিখিত পোস্টকে অপাঠযোগ্য করে দিতে পারে।
স্বরণ এর সঠিক বানান হবে স্মরণ, সম্পাদনা করে নিলে খুশী হবো।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:২১

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



স্যার, প্রথমে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আপনার মূল্যবান লেখাটি সময়মত দেখতে পাইনি বলে। আমি আনিসুল হকের মধ্যে একজন অভিভাবকের ছায়া পেতাম। একজন নেতৃত্বগুণ সম্পন্ন মানুষের ছায়া দেখতে পেতাম। এজন্য উনার মৃত্যুর খবর শুনে দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরেছিল নিজের অজান্তে। আপনার ফেইসবুকে দেওয়া স্টেটাসটি আমার মন ছুঁয়ে গেল। এদেশে এমন মানুষের বড়ই অভাব।

আপনি সব সময় ভাল থাকবেন, স্যার।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:২৬

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



আপনার চমৎকার তিনটি কমেন্টের উত্তর একসাথে দিয়েছি বলে অপরাধবোধ কাজ করছে। সংক্ষেপে উত্তর দিয়েছি এজন্য আশা করি মাইন্ড করবেন না স্যার। আর শিরোনামের বানানটি ঠিক করেছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.