নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জন্মসূত্রে মানব গোত্রভূক্ত; এজন্য প্রতিনিয়ত \'মানুষ\' হওয়ার প্রচেষ্টা। \'কাকতাড়ুয়ার ভাস্কর্য\', \'বায়স্কোপ\', \'পুতুলনাচ\' এবং অনুবাদ গল্পের \'নেকলেস\' বইয়ের কারিগর।

কাওসার চৌধুরী

প্রবন্ধ ও ফিচার লেখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। পাশাপাশি গল্প, অনুবাদ, কবিতা ও রম্য লেখি। আমি আশাবাদী মানুষ।

কাওসার চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুলখানি, চেহলাম অথবা চল্লিশা (একটি পর্যালোচনা)

২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১:২৮


চট্টগ্রামে একজন রাজনৈতিক নেতার কুলখানিতে পদদলিত হয়ে ১৪ জন মানুষ মারা গেলেন, আহতের সংখ্যা শতাধিক। সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানতে পারলাম কুলখানি উপলক্ষে চট্টগ্রামে ১৪টি কমিউনিনিটি সেন্টার ভাড়া করে প্রায় দুই লক্ষ মানুষের ভূড়িভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। যে কমিউনিটি সেন্টারে দূর্ঘটনাটি ঘটে সেখানে মূলত সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রায় ১৮ হাজার মানুষের খাবারের আয়োজন ছিল। কিন্তু পাশের একটি কমিউনিটি সেন্টারে নির্দিষ্ট সময়ের আগে খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় বাদ পড়া এসব মানুষ হুমড়ি খেয়ে ও তাড়াহুড়ো করে এই সেন্টারে আসতে শুরু করে। এত বিপুল সংখ্যক মানুষকে সামলাতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় দূর্ঘটনাটি ঘটে।

কুলখানিকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ বিভিন্ন নামে চেনে। চেহলাম, চল্লিশা ইত্যাদি নামেও এটি প্রচলিত। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর সময়ে এসব প্রথা ছিল না। কোন সাহাবীর মৃত্যু হলে তিনি তার পরিবারকে সদকায়ে জা'রিয়া করতে বলতেন। তিনদিন পর্যন্ত মৃত ব্যক্তির পরিবারে রান্নাবাড়া করতে নিষেধ করতেন। এ সময় প্রতিবেশীদেরকে বলতেন পরিবারটিতে প্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করতে। কোন প্রকার উৎসব, ভুড়িভোজের আয়োজন করতে বারণ করতেন। পরবর্তী সময়ে খুলাফায়ে রাশেদীন, সাহাবী, তাবেঈ, তবে তাবেঈদের আমলেও এসব প্রথা ছিল না। কুলখানি করলে মৃত ব্যক্তির সওয়াব হবে এমন কোন তত্ত্ব কোরআন, হাদীস কোথাও নেই। ববং নামকরা ইসলামের পণ্ডিতরা এ প্রথাকে ইসলামের মূল নীতি বিরুদ্ধ ও বেদা'আত বলেছেন।

পরিবারের আপনজনের মত্যুর পর এসব আয়োজনে শোক প্রকাশ হয়না। বরং উৎসবের আমেজ থাকে, সমাজে নিজেদের প্রভা-প্রতিপত্তি ও সম্পদের প্রাচুর্যের প্রদর্শনী হয়। ভাবটা এমন, দেখ! আমাদের কত ক্ষমতা, কত সম্পদ; আমরা হাজারে হাজার, এমনকি লক্ষ লক্ষ মানুষকে ভুড়িভোজ করাতে পারি। তাই এটা সামাজিক স্টেটাসের ব্যাপার। প্রয়োজনে অনেকে নিজেদের ইজ্জত বাঁচাতে ধার-দেনা করে এসব অনুষ্টান করেন।


