নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অচিনপুরের অচিন ছেলে

আমার মতে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হচ্ছে মানুষের হাসি।তাই আমি সারাজীবন মানুষকে হাসি মুখে দেখতে চাই

কাজী অভন

আমার যা আছে তাই নিয়েই আমি সুখি ।উচ্চাকাঙ্খা কম,এবং মানুষের সাথে মিশতে পছন্দ করি।

কাজী অভন › বিস্তারিত পোস্টঃ

♦অভিমান♦

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:১৪

ভোর থেকে আঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে।সেই সাথে বজ্রপাত।মিজান সাহেব একটু পর পর ঘড়ি দেখছেন।১০ টা বাজে কলেজের ক্লাস শুরু। আজ আবার একটু আগেভাগেই যেতে হবে।আজকে কলেজের এইচএসসি রেসাল্ট দিবে।

মিজান সাহেব ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক।থাকেন খিলগাঁওতে। স্ত্রী ও এক মেয়ে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকেন। বৃষ্টি কমছেনা দেখে তিনি ছাতা নিয়েই রওনা দিলেন।রাস্তায়ও আজকে গাড়ি কম।একটা লোকাল বাসে করে শাহবাগ আসলেন।তারপর রিকশায় করে কলেজে।নির্ধারিত সময়ের আধা ঘণ্টা আগে তিনি কলেজে পৌঁছালেন। কলেজে যাবার পর দেখা গেল অনেক অভিভাবক তাদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে বৃষ্টি উপেক্ষা করে এসেছেন।সবার ভেতরেই একরকম চিন্তা বিরাজ করছে।আস্তে আস্তে সকল ছাত্র ছাত্রীরা(যারা পরীক্ষার্থী ছিল) কলেজে আসতে শুরু করল।মিজান সাহেব কয়েকজনের সাথে কথাও বললেন।একটু পর প্রিন্সিপাল স্যার শিক্ষা ভবন থেকে গাড়ি নিয়ে কলেজে প্রবেশ করলেন। তার মনে খুসি খুসি ভাব। দপ্তরি সালাম মিয়া মাইকে ঘোষণা দিয়ে সবাইকে অডিটোরিয়ামে যেতে বাললেন। সবাই অডিটোরিয়ামে আসল।সবাই আসন গ্রহণ করার পর প্রিন্সিপাল স্যার রেজাল্ট ঘোষণা করলেন। ১১২ জনের মধ্যে ৯৫ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে।সেইসাথে ১০০% পাস।ঢাকার মধ্যে ষষ্ঠ।সারা কলেজে আনন্দের বন্যা বয়ে গেল।স্কাউটের ছেলে মেয়েরা ড্রাম নিয়ে বাজাতে শুরু করল।মাঠে সবাই হৈ হুল্লোর করে নাচানাচি শুরু করে দিল।সবাই স্যারদের সালাম করতে গেল।অনেকে আবার এরই মধ্যে মিষ্টিও নিয়ে আসল। অডিটোরিয়াম রুমে স্যাররা সবাইকে স্বাগতম জানালেন ।আরো কিছু সময় বক্তব্য দেয়ার পর মিজান সাহেব ঘোষণা দিলেন এক ক্লাস পর কলেজ ছুটি হয়ে যাবে।

মিজান সাহেব অফিস রুমের দিকে আসছিলেন।আজ তার মন খুব ভাল।তার এত দিনের কষ্টের ফসল আজকে পেয়েছেন।হটাৎ তিনি একটি রুমে একটি ছেলেকে দেখতে পেলেন।ছেলেটি একটি ব্লেড দিয়ে নিজের হাত কেটে রক্ত বের করছিল আর হাসছিল। মিজান সাহেব পুরো অবাক হয়ে গেলেন।তিনি ছেলেটিকে চিনেন।নাম মিতুল।ছাত্র হিসেবে সে বেশ ভাল ছিল।কিন্তু সে কাঁদছে কেন?তাহলে কি সে রেসাল্ট খারাপ করেছে?তারতো খারাপ করার কথা নয়।মিজান সাহেব রুমে গিয়ে দপ্তরি সালাম মিয়া কে পাঠালেন মিতুলকে ডেকে আনতে। একটু পর মিতুল মিজান সাহাবের রুমে ঢুকল।রুমাল দিয়ে হাতটা বাঁধা কিন্তু তখনও হাতে রক্ত লেগে ছিল।মিজান সাহেব মিতুলকে বসতে বললেন। মিতুল চেয়ারে বসল।

মিজান সাহেব বললেন”বাবা পরীক্ষায় কাঙ্খিত ফলাফল না আসতে পারে, এজন্য নিজের রক্ত বের করতে হবে”?সামনে তোমার বড় চ্যালেঞ্জ।তোমরা ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে কলেজের নাম উজ্জল করবে।বাসায় গিয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ কর।সেটাই হচ্ছে আসল পরীক্ষা।

মিতুল কিছু বলছিল না।শুধু তার চোখ দিয়ে গড়গড়িয়ে পানি পরছিল। একটু পর সে মুখ খুলল।

মিতুল: স্যার আমার ফলাফল খারাপ হয় নি,আমি জিপিএ ৫ পেয়েছি।

মিজান সাহেব অবাক হয়ে গেলেন।

মিজান সাহেব:তাহলে তুমি হাত কেটে কাঁদছিলে কেন?

