নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জন্মসূত্রে মানব গোত্রভূক্ত; এজন্য প্রতিনিয়ত \'মানুষ\' হওয়ার প্রচেষ্টা। \'কাকতাড়ুয়ার ভাস্কর্য\', \'বায়স্কোপ\', \'পুতুলনাচ\' এবং অনুবাদ গল্পের \'নেকলেস\' বইয়ের কারিগর।

কাওসার চৌধুরী

প্রবন্ধ ও ফিচার লেখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। পাশাপাশি গল্প, অনুবাদ, কবিতা ও রম্য লেখি। আমি আশাবাদী মানুষ।

কাওসার চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

দি লটারি (The Lottery); "The Queen Of Horror" খ্যাত সাহিত্যিক "সিরলি জ্যাকসন" এর (Shirley Jackson) বিখ্যাত গল্পের বাংলা অনুবাদ।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩৮


জুন মাসের সাতাশ তারিখ, ঝকঝকে রৌদ্রজ্জ্বল এক সকাল; গ্রীষ্মের চমৎকার আরামদায়ক আবহাওয়া পরিবেশটাকে বেশ উপভোগ্য করে তুলেছে। সবুজ শ্যামল ঘাসের সাথে নানা বর্ণের ফুল ফুটেছ। উৎসব মূখর এ দিনটিতে গ্রামের সর্বস্থরের মানুষ জমায়েত হতে শুরু করলো একটি মাঠে; জায়গাটি গ্রামের পোস্ট অফিস আর ব্যাংকের ঠিক মাঝামাঝিতে অবস্থিত। সময় আনুমানিক দশটা বাজে। কোন কোন শহরের জনসংখ্যা এতো বেশি যে, লটারির কার্যক্রম জুনের দুই তারিখ থেকে শুরু করতে হয়! কিন্তু এ গ্রামের লোকসংখ্যা মাত্র ৩০০ জনের কাছাকাছি হওয়ায় লটারির পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ করতে দুই ঘন্টারও কম সময় লাগবে; লটারি সকাল দশটায় শুরু হলেও গ্রামের মানুষ মধ্যাহ্ন ভোজের আগেই বাড়ি ফিরতে পারবে।

গ্রীষ্মের ছুটিতে স্কুল বন্ধ থাকায় ঐতিহ্যবাহী এ উৎসব উপভোগ করতে সবার আগে ছোট ছোট বাচ্চারা এসে জড়ো হয়েছে; তবু কেন যেন তাদের চোখে মুখে স্বভাবিক উচ্ছাসের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে, এজন্য অনেকটা নীরবে জটলা পাকাচ্ছে তারা। তাদের আলোচনার সিংহভাগ জুড়েই ছিল স্কুলে শ্রেণীকক্ষ, পাঠ্যবই, স্কুলের শিক্ষক/ শিক্ষিকা আর একে অন্যকে ট্রল করা নিয়ে। তবে তাদের মধ্যে ববি মার্টিন কিছুটা ব্যতিক্রম, সে ছোট ছোট পাথরের টুকরো দিয়ে পকেট ভারী করে ফেলেছে! বাকি বাচ্চারাও তার দেখাদেখি একই কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে পাথর কুড়াতে ব্যস্থ হয়ে পড়লো। তারা সবচেয়ে মসৃণ আর গোলাকার আকৃতির পাথর সংগ্রহে অধিক মনযোগী ছিল। এদের মধ্যে ববি, হ্যারি জোন্স এবং ডিকি ডেলাক্রক্স (তবে গ্রামের লোকজন তাকে ডেলাক্রয় বলে ডাকে) মাঠের একটা কোনায় রীতিমত একটা পাথরের ঢিবি বানিয়ে ফেললো এবং সটান দাঁড়িয়ে রইলো ঢিবির গা ঘেঁসে, যাতে অন্য ছেলেরা এসে তা ভেঙ্গে ফেলতে না পারে। লটারির উৎসবে যোগ দিতে ছেলেদের পাশাপাশি মেয়েরাও এসেছে, তারা মাঠের একটি পাশে জটলা পাকিয়ে গল্পে মশগুল। তারা একে অন্যের কাঁধ বরাবর তাকিয়ে সুয়েটারের উপরে ভাই বোনদের নোংরা হাতের ছাপ লক্ষ্য করছিল।

কিছুক্ষণের মধ্যে গ্রামের পুরুষরা আসতে শুরু করলো। গল্প গুজবে তারাও কিন্তু কম যায় না; তবে তাদের গল্পের বিষয়বস্তু ভিন্ন। তাদের আলোচনায় রোদ, বৃষ্টি, খরা, চাষবাস, ট্রাক্টর আর খাজনার বিষয়াদি প্রাধান্য পাচ্ছে। সন্তানরা পাথরের ঢিবি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকলেও তাদের দৃষ্টি সদা জাগ্রত ছিল। সবশেষে এলেন গ্রামের মহিলারা; তাদের পরনে ছিল মলিন পুরাতন সোয়েটার। পরিচিত সবাইকে দেখে তারা হাঁসি টাট্টায় মেতে উঠলেন, কেউ বা একে অন্যকে জড়িয়ে ধরলেন। পরে চলে গেলেন যার যার স্বামীর কাছে। কিছুক্ষণ পর স্বামী-স্ত্রী নিজেদের ছেলে মেয়েদেরকে কাছে ডাকলেন। চার পাঁচবার ডাকার পর গোমড়া মুখে যার যার বাবা-মায়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো তারা। ববিকে তার মা কিছু সময় শক্ত হাতে আটকে রাখলেও হঠাৎ করে ফসকে গিয়ে আবার পাঁথরের ঢিবির দিকে ছুট দিল। কিন্তু বাবার চোখ রাঙানি আর ধমকের কারণে ববি ফিরে আসতে বাধ্য হলো। অনেকটা লক্ষী ছেলের মত চুপচাপ বাবা আর বড় ভাইয়ের মাঝখানে এসে দাঁড়ালো।

গ্রামের নৃত্য কলা থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরীদের সংঘ, হেলোইনের আয়োজন সহ যাবতীয় অনুষ্ঠান যার হাত দিয়ে সুচারু ভাবে সম্পন্ন হয় সেই 'মিস্টার সমারর্স' এর উপরেই লটারি আয়োজনের গুরু দায়িত্ব পড়েছে। স্বীকার করতে হবে নাদুসনুদুস চেহারার এই কয়লা ব্যবসায়ী মানুষটার ধৈর্য্য সীমাহীন। একে তো দজ্জাল বউ, তার উপর নিঃসন্তান; এজন্য গ্রামের লোকজন তাকে বেশ সমীহের চোখে দেখে। মিস্টার সমারর্সকে লটারির কালো বাক্সটা নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখে সবাই চুপচাপ হয়ে গেলেও গ্রামবাসীদের মধ্যে ফিসফিসানি ঠিকই চলতে থাকলো।

মাঠের মাঝামাঝি এসে সবার উদ্দেশ্যে হাত নেড়ে তিনি বললেন, "আজ একটু দেরী হয়ে গেছে।" তার ঠিক পেছনে একটি টুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন গ্রামের পোস্ট মাস্টার 'মিস্টার গ্রেভস'; তিনি টুলটা মাঠের ঠিক মধ্যখানে রাখলেন। মিস্টার সমারর্স লটারির কালো বাক্সটি টুলটির উপরে রাখলেন।

গ্রামের লোকজন টুলটা থেকে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে গোল হয়ে দাঁড়ালো। মিস্টার সমারর্স উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "আপনাদের মধ্যে কেউ কি লটারির কার্যক্রমে অংশ নিতে চান?" কথাটি শুনে প্রথমে সবাই চুপটি মেরে থাকলেও কিছুক্ষণ পর মিস্টার মার্টিন ও তার বড় ছেলে হাত তুলে আগ্রহের কথা জানালেন। এবার মিস্টার সমারর্স বাক্সের ভেতরে আগে থেকে ভরে রাখা লটারির কাগজগুলোতে কয়েকটি বড় ঝাঁকুনি দিলেন; এসময় বাপ-ছেলে টুলটা চেপে ধরেছিলেন যাতে বাক্সটার ঝাঁকুনির সাথে টুলটা নড়তে না পারে।

এ কথা স্বীকার করতেই হবে, লটারি আয়োজনের আগের সেই জৌলুস আর উত্তেজনা এখন আর নেই; লটারিতে ব্যবহৃত কালো বাক্সটা শহরের সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি ওয়ার্নারেরও জন্মের আগের। মিস্টার সমারর্স অনেক দিন থেকেই বাক্সটা পরিবর্তন করে নতুন আরেকটি তৈরীর তাগিদ দিয়ে আসছেন। কিন্তু গ্রামবাসী দীর্ঘদিন থেকে ব্যবহৃত বাক্সটা নিজেদের ঐতিহ্য মনে করে বলে এ প্রস্তাবে সায় দেয় নাই। গ্রামের অনেকের ধারণা কালো বাক্সটা বানানোর সময় গ্রামের গোড়াপত্তনের শুরুতে ব্যবহৃত সর্ব প্রথম বাক্সটার কাঠের টুকরোও ব্যবহার করা হয়েছে। তবে প্রতি বছর লটারি আয়োজনের শেষে মিস্টার সমারর্স নতুন আরেকটি বাক্স বানাতে তাগিদ দিলে প্রতিবারই গ্রামের সবাই সিদ্ধান্ত নেয়, "এবার থাক, পরের বার দেখা যাবে।" তবে বাক্সটা অনেক পুরোনো হওয়ায় প্রতি বছর একটু একটু করে তা বিবর্ণ হচ্ছিল; এছাড়া বাক্সটার কালো রং জায়গায় জায়গায় উঠে গিয়ে অসুন্দর দেখাচ্ছে, দাগ পড়েছে যত্র তত্র।


মিস্টার মার্টিন ও তার বড় ছেলে টুলের উপরে বাক্সটাকে রেখে টুলটাকে শক্ত করে ধরে রাখলেন যাতে এটি পড়ে না যায়। বছরের পর বছর থেকে চলে আসা এই প্রথার অনেক পরিবর্তন এসেছে; লটারির উপাদান হিসেবে দীর্ঘদিন কাঠের টুকরো ব্যবহৃত হলেও গত কয়েক বছর থেকে মিস্টার সমারর্স কাগজের প্রচলন শুরু করেন। আগে গ্রামের জনসংখ্যা কম থাকায় কাঠের টুকরো ব্যবহারে কোন সমস্যা ছিল না; কিন্তু প্রায় তিনশত মানুষের এ গ্রামটিতে এখন কী আর কাঠের টুকরো দিয়ে লটারি করা সম্ভব? এজন্যই এ পরিবর্তন। বাক্সেও এতো জায়গা নেই। লটারির আগের রাতে মিস্টার সমারর্স আর মিস্টার গ্রেভস মিলে কাগজের ছোট ছোট টুকরোগুলোকে বাক্সের মধ্যে ভরে রাখনে, পরে বাক্সটা পাঠিয়ে দেওয়া হয় মিস্টার সমারর্সের কয়লা খনিতে। পরদিন সকালবেলা মাঠে নিয়ে আসার আগ পর্যন্ত বাক্সটা এভাবেই সিল করা থাকে। আর বছরের বাকি সময়টাতে সেটি এ বাড়ি, ও বাড়ি, সে বাড়ি ঘুরতে থাকে। একবার তো পুরো বছরের জন্য মিষ্টার গ্রেভসের গোলাঘরে লুকিয়ে রাখা হয়েছিল! আরেকবার রাখা হয়েছিল পোস্ট অফিসে। মার্টিনের মুদি দোকানেও রাখা হয়েছিল বেশ কয়েকবার।

লটারি শুরুর আগে মিস্টার সমারর্সকে বেশ কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এগুতে হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো- গৃহকর্তাদের নামের তালিকা সংগ্রহ সহ পরিবারের বাকি সদস্যদের তথ্য সংগ্রহ করা। এবার লটারির পরিচালক হিসেবে মিস্টার সমারর্সকে শপথবাক্য পাঠ করান মিস্টার গ্রেভস। তবে একটা সময় ছিল, যখন লটারি শুরু হওয়ার আগে একটি ব্যতিক্রমী আবৃত্তির আয়োজন করা হতো; এটি না ছিল কবিতার আসর, না ছিল গানের আসর! অনেকটা দু'টোর মাঝামাঝি কিছু একটা হবে। সারি বেঁধে সবাই বিড় বিড় করে সূরহীন গম্ভীর ভাব নিয়ে কিছু একটি আওড়াতো; এ সময় পরিচালক নীরবে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতেন। তবে কারো কারো মতে তিনি ভীড়ের চারিপাশে ঘুরে ঘুরে যাচাই করতেন গ্রামের কেউ অনুপস্থিত রইলো কিনা। সময়ের পরিক্রমায় বদলে গেছে অনেক কিছু। এমনও শুনা যায় একটা সময় লটারির বল তুলতে আসা সবাইকে পরিচালক দাঁড়িয়ে স্যলুট করতেন। এখন আর এ রীতির প্রচলন নেই, শুধু কথা বলার সৌজন্যতার মধ্যে রীতিগুলো সীমাবদ্ধ। অবশ্য এ কাজে মিস্টার সমারর্স বেশ দক্ষ। ধবধবে সাদা সার্ট আর নীল জিন্সের প্যান্ট পরা পরিচালককে বেশ হ্যান্ডসাম লাগছিলো, তিনি আনমনে কালো বাক্সের উপর একটি হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছেন এবং বেশ ফুরফুরে মেজাজে গ্রেভস আর মার্টিনদের সাথে গল্প করছেন।

