নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কাজী হাসান
আমাদের ‘সোনারং তরুছায়া’ এখন শুধুমাত্র একটি বাগান নয়, একটি নিয়মিত কল্যাণমুখী কার্যক্রমও। একটি এগ্রিকালচার ও কালচার সেন্টার। বৃক্ষরোপণ, বৃক্ষবিতরণ, বই বিষয়ক গবেষণা কেন্দ্র। এখন প্রায় প্রতিদিন `সোনারং তরুছায়া` থেকে বৃক্ষপ্রেমী শিক্ষার্থীসহ আগ্রহীদের গাছের চারা ও বই উপহার দেয়া হয়। গত প্রায় দশ বছর ধরে আমাদের এলাকা ও দেশের আরও কিছু অঞ্চলের বৃক্ষপ্রেমী শিক্ষার্থীদের হাতে গাছের চারা তুলে দিয়েছি এবং দিয়ে যাচ্ছি আমরা। তার অর্থ মূল্যমান প্রায় সাড়ে ১৫ লক্ষ টাকা। আমরা শিক্ষার্থীদের বৃক্ষপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছি। আমরা নান্দনিক ও শিল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বৃক্ষরোপণকে আমরা উৎসব-আনন্দের অনুষঙ্গ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছি। তাই আমরা বৃক্ষরোপণ বা গাছের চারা উপহার দিয়ে বৃক্ষপ্রেমীর জন্মদিনে বরণ ও প্রয়াত ব্যক্তির মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করে থাকি। শিশুর জন্মদিনে ও কোমলমতি শিশুর স্কুলে যাওয়ার প্রথম দিনে গাছের চারা রোপণ করার পরামর্শ দিই আমরা। ফেসবুক এ আমাদের কার্যক্রমভিত্তিক পোস্ট দেখে দেশব্যাপি অনেকেই উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহী হয়েছেন বলে আমরা জেনেছি।
আমাদের বৃক্ষপ্রেমী শিক্ষার্থীদের বিনোদিত করার জন্য আমরা ধীরে ধীরে ‘সোনারং তরুছায়া’ কম্পাউন্ডের বেশ কিছু উন্নয়নও করেছি।আমাদের বাগানের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যপট এর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া একটি খাল। ভরা বর্ষায় এর অপূর্ব নৈসর্গিক দৃশ্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। সেই খালের পাড়ে আমাদের বাগান ঘেঁষে আমরা তৈরি করেছি, 'সিরাজউদ্দিন চৌধুরী ঘাট’ (Click This Link)। মরহুম সিরাজউদ্দিন চৌধুরী আমার নানা। প্রায় ত্রিশ বছর আগে আমার প্রস্তাব ও পীড়াপীড়িতে আমাদের বাগানের জায়গাটি আমার মা তাঁর পরিবারের উত্তরাধিকারদের কাছ থেকে কিনে নেন। আমার নানা অত্র এলাকায় অনেক ভূ-সম্পত্তির স্বত্তাধিকারী ছিলেন। আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি, তাঁর অন্য কোনও ভূমিতে এতো বেশি ও নানামুখী কল্যাণ কাজ কখনও হয় নি। এতো বেশি বিখ্যাত ব্যক্তি ও শিক্ষার্থীর পদচারণা ঘটে নি।
আমরা প্রয়াত নাট্যজন, আমাদের অগ্রগণ্য শুভানুধ্যায়ী বৃক্ষপ্রেমী আলী যাকের এর নামে ‘আলী যাকের চত্বর’ তৈরি করেছি (Click This Link)। বরেণ্য সংস্কৃতিজন আলী যাকের এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রতিস্থাপন করি চিত্রশিল্পী হাফিজউদ্দিন বাবুর করা তাঁর একটি ম্যুরাল (Click This Link )। আমার জানামতে দেশের সমসাময়িক কোনও অভিনয়শিল্পীর এটাই প্রথম ম্যুরাল। `কাজী মোজাম্মেল হক অরণ্য পথ`( Click This Link)। `বন্য চত্বর` তৈরি করেছি ( Click This Link)। বৃক্ষপ্রেমী, কণ্ঠশিল্পী রুমানা মোরশেদ কনকচাঁপার নামে তৈরি হতে যাচ্ছে `কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা চত্বর`।
