নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাজী হাসান সোনারং

আমি একজন নিসর্গচারী। সোনারং তরুছায়া নামে আমার একটি বাগান ও বৃক্ষরোপণ সম্পর্কিত একটি কার্যক্রম আছে।

কাজী হাসান সোনারং › বিস্তারিত পোস্টঃ

জন্মদিনের শুভেচ্ছা : নাট্যজন রফিকউল্লাহ সেলিম : আমাদের প্রিয়জন

০৪ ঠা আগস্ট, ২০২২ সকাল ৮:৫১

কাজী হাসান

রফিকউল্লাহ সেলিম আমাদের মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার ষোলআনি গ্রামের সন্তান। তাঁর অভিনয় জীবন আশির দশকের মাঝামাঝি মঞ্চ থেকে শুরু হলেও তিনি নব্বইর দশকের শুরুতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন টেলিভিশন নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। তারপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। কৌতুকধর্মী একটু নেতিবাচক সন্ত্রাসী চরিত্রে তিনি একজন অপ্রতিদ্বন্দ্বী কুশীলব হয়ে ওঠেন। যে ধরনের চরিত্রে তখন অগ্রজ ভার্সেটাইল অভিনয়শিল্পী হুমায়ুন ফরীদি বড় পর্দা কাঁপিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। পৈতৃক ব্যবসা ও পারিবারিক নানা কারণে প্রবল জনপ্রিয়তার সময়েই অভিনয় জগতে রফিকউল্লাহ সেলিমের উপস্থিতি অনিয়মিত ছিলো। যে কারণে হয়তো আমরা তার থেকে আশানুরূপ আরও ভালো কাজ পাইনি। তবে আমরা আশাবাদি, তার নিয়মিত অভিনয় তাকে আরও সাফল্য ও সম্মানের জায়গায় পৌঁছে দেবে।