মিস্টার সমারর্স যখন বরাবরের মতো সব কিছু গুছিয়ে লটারি চূড়ান্ত পর্ব শুরু করতে মাঠে জমায়েত গ্রামবাসীর উদ্দেশ্যে কিছু একটা বলতে যাবেন ঠিক তখনই খেয়াল করলেন 'মিসেস হ্যাচিসন' অনেক দূর থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে মাঠের দিকে ছুটে আসছেন। কাঁধের উপর সুয়েটার গিট্টু দিয়ে তিনি প্রাণপনে দৌড়ে এসে মাঠের এক পাশে সবার পেছনের সারিতে দাঁড়ালেন। হাঁপাতে হাঁপাতে মিসেস ডেলাক্রক্সকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ''আমি একদম ভুলেই গিয়েছিলাম আজকের দিনটির কথা।" পাশেই দাঁড়ানো মিসেস ডেলাক্রক্স তার কথা শুনে হেঁসে উঠলেন। মিসেস হ্যাচিসন আবার বলতে লাগলেন, ''ভেবেছিলাম আমার বুড়ো স্বামী বোধহয় কাঠ সংগ্রহ করতে বাইরে বেরিয়েছে; কিন্তু জানালার বাইরে তাকিয়ে লক্ষ্য করলাম বাচ্চাদের কেউও বাড়িতে নেই। হঠাৎ মনে পড়লো আজ তো সাতাশ তারিখ! সাত পাঁচ না ভেবে দিলাম ভৌ দৌড়, এক দৌড়ে এখানে এসে পৌছিলাম।" মিসেস ডেলাক্রক্স প্রতি উত্তরে বললেন, "টেনশনের কিছু নেই, তুমি সময়মতোই এসেছ; লটারি এখনো শুরু হয় নাই।"

মিসেস হ্যাচিসন ভীড়ের মধ্যে দু'চোখ ঘুরিয়ে হয়রান হয়ে স্বামী সন্তানদের খোঁজ করতে লাগলেন এবং পেয়েও গেলেন; তারা সামনের সারির ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি মিসেস ডেলাক্রক্সের বাহুতে হালকা একটা ধাক্কা দিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বিদায় নিয়ে স্বামী-সন্তানদের কাছে ছুটলেন। লোকজন একটু ফাঁকা হয়ে তাকে পথ করে দিল। এসময় ভীড়ের মধ্য থেকে দু-একজন উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে বলে উঠলো, "এই তো এসে পড়েছেন মিসেস হ্যাচিসন; বিল, তোমার টেনশনের কিছু নেই; তোমার প্রেয়সী বউ এসে গেছে।" এবার মিসেস হ্যাচিসন স্বামী বিল হ্যাচিসনের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন। মিস্টার সমারর্স এবার গলা খেকিয়ে মিসেস হ্যাচিসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করলেন, ''ভেবেছিলাম এবার তোমাকে ছাড়াই লটারির পর্ব শুরু করতে হবে।'' কথাটি শুনে দাঁত কেলিয়ে হাসলেন মিসেস হ্যাচিসন; উত্তরে বললেন, "আমি তো বেসিনে একগাদা এঁটো থালা বাসন রেখে এক দৌড়ে ছুটে এসেছি, মিস্টার জো; সাথে রসিকতা করে যোগ করলেন, আপনাকে তো এমন কোন কাজ বাড়িতে রেখে আসতে হয় নাই!" এবার শুরু করে দিন, প্লীজ। মিসেস হ্যাচিসনের কথা শুনে চারিদিকে হাঁসির রোল পড়ে গেল, যাক অবশেষে গম্ভীর পরিবেশটা কিছুটা হালকা হলো!

"ঠিক আছে।" শান্ত কণ্ঠে বললেন, মিস্টার সমারর্স। "আমাদের এবার শুরু করা উচিৎ; আগে ভাগে শেষ করে যার যার কাজে ফিরে যাওয়া যাবে। কেউ এখনো বাকি আছে নাকি?"

"ডানবার।" ভীড়ের মধ্য থেকে অনেকে বলে উঠলো, "ডানভার ডানভার।" ডানভার এখনো আসে নাই।

"হুম, ক্লাইভ ডানবার" মিস্টার সমারর্স হাতের তালিকার দিকে চোখ বুলিয়ে নিশ্চিত হলেন। শুনেছি ক'দিন আগে পা ভেঙেছে লোকটার; তবে এর সত্য মিথ্যা জানি না, ঘটনা কি সত্যি? তার পক্ষে কে লটারি টানবে?

"আমি আছি।" একটা নারী কণ্ঠ শোনা গেল ভীড়ের মধ্যে। পরিচালক তার দিকে তাকিয়ে বললেন, "তাহলে স্বামীর হয়ে স্ত্রী লটারি তুলবে?" তিনি আরো যুক্ত করলেন, "তোমাদের তো প্রাপ্ত বয়স্ক একটি ছেলে আছে, তাই না? আমার মনে হয় বাবার হয়ে সেই লটারিটা তুলুক, কি বলো জেন্সি?" যদিও উত্তরটা গ্রামের আরো দশটি মানুষের মতো মিস্টার সমারর্সেরও জানা; তবুও আনুষ্ঠানিক ভাবে বিষয়টি অবগত করা পরিচালকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। উত্তরের অপেক্ষায় মিসেস ডানবারের দিকে সৌম্য দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন তিনি।


"হুরাসের বয়স এখনো ষোল হয়নি।" কাচুমাচু হয়ে কথাটি বললেন ডানবার। সাথে যোগ করলেন, "এ বছর বুড়ো লোকটার পক্ষে আমাকেই লটারি টানতে হবে।"

"ঠিক আছে।" ঘোষণা দিলেন লটারির পরিচালক। হাতে ধরে রাখা তালিকায় কিছু একটা লিখলেন; তারপর উচ্চস্বরে বললেন, "ওয়াটসনের ছেলে এ বছর লটারি টানবে।"

ভীড়ের মধ্য থেকে লিকলিকে লম্বা একটি ছেলেকে হাঁত তুলতে দেখা গেল। "এই তো আমি, মায়ের পক্ষে আমিই কাগজ তুলবো।" ভীড়ের মধ্যে চিৎকার শুনা গেল, "সাবাস জ্যাক।" লোকজনের কথা শুনে ভয়ে মাথা নীচু করে নিজেকে আড়াল করার চেষ্টা করলো ছেলেটা। লোকজন আরো বলতে লাগলো, "যাক অবশেষে তোমার মা একজন পুরুষ মানুষের ব্যবস্থা করতে পেরেছেন তাহলে?"

"ঠিক আছে।" মিস্টার সমারর্স বললেন, "আশা করি সবাই বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন, বুড়ো ওয়ার্নার আছে নাকি?"

"আমি এখানে।" গলার আওয়াজ শুনে ভীড়ের মধ্যে তাকে খোঁজার চেষ্টা করলেন মিস্টার সমারর্স।

চারিদিক নীরব নিস্তব্ধ দেখাচ্ছে; হাতের তালিকার দিকে একটু দৃষ্টি দিয়ে গলা খেকিয়ে মিস্টার সমারর্স বললেন, "সবাই প্রস্তুত আছেন তো?" আমি এখন তালিকা দেখে একে একে নাম ডাকবো। প্রথমে আসবে পরিবারের কর্তারা। আপনারা এসে এই বাক্স থেকে একটা করে কাগজ তুলবেন তারপর সেটার ভাঁজ না খোলে পরিবারের কাছে গিয়ে দাঁড়াবেন যতক্ষণ পর্যন্ত না সবাই একবার করে সুযোগ পাবে ততক্ষণে কেউ কাগজের ভাঁজটি খোলবে না। পরিষ্কার বুঝতে পেরেছেন সবাই?"

অর্ধেকের বেশি লোক সেই নির্দেশনার দিকে কোন ভ্রুক্ষেপই করলো না; তারা এতো বছর থেকে প্রক্রিয়াটি দেখে আসছে এজন্য নতুন করে জানার কিছু নেই। তবে ভদ্রতার খাতিরে চুপচাপ শুনার ভান করলো। আবার কেউ কেউ জিহ্বা দিয়ে ঠোট দু'টি আলতো করে চেটে নিল। লটারির মতো বিশাল এ আয়োজনে কমিবেশি সবার মনে উত্তেজনার পাশাপাশি একটা অজানা আতঙ্ক কাজ করছে। এবার হাত উঁচু করে প্রথম নামটি ডাকলেন পরিচালক মিস্টার সমারর্স, ''এ্যাডামস"; নামটি শুনে একজন লোক ভীড় ঠেলে সামনে এগিয়ে আসলেন। "কেমন আছ স্টিভ?" হাসি মুখে জানতে চাইলেন মিস্টার সমারর্স। এবার মিস্টার এডাম বললেন, "কি খবর, জো?" প্রথমে নার্ভাস দৃষ্টিতে একে অন্যের মধ্যে চোখাচোখি হলো। এরপর মিস্টার এ্যাডাম এগিয়ে এসে বাক্সের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে একটি লটারি তুলে নিলেন এবং মাঠের একটা কোনায় দাঁড়িয়ে থাকা পরিবারের সদস্যদের থেকে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালেন; কিন্তু হাতের দিকে ভুলেও থাকালেন না।

"এ্যালিন" ..... "এন্ডারসন" ..... "বেনথাম" ..... এভাবে মিস্টার সমারর্স একের পর এক নাম ডাকতে লাগলেন।

"ইদানিং খুব দ্রুত লটারির সময় ঘনিয়ে আসে, আমার মনে হচ্ছে গত বছরের লটারি যেন গত সপ্তাহে হয়ে গেল!" ঠিক পেছনের সারিতে দাঁড়ানো মিসেস গ্রেভসকে উদ্দেশ্য করে বললেন মিসেস ডেলাক্রক্স।

"সময় কত দ্রুত দ্রুত ফুরিয়ে যায়।" উত্তর দিলেন মিসেস গ্রেভস।

এবার ডাক পড়লো, "ক্লার্ক" ..... "ডেলাক্রক্স".....

"এবার আমার স্বামীর ডাক পড়েছে।" মিসেস গ্রেভসকে উদ্দেশ্য করে মিসেস ডেলাক্রক্স বললেন; সাথে যোগ করলেন, "স্বামীকে এগিয়ে যেতে দেখে উত্তেজনায় ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারছি না।"

"ডানবার।" মিস্টার সমারর্স ডানবারের নাম ডাকতেই স্বামীর নাম শুনে বাক্সের দিকে পা বাড়ালেন মিসেস ডানবার। ভীড়ের মধ্য থেকে নারী কন্ঠের চিৎকার শুনা গেল, "এগিয়ে যাও, জেনি। আরেকজন মহিলা সাথে যোগ করলেন, "হুম, তিনি যাচ্ছেন।"

"এরপর আমাদের পালা।" মিসেস গ্রেভস বললেন। মিস্টার গ্রেভস যখন ধীর পায়ে বাক্সের পাশে আসলেন তখন তিনি পরিচালকের সামনে কাঁপা কাঁপা হাতে বাক্স থেকে লটারির কাগজ তুললেন। এবার ভীড়ের মধ্যে থাকা সব পুরুষের হাতে হাতে ছোট্ট লটারির কাগজটি পৌছে গেছে; তারা কাগজটাকে নার্ভাস ভাবে নাড়াচাড়া করতে লাগলেন। মিসেস ডানভার দুই ছেলেকে পাশে রেখে কাগজটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

"হার্ভার্ট" ..... "হ্যাচিসন" .....


"শুনছো বিল? তোমার নাম ডাকছে"। মিসেস হ্যাচিসন স্বামীর উদ্দেশ্যে বললেন; তার কথা শুনে আশপাশের লোকজন হাসাহাসি করতে লাগলো।

"জোন্স।"

পাশে দাঁড়ানো বুড়ো ওয়ার্নারের সাথে গল্প জুড়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন মিস্টার এ্যাডামস, "শুনেছি উত্তরের গ্রামে নাকি লটারির প্রথা বাতিল করার কথা হচ্ছে।"

"যত্তসব ফালতু কথা", বলে নাক সিটকালেন ওয়ার্নার। আরো বললেন, "ছেলে-ছোকরাদের কথায় কান দিয়ে লাভ আছে? ওরা বুঝে কি? কদিন পর আবার দেখবে জঙ্গলে গিয়ে বাস করার কথা বলবে, হাত পা ছড়িয়ে বসে থাকতে পারলেই খুশি ওরা। "জুনে হলে লটারি, ফসল ফলে বাহারি" কথাটা কি তুমি শুনেছ? লটারি আগেও ছিল এখনও আছে ভবিষ্যতেও চলবে।

"অনেক জায়গায় কিন্তু লটারি বন্ধ হয়ে গেছে।" মিসেস এ্যাডামস্ বললেন।

"যে কথাটি শুনেছ তা কিন্তু মিথ্যা নয়। গুজব ছড়ানো ছোকরায় ভরে গেছে চারিপাশ।" বুড়ো ওয়ার্নার রেগেমেগে আবার বললেন।

"মার্টিন" ববি মার্টিন লক্ষ্য করলো ডাক শুনে তার বাবা লটারি তুলতে গেছেন।

"ওভারডাইক ..... পার্সি" বিরামহীনভাবে ডেকে চলছেন পরিচালক।

"আমার মনে হয় তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যাবে, খুব তাড়াতাড়ি।" মিসেস ডানভার তার বড় ছেলেকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বললেন।

"হুম, লটারি তো শেষ হওয়ার পথে।" ছেলে উত্তর দিল।

"তোমার বাবাকে খবরটা পৌছে দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নাও।" মিসেস ডানভার আবারও ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বললেন।

এবার মিস্টার সমারর্স নিজের নাম ডেকে বাক্স থেকে লটারি তুললেন। তারপর ডাকলেন, "ওয়ার্নার।"

"সাতাত্তর বছর থেকে আমি লটারিতে অংশগ্রহণ করছি। ভীড় ঠেলে এগুতে এগুতে বললেন ওয়ার্নার।

কম কথা! সা-তা-ত্ত-র বছর!!

"ওয়াটসন" ডাক শুনেই লম্বা ছেলেটা জটলার মধ্য থেকে বেরিয়ে এলো। কেউ একজন বলে উঠলো, "ভয় পেয়ো না, জ্যাক।" মিস্টার সমারর্স তাকে অভয় দিয়ে বললেন, "তাড়াহুড়োর কিছু নেই, সময় নাও বাবা।

" জেনিনি।"

এরপর কিছুক্ষণ সময় পরিবেশ কিছুটা স্থবির হয়ে গেল; উপস্থিত জনতা যেন শ্বাস নিতেও ভুলে গেছেন! অবশেষে মিস্টার সমারর্স ঘুরে দাঁড়িয়ে জটলার দিকে হাতের কাগজটা ধরে বললেন, "এক মিনিট কেউ নড়াচড়া করবেন না; প্লীজ, এবার হাতে রাখা লটারির কাগজটি খোলে ফেলুন সবাই। হঠাৎ নীরবতা ভেঙে কানাঘুষা শুরু করলো মহিলারা। সবার একটাই জিজ্ঞাসা "কার নাম উঠেছে?"; "কে লটারি পাইলো?"; "নামটি কি ডানবার?"; "নাকি ওয়াটসন?"