আমাদের 'সোনারং তরুছায়া'র কম্পাউন্ডটি অপেক্ষাকৃত নীচু এলাকায় অবস্থিত। দুই গ্রামের মধ্যবর্তী ফসলের জমির মাঝে এর অবস্থান। তাই বর্ষাকালে আশপাশের জমি প্লাবিত হওয়ায় বৃক্ষপ্রেমী শিক্ষার্থীসহ আমাদের সবার বাগানে আসতে সমস্যা হতো। আমরা দুই মাস আগে ৮০০ ফিট আয়তনের ‘সোনারং তরুছায়া সড়ক’ তৈরি করেছি (Click This Link)। যা পাশ্ববর্তী আলীপুরা গ্রামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। গত বছর থেকে বর্ষাকালে আমাদের বাগানে যাওয়া আসা করতে সমস্যা হয় নি। এ ছাড়াও এ সড়কটি দ্বারা উপকৃত হয়েছে অন্তত ৫০টি স্থানীয় পরিবার। এর আগে ২০১৭ সালে আমাদের উদ্যোগে বিদ্যুৎ সংযোগও নিশ্চিত করা হয়। রয়েছে গ্যাস ও ওয়াইফাই সুবিধাও।
আমরা বৃক্ষপ্রেমী শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা গাছকে নিবিড়ভাবে ভালোবাসে, তাদের নির্বাচন করে `সোনারং তরুছায়া গ্রীন ক্লাব` গঠন করেছি। তাদের মধ্য থেকে আগ্রহীদের নিয়ে `বাগান সেবক সদস্য` তৈরি করেছি। যারা পড়াশোনার অবসরে আমাদের `সোনারং তরুছায়া`র পরিচর্যা করে। গাছে পানি দেয়, গাছের চারা রোপণ, কাটিং ও বীজ থেকে চারা তৈরি করে। এমন দশজন সদস্য আমাদের কাছ থেকে সম্মানীও পায়। তা মাসে তিন হাজার টাকার কম নয়। যা দিয়ে ওদের পড়াশোনার ব্যয় নির্বাহ হয়। আর পাশাপাশি ওরা অর্জন করছে উদ্ভিদ সম্পর্কে অনেক জ্ঞান।
আমার প্রয়াত মায়ের নাম হাসনাহেনা চৌধুরী। আমার নানা কত আধুনিক মনস্ক হলে আজ থেকে প্রায় ৭০ বছর আগে কন্যার নাম রেখেছিলেন বাংলায় এবং ফুলের নামে। আমাদের ‘সোনারং তরুছায়া’র জমিটি ছিলো আমার মায়ের নামে। আমাদের বৃক্ষ, শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক কার্যক্রমকে স্থায়িত্ব দেয়ার লক্ষ্যে আমি একটি ট্রাস্ট গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার ৭৫ ভাগ সম্পদ এই ট্রাস্টে অন্তর্ভুক্ত করবো। আমাদের কয়েকজন আত্মীয় ও এ কার্যক্রমে অগ্রগণ্য অবদান রাখা কয়েকজন শুভানুধ্যায়ীকে এই ট্রাস্টের সদস্য করে নেবো। আমার অবর্তমানে এই ট্রাস্ট কর্তৃক আমাদের কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
খুব ছোট পরিসর থেকে ২০১২ সালের ২৩ জুন আমি 'সোনারং তরুছায়া`র কার্যক্রম শুরু করেছিলাম। দেশবরেণ্য অনেক গুণীজন আমার এ কার্যক্রমকে সমর্থন করেছেন, অর্থায়ন করেছেন ও আমাদের নানা আনুষ্ঠানিকতায় অতিথি হয়ে আমাদের অনুপ্রাণিত করেছেন। ভারতীয় চিত্রনির্মাতা মোনালিসা দাশগুপ্ত আমাদের কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমাদের ওপর `সবুজে সোনারং তরুছায়া' (Click This Link) নামে ২১ মিনিট ব্যাপ্তিকালের একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেছেন। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলো তাদের শনিবারের ক্রোড়পত্র 'ছুটির দিনে' তে তিন পৃষ্ঠার প্রতিবেদন ছেপেছে (Click This Link)। জনপ্রিয় অনলাইন পোর্টাল 'প্রিয় ডট কম' প্রকাশ করেছে একটি তথ্যবহুল সাক্ষাৎকার (Click This Link)। আমাদের কার্যক্রমটি অর্থপূর্ণ না হলে এসব মিডিয়াভিত্তিক কার্যক্রম কি হতো আমাদের নিয়ে? বেশি প্রচার হলে, অনাকাঙ্খিতদের ভিড়ও বাড়ে। তাই পরবর্তীতে অনেক মিডিয়াকে আমরা 'না' করে দিয়েছি, যাতে আমাদের ওপর প্রতিবেদন প্রকাশ না করে।
