নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাজী হাসান সোনারং

আমি একজন নিসর্গচারী। সোনারং তরুছায়া নামে আমার একটি বাগান ও বৃক্ষরোপণ সম্পর্কিত একটি কার্যক্রম আছে।

কাজী হাসান সোনারং › বিস্তারিত পোস্টঃ

প‌রি‌বেশ বান্ধব তালগাছ রোপ‌ণে নবযাত্রা

০১ লা আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:৩২

কাজী হাসান


নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার হাজিনগর ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রাম ঘুঘুডাঙ্গা। হাজিনগর গ্রামের মজুমদার মোড় থেকে ঘুঘুডাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার রাস্তার দু’ধারে শত শত তাল গাছ দাঁড়িয়ে আছে (ছ‌বির ডা‌নের সড়ক)।
নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও নওগাঁ-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার তালগাছগুলো রোপণ করেছিলেন। তিনি ১৯৮৬ সালে যখন হাজিনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন সে সময় নিজ হাতে তালগাছগুলো রোপণ করেছিলেন। আজ সেই তাল গাছগুলো ৫০ থেকে ৬০ ফিট লম্বা হয়ে রাস্তার দু’ধারে শোভা বর্ধন করে আসছে। ৩৪ বছর আগে রোপণকৃত তালবীজ এখন রাস্তার দু’পাশে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে। নওগাঁ জেলার বৃক্ষপ্রেমী গহের আলী ছিলেন ভিক্ষুক। গহের আলীর লাগানো ১২ হাজার তালগাছ দাঁড়িয়ে আছে রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কের দুই ধার জুড়ে (বাঁ‌য়ের সড়ক)। ‘গহের আলী’ বেঁচে নেই, কিন্তু তাঁর লাগানো তালগাছগুলো আছে বিরাট বিরাট ছায়াময়ী পাতা ছড়িয়ে। আমাদের শ্রদ্ধা এই নিঃস্বার্থ বৃক্ষপ্রেমিক মানুষের জন্য। আমরাও এমন একটি নিসর্গবান্ধব কর্মসূচি বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখছি।

আবহাওয়ার প‌রিবর্ত‌নের কার‌ণে দে‌শে বজ্রপা‌তের প‌রিমাণ আশঙ্কাজনক হা‌রে বে‌ড়ে‌ছে। বজ্রপাত নি‌রো‌ধে তালগাছ অগ্রগণ্য ভূ‌মিকা রা‌খে। বিষয়‌টি মাথায় রে‌খে আমরা `‌সোনারং তরুছায়া`র পক্ষ থে‌কে তালগা‌ছের চারা রোপ‌ণের এক‌টি বড় উ‌দ্যোগ হা‌তে নি‌য়ে‌ছি। য‌দিও প্রস্তাবনা‌টি ছি‌লো ল্যাব এইড গ্রু‌পের ম্যা‌নে‌জিং ডি‌রেক্টর ডা. এ. এম. শামীম এর। আমরা তার বা‌ড়ি চৌদ্দগ্রাম উপ‌জেলার ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক থে‌কে বারাইশ গ্রাম পর্যন্ত সড়‌কে দুই সা‌রি ক‌রে তালগা‌ছের চারা রোপণ কর‌বো। পাশাপা‌শি আমা‌দের গজা‌রিয়া উপ‌জেলায়ও রোপণ কর‌বো। নার্সা‌রি‌তে তালগা‌ছের চারা তেমন একটা পাওয়া যায় না। আমরা খুঁজে খুঁজে যা পাই সংগ্রহ কর‌বো। বীজ থে‌কেও চারা তৈ‌রি কর‌বো। যারা বিষয়‌টির প্রয়োজনীয়তা অনুভব ক‌রেন, তা‌দের সহ‌যো‌গিতাও পে‌তে চাই। চাই আশীর্বাদ!