এবার সবাই একযোগে বলে উঠলো, "হ্যাচিসনের নাম উঠেছে, হ্যাচিসন; এবার বিল হ্যাচিসনের নাম উঠেছে।

" যাও, যাও; তোমার বাবাকে গিয়ে সংবাদটি দিয়ে আস।" মিসেস ডানভার তার বড় ছেলেকে তাগদা দিলেন।

সবাই ঘাড় ঘুরিয়ে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে হ্যাচিসন পরিবারকে খোঁজতে লাগলো। বিল হ্যাচিসন নিশ্চল পাথরের মতো দাঁড়িয়ে বিস্ফুরিত চোখে হাতে ধরা কাগজটার দিকে তাকিয়ে আছেন। হঠাৎ নিস্তব্ধতা ভেঙে টেসি হ্যাচিসন চিৎকার দিয়ে মিস্টার সমারর্সকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন, "আপনি আমার স্বামীকে পছন্দ মতো কাগজ তোলার জন্য পর্যাপ্ত সময় দেন নাই; আমি তা দেখেছি, এটা স্রেফ অবিচার!"

"খেলাটা কিন্তু দারুন হয়েছে, টেসি।" মিসেস ডেলাক্রক্স বললেন। সাথে মিসেস গ্রেভস যুক্ত করলেন, "আমাদের সবার জন্য সমান সুযোগ ছিল।

"চুপ কর, টেসি।" বউকে উদ্দেশ্য করে বিল হ্যাচিসন বলে উঠলেন।

কিছুক্ষণ পর মুখ খুললেন মিস্টার সমারর্স, "সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনুন, "লটারির কার্যক্রম দ্রুত শেষ হওয়ার পথে; আশা করি বাকি কাজগুলোও দ্রুত শেষ হয়ে যাবে।" এরপর তিনি আরেকটা তালিকার দিকে তাকিয়ে বললেন, "বিল, পরিবারের কর্তা হিসাবে তুমিই কাগজ তুলেছ। তোমার বাড়িতে আর কেউ বাকি আছে?"

"বাড়িতে 'ডন' আর 'ইভা' আছে।" মিসেস হ্যাচিসন এবার চিৎকার দিয়ে বলে উঠলেন, "ওদেরকেও লটারি তোলার সুযোগ দেওয়া হোক।"

"মেয়েদেরকে তাদের স্বামীর পরিবারের অংশ হিসেবে ধরা হয়, টেসি"; মিস্টার সমারর্স শান্ত গলায় উত্তর দিলেন। সাথে যোগ করলেন, বাকি সবার মতো নিয়মটা তোমারও ভাল মত জানা আছে, তাই না?"

"এট অবিচার।" টেসি অস্ফুট স্বরে বলে উঠলেন।

"কিছুই করার নেই, জো।" বিল হ্যাচিসন দৃঢ়তার সাথে বললেন। আমার মেয়েটা ওর স্বামীর পরিবারের হয়ে লটারি টেনেছে। এটাই সত্যি; ছোট দু'টি বাচ্চা ছাড়া আমার পরিবারে আর কোন বাড়তি মানুষ নেই।


"তার মানে বাড়ির কর্তা হিসেবে যেমন তুমি আছ, ঠিক তেমনি পরিবারের পক্ষ থেকেও তুমি; কি ঠিক বলি নাই?"

"ঠিক বলেছ", বিল হ্যাচিসন উত্তর দিলেন।

"বাড়িতে বিল জুনিয়র, ন্যান্সি, পিচ্চি ড্যাভ, টেসি আর আমি থাকি।"

"তাহলে তো ঠিক আছে; হ্যারি, তুমি কি তাদের কাছ থেকে লটারির কাগজগুলো ফিরিয়ে নিয়েছ?" মিস্টার সমারর্স জানতে চাইলেন।


মিস্টার গ্রেভস মাথা নাড়ালেন এবং কাগজের টুকরোগুলো দেখালেন। "এগুলো সব বাক্সের মধ্যে রেখে দাও।" নির্দেশনা দিলেন মিস্টার সমারর্স; এছাড়া বিলের হাতের কাগজটাও বাক্সে ফেলে দাও।"

"আমি ভেবেছিলাম আবার নতুন করে লটারি হবে।" নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে বললেন, মিসেস হ্যাচিসন। তিনি আবারও অভিযোগের সূরে বলতে লাগলেন, "আমি এখনও বলছি লটারির প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ছিল না; আপনারা সবাই দেখেছেন বিলকে একদম সময় দেওয়া হয়নি।"

মিস্টার গ্রেভস পাঁচটি কাগজের টুকরো বাছাই করে আবার বাক্সের ভেতরে ফেললেন; বাকিগুলো ছুঁড়ে মাটিতে ফেলে দিলেন, এগুলো বাতাসে ভেসে অজানার উদ্দেশ্যে উড়ছিল।

"সবাই মনযোগ দিয়ে শুনুন।" মিসেস হ্যাচিসন উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্য আবার বলে উঠলেন।

"বিল, তুমি কি প্রস্তুত?" মিস্টার সমারর্স তাড়া দিলেন। স্ত্রী আর সন্তানদের দিকে এক পলক তাকিয়ে সায় দিলেন বিল হ্যাচিসন।

"শুনুন", মিস্টার সমারর্স আবারো ঘোষণা দিলেন সব কাগজ তোলা শেষ হলে তবেই নিজের হাতের কাগজটা খোলা যাবে। হ্যারি, তুমি এবার ড্যাভকে সাহায্য কর। পিচ্ছি ড্যাভকে হাতে ধরে এগিয়ে নিয়ে আসলেন মিস্টার গ্রেভস, খুশি মনেই বাক্সের সামনে দাড়ালো সে; "এবার বাক্স থেকে একটা কাগজ তুলে নাও বাবু", বাক্সের ভেতর হাত ঢুকিয়ে একটা হাঁসি দিল ড্যাভ; "একটাই কাগজ তুলবে কিন্তু। হ্যারি, কাগজটা তোমার কাছে রাখ।" পরিচালকের নির্দেশ অনুযায়ী ড্যাভের শক্ত করে রাখা মুটির ভেতর থেকে ভাঁজ করা কাগজটি বের করে নিলেন মিস্টার গ্রেভস, বাচ্চাটা তার মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।

"এবার ন্যান্সির পালা", বার বছর বয়সের মেয়েটার নাম ডাকতেই ওর স্কুলের বান্ধবীরা আৎকে উঠলো, সে স্কার্ট উচিয়ে ধীর পায়ে বাক্সের কাছে এসে দাঁড়ালো, এবার ভয়ে ভয়ে একটা কাগজ তুলে নিল।

"বিল জুনিয়র", মিস্টার সমারর্স বিলিকে ডাকলেন; আতঙ্কে তার মুখটা লাল হয়ে উঠলো, তার পা দুটি কাপতে লাগলো, লটারি তুলতে আরেকটু হলেই সে অসাবধানতা বশত বাক্সটা নীচে পড়ে যেত, অনেক ভেবেচিন্তে একটা কাগজ তুলে নিল বিলি।

এবার মিসেস হ্যাচিসনের দিকে তাকালেন লটারির পরিচালক; "টেসি, এবার তোমার সময়"; তিনি একটু ইতস্তত করলেন, চারপাশ একপলক দেখে নিলেন এবং বিড় বিড় করে মনে মনে কি যেন বলতে বলতে হাত ডুকালেন বাক্সের ভেতর, তারপর দ্রুত একটুকরো কাগজ বের করে পেছনে লুকিয়ে ফেললেন।

বাকি রইলেন কেবল "বিল", " বিল হ্যাচিসন", মিস্টার সমারর্সের ইশারা অনুযায়ী শেষ কাগজটা হাতে তুললেন তিনি।

কথা বলতে ভুলে গেছে যেন সবাই, চারদিকে অসহ্য নীরবতা। ভীড়ের ভেতর থেকে একটা ছোট্ট মেয়ে ফিসফিস করে বলতে লাগলো, "ন্যান্সি যাতে না হয়, আশা করি ন্যান্সির নাম আসবে না।" সেই কণ্ঠস্বর যেন সবার হৃদয়ে গিয়ে আঘাত করলো।

"আগে এসব রং তামাশা হতো না, বুড়ো ওয়ার্নার বললেন। মানুষ আর আগের মতো নেই।"

"ঠিক আছে।" তাহলে সবাই হাতের কাগজটা খুলে ফেলুন। "হ্যারি, তুমি পিচ্চি ড্যাভের কাগজটা খোল।"

মিস্টার গ্রেভস কাগজটা খোলে তুলে ধরতেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো উপস্থিত জনতা; সেই কাগজে কোন দাগ বা ছোপ নেই। ন্যান্সি আর বিল জুনিয়র একই সাথে নিজেদের কাগজ খোলে ফেললো, ওদের হাঁসি দেখেই বুঝা যাচ্ছে কি ঘটনা। বাকিটুকু কাগজ মেলে ধরতেই নিশ্চিত হওয়া গেল কাগজগুলো ধবধবে সাদা, একদম ফাঁকা।

এবার বিল হ্যাচিসনের কাগজটা খোলতেই ফকফকা সাদা লাগলো; এতে কোন দাগ নেই।

"তাহলে, নিশ্চিত টেসিই হবে।" মিস্টার সমারর্স জোর গলায় বলে উঠলেন।

বিল হ্যাচিসন এবার জোর করে তার স্ত্রীর কাছ থেকে কাগজটি কেড়ে নিয়ে খোলে ফেললেন; উঁচু করে ধরতেই সবাই দেখলো কাগজের মাঝখানে একটা কালো দাগ দেওয়া। গতকাল রাতে কয়লা কোমপানীর অফিসে বসে গাঢ় পেন্সিল দিয়ে এই দাগটা দিয়েছেন পরিচালক মিস্টার সমারর্স।

"আর দেরী করা যাবে না", মিস্টার সমারর্স এবার ঘোষণা করলেন যত তাড়াতাড়ি আয়োজনটি শেষ করা যায় ততই মঙ্গল।

গ্রামের লোকজন যেন এই নির্দেশের অপেক্ষা করছিল; পুরাতন রীতিনীতির অনেক কিছু ভুলে গেলেও পাথর নিক্ষেপের কথা সবার মনে আছে। সবাই তড়িঘড়ি করে ছুটে গেল পাথরের স্তুপের দিকে। হাতের কাছেই বিশাল একটা পাথর দেখে দুই হাতে সেটাকে তুলে নিলেন মিসেস ডেলাক্রক্স; এরপর মিসেস ডানবারের দিকে তাকিয় বললেন, "কি হলো জলদি শুরু করুন।"

মিসেন ডানবার দুই হাতে কয়েকটা ছোট ছোট পাথর বেছে নিলেন এবং উত্তেজনা চাপিয়ে রাখার চেষ্টা করলেন; তিনি মিসেস ডেলাক্রক্সকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "আমি একদম দৌড়াতে পারি না, তুমি সামনে যাও, আমি পেছনে পেছনে আসছি।"

বাচ্চাগুলো আগে থেকেই পাথর নিয়ে অপেক্ষা করছিলো; এরই মাঝে কে যেন ছোট্ট ড্যাভের হাতে কয়েকটা নূড়ি ধরিয়ে দিয়েছে।

টেসি হ্যাচিসন মাঠের ঠিক মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছেন। দেখলেন গ্রামবাসীরা চারপাশ থেকে পাথর হাতে এগিয়ে আসছে। "এটা অবিচার, একদম অবিচার", মিসেস হ্যাচিসন আবারও বলে উঠলেন। হঠাৎ একটুকরো পাথর ছুটে এসে তার কপালের একপাশে আঘাত করলো। বুড়ো ওয়ার্নার দাঁত কেলিয়ে হাসতে হাসতে হাক দিলেন, "কোথায় গেলে সবাই? এসো এসো, জলদি এসো।" স্টিভ এডাম সবার সামনে আর মিসেস গ্রেভস তার ঠিক পাশে।

"এ হতে পারে না, এটা অবিচার", প্রাণপনে চিৎকার করলেন মিসেস হ্যাচিসন। তার কান্না মিশ্রিত আর্তনাদে কেউ গুরুত্ব দিল না। একসাথে ঝাপিয়ে পড়লো গ্রামবাসী, বৃষ্টি ফোঁটার মতো একের পর এক পাথর ছুটে গেল লটারি বিজয়ীর পানে।

"হাজার বছর ধরে চলে আসা প্রথা না মেনে যে উপায় নেই তাদের!"



[ ১৯৪৮ সালের ২৬শে জুন 'The Lottery' গল্পটি বিখ্যাত 'The New Yorker' পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সাহিত্য সমালোচকদের দৃষ্টিতে এটি পৃথিবীতে এ পর্যন্ত লেখা সবচেয়ে টুইস্টেড গল্প। এটিকে 'one of the most famous short stories in the history of American literature' হিসেবে গণ্য করা হয়। গল্পটি পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর চতুর্দিকে সমালোচনার ঝড় উঠে। প্রতিবাদ জানিয়ে হাজার হাজার চিটি আসতে শুরু করে পত্রিকা অফিসে। অনেক পাঠক গল্পের শেষ পরিণতির বিশদ ব্যাখ্যা জানতে চান।

গল্পটি প্রকাশিত হওয়ার মাস খানেক পর লেখিকা তাঁর প্রতিক্রিয়া স্বরুপ 'San Francisco Chronicle'-এ লেখেন "Explaining just what I had hoped the story to say is very difficult. I suppose, I hoped, by setting a particularly brutal ancient rite in the present and in my own village to shock the story's readers with a graphic dramatization of the pointless violence and general inhumanity in their own lives."]