ভারত উপমহাদেশে প্রায় ছয়শত বছর আগে থেকে এ প্রথাটি মুসলমানদের মধ্যে চালু হয়ে আসছে। এটা মূলত আমাদের উপমহাদেশীয় সংস্কৃতি। শত শত বছর থেকে ভারত উপমহাদেশে এটি প্রচলিত। ইসলামের আদর্শের সাথে কুলখানির কোন সম্পর্ক নেই। দীর্ঘ দিন থেকে এটি আমাদের সমাজে প্রচলিত বলে অনেকেই এটাকে ধর্মীয় প্রথা বলে মনে করেন। একজন সামর্থ্যবান মানুষ ইচ্ছা থাকলে গরীব মানুষদের আয়োজন করে খাওয়াতে পারেন, কিন্তু মৃত ব্যক্তির নামে অবশ্যই না। কারণ ইসলাম এটাকে অনুমোদন করে না। ভারত উপমহাদেশের বাইরে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোতে এসব প্রথা নেই।

মেয়র মহিউদ্দীনের পরিবার এত অল্প সময়ে শোক কাটিয়ে বিশাল বড় আয়োজন কিভাবে করলেন তা আমার বোধগম্য হয়নি। দুই লক্ষ মানুষের আয়োজন বলে কথা!! তাহলে কি তার মৃত্যুর আগে থেকে পারিবারিক প্রস্তুতি ছিল? দুই লক্ষ মানুষকে খাওয়াতে মাথাপিছু ৩০০ টাকা করে হলে মোঠ খরছ হবে ছয় কোটি টাকা!! এর সাথে যোগ হবে ১৪ টি কমিউনিটি সেন্টারের ভাড়া, ভাবুর্চি, শ্রমিক ও নিরাপত্তা খরছ। অর্থাৎ কোন অবস্থাতেই তা সাত কোটি টাকার কম নয়। প্রশ্ন হল এসব বিপুল টাকার উৎস কি? যে পরিবার কুলখানির নামে সাত কোটি টাকা খরছ করতে পারে তাদের পারিবারিক সম্পদ শত কোটি টাকার কম হওয়ার কথা নয়। আশা করি দুদক এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে।

টেলিভিশনে দেখলাম পদদলিত হয়ে মৃত একজন চট্টগ্রাম বিশ্ব বিদ্যালয়ের অনার্স ফাইন্যাল ইয়ারের ছাত্র। কত স্বপ্নীল জীবন ছিল তার। কিন্তু সামান্য একটি ভুড়িভোজের আয়োজন তার স্বপ্নগুলোকে কেড়ে নিল। তার মায়ের বুকটা খালি করে দিল। ছেলেটি হয়ত মেসে থেকে পড়াশুনা করত, হয়ত অনেকদিন ভালমন্দ খাওয়া হয়নি। তাই বিশাল এ আয়োজনে এসেছিল মেজবান খাওয়ার জন্য। সে কি ভেবেছিল এমন মর্মান্তিক মৃত্যুুু? বাকি যারা মারা গেছেন সবার একটি করে গল্প আছে। এসব মৃত্যুর দায়ভার কার? যারা চিরজীবনের জন্য পঙ্গুত্ব বরণ করবে তাদের পরিবারের দায়িত্ব কে নেবে?


আমরা কথায় কথায় নিজেদের মধ্যবিত্ত আয়ের দেশ বলে বড়াই করি। তাহলে এখনও কেন মানুষ ফ্রি খাবার খেতে গিয়ে, যাকাতের কাপড় সংগ্রহ করতে গিয়ে, রিলিফের সামগ্রী আনতে গিয়ে পদদলিত হয়ে মারা যায়? দেশের সম্পদের কি সুষ্ট ব্যবস্থাপনা হচ্ছে? এসব অব্যবস্থাপনা ও দূর্ণীতির জন্য ধনীরা আর সম্পদশালী হচ্ছে, পাশাপাশি দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদেশে সাত কোটি টাকা খরছ করে কেউ ভুড়িভোজের আয়োজন করে, আর কেউ সাত টাকা খরছ করে একটা রুটি কিনে খাওয়ার পয়সা জুটাতে পারে না। আজব এ দেশ।