জন্মদিনের আগে তার সঙ্গে কথোপকথন-
অভিনয় জগতে আপনার পদার্পণ সম্পর্কে জানতে চাই~
রফিকউল্লাহ সেলিম
: ১৯৮৫ সালে আমি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে অবসর। মনে মনে স্বপ্ন দেখি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার। মাঝে মাঝে টিএসসিতে বন্ধু বান্ধবের সঙ্গে আড্ডা মারতাম। তখন আমার বন্ধু ইবনে হাসান খান (বর্তমানে চ্যানেল আইয়ের একজন ডিরেক্টর) ‘ঢাকা নান্দনিক’ নামে একটি নাটকের গ্রুপে কাজ করতো। ওর সঙ্গে দেখা করার জন্য আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে যেতাম। সেখানে ওদের নাটকের রিহার্সেল হতো। আমি বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতাম। এক সময় হাসান বেরিয়ে আসতো। রিহার্সেলে ঢোকার সময় ওকে প্রায়ই বলতাম, এসব আমার ভালো লাগে না। তাড়াতাড়ি চলে আসিস। না হয় আমি একাই বাসায় চলে যাবো। ওই নাট্যদলের ডিরেক্টর অজিত চট্টোপাধ্যায় ও স্ক্রিপ্ট রাইটার সৈয়দ মহিদুর রহমান তখন একটি পথ নাটক করবেন। সেই পথ নাটকের তিনটি চরিত্র। একজন এরশাদ, একজন গোলাম আজম ও আরেকজন আটরশির পীর। তাদেও কাছে আমাকে দেখতে নাকি এরশাদের মতো দেখায়, সেজন্য আমাকে তারা অনুরোধ করে বলেন, আপনি আমাদের সঙ্গে কাজ করেন। আমি বিরক্তি নিয়ে বলি, ধুর, নাটক ফাটক আমার ভালো লাগে না! আমার দ্বারা এসব হবেও না। তারা আমাকে আশ্বস্ত করে বলেন, ভয়ের কিছু নেই। আমি পাল্টা তাদের বলি, ভয়ের জন্য না, ভয়ের কী আছে? মানুষ তো বাস্তব জীবনেই প্রতিনিয়ত অভিনয় করছে। তাদের পীড়াপীড়ি ও আশঙ্কাকে আমি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে বলি, ঠিক আছে করবো, আগামীকাল থেকে রিহার্সেলে আসবো। সাতদিন রিহার্সেল করার পর নাটকটি শহীদ মিনারে করলাম। জীবনে প্রথম বহু লোকের সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করলাম। সবকিছু মিলে ভয়ে ভয়ে আমি শো-টা শেষ করি! নাটক শেষে নির্দেশকের পা জড়িয়ে ধরে বলি, আমি ভাই জিন্দেগীতেও এই কাজ করবো না! অল্পের জন্য বেঁচে গেছি। আরেকটু হলে আমি স্ট্রোক করে মারা যেতাম। আমাকে ছেড়ে দেন~এসব বলে আমি চলে আসি।
আমাদের বাসার ড্রয়িংরুমে লম্বা একটা ডাইনিং টেবিল আছে। সবাই একসঙ্গে সকালে নাস্তা করি। পরদিন সকালে আব্বা টেবিলের এক প্রান্তে বসে পত্রিকা পড়ছেন আর আমি অন্য প্রান্তে বসে নাস্তা করছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়ে পত্রিকার শেষের পাতার চার ভাগের এক ভাগ জুড়ে একটি বড় ছবি। একটু খেয়াল করে দেখি, আরে শালা, এটাতো আমাদের সেই পথ নাটকের ছবি! আমার চেহারা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে। নাস্তাটা শেষও করি নাই। উঠে দিলাম দৌড়! আব্বা যদি পাতাটা ঘুরিয়ে দেখে বলে, কিরে সেলিমরে দেখা যায়! তখন আমার অবস্থা খারাপ হবে! কিসের মধ্যে পড়লাম? হায় হায়! দ্রুত বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম। বাইরে যাওয়ার পর নানাজনে প্রশ্ন করে, এই, তোমার ছবি দেখলাম পত্রিকায়। নাটক করো নাকি! ভালো ভালো! এমন উৎসাহজনক মন্তব্য শোনার পর কেমন যেনো একটা ভালো লাগা তৈরি হলো আমার মধ্যে। সেই থেকে আস্তে আস্তে মঞ্চের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়ি।
১৯৯০ সালের শেষের দিকে আমাদের মুন্সীগঞ্জ বিক্রমপুরের বরেণ্য সন্তান ইমদাদুল হক মিলন ভাইয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তিনি বললেন, তুমি যেহেতু মঞ্চে কাজ করো, আমাদের টেলিভিশন নাটকেও কাজ করো। আমি বললাম, ঠিক আছে করবো। আমাকে একটু সুযোগ দিয়েন। এরপর তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘বারো রকম মানুষ’ নামে একটি ধারাবাহিক নাটক করলেন। আমাকে বললেন, তোমাকে ছোট্ট একটা ক্যারেক্টার দিলাম। আপাতত এইটা করো। সেই ছোট্ট ক্যারেক্টারের মধ্যে একটা কমন ডায়লগ দিয়েছিলেন, বিউটি বিউটিফুল। করলাম। এরপর রাস্তায় বের হলেই আমাকে দেখে মানুষজন বলতেন, বিউটি বিউটিফুল! শুনে ভালোই লাগতো! সেই যে শুরু, আজকে পর্যন্ত আছি। তবে ব্যবসায়িক ও পারিবারিক কারণে সব সামলে নিয়মিত কাজ করা হয় না।