লেখক পরিচিতি -

"Shirley Jackson" একজন্য বিখ্যাত আমেরিকান সাহিত্যিক। ১৯১৬ সালের ১৪ই ডিসেম্বর তিনি ক্যালিফোরনিয়ার সান ফ্রানসিসকোতে জন্মগ্রহণ করেন। প্রায় দুই দশকের সাহিত্য চর্চায় তিনি ৬টি উপন্যাস, দু'টি স্মৃতিকথা এবং ২০০টির বেশি গল্প লেখেন। বিশ্বব্যাপী তিনি "The Queen Of Horror" নামে পরিচিত। তাঁর প্রথম উপন্যাস 'The Road Through the Wall' প্রকাশিত হয় ১৯৪৮ সালে; এরপর যথাক্রমে, Hangsaman (১৯৫১); The Bird's Nest (১৯৫); The Sundial (১৯৫৮); The Haunting of Hill House (১৯৫৯); We Have Always Lived in the Castle (১৯৬২) প্রকাশিত হয়। তাঁর লেখা বিখ্যাত গল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো; (1) The Lottery (2) The Missing Girl (3) Charles (4) The Possibility of Evil (5) The Daemon Lover (6) Pillar of Salt (7) One Ordinary Day, With Peanuts (8) The Tooth (9) The Summer People (10) The Witch ইত্যাদি।

১৯৬৫ সালের ৮ আগস্ট মাত্র ৪৮ বছর বয়সে তিনি হার্ট এ্যাটাকে মারা যান।



ফটো ক্রেডিট,
গুগল।

চাইলে পড়তে পারেন-

আমার সবচেয়ে পঠিত পোস্ট।
সবচেয়ে লাইকপ্রাপ্ত গল্প-ধূমকেতু
ধর্ষণ ও ধর্ষক (বাংলাদেশ/বহির্বিশ্ব)
অনুবাদ গল্প-(দি নেকলেস)
দি গিফট অফ দ্যা ম্যাজাই
গল্প লেখার সহজ পাঠ
সবচেয়ে পঠিত প্রবন্ধ।
আধুনিক কবিতার পাঠ (সমালোচনা)
আলোচিত ফিচার 'দি লাঞ্চিয়ন'।
ব্রিটেনের প্রবাস জীবন- স্মৃতিকথা।
সবচেয়ে পঠিত গল্প।
ছবি ব্লগ (লন্ডনের ডায়েরি-১)।

মন্তব্য ৭৯ টি রেটিং +১৯/-০

মন্তব্য (৭৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৫৩

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: বড় পোস্ট পড়ে আবার আসছি।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০১

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:

প্রথম কমেন্টে গুরুকে পেয়ে খুব খুশি হলাম; গল্পটি একটু লম্বা হলেও পড়া শেষ পাঠক একদম তাজ্জব বনে যাবেন; গল্পের এমন পরিণতি পাঠক স্বপনেও কল্পনা করেন নাই। ১৯৪৮ সালে 'নিউইয়র্ক টাইমস' পত্রিকায় গল্পটি প্রকাশিত হওয়ার পর চারিদিকে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে। গল্পের এমন পরিণতি পাঠকরা মেনে নিতে পারেনি। আশা করি, গল্পটি পড়লে আপনারও ভাল লাগবে।

শুভ রাত্রি; প্রিয় গুরু, প্রিয় ভাই।

২| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আজকেরটা কি বেশী বড় হল? না বিষয় নতুন দেখে এমন মনে হল ;)

গল্পে +++

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫১

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



প্রিয় কবিকে কমেন্টে পেয়ে খুব ভাল লাগছে; গল্পটি কিছুটা বড়, তবে আমি নিশ্চিত একটু সময় নিয়ে পড়লে আপনার ভাল লাগবে। অনেকের মতে এটি পৃথিবীর অন্যতম সেরা টুইস্টেড গল্প। পড়ে আপনার ভাল লাগলে খুব খুশি হবো।

শুভ রাত্রি ।

৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৯

অচেনা হৃদি বলেছেন: ইংরেজি সাহিত্য আমার প্রিয় জিনিস, কিন্তু এধরনের ইঙ্গিতময় গল্প আমার একদম ভালো লাগে না। এমন গল্প এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করি। :(

গল্পটার সাথে দি হাঙ্গার গেমস মুভির মূল থিমের মিল আছে।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০৫

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



কমেন্টের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। ইংরেজি সাহিত্য আপনার ভাল লাগে জেনে খুশি হলাম। জ্ঞান আহরণের জন্য সাহিত্য পাঠের কোন বিকল্প নেই; এটি যে কোন ভাষার মান সম্পন্ন সাহিত্য হতে পারে। আজকের অনুবাদ গল্পটিকে আমেরিকান ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত ছোট গল্প হিসেবে মনে করা হয়। আর এই শ্রেষ্ঠত্ত্ব এমনিতে আসেনি; লেখিকা গল্পের প্লট নির্বাচনে এবং টুইস্টের মুন্সিয়ানায় নিজের দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছেন। গল্পটিতে অনেক হিডেন ম্যাসেজ আছে। তবে গল্পটি মোটেও ইঙ্গিতময় নয়; আপনি শেষ পর্যন্ত পড়লে সহজে বুঝতে পারার কথা। তবে সব গল্প সবার ভাল লাগবে না এটাই স্বাভাবিক।

আমি মুভি দেখি না এজন্য "দি হাঙ্গার গেমস" মুভিটা সম্বন্ধে কিছু বলতে পারবো না।

শুভ রাত্রি ।

৪| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০৪

ঢাকার লোক বলেছেন: পড়লাম সবটা, অনুবাদ সুন্দর এবং সাবলীল ! দু একটা টাইপো (হাঁসি) সুযোগ মতো ঠিক করে নিবেন, সাধারণত লটারিতে জিতা সৌভাগ্য বয়ে আনে, এখানে তার বিপরীত! আজকাল সম্ভবত এসব লটারি দুনিয়া থেকে বিদায় হয়ে গেছে ! ধন্যবাদ গল্পটি অনুবাদ করে আমাদের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য !!

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:১৫

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



গল্পটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাই; টাইপো দেখিয়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে৷আপনি বাস্তবিকই বলেছেন, "সাধারণত লটারিতে জিতা সৌভাগ্য বয়ে আনে, এখানে তার বিপরীত" একদম ঠিক বলেছেন; তবে তখনকার দিনে মানুষ এটাকেও তাদের সৌভাগ্যের শুরু বলে মনে করতো৷লটারির মাধ্যমে একজনকে নির্বাচিত করে তাকে পাথর নিক্ষেপ করে মেরে মাধ্যমে নিজেদের বিগত বছরের পাপ মোচন করতো; এটা তাদের বিশ্বাস ছিল ৷

শুভ রাত্রি ৷

৫| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১০

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: " এ হতে পারেবা, এসব অবিচার।" প্রাণপনে চিৎকার করে বললেন মিসেস হ্যাচিসন। তার কান্নামিশ্রিত আর্তনাদে কেউ গুরুত্ব দিলনা। একসাথে ঝাপিয়ে পড়লো গ্রামবাসী, বৃষ্টির ফোঁটার মত একের পর এক পাথর ছুটে গেল লটারি বিজয়ীর পানে।

" হাজার বছর ধরে চলে আসা প্রথা না মেনে যে উপায় নেই! "


গুরুদেবকে অন্তরের কুর্নিস এমন একটি অসাধারণ কৃত্তি তুলে ধরার জন্য। +++++


বিমুগ্ধ ভালোবাসা ও শুভকামনা রইল।


১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২১

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



গুরু...........
একজন লটারি বিজয়িনীর করুণ আর্তনাদ; চোখে জ্বল এসে যায় পড়তে পড়তে৷কিন্তু কি আর করার আছে, হাজার বছর থেকে চলে আসা ঐতিহ্য বলে কথা!! কারো পৌষ মাস আর কারো সর্বনাশ!!!

৬| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১৬

সনেট কবি বলেছেন: দেখলাম।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২২

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ, প্রিয় কবি; আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো ৷

৭| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:১৮

অচেনা হৃদি বলেছেন: গল্পটিতে অনেক হিডেন ম্যাসেজ আছে। তবে গল্পটি মোটেও ইঙ্গিতময় নয়; আপনি শেষ পর্যন্ত পড়লে সহজে বুঝতে পারার কথা। দুঃখিত, গল্পটি আমি সবটুকু পড়েছি। মন্তব্যে আমি ইঙ্গিতময় শব্দটা বলে আসলে হিডেন মেসেজ কথাটিকেই বুঝাতে চেয়েছি। গল্পে বেশি হিডেন মেসেজ থাকলে তা আমার ভালো লাগে না, কারণ- সব গল্প সবার ভাল লাগবে না এটাই স্বাভাবিক।

অনেক সময় অনুবাদ গল্পে মূল গল্পের রসটুকু হারিয়ে যায়। হয়তো মূল গল্পটি পড়লে আমার কাছে ভালো লাগতেও পারে। :)

কষ্ট করে একটি সেরা গল্প অনুবাদ করে আমাদের উপহার দেয়ায় আপনাকে ধন্যবাদ! :)

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩৪

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



আবারও কমেন্ট করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে; আসলে এটি চমৎকার হৃদয় জাগানিয়ে, অনুভূতি নির্ভর একটি গল্প; আপনি পুরো গল্পটি মনযোগ দিয়ে পড়েছেন জেনে খুশি হলাম৷আসলে অনুবাদ করা খুব কঠিন; ইংরেজি সাহিত্যে ভাল দখল না থাকলে অনুবাদ করা সম্ভব নয়; অনুবাদ করতে কি পরিমান এনার্জি আর সময় নষ্ট হয় তা যারা অনুবাদ করেন তারা বলতে পারবেন৷একটি বিদেশি সাহিত্যকে নিজের ভাষায় অনুবাদ করতে অনেক বিচক্ষণ হতে হয়; গল্পের মৌলিকতা যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হয়৷আপনি তো ইংরেজি সাহিত্য নিয়মিত চর্চা করেন, সময় সুযোগে এ গল্পের মূল অর্থাৎ ইংরেজি ভার্সনটি পড়ে ফেলতে পারেন৷যাদের ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা কম তাদের জন্য মূলত অনুবাদ করা হয় ৷

আমি চেষ্টা করি সেরা গল্পগুলোর অনুবাদ করতে; গল্পটি আমার মনের মতো না হলে অনুবাদ করি না৷আশা করি, পরের গল্পটি আপনার ভাল লাগবে ৷

৮| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:০১

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: প্রিয় গুরুদেব,

প্রথমে বাচ্চাদের পাথর নিয়ে খেলতে দেখে অবাক হয়েছিলাম। পরে পেলাম কেন লটারি স্থানের কাছে এভাবে পাথর জমা করে রাখা হয়। বাচ্চাকাচ্চা তাদের মত ঐ বিশেষ দিনে খেলছে, যেমন মহিলারা নিজেদের মধ্যে গল্পে মসগুল । বয়স্করা আবার তাঁদের সাংসারিক গল্পগুজব নিয়ে মত্ত । গোটা জনবসতি যে ভাবে লটারি উপলক্ষ্যে উৎসবে মেতে উঠেছে সেটা দেখে প্রথমে বোঝার উপায় ছিলনা যে গল্পের পরিনতী এত ভয়াবহ।

গল্পকার এখানে পরিচালকের সাদাসিধে চরিত্রের মধ্যে একটি সর্বজন গ্রাহ্যতা তুলে ধরেছেন। য়েমন তুলে ধরেছেন পুরানো কালো বাক্সের বয়ে আনা একটি প্রাচীন সংস্কারের কথা। বাইরের দিকটি তাই বিবর্ণ হলেও গ্রামবাসী সে বাক্স বদলাতে রাজি নন। যার মধ্যে
হাজার বছরের সংস্কার জড়িত। পাশাপাশি উঠে এসেছে গ্রামবাসীদের অসম্ভব ঐক্যবোধ।

গল্পের প্লটটা নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী । লটারি বলতে আমরা বুঝি ভাগ্যের উন্নয়ন। তবে এখানেও একটি উন্নয়ন আছে। সমাজের চোখে যিনি কালো দাগ প্রাপ্ত হচ্ছেন তাকে পাথর নিক্ষেপ করে নিকাশ করার মাধ্যমে জনজাতির উন্নয়নকে সম্ভবত লেখক মিন করেছেন। কারন অসম্ভব পবিত্র অনুষ্ঠান যেভাবে আচার আচরণ পালনের মাধ্যমে পালন করা হয়, সেখানে সমাজের কু বা অশুভ শক্তিকে চিহ্নিত করতে এহেন লটারির আয়োজন। যে অনুষ্ঠানের মধ্য ওদের হাজার বছরের আবেগ জড়িত সেখানে অশুভ শক্তিকে নিকাশ করতে অবালবৃদ্ধ সকলেই পাথর নিক্ষেপ করে পবিত্রতা মনে করে।



১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:২৮

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



গুরু আপনি যে মনযোগ দিয়ে গল্পটি পড়েছেন তা কমেন্ট পড়ে বুঝতে পেরেছি৷এতো লম্বা একটি গল্প সময় নিয়ে পড়ার জন্য গুরুকে কুর্নিশ৷আপনি বলেছেন, "প্রথমে বাচ্চাদের পাথর নিয়ে খেলতে দেখে অবাক হয়েছিলাম। পরে পেলাম কেন লটারি স্থানের কাছে এভাবে পাথর জমা করে রাখা হয়। বাচ্চাকাচ্চা তাদের মত ঐ বিশেষ দিনে খেলছে, যেমন মহিলারা নিজেদের মধ্যে গল্পে মসগুল । বয়স্করা আবার তাঁদের সাংসারিক গল্পগুজব নিয়ে মত্ত । গোটা জনবসতি যে ভাবে লটারি উপলক্ষ্যে উৎসবে মেতে উঠেছে সেটা দেখে প্রথমে বোঝার উপায় ছিলনা যে গল্পের পরিনতী এত ভয়াবহ।"

প্রথমে বাচ্চাদের পাথর সংগ্রহ করে মাঠের এক পাশে জমিয়ে রাখাকে সবাই বাচ্চাদের খেলার একটি অংশ ভাববেন; কিন্তু গল্পের শেষ অংশে এর কারণ সহজে অনুধাবন করা যায়৷এটা আসলেই একটি করুন চিত্র৷আর মহিলা ও বয়স্কদের মধ্যে হাসি কৌতুক দেখলে কে ভাববে এর শেষ পরিণতি!! আমার মনে হয় লেখিকা এখানে সমাজের মানুজন অন্যের দুর্দশা দেখলে ভেতরে ভেতরে যে পুলকিত হয়; এ বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন ৷