বজ্রপাত নি‌রো‌ধে তালগা‌ছের ভূ‌মিকা~
বজ্রপাত একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সরকার ২০১৬ সালে বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করেছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বজ্রপাতের সংখ্যা বাড়ায় মানুষ ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। সারাদেশে কোনও না কোনও স্থানে বজ্রপাতে মানুষ, গবাদিপশু ও বন্যপ্রাণী মারা যাচ্ছে। এখন বজ্রপাত কোনও মৌসুম মানছে না। তবে বর্ষা মৌসুম এলে বজ্রপাতের সংখ্যা বেড়ে যায়। মেঘলা আকাশ, বিদ্যুতের চমক, গগণভেদী আওয়াজ আর ঝড়বৃষ্টির মধ্যে বজ্রপাত ঘটতে থাকে। এ অঞ্চলের আবহাওয়া বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত বজ্রপাতের আশঙ্কা বেশি থাকে। আর এ দুর্যোগ প্রায় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত থাকে।

মৃত্যুর সংখ্যা বিচারে এখন প্রতি বছর বর্ষাকালে বজ্রপাত মহামারির আকার ধারণ করেছে। এটি নিঃসন্দেহে আতঙ্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত সাড়ে ৯ বছরে বজ্রপাতে দেশে আড়াই হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এ বছরের সাড়ে পাঁচ মাসে বজ্রপাতে মারা গেছে শতাধিক মানুষ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ২০১১ সাল থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বজ্রপাতে মারা গেছে ২ হাজার ২৭৬ জন।

পরিসংখ্যান বলছে, বজ্রপাতে প্রতিবছর গড়ে দুই শতাধিক মানুষ মারা যায়। এরমধ্যে ২০১৮ সালে সবচেয়ে বেশি ৩৫৯ জন মারা গেছে। আগের বছর ২০১৭ সালে মারা গেছে ৩০১ জন। গেল বছর মারা গেছে ২১১ জন। জলবায়ু পরিবর্তন আর বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে বজ্রপাত বাড়ছে। তাপমাত্রা যত বেশি হবে বজ্রপাত তত বাড়বে।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ৪০ বছরে বাংলাদেশের তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৭ ডিগ্রী বৃদ্ধি পেয়েছে। এক ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়লে ২০ শতাংশ বজ্রপাত বেড়ে যায়। এ হিসেবে বজ্রপাত বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাত বৃদ্ধি
পাওয়ায় মানুষ ভীত হয়ে পড়েছে। বর্ষাকালে বজ্রপাত বেশি হয়। আর বাংলাদেশে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। প্রাকৃতিক বিরূপ প্রভাবে বজ্রপাত হচ্ছে, তারপরও মানুষ থেমে নেই। কিভাবে আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়? স্থানীয় জ্ঞান থেকে বের হয়ে এসেছে এক অভিমত। আর তা হলো তালগাছ লাগানো। বজ্রপাত নিরোধে তালগাছ অনেকটাই কার্যকর।

বিশেষজ্ঞারা বলছেন, তালগাছে কার্বনের স্তর বেশি থাকায় তা বজ্রপাত নিরোধে সহায়তা করে। কারণ তালগাছের বাঁকলে পুরু কার্বনের স্তর থাকে। উচ্চতা ও গঠনগত দিক থেকেও তালগাছ বজ্রপাত নিরোধে সহায়ক হতে পারে। তালগাছের পাশাপাশি নারকেল গাছ, সুপারি গাছ এর মতো উচ্চতাসম্পন্ন গাছ লাগাতে হবে। প্রকৃতি দিয়েই প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধে প্রকৃতিই বাঁচার উপায়। তাই প্রকৃতির সহায়তা নিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