কুলখানির এ মর্মান্তিক দূর্ঘটনা মিডিয়ায় যতটুকু গুরুত্ব দিয়ে প্রচার হওয়ার কথা ছিল সেভাবে হয়নি। সরকারের তরফ থেকেও তেমন প্রতিক্রিয়া নেই। যেসব বাচাল নেতা ও মন্ত্রী কথা বলতে বলতে মিডিয়ায় ফেনা তুলেন তাদেরও প্রতিক্রয়া নেই। তারা কি তাহলে শোকে বাকরুদ্ধ? এটা যদি বিরোধী দলীয় কোন নেতার কুলখানি হত তাহলে এসব নেতাদের আসল চেহারা দেখা যেত।

এ দূর্ঘটনার দায়ভার কি শুধু আয়োজক পরিবারের, নাকি পুলিশ প্রশাসনেরও গাফলতি আছে তা খতিয়ে দেখতে হবে। এসব দূর্যোগ ও দূর্ঘটনার পর উদ্ধার তৎপরতা চালাতে কোন ইমার্জেন্সী ব্যবস্থা নেই কেন? সরকার প্রতিবছর প্রচুর এম্ভুলেন্স ক্রয় করে। দূর্যোগের সময় এসব এম্ভুলেন্স কোথায় থাকে? রিক্সা, সিএনজি করে আহত নিহত মানুষদের হাসপাতালে নিয়ে যাবে কেন? স্বাধীনতার এত বছর পরও আমরা এসব নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে পারিনি। প্রতি বছর পাল্লা দিয়ে ট্যাক্স, ভ্যাট ভাড়ছে। কিন্তু এ অনুপাতে নাগরিক সেবা বাড়ছে না কেন? আশা করব সরকার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন। পাশাপাশি আহত ব্যক্তিদের উন্নত চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা, প্রয়োজেনে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানো ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে আর্থিক অনুদানের ব্যাবস্থা করতে হবে।।



ফটো ক্রেডিট,
গুগল।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১১:৫৩

মো: নিজাম উদ্দিন মন্ডল বলেছেন: প্রথম ছবিটা কুলখানির? না বিয়ের অনুষ্ঠানের????

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:০৯

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:


আপনার জহুরী চোখে তো কিছুই বাদ যায় না। এটা দামী মেহমানদের ঘরোয়া কুলখানি।
বলতে পারেন, ভিআইপি.............!

২| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:৫২

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
আসলে মৃত্যুর পর কোন নিদিষ্ট দিন ইসলাম ধার্য করেনি যে- উমুক দিন, ৪ দিন বা ৪০ দিন পর ধুমধাম করে খাওয়াতে হবে।

যে কোন দিন গরীব-দুস্থ মানুষদের খাওয়ানো যেতে পারে বা দোয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

এটা এখন রুসম হয়ে গেছে মরলে খাওয়াতেই হবে। এভাবে ভুল ধারণা সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:৪৬

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:


এটা আমাদের উপমহাদেশীয় সংস্কৃতি। এখন এটাকে অনেকেই ইসলামের মূল নীতির সাথে গুলিয়ে ফেলেছেন। অনেকে আছেন, প্রকৃত সত্যটা জানেন না।
ধন্যবাদ, মাইদুল ভাই।

৩| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ১১:০৭

অক্পটে বলেছেন: আমরা একটা দেশ পেয়েছি, কিন্তু যোগ্য পরিচালক পাইনি। জোঁক দিয়ে দেশ পরিচালনা হয়? এরা আসে রক্ত চুষে আমাদের জীর্ণ করে চলে যায়।

ভাই লিখেছেন দারুণ! আপনার লেখায় সমাজের অসংলগ্নতা গুলো খুব পরিচ্ছন্নভাবে ফুটে উঠে। খুব ভালো থাকুন।

২৪ শে এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:৪৮

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:


ধন্যবাদ, আপনাকে। আপনি কষ্ট করে আমার লেখাগুলো পড়েন। আর কমেন্ট করে আমাকে অনুপ্রাণিত করেন এজন্য কৃতজ্ঞতা রইলো। ভাল থাকবেন।

৪| ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৩:৫৩

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন: আফসোস করা ছাড়া কিছু করার নেই ।

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৩:৫৭

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: হ্যা, আফসোসই। তবে আমি এগুলোকে বিনোদন হিসাবে নেই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.