"গল্পকার এখানে পরিচালকের সাদাসিধে চরিত্রের মধ্যে একটি সর্বজন গ্রাহ্যতা তুলে ধরেছেন। য়েমন তুলে ধরেছেন পুরানো কালো বাক্সের বয়ে আনা একটি প্রাচীন সংস্কারের কথা। বাইরের দিকটি তাই বিবর্ণ হলেও গ্রামবাসী সে বাক্স বদলাতে রাজি নন। যার মধ্যে
হাজার বছরের সংস্কার জড়িত। পাশাপাশি উঠে এসেছে গ্রামবাসীদের অসম্ভব ঐক্যবোধ।"

গ্রামবাসীদের বিশ্বাস ছিল অতীত এ ঐতিহ্য তাদের জন্য আশীর্বাদ স্বরুপ; প্রতি বছর তারা যে অনাচার করে, তার প্রায়শ্চিত্ত হয় এই বলিদানের মাধ্যমে৷লটারির কালো ফোটা সমাজের অকল্যাণের প্রতীক; এজন্য প্রতি বছর একটি তাজা প্রাণের বিনিময়ে তারা আত্মাকে পরিশুদ্ধ করতো ৷

"গল্পের প্লটটা নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী । লটারি বলতে আমরা বুঝি ভাগ্যের উন্নয়ন। তবে এখানেও একটি উন্নয়ন আছে। সমাজের চোখে যিনি কালো দাগ প্রাপ্ত হচ্ছেন তাকে পাথর নিক্ষেপ করে নিকাশ করার মাধ্যমে জনজাতির উন্নয়নকে সম্ভবত লেখক মিন করেছেন।"

আসলেই গল্পের প্লট খুবই ব্যতিক্রমী; আর শেষ টুইস্ট তো কতটুকু ব্যতিক্রম তা পাঠকরা সহজে অনুমান করতে পারবেন৷আসলে অতীতে মানুষের অনেক আজগুবি বিশ্বাস ছিল; এসব বিশ্বাসের পক্ষে জোরালো কোন যুক্তি না থাকলেও মানুষ তা মেনে নিত; এগুলো স্রেফ বর্বরতা৷সময়ের পরিক্রমায় এগুলো এখন বিলুপ্ত হয়েছে৷আমাদের ভারত উপমহাদেশের "সতীদাহপ্রথা" এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায় ৷

আবারও কৃতজ্ঞতা রইলো গুরু ৷

৯| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩২

চাঁদগাজী বলেছেন:


অনুবাদের জন্য ভুল গল্প নির্বাচন

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩৮

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



চমৎকার কমেন্ট; বিষয়টি নিয়ে আমিও ভেবেছি৷তবে শেষ পরিণতি আশানুরূপ না হলেও অনেক সুন্দর একটি গল্প; এখানে মানুষের চরিত্রের অনেক পরিচিত দিক লেখিকা যত্ন করে তুলে এনেছেন৷আর শেষ টুইস্টটি তো গল্পটিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে ৷

শুভ রাত্রি ৷

১০| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:০৪

রাকু হাসান বলেছেন: গল্পের শেষ অংশ আমাকে ব্যয়িত করলো । খারাপ লাগছে আমার,দৃশ্যটা মনে থাকবে । প্রথম দিকে চরিত্রগুলো কেমন জানি লাগছিলো ,পরে গল্পের চরিত্র বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছে ।লেখিকা উপন্যাস কিন্তু ভাল লিখেন :) । উনার গল্প পড়া ছিল না ।
আপনার গল্প পড়ে আরও রিভিউ জানার জন্য গল্পের ব্যাপারে গুগল করলাম । সেখানে কেউ কেউ এ ছোট গল্পটি কে মাস্টারপিস বলছে । ব্যাপক পঠিত একটি গল্প । খুব সম্ভত পশ্চাত্যে গল্পটি স্কুল পর্যায়ে পাঠ্য হবে ।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:৫২

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



প্রিয় রাকু হাসাম ভাই, শুভেচ্ছা রইলো; গল্পের শেষ অংশটি আপনার মতো আমাকেও দারুণভাবে ব্যথিত করেছে৷আসলে অতীতে মানুষের অনেক আজগুবি বিশ্বাস ছিল; এসব বিশ্বাসের পক্ষে জোরালো কোন যুক্তি না থাকলেও মানুষ তা মেনে নিত; এগুলো স্রেফ বর্বরতা৷সময়ের পরিক্রমায় এগুলো এখন বিলুপ্ত হয়েছে৷আমাদের ভারত উপমহাদেশের "সতীদাহপ্রথা" এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায়৷তবে এ গল্পের সাথে ইতিহাসের কোন সম্পর্ক আছে কিনা জানা নেই ৷

ব্যাপক সমালোচনার মুখে ১৯৪৮ সালের ২২শে জুলাই "San Francisco Chronicle" -এ লেখিকা গল্পের পটভূমি নিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখা করেন ৷তিনি লেখেন, "Explaining just what I had hoped the story to say is very difficult. I suppose, I hoped, by setting a particularly brutal ancient rite in the present and in my own village to shock the story's readers with a graphic dramatization of the pointless violence and general inhumanity in their own lives."

এত এত সমালোচনার পরও এ গল্পটিকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা গল্প হিসেবে সমালোচকরা স্বীকৃতি দিয়েছেন; গল্পের শেষ টুইস্টটা হৃদয়বিদারক হলেও প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মানব চরিত্রের বিভিন্ন দিক উঠে এসেছে ৷

১১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৩১

রাকু হাসান বলেছেন: সে সময়ের খুব বেশি দেরি নেই যখন অনুবাদক হিসাবে আপনার নাম দেখতে পাব বইয়ে :-B ।আশাবাদী । শুভরাত্রি ভাইয়া ।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:০০

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



ভাইজান, আসলে আমি গল্প পড়তে পছন্দ করি; দেশি, বিদেশী যে কোন ভাল গল্প আমাকে আনন্দ দেয়; বিশেষ করে টুইস্ট নির্ভর গল্প আমার খুব প্রিয়৷এজন্য গল্প পড়তে গিয়ে যেটি আমার মনে দাগ কাটে, ভাল লাগে সেটি অনুবাদ করতে ব্যর্থ চেষ্টা করি; একজন অনুবাদকের যোগ্যতা আমার নেই; কিন্তু আছে সীমাহীন উদ্যম, ভাল করার মানসিকতা, ধৈর্য্য আর পরিশ্রম করার আগ্রহ৷আমি ভাল লেখার একনিষ্ঠ একজন পাঠক মাত্র ৷

১২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:১৪

এস এম মামুন অর রশীদ বলেছেন: আপনার অনুবাদের উৎকর্ষের ধারাবাহিকতা বজায় আছে এ গল্পেও, অভিনন্দন। পোস্টের পর মাঝে মাঝে পড়ে বানান ভুলগুলো সম্পাদন করে নিতে পারেন।

ছোট গল্প দিয়ে মানুষকে ভাবানো সহজ নয়। লেখিকা মানুষকে ভাবাতে পেরেছেন ব্যাপকভাবে। বেশ সার্থক একটি গল্প।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:২১

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইলো @ এস এম মামুন অর রশীদ ভাই৷আপনি আমার চেয়ে অনেক ভাল অনুবাদ করেন; অনুবাদে আমার হাতেখড়ি মাত্র৷এটি খুবই শ্রমসাধ্য একটি কাজ; লাগে অনেক প্রাণশক্তি আর সীমাহীন ধৈর্য্য৷আমি চেষ্টা করছি নিজের সামান্য ক্ষমতা দিয়ে বড় এ কাজটি করার; আমি জানি এজন্য যেতে হবে বহুদূর৷দরকার অধ্যবসায় আর পর্যাপ্ত সময়৷আমার জন্য আশীর্বাদ করবেন ৷

১৩| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৪:৪৫

মো: হাসানূর রহমান রিজভী বলেছেন: ভালো অনুবাদ করেছেন।ধন্যবাদ।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:২৮

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা রইলো, প্রিয় @ মো: হাসানূর রহমান রিজভী ভাই৷গল্পটি মূলতঃ একটি আত্মঘাতী কুসংস্কারকে ভিত্তি করে রচিত; গল্পের প্লট আর টুইস্টে লেখক গল্পটাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছেন৷এটি বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম ছোট গল্প ৷

১৪| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২৫

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন: আপনার মাধ্য‌মে বিশ্ব সা‌হি‌ত্যের সেরা লেখাগু‌লো পড়ার সু‌যোগ পা‌চ্ছি। এটা আমার জন্য বড় প্রা‌প্তি।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৫৮

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



গল্পটি পড়েছেন জেনে খুব খুশি হলাম প্রিয় সাজ্জাদ ভাই; আমি গল্প পড়তে পছন্দ করি৷এজন্য সময় সুযোগে দেশি-বিদেশি সেরা গল্পগুলো পড়ি৷আর বিদেশি যে গলপগুলো আমার বেশি ভাল লাগে সেগুলো অনুবাদ করার চেষ্টা করি৷আপনার প্রবাস জীবনটা আরো সফল আর নিরাপদ হোক এই আশীর্বাদ রইলো ৷

১৫| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার অনুবাদ করা গল্প এবং মন্তব্য গুলো খুব মন দিয়ে পড়লাম।
ভালো পোষ্ট বড় হলেও পড়তে বিরক্ত লাগে না। আর বিদেসী গল্প আমার খুব পছন্দের। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র থেকে বিদেশী গল্পের অনুবাদ বই গুলো আমি সংগ্রহ করি। পড়ি।
এই রকম অনুবাদ আরও চাই বড় ভাই।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২১

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



প্রিয় রাজিব ভাই, অনুবাদ গল্পটি পড়েছেন জেনে খুশি হলাম; মন্তব্যগুলো মনযোগ দিয়ে পড়েছেন জেনে ভাল লাগলো৷আপনি চমৎকার একটি কথা বলেছেন, "ভালো পোষ্ট বড় হলেও পড়তে বিরক্ত লাগে না। আর বিদেসী গল্প আমার খুব পছন্দের। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র থেকে বিদেশী গল্পের অনুবাদ বই গুলো আমি সংগ্রহ করি। পড়ি।"

আসলে সাহিত্যের কোন গন্ডি নেই; কিন্তু ভাষাগত সীমাবদ্ধতার জন্য আমরা অনেক সময় বিদেশী ভাল মানের সাহিত্য চর্চা থেকে বঞ্চিত হই; এজন্য কেউ এসব সাহিত্য অনুবাদ করে দিলে আমাদের সুবিধা হয়; এতে বিশ্ব সাহিত্য পড়তে ও বুঝতে পারি এবং বিখ্যাত লেখকদের সাথে পরিচিত হতে পারি ৷

আমার এ চেষ্টা সামনের দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে; আশীর্বাদ করবেন রাজীব ভাই৷

১৬| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:১৯

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: অনেক বড় পোষ্ট, দেখি পরে সময় পেলে পড়বো।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২৫

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



প্রিয় তারেক ভাই, অনুবাদ গল্পটি আকারে কিছুটা বড় হলেও সময় নিয়ে পড়লে আপনার ভাল লাগবে নিশ্চিত; আশা করি, সময় নষ্ট হবে না৷ আসলে এ গল্পের প্লট খুবই ব্যতিক্রমী; আর শেষ টুইস্ট তো কতটুকু ব্যতিক্রম তা পাঠকরা সহজে অনুমান করতে পারবেন৷অতীতে মানুষের অনেক আজগুবি বিশ্বাস ছিল; এসব বিশ্বাসের পক্ষে জোরালো কোন যুক্তি না থাকলেও মানুষ তা মেনে নিত; এগুলো স্রেফ বর্বরতা৷সময়ের পরিক্রমায় এগুলো এখন বিলুপ্ত হয়েছে৷আমাদের ভারত উপমহাদেশের "সতীদাহপ্রথা" এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায় ৷

১৭| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৮

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: সেই সব হাজার হাজার পাঠকের মত আমারও জানতে ইচ্ছে হচ্ছে শেষ পরিনতি কি হয়েছিল ?

গল্পে মুগ্ধতা।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:১৬

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



প্রিয় মাইদুল ভাই; শুভেচ্ছা রইলো৷গল্পটি পড়ে মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে৷আপনি নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন, গল্পের শুরুতে খুব উৎসব মূখর পরিবেশ ছিল৷কারণ, আপাত দৃষ্টিতে লটারির আয়োজনে মানুষ খুশি হয়, পুরস্কারের আশায় জড়ো হয়৷কিন্তু পাঠকের ভাবনা থেকে লেখক হাজার মাইল দূরে ছিলেন, এজন্য শেষ অংশটি এতো নাটকীয় আর অবিশ্বাস্য মনে হলো৷লেখক শেষ পর্যন্ত পাঠকের মন ধরে রেখেছিলেন আর গল্পটি পড়া শেষ হওয়ার পর পাঠককে আবার নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছেন ৷

তবে, গল্পের শুরুতে এ বিষয়ে কিছুটা ইঙ্গিত ছিল; যা পাঠক গল্পটি পড়ার পরে অনুধাবন করতে পারবেন৷প্রথমত, বাচ্চাদের কথাবার্তা ও আচরণে স্বতস্ফুরর্ত ভাব ছিল না, তারা অনেকটা নীরবে পাথর সংগ্রহ করেছে; তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল স্কুল ভিত্তিক, লটারি নিয়ে নয়৷এছাড়া গ্রামের পুরুষদের আলোচ্য সূচীতে ছিল মাঠের ফসল আর চাষবাস৷যেটুকু সামান্য উচ্ছাস ছিল তা মহিলাদের মধ্যে৷তবে, মহিলাদের মধ্যে এই উচ্ছাসের একটি কারণও আছে!!