চলচ্চিত্রে কেমন কাজ করেছেন?
রফিকউল্লাহ সেলিম
: একদিন আমার কাছে একটি ফোন আসলো। বললেন, সেলিম বলছো? আমি খান আতাউর রহমান বলছি। ফিল্ম ডিরেক্টর। শুনে আমি হতভম্ব হয়ে জ্বি, জ্বি করে উঠলাম! তিনি বললেন, আমার একটা ছবি করে দিতে হবে তোমার। আমি বললাম, আপনি আমাকে অনুরোধ করছেন কেনো? আপনি তো আমাকে হুকুম করবেন! শুনে তিনি বললেন, ঠিক আছে। তুমি আমার অফিসে আসো। কথা হবে। তারপর তার অফিসে গেলাম, কথা হলো। তার পরিচালনায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘এখনও অনেক রাত’ এ কাজ করলাম। আমার করা প্রথম ফিল্ম।
তখন একটিই টেলিভিশন। বাইরের নির্মাতাদের তৈরি নাটককে বলা হতো ‘প্যাকেজ নাটক’। আমার প্রতিষ্ঠান ‘একুরেট’ থেকে ‘মহুয়া’ নামে এক লোককাহিনী নির্ভর নাটক বানিয়েছিলাম। এর আগে ‘অচেনা’ নামেও একটি নাটক টিভিতে প্রচারিত হয়েছে। লোককাহিনী সম্পর্কে আমার আইডিয়া খুব কম। আমি পারফেকশনের ব্যাপারে বেশ মনোযোগী। যেহেতু লোককাহিনীর ভাব আমার পুরোপুরি নখদর্পণে নয়, শুধুমাত্র একটি স্ক্রীপ্টের ওপর ভরসা করে লোককাহিনী করাটা আমার জন্য বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে~ভেবে আমি বরেণ্য চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব খান আতাউর রহমানের সঙ্গে কথা বলি। তাকে ‘মহুয়া’ নাটকে উপদেষ্টা হিসেবে রাখি। আতাভাই না থাকলে আমি ‘মহুয়া’ নাটকটি অতো সুন্দরভাবে করতে পারতাম না! একদিন উনি শুটিংয়ে গিয়েছিলেন। তারপর তিনি বলেছিলেন, আমি থার্টি ফাইভে কাজ করে অভ্যস্ত, তোমাদের বেটাকমে অভিজ্ঞ না। তুমি শুট করে নিয়ে আসো, আমি এডিটিংয়ের সময় থাকবো। তিনি শুটিংয়ে না থাকলেও আগেই ধরে ধরে রিহার্সেল করিয়েছিলেন। কিভাবে মেকিং করবো তাও তিনি আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এরপর তিনি এডিটিংয়ের সময় প্রতিদিন আমার আগে উপস্থিত হতেন। তার তত্ত্বাবধানে এডিটিং সম্পন্ন হয়। কিছু কিছু সিকোয়েন্সে তিনি আর্টিস্টের সঙ্গে সঙ্গে নিজেও কেঁদেছেন। এমন ডেডিকেটেড, সময় ও দায়িত্বনিষ্ঠ মানুষ আমাদের পক্ষে পাওয়া সম্ভব না! তাঁরা শিল্পকে ভালোবেসে হৃদয় দিয়ে কাজ করা প্রফেশনাল ব্যক্তিত্ব ছিলেন। খান আতাউর রহমানের ছবির পর আমি ৭/৮টি ছবিতে অভিনয় করেছি।

আপনি এ অঙ্গনের একজন সংগঠকও। সে সব সম্পর্কে কিছু বলুন~
রফিকউল্লাহ সেলিম
: আমি সাংগঠনিকভাবে নাট্যসংগঠন ‘ঢাকা নান্দনিক’ এর সঙ্গে সেই ৮৫ সাল থেকে জড়িত। পরবর্তীতে বেশ কয়েকবার সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নির্বাহী সদস্য পদে ছিলাম। গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনে সব সময়ই আছি। ১৯৮৮ সাল থেকে সরাসরি রাজপথের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম।

আপনার অভিনয়ের ক্ষেত্রে পারিবারিক সাপোর্ট কেমন ছিলো?
রফিকউল্লাহ সেলিম
: প্রথমদিকে আমার আব্বা সেই অর্থে সাপোর্ট করতেন না। আবার করতেনও। উনি বাধা দিলে তো আমি এতো দূর আসতে পারতাম না। তিনি শাসন করে বলেছেন, পড়াশোনা আছে, ব্যবসা আছে। এগুলো রেখে নাটকে যত কম সময় দেয়া যায় ততো ভালো। পরবর্তীতে যখন দেখলেন, আমার একটা পরিচিতি হয়েছে, সম্মানের জায়গা তৈরি হয়েছে। তিনি সেইভাবে আমাকে বাধা দেন নি। শুধু বলেছেন, যে কোনও একদিকে যাও। আমার মা সেভাবে উৎসাহ না দিলেও, আমার নাটক আগ্রহের সঙ্গে দেখতেন। আমার বোনদের ফোন করে জানিয়ে দিতেন, ওই, সেলিমের নাটক হইতাছে, দেখ। আমার মামা, খালাকেও ফোন করে জানিয়ে দিতেন।
আমার আব্বা মসজিদ, মাদ্রাাসার প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে অনেক সময় হুজুরদের নিয়ে বসতেন। বৈঠক করতেন। একদিন তেমন এক বৈঠকে এক হুজুর আমাকে বললেন, আপনি হজ করে এসেছেন ভালো কথা! নাটকটা এবার ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করেন। তখন আব্বা পাশ থেকে সেই হুজুরকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন, ওই মিয়া আমিও তো নয়টা ছবিতে অভিনয় করছি। জিঘাংসা, রক্তের দাগ ছবিতে অভিনয় করছি, আপনারা জানেন? মঞ্চে কাজ করি নাই কিন্তু নাটকের আয়োজন করছি। লক্ষ্মীবাজারে ‘যাত্রিক’ নামের একটা সংগঠনে নাটক করাইতাম। এখন ছাইড়া দিছি। ও করবে। করবে না কেনো?