বজ্রপাত শুধু বাংলাদেশ নয় সারা বিশ্বের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুর্যোগ থেকে পরিত্রাণের জন্য মানুষের ভাবনার অন্ত নেই। বজ্রপাত নিরোধে তালগাছ অনেকটাই কার্যকর। তাই স্থানীয় এই জ্ঞানকে কাজে লাগানো দরকার। সরকারিভাবে তালগাছ লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে ও কার্যক্রম চলমান রয়েছে। পাশাপাশি এনজিও, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সামাজিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই কার্যক্রমকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। তালগাছ লাগানোর পাশাপশি নারকেল গাছ, সুপারি গাছ লাগানোর উদ্যোগকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে।

তালগাছ রোপণের পাশাপাশি প্রতিটি বাড়িতে আরথিন ব্যবস্থা সেট করতে হবে। মোবাইল টাওয়ারগুলোতে আরথিনের ব্যবস্থা করতে হবে। বজ্রপাত মোকাবিলায় দালানকোঠা নির্মাণের সময় বজ্র নিরোধক লাগাতে হবে। পাশাপাশি জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বজ্রপাতের আঘাত থেকে রেহাই পেতে হলে কিছু সতর্কমূলক ব্যবস্থা সবার জেনে রাখা ভালো। বজ্রপাতের শঙ্কা থাকলে পাকা বাড়ির নিচে আশ্রয় নিতে হবে। উঁচুস্থান পরিহার করতে হবে। বিদ্যুতের খুঁটিতে বজ্রপাতের শঙ্কা বেশি থাকে বিধায় বিদ্যুতের লাইন থেকে দূরে থাকতে হবে। ঘরে থাকলে জানালা থেকে দূরে থাকতে হবে। ধাতব বস্তু এড়িয়ে চলতে হবে। বজ্রপাতে শুধু প্রাণহানি হয় না, নষ্ট হচ্ছে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতিও, বিধায় এ সময় ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রীর সুইচ বন্ধ করে রাখা উত্তম। (তথ্যসূত্র : এ টি এম মোসলেহ উদ্দিন জাবেদ, কলামিস্ট)।

বজ্রপাতের মতো আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশেষজ্ঞদেরও অভিমত হলো, গ্রামেগঞ্জে প্রচুর পরিমাণে তালগাছ ও নারিকেল গাছ থাকলে সেগুলো বজ্র নিরোধক হিসেবে কাজ করতে পারে। খোলামাঠ, রাস্তার পাশে এমনকি বিল, হাওড়-বাঁওর ও বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠে উঁচু তালগাছ লাগাতে হবে। তাল, নারকেল, সুপারি প্রভৃতি উঁচু গাছ লাগানো যেতে পারে। এর মধ্যে বজ্রপাত নিরোধ হিসাবে তালগাছ উল্লেখযোগ্য। এ গাছই বজ্রপাত শোষক হিসেবে কাজ কর‌বে।

[email protected]
www.facebook.com/kazihasan0

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা আগস্ট, ২০২২ রাত ৩:২৮

ইমরোজ৭৫ বলেছেন: দুইদিন পর থেকে আপনার ভিউ বাড়বে। দুই দিন পোস্ট দিতে থাকেন। এই দুই দিন ওরা আপনার পোস্ট পযার্লোচনা করবে।

২| ০৩ রা আগস্ট, ২০২২ রাত ১১:২১

খায়রুল আহসান বলেছেন: ব্লগে সুস্বাগতম! শুভ হোক আপনার ব্লগযাত্রা, সফল ও আনন্দময় হোক আপনার ব্লগীয় মিথষ্ক্রিয়া!
'সোনারঙ তরুছায়া' প্রকল্পের সাফল্য কামনা করছি। এর কর্মী, উদ্যোক্তা এবং পৃষ্ঠপোষকদের জন্য রইলো দোয়া এবং শুভকামনা।
পরিবেশবান্ধব এই পোস্টটির জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। দেশের পরিবেশ রক্ষায় মরহুম গহের আলী এবং শ্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এর অমূল্য অবদানের জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
পোস্টে প্লাস। + +

১০ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:১৫

কাজী হাসান সোনারং বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ ভাই। অনুপ্রাণিত হলাম!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.