প্রাচীন কালে মানুষের অনেক আজগুবি বিশ্বাস ছিল; এসব বিশ্বাসের পক্ষে জোরালো কোন যুক্তি না থাকলেও মানুষ তা মেনে নিত; এগুলো স্রেফ বর্বরতা৷সময়ের পরিক্রমায় এগুলো এখন বিলুপ্ত হয়েছে৷আমাদের ভারত উপমহাদেশের "সতীদাহপ্রথা" এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায়৷পাথর নিক্ষেপে "মিসেস হ্যাচিসনের" মর্মান্তিক মৃত্যুও তারই একটি চিত্রনাট্য৷মূলত এগুলো ছিল অশিক্ষা, কুশিক্ষা আর মিথ্যা বিশ্বাসের ফল ৷

১৮| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০১

সামিয়া বলেছেন: হরর এবং সাইন্স ফিকশন আমার ভীষণ ভীষণ প্রিয়, লেখাটি প্রিয়তে নিলাম সময় করে অবশ্যই পড়ে মতামত জানাবো শুভকামনা।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১৪

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



শুভেচ্ছা রইলো; "The Queen Of Horror" খ্যাত সাহিত্যিক "Shirley Jackson" এর বিখ্যাত এ গল্পের অনুবাদটি ভাল লেগেছে তাই প্রিয়তে নিয়েছেন; এজন্য ধন্যবাদ আপনাকে৷আমিও হরর গল্প পড়তে পছন্দ করি; এজন্য "এডগার এলান পো" এবং "সিরলি জ্যাকসন" আমার অন্যতম প্রিয় লেখক৷"দি লটারি" গল্পটি সত্যি সত্যি লেখিকার অনবদ্য একটি সৃষ্টি; গল্পটি পড়ার পর আসল রহস্যটা ধরা পড়ে৷আপনি তো খুব ভাল গল্প লেখেন; আপনার প্রতিটি গল্প পড়তে চেষ্টা করি৷শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য৷আর +++ জন্য কৃতজ্ঞতা ৷

১৯| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১৪

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: অনুবাদের শব্দ গঠনশৈলী অনেক মজবুত হয়েছে। গল্পের ভিতর ডুবে গেছিলাম।।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:২৩

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রিয় @ শাহাদাৎ হোসাইন ভাই; আমি ব্লগের নতুন একজন সদস্য মাত্র৷আপনাদের মতো গুনীজনের লেখা পড়ে প্রতিনিয়ত শেখার চেষ্টা করি৷এগুলো আমার লেখার ও ভাবনার খোরাক যোগায়৷অনুবাদে আমার হাতেখড়ি মাত্র৷এটি খুবই শ্রমসাধ্য একটি কাজ; লাগে অনেক প্রাণশক্তি আর সীমাহীন ধৈর্য্য৷আমি চেষ্টা করছি নিজের সামান্য ক্ষমতা দিয়ে বড় এ কাজটি করার; আমি জানি এজন্য যেতে হবে বহুদূর৷দরকার অধ্যবসায় আর পর্যাপ্ত সময়৷আমার জন্য আশীর্বাদ করবেন৷

গলপটি আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুব ভাল লাগলো; আপনার জন্য অনেক শুভ কামনা রইলো ৷

২০| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:২৫

তারেক ফাহিম বলেছেন: কিছুটা দেখলাম কিছুটা পড়লাম।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৩৪

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



ধন্যবাদ @ তারেক ফাহিম ভাই; আসলেই লেখাটি একটু লম্বা৷কি আর করা:(লেখিকা বেচারি একটু বেরসিক :-B৷তবে একটু জিরিয়ে সময় নিয়ে পুরোটা পড়লে সময় নষ্টের জন্য পস্তাতে হবে না; এটা জোর দিয়ে বলতে পারি B-)৷দারুন টুইস্টেড একটা গল্প৷এটাকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা গল্প হিসেবে বিবেচনা করা হয় ৷

২১| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২০

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: সংরক্ষণে রাখলাম। সময় করে পড়বো।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৫৯

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



ধন্যবাদ প্রিয় @ জুনায়েদ ভাই; লেখাটি প্রিয়তে রেখেছেন জেনে খুশি হলাম৷আশা করি গল্পটি পড়ে আপনার ভাল লাগবে; এ গল্পটিকে পৃথিবীর সেরা টুইস্টেড গল্প হিসেবে মনে করা হয়৷আপনার যদি গল্পটি ভাল লাগে তবে কষ্ট করে আমার অনুবাদ করা স্বার্থক হবে ৷

২২| ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৪৩

মোঃ হোসাইন খাঁন বলেছেন: খুব ভাল লেগেছে। আমার এটি ব্লগ জিবনের প্রথম কমেন্ট। একটু আগে একাউন্ট খুললাম। আমাকে নতুন হিসাবে কয়েকটি উপদেশ ‍দিবেন আশা করি।

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১৬

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



শুভ ব্লগিং @ হোসাইন খাঁন ভাই; আপনার প্রথম কমেন্ট আমার ব্লগে করেছেন জেনে খুব ভাল লাগলো৷আশা করি, সামুতে আপনার পথচলা দীর্ঘ হবে৷আপনার কাছ থেকে আমরা অনেক মানসম্পন্ন লেখা পাব৷আমি সাধরণ একজন ব্লগার৷আপনাকে উপদেশ দেওয়ার মতো যোগ্যতা আমার নেই৷তবুও আপনার শুভাকাঙ্ক্ষি হিসেবে কিছু পরামর্শ দিতে পারি ৷

আপনার হয়তো জানা আছে আপনার লেখা "সেফ" হওয়ার আগে প্রথম পাতায় যাবে না; সেফ মানে ব্লগের মডারেটররা যদি মনে করেন আপনার লেখা মানসম্পন্ন এবং আপনি সুস্থ মানসিকতা নিয়ে ব্লগিং করতে চান তাহলে আপনাকে সহজে সেফ স্টেটাস দেবেন৷সেফ হলে আপনার লেখা অটোমেটিকালি প্রথম পাতায় যাবে ৷

এজন্য ব্লগেও লেখাগুলো যাতে নির্ভুল হয় এবং মানসম্পন্ন হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে৷৷৷ ব্লগে প্রতিদিন সময় দিতে হবে; ব্লগারদের লেখায় বিষয়ভিত্তিক সুন্দর কমেন্ট করতে হবে, এতে ব্লগে আপনার পরিচিতি বাড়বে৷অন্য ব্লগাররা আপনার ব্লগে এসে কমেন্ট করবে, উৎসাহ দেবে৷যারা আপনার ব্লগে কমেন্ট করবেন তাদের প্রতিউত্তর দিতে হবে৷আর নিজের লেখার মান আর ব্যবহার দিয়ে সবার মন জয় করতে হবে ৷

এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে এই লেখাটি আপনি পড়তে পারেন৷আশা করি অনেক বিষয় জানতে পারবেন৷(ধন্যবাদ)

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৬

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



এখন আপনার ব্লগে ভিজিট করে দেখলাম কোন পোস্ট নেই; ব্লগে সেফ হওয়ার প্রথম শর্ত হলো লেখা পোস্ট করা; কারণ, আপনার লেখার কোয়ালিটি, কমেন্ট আর ব্লগ ভিজিটের উপর নির্ভর করবে আপনার সেফ স্টেটাস৷(ধন্যবাদ)

২৩| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:২৫

সূর্যালোক । বলেছেন: আমিও একজন নতুন । ভাই আমাকে সুন্দর পরামর্শ দিয়েছেন্, সালাম জানাই ।

গল্পটি বাংলায় অনুবাদ করেছেন । খুব ভাল কাজ ।আমি গল্পটি এখন পড়লাম না । মনে কিছু নিবেন না ,একটু তাড়া আছে । কাল মন্তব্য করবো পড়ে ।

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৩৪

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



আমার ব্লগে স্বাগতম আপনাকে; এই মাত্র আপনার পোস্টে করা আমার মন্তব্যের প্রতি মন্তব্য পড়ে আসলাম৷আপনি হয়তো বেশি ব্যস্থ থাকেন, তবুও আশা করি দিনের যে কোন একটা সময়ে ব্লগে আসবেন৷এতে শত শত লেখক/ব্লগারের সাথে পরিচিত হবেন; দেখবেন খুব ভাল লাগবে৷আর ব্লগের লেখাগুলো পড়তে পড়তে একদিন নিজেও লেখতে পারবেন; ব্লগ হলো একজন লেখক গড়ে উঠার সবচেয়ে শক্তিশালী প্লাটফর্ম; আপনার প্রতি আমার সহযোগিতার হাত সব সময় থাকবে৷

শুভ ব্লগিং; শুভ রাত্রি ৷

২৪| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:২৩

সূর্যালোক । বলেছেন:

সুধী,
গল্পটি পড়লাম সাথে কিছু মন্তব্যও পড়েছি ।
জানি না গল্পটি কি লেখিকার প্রথম জীবনের দিকে গল্পই কিনা
। প্রথম দিকে চরিত্র গুলো আরেকটু আকর্ষণীয় হলে খারাপ হত না ।
সবার মত আমারো মতামত এই গল্পের শেষ টুইস্টটিই করুণ ।
১৫ ও ১৯ নাম্বার কমেন্টে লাইক দিলাম ।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:২৫

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা @ সূর্যালোক ভাই; দারুন সুন্দর একটি মন্তব্য করার জন্য খুশি হলাম৷আপনার মতো গল্পটি পড়তে পড়তে আমারও মনে হয়েছে প্রথম দিকে আরেকটু যত্ন করে লেখলে হয়তো ভাল হতো৷যাক এটা লেখিকার ভাবনায় হয়তো ছিল না৷একটা বিষয় খেয়াল করেছেন? গল্পের শুরুতে শেষ পরিণতির কিছুটা ইঙ্গিত ছিল; যা পাঠক গল্পটি পড়ার পরে অনুধাবন করতে পারবেন৷প্রথমত, বাচ্চাদের কথাবার্তা ও আচরণে স্বতস্ফুরর্ত ভাব ছিল না, তারা অনেকটা নীরবে পাথর সংগ্রহ করেছে; তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল স্কুল ভিত্তিক, লটারি নিয়ে নয়৷এছাড়া গ্রামের পুরুষদের আলোচ্য সূচীতে ছিল মাঠের ফসল আর চাষবাস৷যেটুকু সামান্য উচ্ছাস ছিল তা মহিলাদের মধ্যে৷তবে, মহিলাদের মধ্যে এই উচ্ছাসের একটি কারণও আছে!!

আর লটারি করার প্রক্রিয়াটি এতো দীর্ঘ হওয়ার পেছনে মূল করাণটি হলো শেষের টুইস্টকে বেশি করে হাইলাইট করা; এটা অনেকটা এ রকম, বিশাল আয়োজন করে বিয়ে করতে গিয়ে বউ ছাড়া বাড়ি আসার মতো!! সময় সুযোগে লেখিকার অন্য গল্পগুলো পড়বেন৷ভাল লাগবে আশা করি ৷

শুভ রাত্রি ৷

২৫| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৪

লায়নহার্ট বলেছেন: {অসাধারণ একটা গল্প, পুরোটা পড়লাম। বেশি বড় হয়নি, ঠিক আছে। শেষে অদ্ভূত একটা অনুভূতি হলো....তবে আমার একটা অভিযোগ আছে, আপনি শেষে যেই ছবিটি ব্যবহার করেছেন, সেটা কেউ স্ক্রল করতে গিয়ে আগে দেখে ফেললে, টুইস্টটা আগেই ধরে ফেলবে (তবে আমি ভেবেছিলাম, হয়তো লটারি জেতার জন্য তারা চিট করেছে... হাহাহাহা)। তাছাড়া, হাতের মধ্যে লটারির টিকেট সহ মাটিতে পড়ে আছে, এটাও দেখেও কিন্তু চালাক পাঠক প্লট ধরে ফেলতে পারে, যাহোক, উপভোগ করেছি। মানব মনের মধ্যে চলমান সংঘর্ষ থেকে এই পৃথিবীতে কত অদ্ভুত অপরাধ হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। লেখিকা গল্পটিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিয়েছেন। লেখিকার কল্পনা শক্তির তারিফ করতে হয়, আমার চিন্তা ভাবনার সাথে ওনার মিল আছে। গল্পটি বিশেষ ভাবে মন কেড়েছে কারণ অনুবাদ ভালো হয়েছে, আশা করি সামনে আরো অনুবাদ পাবো}

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩৬

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



ধন্যবাদ প্রিয় @ লায়নহার্ট ভাই; আপনি বলেছেন, "তবে আমার একটা অভিযোগ আছে, আপনি শেষে যেই ছবিটি ব্যবহার করেছেন, সেটা কেউ স্ক্রল করতে গিয়ে আগে দেখে ফেললে, টুইস্টটা আগেই ধরে ফেলবে (তবে আমি ভেবেছিলাম, হয়তো লটারি জেতার জন্য তারা চিট করেছে... হাহাহাহা)। তাছাড়া, হাতের মধ্যে লটারির টিকেট সহ মাটিতে পড়ে আছে, এটাও দেখেও কিন্তু চালাক পাঠক প্লট ধরে ফেলতে পারে, যাহোক, উপভোগ করেছি।"

আপনার অভিযোগটির ভিত্তি আছে; শেষ দু'টি ছবি আসলেই গল্পের শেষ পরিণতির সাক্ষী৷ কিন্তু সাধারণ চোখে এগুলো আলাদাভাবে পাঠকের মনে রেখাপাত করবে না; শেষ ছবিটি দেখে মনে হবে একটি সুন্দরী মেয়ে ডান্স করছে!! পাঠক লেখাটি শেষ করার পর বুঝতে পারবে, এটা ডান্স নয় পাথর নিক্ষেপ!!! আপনি আসলেই খুব ইনটেলিজেন্ট, এজন্য সহজেই এ বিষয়টি ধরতে পেরেছেন৷আর ব্লগে অনেক পাঠক কমেন্টে রিভিউ পড়ে গল্প পড়েন; এজন্য প্রশ্ন ফাঁসের অনেক পথ খোলা আছে!!!

গল্পটি পড়ে আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম; শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য ৷

শুভ রাত্রি ৷

২৬| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: গল্প'টা প্রথম পড়ে স্তব্ধ হয়ে কিছুক্ষণ বসে ছিলাম :(


আপনার এই প্রচেষ্টা ভালোলাগছে !