গত বছর ৩১ অক্টোবর অনানুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়েছে আমাদের ‘সোনারং তরুছায়া পাঠাগার’, ‘সম্মিলন কেন্দ্র’ ও ‘অতিথি কক্ষ’র ( Click This Link)। এখন আমাদের নির্বাচিত বৃক্ষপ্রেমীরা ইচ্ছে করলে এই পাঠাগারের বই পড়তে পারে। সম্মিলন কেন্দ্রে আমরা বৃক্ষ ও সাহিত্য-সংস্কৃতিবিষয়ক কোনও কর্মশালার আয়োজন করতে পারি। আর ‘সোনারং তরুছায়া’কে ভালোবেসে কেউ এখানে অবস্থান করতে চাইলে, তাদের জন্য রয়েছে ‘অতিথি কক্ষ’। আমরা এখন থেকে কিছু ব্যক্তিত্ব ও গবেষণাধর্মী বই প্রকাশ করবো ‘সোনারং’ ব্যানারে। শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো। চালু করবো কম্পিউটার সেকশন।
আমরা ‘সোনারং তরুছায়া পাঠাগার’ এর পক্ষ থেকে বৃক্ষপ্রেমী শিক্ষার্থীদের সাহিত্য-সংস্কৃতি, দেশ ও বিশ্বের সমসাময়িক প্রসঙ্গ সম্পর্কে অবগত করার জন্য বিভিন্ন 'পাঠচক্র'র আয়োজন করে যাচ্ছি। 'উদ্ভিদের প্রাণ আছে'~এটা প্রমাণ করেছিলেন আমাদের মুন্সীগঞ্জ জেলার কৃতিসন্তান, বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু। ইতোমধ্যে আমরা 'বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু পাঠচক্র'র আয়োজন করেছি। চলছে 'আনিসুল হক এর মা পাঠচক্র'। আমরা বিভিন্ন জাতীয় দিবসে আমাদের বৃক্ষপ্রেমী শিক্ষার্থীদের ইতিহাসভিত্তিক বই ও মহান ব্যক্তিদের জীবনীগ্রন্থও উপহার দিয়ে আসছি।
আমাদের কার্যক্রমকে আরও গতিসম্পন্ন করতে আমরা প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর মাশরুম ও বায়োফ্লক পদ্ধতিতে মাছ উৎপাদন করার প্রকল্প হাতে নেবো। যাতে বিপণনের পর এর লভ্যাংশ দিয়ে আমাদের কার্যক্রম আরও সহজভাবে পরিচালনা করতে পারি। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অন্যেরা এসব ক্ষেত্রে উদ্যোগী হয়ে ব্যক্তিগতভাবে কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন। মাশরুম বিষয়ক প্রথম কর্মশালাটি অনুষ্ঠিত হয়েছে গত ২৫ মার্চ। এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে সহযোগী হিসেবে রয়েছে আম্বালা ফাউন্ডেশন।
গত ২৩ জুন আমাদের `সোনারং তরুছায়া` প্রতিষ্ঠার ১০ম বর্ষ পূর্ণ করেছে। এ উপলক্ষে আমরা নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। বের হবে বর্ণাঢ্য কয়েকটি প্রকাশনা। আশা করি অতীতের মতো এ কার্যক্রমেও আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন।
`সোনারং তরুছায়া`র দশমবর্ষ পূর্তির এই মাহেন্দ্র সময়ে আপনাকে জানাই অগণন শুভেচ্ছা~
#sonarongtoruchhaya10thanniversary
[email protected]
www.facebook.com/kazihasan0
www.facebook.com/sonarongtoruchhaya
০৬ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ৮:১২
কাজী হাসান সোনারং বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা!
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা আগস্ট, ২০২২ রাত ১০:১৪
পুরানা দামান বলেছেন: মুগ্ধ হবার মতো কার্যক্রম। আপনাদের সকল কার্যক্রমই চমৎকার। আরেকটা জিনিস আমার ভালো লেগেছে আলী যাকের, কনকচাঁপা দুজন বিপরীত ধারার হলেও আপনি সেসব না দেখে তাদের গুণের কদর করেছেন। অনেক শুভকামনা রইল আপনার সংগঠনের জন্য। আর আল্লাহ যেন আপনার নানাকে জান্নাত নসীব করেন।