মিতুল:স্যার আজকে সবার বাবা মাকে এত খুশি দেখে খুব কষ্ট লাগছিল।তাই...।।

মিজান সাহেব:কেন তোমার বাবা মা নেই?

মিতুল:থেকেও না থাকার মত।

মিজান সাহেব:সে আবার কেমন কথা?

মিতুল:স্যার ,আমার বাবা অনেক ধনী লোক।তার প্রচুর টাকা পয়সা।কিন্তু দুই বছর আগে হটাত অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করে তিনি আলাদা হয়ে গিয়েছেন।কিন্তু তিনি তার দায়িত্ব ভুলে যান নি।তিনি আমার নামে ধানমণ্ডিতে ২ টি ফ্ল্যাট,১ টি গাড়ি, ১৫কোটি টাকার ব্যাঙ্ক একাউন্ট করে গেছেন।আমি যদি সারাজীবন কোন কাজও না করি তাহলেও আমার কোন অসুবিধা হবে না।(এটুকু বলে মিতুল একটু চুপ হয়ে গেল)

মিজান সাহেব:দেখ মিতুল আমাদের সবার জীবনই অনেক কষ্টের।কেউ সেসব প্রকাশ করে কেউ আবার করে না।আমার বাবা মারা যায় ১১ বছর থাকতে।আমার মা আমাকে অনেক কষ্ট করে মানুষ করেছেন।একবেলা আধাবেলা খেয়ে আমি পড়াশুনা করেছি।কিন্তু যখন আমার সুসময় হল তখন আমার মা আমাকে ছেড়ে পৃথিবী থেকে গেলেন।আমাদের সব কষ্ট কাটিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

মিতুল:আমার মাও গত বছর আরেকজন ধনী লোককে বিয়ে করে চলে গিয়েছেন।আমি বন্ধুদের নিয়ে সময় কাটিয়ে কষ্ট ভুলে থাকতে চাই কিন্তু পারি না।আজকে যখন দেখলাম আমার বন্ধুদের বাবা মা তাদের আদর করছে তখন আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলাম না।কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল।তাই ক্লাসে এসে রক্ত বের করছিলাম আর আনন্দ পাচ্ছিলাম।কারন মাঝে মাঝে আমার রক্তকে দুষিত মনে হয়।তখন দুষিত রক্তগুলো বের করে ফেলি। আমার বাবা মায়ের রক্ত আমি শরীরে রাখতে চাইনা......।

স্যার আপনি আমার সাথে চলেন আমি আপনাকে সব দেখাব।এই বয়সে এতুটুকু একটা ছেলের এত সম্পদ আপনি নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করবেন না।

স্যার আমার সব আছে ,শুধু মনে কোন শান্তি নেই। আপনিই বলুন এছাড়া আমি আর কিইই বা করতে পারি?



মিজান সাহেবের চোখ পানিতে ভরে গেল।কতটা কষ্ট পেলে মানুষ এরকম করতে পারে।তিনি চশমাটা খুলে হাতে নিয়ে জানালার কাছে দাড়ালেন।জানালার সামনেই গাছে দুটি পাখির ছানা দেখতে পেলেন।একটু পর মা পাখিটি এসে বাচ্চা দুটিকে পরম যত্নে মুখে করে খাবার খাওয়াল।তারপর আবার খাবার আনতে ফুড়ুৎ করে চলে গেল।মিজান সাহেব ভাবতে লাগলেন ছানাগুলো ধীরে ধীরে বড় হবে,একদিন তারা বাবা মা ছেড়ে চলে যাবে। এটাই পাখিদের জীবন বিধান।কিন্তু মানুষের জীবন তো আর এমন না। বাবা মা ছেলে মেয়ে নিয়ে সুখে শান্তিতে থাকবে এটাই তো শ্বাভাবিক কিন্তু কেন কিছু মানুষ অর্থ বিত্তের লোভে ছেলে মেয়ে ত্যাগ করে তা তিনি বুঝেই পান না।হটাত করে ঘণ্টা বেজে উঠে।তিনি পিছনে তাকিয়ে দেখেন মিতুল নেই।হয়ত ছেলেটা লজ্জায় দুঃখে চলে গিয়েছে।



দপ্তরি সালাম মিয়ার ঘণ্টা বেজে উঠল।মিজান সাহেব আবার প্রতিদিনকার মত হাজিরা খাতা নিয়ে ক্লাসে রওনা দেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.