অনেক অনেক শুভ কামনা :)

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৪০

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



আপা, শুভেচ্ছা রইলো৷গল্পটির অনুবাদ আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম৷আপা, অনুবাদে আমার হাতেখড়ি মাত্র৷এটি খুবই শ্রমসাধ্য একটি কাজ; লাগে অনেক প্রাণশক্তি আর সীমাহীন ধৈর্য্য৷আমি চেষ্টা করছি নিজের সামান্য ক্ষমতা দিয়ে বড় এ কাজটি করার; আমি জানি এজন্য যেতে হবে বহুদূর৷দরকার অধ্যবসায় আর পর্যাপ্ত সময়৷আমার জন্য আশীর্বাদ করবেন ৷

শুভ রাত্রি ৷

২৭| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:০২

কথার ফুলঝুরি! বলেছেন: ভাইয়ার গল্পগুলো বড় হওয়ায় আমি একটু পরে সময় নিয়ে পড়ি । প্রথম দিকে গল্পটি ভালো লাগছিলো, মাঝখানে ভাবছিলাম একই জায়গায়ই তো সবকিছু, আর কি আছে সামনে। ভাইয়া যখন অনুবাদের জন্য গল্পটি নির্বাচন করেছ তখন অবশ্যই বিশেষ কিছু আছে , আর গল্পের শেষে পেয়ে গেলাম সেই বিশেষ কিছুটা ।

হুম, দারুন থিম। যেখানে লটারি জেতা মানে ভাগ্য খুলে যাওয়া এমন কিছু সেখানে এই গল্পের লটারি জেতার বিপরীতে পাথর নিক্ষেপ । শুধু মাত্র এই বিষয়টিই গল্পটিকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছে। এ ছাড়াও পুরো গল্পের দৃশ্যপট ও চরিত্রগুলো ও ভালো লেগেছে।

আপনার ইংরেজি গল্পের অনুবাদ গুলো পড়ে যেমন নতুন নতুন পুরাতন বিখ্যাত গল্প সম্পর্কে জানছি তেমন পারছি লেখকদের সাথেও পরিচিত হতে। এ যে একের ভেতর দুই, বোনাস :#)

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:০৪

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



শুভেচ্ছা রইলো আপু; আপনি যে সময় নিয়ে আমার সাধারন লেখাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে পড়েন তা আমি জানি৷এজন্য আপনার প্রতি আমার এতো রেসপেক্ট৷আসলে প্রথম থেকে শেষ টুইস্টের আগ পর্যন্ত গল্পটি একটি পানসে মনে হয়; মনে হবে লেখিকা অযথা একটা ছোট্ট বিষয় নিয়ে সময় নষ্ট করছেন!! কিন্তু লেখিকা যে বিষয়টি খুব সচেতনভাবে করেছেন তার প্রমাণ পাওয়া যায় গল্পটি শেষ হওয়ার পর৷এটাই একজন বড় মাপের লেককের সার্থকতা৷এজন্য গল্পটি পৃথিবীব্যাপী এতো জনপ্রিয়তা পেয়েছে ৷

শুভ রাত্রি; আপু৷

২৮| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৬

শাহিন বিন রফিক বলেছেন:




আপাতত প্রিয়তে।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:০৮

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



শুভেচ্ছা রইলো @ শাহিন ভাই; "The Queen Of Horror" খ্যাত সাহিত্যিক "Shirley Jackson" এর বিখ্যাত এ গল্পের অনুবাদটি ভাল লেগেছে তাই প্রিয়তে নিয়েছেন; এজন্য ধন্যবাদ আপনাকে৷আমি হরর গল্প পড়তে পছন্দ করি; এজন্য "এডগার এলান পো" এবং "সিরলি জ্যাকসন" আমার অন্যতম প্রিয় লেখক৷"দি লটারি" গল্পটি লেখিকার অনবদ্য একটি সৃষ্টি; গল্পটি পড়ার পর আসল রহস্যটা ধরা পড়ে৷সময় করে গল্পটি পড়লে আপনার ভাল লাগবে৷শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য ৷

শুভ রাত্রি ৷

২৯| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৩১

বলেছেন: সময় দ্রুত শেষ হয়
অবিচার শেষ হয় না
সভ্যতার কালো দিকগুলি
আদিম থেকে অাজ অবধি
আগের থেকে এখন অনেক পরিণত ।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ২:১২

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



বাহ!! রহমান লতিফ ভাই; দারুন প্রকাশ৷ভাল লাগলো৷ আদিম অনেক রীতির পরিবর্তন হলেও মানুষের ভেতরের পশুত্ত্ব কমেনি; এটি ভিন্ন মোড়কে সমাজে বিচরণ করছে ৷

শুভ রাত্রি, ভাই ৷

৩০| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১:৩২

সূচরিতা সেন বলেছেন: তিন ভাগের দুই ভাগ পড়েছি । বাকিটা কালকে পড়তে হবে ।বড় হলেও গল্প পড়তে কোনো ক্লান্ত লাগেনি।শুভরাত্রী শ্রদ্ধেয়।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৪০

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



দিদি মনি, শুভেচ্ছা রইলো; কষ্ট করে তিনভাগের দুইভাগ পড়েছেন জেনে খুশি হলাম; আশা করি শেষ অংশটি পড়বেন৷কারণ, শেষ অংশটিই গল্পের প্রাণ৷এজন্য এটি বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে টুইস্টেড গল্প বলে মনে করা হয়৷আমার ব্লগে আসার জন্য আবারো ধন্যবাদ, দিদি ৷

শুভ রাত্রি ৷

৩১| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৩:৩৩

চঞ্চল হরিণী বলেছেন: কিছুক্ষণ নয় অনেকক্ষণই স্তব্ধ হয়ে বসে ছিলাম গল্পটি পড়ার পর।

শুরুতে বাচ্চাদেরকে পকেটে পাথর ভরতে দেখে ও একজায়গায় স্তুপ করতে দেখে ভেবেছিলাম পাথর নিয়ে নিশ্চয়ই কিছু একটা আছে। কিন্তু নিশ্চিতভাবেই এমন পরিণতির কথা ভাবিনি। আমেরিকান সাহিত্যের চেয়ে ল্যাটিন আমেরিকান সাহিত্য আমি বেশি পড়েছি। সেখানে আবহমানকাল ধরে গ্রাম নগর সব জায়গাতেই বিশেষ করে গ্রামীণ জীবনযাত্রায় লটারির ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। পুরোপুরিই একটা সামাজিক উৎসব হল লটারি এবং সারাবছর ধরে লটারিকে কেন্দ্র করে নানাধরনের কাজ ও কর্মপরিকল্পনা চলতে থাকে। বহু লোকের আয়ের প্রধান উৎসও হয় লটারি সংক্রান্ত আনুষাঙ্গিক নানা কাজ। মোট কথা বিভিন্ন কিছু নিয়ে লটারির একটা বিরাট প্রভাব ছিল ল্যাটিন আমেরিকানদের জীবনে। এখন আছে কিনা বা থাকলেও কতটা তা জানা নেই। কাজেই এই গল্পতেও প্রথমে ভেবেছিলাম লটারিটা একটা উৎসব। কিন্তু পড়ার মাঝখানে সবাই কেন এতো নিশ্চুপ এবং আতঙ্কে লটারি তুলছে সেসব ভাবছিলাম। একবার মনে হল লটারির নার্ভাসনেস থেকে কিন্তু সেখানে আতঙ্ক কেন থাকবে! আবার একটি ছেলেকে সবাই বাহবা দিচ্ছিলো মায়ের হয়ে লটারি তুলতে চাওয়ায় এবং সাহস দিচ্ছিলো ভয় না পাবার, এসবও ভাবছিলাম এভাবে সাহস দিতে হবে কেন ? একজন আবার বললেন, তার কাছে মনে হচ্ছে গত বছরের লটারি যেন মাত্র গত সপ্তাহেই শেষ হয়েছে, তার মানে এই লটারি কাম্য নয়। এসব প্রশ্ন মাথায় নিয়েই এগোচ্ছিলাম। আমরা জানি প্রাচীনকালে ফসলি জমি ট্রাইবের মানুষদের মধ্যে প্রতিবছর ভাগ করে দেয়া হত, একবার ভাবলাম এই লটারির উদ্দেশ্য কি জমি ভাগ করা। কয়লা কোম্পানির মালিক মিস্টার সমার্সের চরিত্রটা ঠিক বোঝা যাচ্ছিলো না। কোম্পানির মালিক বলেই একটি সন্দেহ ছিল তার প্রতি শুরু থেকেই। দৌড়ে আসা মিসেস হ্যাচিনসনের দিকে যেভাবে তিনি তাকিয়েছিলেন তাতে এই সন্দেহ চলে যায় না। উনি নিজেই লটারির কাগজ ও বাক্স রেডি করেন বলে সন্দেহটা ছিল এমন, তিনি কোন এক কৌশলে বা চালাকি করে নিজের টার্গেটেড মানুষের হাতেই সেই কাগজটা লটারির আড়ালে তুলে দেন। যদিও তখনো জানি না এই লটারির আসল উদ্দেশ্য কি বা গল্পের শেষে কি আছে। পরে মিস হ্যাচিনসন যখন প্রথমবার অভিযোগ করতে শুরু করলেন তখন ভাবলাম হয়তো বিষয়টা এমন, লটারিতে যার নাম উঠবে তার পরিবারকেই সেবছর গ্রামের ক্ষেতে সবচেয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। তাই অসুস্থ স্বামী ও পরিবারের অন্য সদস্যরা ছোট বাচ্চা বলে মিসেস হ্যাচিনসন ‘এটা অবিচার’ বলে প্রতিবাদী হয়ে উঠেছেন। কিন্তু কে জানতো শেষটা এমন! মধ্যপ্রাচ্যে অন্যায়ের শাস্তি হিসেবে পাথর নিক্ষেপ করে মারা হাজার হাজার বছর ধরে প্রচলিত, আমেরিকায় এটা ছিল কিনা জানা নেই। আপনি মন্তব্যে লিখেছেন, প্রতিবছর পাথর নিক্ষেপ করে একজনকে মেরে তারা অনাচারের প্রায়শ্চিত্ত করতো, আবার আরেক জায়গায় বলেছেন এই গল্পটার সাথে ইতিহাসের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা জানা নেই। দেখা যাচ্ছে লেখিকাও তাঁর উত্তরে সরাসরি পাথর নিক্ষেপের কোন প্রথার কথা না বলে বরং প্রচলিত অহেতুক ভায়োলেন্সের কথা বলেছেন। এবং তাঁর কাছে আসা চিঠিটাতেও অনেকে গল্পের শেষ পরিণতির বিশদ ব্যাখ্যা চেয়েছেন। এসব পড়ে মনে হচ্ছে আমেরিকায় এমন পাথর নিক্ষেপের সত্যতাটা এই গল্প পড়ে নিশ্চিত হওয়া যায় না, আলাদা স্টাডি দরকার। তবে যাইহোক, যে সময়ে উনি লিখেছেন সেসময়ে যে এই প্রথা ছিল না সেটা প্রায় নিশ্চিত ধারণা করা যায়। বরং এই প্রথা দিয়ে সমাজে প্রচলিত আরও অন্যান্য ভয়ঙ্কর প্রথাগুলোর দিকে লেখক ইঙ্গিত করেছেন সেটা ভাবতেই ভালো লাগছে বেশি। আপনি মন্তব্যের আরেকজায়গায় লিখেছেন, “যেটুকু সামান্য উচ্ছাস ছিল তা মহিলাদের মধ্যে৷তবে, মহিলাদের মধ্যে এই উচ্ছাসের একটি কারণও আছে!!” গ্রামের মহিলাদের সহসা বাড়ির বাইরে আসা হয় না ও পরিচিতদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয় না। এই উপলক্ষ্যে সবার সাথে দেখা হওয়ায় তারা কিছুক্ষণ ঠাট্টায় মশগুল হয়ে, জড়িয়ে ধরে কুশল বিনিময় করে আবার স্বামীর কাছে ফিরে যায়। এই কারণ ছাড়া উচ্ছ্বাসের অন্য কোন কারণ আমার মনে হয়নি। আপনি ভিন্ন কিছু ভাবলে জানাবেন। বাড়ির এঁটো থালা বাসন মাজা এবং স্বামীর অনুপস্থিতিতে লটারি তুলতে সমাজের অন্যদের অনুমতি প্রার্থনা, ছেলে সাবালক হলে তাকে বিকল্প ভাবা এসব নানা ইঙ্গিত দিয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অবহেলিত মেয়েদের সূক্ষ্ম দৃশ্যও এই গল্পে উঠে এসেছে। এমনি নান ইঙ্গিতবাহী এবং একাধিক টুইস্ট নিয়ে এই গল্প। বোঝার বাকি থাকে না কেন এটি সমালোচকদের দৃষ্টিতে একটি শ্রেষ্ঠর মর্যাদা পেয়েছে।

অনেক বড় মন্তব্য লিখে ইতিমধ্যেই ক্লান্ত। কিন্তু না লিখলে এই কথাগুলোয় মাথা ভারী হয়ে থাকতো। তাও বেশ আরও কিছুই বাদ গেছে। যেমন বৃদ্ধ ওয়াটসনের ব্যাপারটা এবং অন্যান্য গ্রামে লটারি বন্ধের বিষয়টা। যাক, এগুলো নিয়ে আর বলছি না। আপনার অনুবাদ অনেক অনেক ভালো হয়েছে। হ্যাঁ, কিছু টাইপো আছে, ঠিক করে নেয়ার অনুরোধ রইলো। অসংখ্য ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা এবং শুভকামনা জানাই আপনাকে :)

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ভোর ৪:৪২

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



আপু, B-)
আপনার দারুণ বিশ্লেষণধর্মী দীর্ঘ এ মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ দিলে আপনাকে অমর্যাদা করা হবে; এজন্য জানাই অসীম কৃতজ্ঞতা ও হ্যাট খোলা কুর্নিশ; আপনি কমেন্টে বেশে কিছু বিষয় তুলে এনেছেন এবং কিছু বিষয়ে আরেকটু ব্যাখ্যা কিংবা মতামত প্রত্যাশা করেছেন; আমি সবগুলো বিষয় নিয়েই আলোকপাত করবো B-);

ল্যাটিন আমেরিকান সাহিত্য নিয়ে আপনার আগ্রহ দেখে বুঝতে বাকি নেই আপনি কতটুকু সাহিত্য প্রেমী; আপনি হয়তো অবগত আছেন দক্ষিণ আমেরিকান স্পেনিশ ভাষার সাহিত্যিকরা হলেন স্পেনিশ ভাষার সেরা লেখক ও সাহিত্যিক; আমরা ব্রিটিশদের কলোনিয়াল হওয়ায় ইংরেজি সাহিত্য সবচেয়ে বেশি পড়ার সুযোগ পেয়েছি; বিশ্বমানের স্পেনিশ সাহিত্য আমাদের তেমন পড়া হয়নি; যেমন- আর্জেন্টিাইন বিখ্যাত সাহিত্যিক 'Jorge Luis Borges' এর নাম আমাদের দেশের অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষও জানেন না!! এছাড়া কলম্বিয়ান 'Gabriel Garcia Marquez'; চিলির 'Pablo Neruda'; আর পেরুর 'Mario Vargas Llosa' কে তো বর্তমান সময়ের সেরা স্পেনিশ সাহিত্যিক ধরা হয়৷

গল্পের শুরুতে বাচ্চাদের পাথর সংগ্রহ করে একটি জায়গায় জমিয়ে রাখা এবং তা পাহারা দিয়ে রাখাকে নিছক ছেলেমানুষি বলে আপনার মতো আমারও মনে হয়েছিল; কিন্তু একটা বিষয় খেয়াল করেছেন? কোন বাবা মা কিন্তু তাদেরকে নিষেধ করে নাই B:-)!! এটা ছিল একটা সুক্ষ ইঙ্গিত৷এছাড়া বাচ্চাদের কথাবার্তা ও আচরণে স্বতস্ফুরর্ত ভাব ছিল না, তারা অনেকটা নীরবে পাথর সংগ্রহ করেছে; তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল স্কুল ভিত্তিক, লটারি নিয়ে নয়৷এছাড়া গ্রামের পুরুষদের আলোচ্য সূচীতে ছিল মাঠের ফসল আর চাষবাস৷আর মহিলাদের ব্যাপারে আপনার বিশ্লেষণের সাথে আমিও একমত; তবে একটি বিষয় এখানে যুক্ত করবো তা হলো, মহিলারা স্বভাবত কিছুটা হয়তোবা অন্য মহিলাদের বিষয়ে জেলাসি বেশি করেন, কিংবা অন্য মহিলার কোন দুর্দশা দেখলে খুশি হন! লেখিকা হয়তো এ বিষয়টি তুলে আনার চেষ্টা করেছেন৷এটা মনে হওয়ার কারণ হলো, মিসেস হ্যাচিসন যেসব মহিলার সাথে সারাক্ষণ কথা বলেছেন, লটারির ফলাফল ঘোষণার পর সেসব মহিলাদেরকে বেশি উচ্চসিত হতে দেখা গেছে, এমনকি পাথর নিক্ষেপের বেলায়ও দেখা গেছে তারা সামনের সারিতে৷তবে এটা আমার স্রেফ অনুমান মাত্র; একমাত্র লেখিকাই সত্যটা জানেন ৷

আপনি বলেছেন, "কয়লা কোম্পানির মালিক মিস্টার সমার্সের চরিত্রটা ঠিক বোঝা যাচ্ছিলো না। কোম্পানির মালিক বলেই একটি সন্দেহ ছিল তার প্রতি শুরু থেকেই। দৌড়ে আসা মিসেস হ্যাচিনসনের দিকে যেভাবে তিনি তাকিয়েছিলেন তাতে এই সন্দেহ চলে যায় না। উনি নিজেই লটারির কাগজ ও বাক্স রেডি করেন বলে সন্দেহটা ছিল এমন, তিনি কোন এক কৌশলে বা চালাকি করে নিজের টার্গেটেড মানুষের হাতেই সেই কাগজটা লটারির আড়ালে তুলে দেন।"...... আপু, এখানে আপনার ভাবনার সাথে আমারও মিল আছে৷লটারির টার্গেট আগে থেকেই নির্ধারিত কিনা? লটারির পরিচালকের আচরণ থেকে কিছুটা সন্দেহ হয় B:-)!! আর মিসেস হ্যাচিসনের দৌড়ে আসা এবং পরিচালকের তার প্রতি গভীর দৃষ্টিতে তাকানো এমন সন্দেহকে বাড়িয়ে দেয়৷তবে এটা অনুমান মাত্র ৷

"স্বামীর অনুপস্থিতিতে লটারি তুলতে সমাজের অন্যদের অনুমতি প্রার্থনা, ছেলে সাবালক হলে তাকে বিকল্প ভাবা এসব নানা ইঙ্গিত দিয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের অবহেলিত মেয়েদের সূক্ষ্ম দৃশ্যও এই গল্পে উঠে এসেছে।"....... একদম হক কথা; আপনি নিশ্চয় খেয়াল করেছেন, প্রথম লটারি কিন্তু তার স্বামী "বিল হ্যাচিসন" তুলেছেন; অথচ বিজয়ী হলেন তার বউ!! তার মানে পুরুষরা বিজয়ী হলে তাদের বউদের পাথর নিক্ষেপ করা হতো X((!!! এছাড়া সাতাত্তুর বছরের ওয়ার্নার কিন্তু সব সময় লটারির পক্ষে; কারণ তার বউ ছিল না৷অন্যের বউকে পাথর নিক্ষেপ করে মারাটা কিন্তু দারুণ বিনোদনের X((!!

আর পাথর নিক্ষেপ করে মহিলাদের মেরে ফেলার বিষয়টি আরব ইতিহাসে পাওয়া যায়; বিশেষ করে সমাজের চোখে কোন মেয়ে ব্যবিচারী হলে তাকে পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলা হতো X((; তবে আমেরিকার ইতিহাসে এমনটি ছিল কিনা জানা নেই; লেখিকাও পরবর্তীতে তো খোলাসা করেন নাই ৷

আর টাইপোর জন্য আমি ভীষণ লজ্জিত আপু; দীর্ঘদিন ইংরেজিতে পড়াশুনা আর শিক্ষকতা করায় বাংলা বানানে আমার দূর্বলতা এখনো প্রকট :(; তবে তা কাটিয়ে উঠার সর্বাত্মক চেষ্টা করছি৷আশা করি, সামনের দিনগুলোতে আরো কমিয়ে আনতে পারবো৷আমার জন্য আশীর্বাদ করবেন৷আমি যে বাংলায় সাহিত্য লেখবো তা গত দুই বছর আগেও কল্পনাতীত ছিল৷তবে যেহেতু সাহস করে শুরু করেছি, সেহেতু এ অপচেষ্টা চালিয়ে যাব আশা করছি ৷

৩২| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:১৭

সামিয়া বলেছেন: পুরো গল্পটি পড়লাম, অনুবাদ যথেষ্ট সাবলীল এবং আকর্ষণীয় হয়েছে। ভেরি গুড জব।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:২৪

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



ধন্যবাদ, আপু৷গল্পটা পড়ে ভাল লেগেছে জেনে প্রীত হলাম৷আশীর্বাদ করবেন যাতে ভাল মানের বিদেশি গল্পগুলো অনুবাদ করে বিশ্ব সাহিত্যকে দেশের মানুষের সামনে উপস্থাপন করতে পারি৷ভাল থাকবেন, আপু ৷

৩৩| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:০১

নীলপরি বলেছেন: এককথায় অনবদ্য লাগলো । ++

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:২৪

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



দিদি, শুভেচ্ছা রইলো; গল্পটি পড়ে আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম৷আপনার লেখাগুলো আমি খুব মনযোগ দিয়ে পড়ি৷ভাল লাগে৷গুণী ব্লগারদের লেখা পড়ে জানার এবং শেখার পরিধি বাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করি৷আর অনুবাদের জন্য +++ দিয়েছেন এজন্য কৃতজ্ঞতা রইলো৷শুভ কামনা রইলো দিদি৷ভাল থাকুন সব সময় ৷

৩৪| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৭

নীলপরি বলেছেন: এইটা খুব ভালো কাজ করছেন আপনি । সবগুলো একজায়গায় করে একটা বই হয়ে যাবে , সেটা বাংলা অনুবাদ সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করবে ।
শুভকামনা
আপনিও খুব ভালো থাকুন সব সময়

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২১

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



আবারো মন্তব্যে পেয়ে খুশি হলাম দিদি; অনুবাদ সবে শুরু করলাম৷যদি কোয়ালিটি মেইনটেন করতে পারি, অনুবাদের মান আরো উন্নত করতে পারি, তাহলে অনুবাদ আগামী দিনগুলোতে চালিয়ে যাব৷আর অদূর ভবিষ্যতে হয়তো তা মলাটবন্দী হতেও পারে; জানি না৷এটা ভবিষ্যতের উপর ছেড়ে দিলাম৷প্রেরণা দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ, দিদি ৷

৩৫| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৯

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর। কিছু টা পড়েছি বাকিটা মাগরিব নামাজের পর পড়াবো।++++

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৮

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



আপনি খোঁজে খোঁজে আমার লেখাগুলো পড়েন দেখে খুব ভাল লাগে; প্রেরণা পাই৷গুণীজনের আশীর্বাদ আমার লেখনীকে আরো সমৃদ্ধ করতে মানসিক শক্তি যোগায়৷এজন্য কৃতজ্ঞতা রইলো৷গল্পটি পুরো পড়লে আপনার ভাল লাগবে নিশ্চিত৷প্রাচীন কালে মানুষের অনেক আজগুবি বিশ্বাস ছিল; এসব বিশ্বাসের পক্ষে জোরালো কোন যুক্তি না থাকলেও মানুষ তা মেনে নিত; এগুলো স্রেফ বর্বরতা৷সময়ের পরিক্রমায় এগুলো এখন বিলুপ্ত হয়েছে৷আমাদের ভারত উপমহাদেশের "সতীদাহপ্রথা" এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায়৷পাথর নিক্ষেপে "মিসেস হ্যাচিসনের" মর্মান্তিক মৃত্যুও তারই একটি চিত্রনাট্য৷মূলত এগুলো ছিল অশিক্ষা, কুশিক্ষা আর মিথ্যা বিশ্বাসের ফল ৷

৩৬| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৪১

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: হুম আরো মনযোগ দিয়ে পড়তে হবে ।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৭

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



ধন্যবাদ, @ হাসু মামা; সময় নিয়ে ঠান্ডা মাথায় গল্পটি পড়লে আপনার ভাল লাগবে৷টুইস্ট আর ব্যতিক্রমী প্লটের জন্য এ গল্পটিকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা গল্প হিসাবে মনে করা হয়৷শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য ৷

৩৭| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫২

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: পাথর বর্ষণে মৃত্যু ইসলামের বিধান যৌনতার শাস্তি।যেনাকারের শান্তি। এটা আসলেই খুব ভয়ানক শাস্তি মনে হয় আমার কাছে। জীবন টা একটা লটারি।কে কয়দিন বাঁচে আর কেমন মৃত্যু কার ললাটে লেখা আছে।সংবিধান যেন লটারি। লটারি আবার ইসলাম এ নিষিদ্ধ।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০৩

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



পাথর নিক্ষেপ করে মহিলাদের মেরে ফেলার বিষয়টি আরব ইতিহাসে পাওয়া যায়, এখনও আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের উপজাতি অঞ্চলে তা বলবৎ আছে; এটা স্রেফ বর্বরতা X((৷বিশেষ করে সমাজের চোখে কোন মেয়ে ব্যবিচারী হলে তাকে পাথর নিক্ষেপ করে মেরে ফেলা হয় X((; আবার ইসলামে লটারি নিষিদ্ধ!! তবে আমেরিকার ইতিহাসে এমনটি ছিল কিনা জানা নেই; লেখিকাও পরবর্তীতে তো খোলাসা করেন নাই ৷

ব্যাপক সমালোচনার মুখে ১৯৪৮ সালের ২২শে জুলাই "San Francisco Chronicle" -এ লেখিকা গল্পের পটভূমি নিয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখা করেন ৷তিনি লেখেন, "Explaining just what I had hoped the story to say is very difficult. I suppose, I hoped, by setting a particularly brutal ancient rite in the present and in my own village to shock the story's readers with a graphic dramatization of the pointless violence and general inhumanity in their own lives."

বিষয়টি রহস্যময়!!!

৩৮| ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪৫

ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: অনেক ভালো লিখেছেন স্যার। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৪

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



@ প্রভা আপু; আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম; অনুবাদটি আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুশি হলাম৷আপু, চার মাস থেকে আপনি ব্লগে আছেন কিন্তু এখনো 'সেফ' হন নাই বলে খারাপ লাগছে৷এই চার মাসে আপনি পোস্ট করেছেন ছয়টি৷কিন্তু মন্তব্য করেছে মাত্র ৩০টি৷আপনার ব্লগ ভিউয়ার এখনো ১০০ হয় নাই৷ব্লগে সেফ হতে হলে আরো বেশি একটিভ থাকতে হবে, ব্লগে সময় দিতে হবে৷ব্লগের পছন্দের পোস্টগুলোতে সুন্দর কমেন্ট করতে হবে; এতে ব্লগে আপনার পরিচিতি বাড়বে৷অন্যরাও আপনার ব্লগ ভিজিট করবে, কমেন্ট করবে৷আশা করি আমার কথাগুলো বুঝতে পেরেছেন৷তারপরও কোন পরামর্শের প্রয়োজন হলে কমেন্টে জানাবেন ৷(ধন্যবাদ)

৩৯| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪৫

ফারিহা হোসেন প্রভা বলেছেন: ধন্যবাদ। আসলে পড়াশুনা নিয়ে এখন এতই ব্যস্ত যে নিজের জন্য অবশিষ্ট সময়টুকু পর্যন্ত বের করতে পারছিনা। আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩৫

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



ধন্যবাদ, ফারিহা আপু৷আপনি পড়াশুনা নিয়ে ব্যস্থ আছেন জেনে খুশি হলাম৷আগে পড়াশুনা পরে ব্লগিং৷তবে আপনি ব্লগিং এর মতো সৃজনশীল একটা মাধ্যমে একাউন্ট খুলেছেন এজন্য ধন্যবাদ৷আশা করবো, অবসরে ফেইসবুকে সময় অপচয় না করে ব্লগিং করুন৷এতে নিজের জানার ও শেখার পরিধি বাড়বে৷বুদ্ধিভিত্তিক চর্চা হবে৷ভবিষ্যতের জন্য শুভ কামনা রইলো৷

শুভ রাত্রি ৷

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.