আপনার অভিনয় করা নাটকের ‘বিউটি বিউটিফুল’, ‘ফুটা কইরা দিমু’ বা ‘বিক্রমপুরের পোলা’ এই সংলাপগুলো বেশ দর্শকপ্রিয়তা লাভ করে। এগুলোর দর্শক রিঅ্যাকশনের সরাসরি কোনও ঘটনার কথা বলুন~
রফিকউল্লাহ সেলিম
: অভিনয়ের প্রথমদিকে বাইরে কোথাও গেলে দর্শক যখন আমার দিকে অবাক বা মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো-তখন আমার মধ্যে আলাদা একটা ভালো লাগা ফিলিংস কাজ করতো। নিজেকে বিশেষ কিছু মনে হতো। একটা সময়ে এসে মনে হলো এই ফিলিংসটা আমি পজিটিভলি নিলে আমারই ক্ষতি। এরপর থেকে আমি বিষয়টিকে খুব একটা গায়ে মাখাতাম না। অনেকে আমাকে দেখে কনফিউজ্ড হতো। যখন দেখতো তার তাকানোতে আমি কোনও রেসপন্স করছি না। সে হয়তো ভাবতো আমি কি সেই টেলিভিশন অভিনেতা? একবার ঢাকা স্টেডিয়ামে এক ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা। উনি মনে করতে পারছিলেন না আমাকে কোথায় দেখেছেন কিংবা আমি তার কোন আত্মীয় কি না! আমাকে থামিয়ে বললেন, আচ্ছা ভাই, আপনাকে কোথায় যেনো দেখছি? আমি বললাম কোথায় দেখেছেন? উনি বললেন, আপনার বাড়ি কোথায়? আমি বললাম, ঢাকায়। উনি বললেন, তাহলে তো হলোনা! উনি জানতে চাইলেন, আমি কোন কলেজে পড়েছি। বললাম। তাও মিলছে না! উনি দ্বিধা নিয়ে বললেন, আমি তার রিলেটিভ কেউ কিনা! আমি বললাম, আমি আপনার বাসায় প্রায়ই যাই। সেখানেই আমাকে দেখেছেন। সেদিন আমার হাতে একটু সময় ছিলো। একটু রিলাক্সড ছিলাম। তাই মজা করছিলাম। উনি অবাক হয়ে বললেন। আপনি প্রায়ই আমার বাসায় যান? আমি বললাম, হুম! কতদিন আপনি আমার পাশে বসে চা-টা খেয়েছেন। রাত সোয়া নয়টার দিকে গিয়ে দশটার দিকে চলে আসি আমি। এমন ফান করছি যখন, পাশ থেকে একজন এসে বলে উঠলো, কালকে আপনার নাটকটা দেখছি। খুব ভালো লাগছে। তখন সেই লোকটি চেঁচিয়ে বলে উঠলো, হ্যাঁ, আপনাকে টেলিভিশন নাটকে দেখেছি। আপনি কেনো মিথ্যে বললেন, আমার বাসায় যান? আমি বললাম, রাত নয়টা সাড়ে নয়টার দিকে আপনি বাসায় টেলিভিশনে নাটক দেখেন না? আপনি তখন টেলিভিশন দেখতে দেখতে চা খান না? তখন উনি লজ্জার হাসি হেসে গাঁই গুঁই করছিলেন।
রূপনগর নাটকটি যখন প্রবল জনপ্রিয়। ঢাকায় লায়নেস ক্লাবের একটা শো ছিলো আমাদের ‘ঢাকা নান্দনিক’ এর। বনানী মাঠে আমাদের নাটকের শো হবে। লায়নেস ক্লাবের সভাপতি ভদ্রমহিলার বাসায় গিয়েছি পেমেন্ট আনার ও কিছু ইনফরমেশন জানার জন্য। কলিং বেল চাপার পর কাজের মেয়ে দরজা খুলে মুখ হাঁ করে তাকিয়ে আমার কথা বুঝলো কি বুঝলো না, জানি না। সে দরজা টেনে দ্রুত চলে গেলো। আজও গেলো, কালও গেলো! আর কোনও খবর নেই। প্রায় বিশ পঁচিশ মিনিট সময় ধরে আমি বাইরে দাঁড়ানো। এরপর আবার কলিং বেল চাপলাম। ভেতর থেকে সভাপতি ভদ্রমহিলা কাজের মেয়েকে ডাকতে ডাকতে দরজা টেনে আমাকে দেখে বললেন, ও, আপনি? দরজা তো খোলাই ছিলো। ভিতরে আসলেন না কেনো? আমি বললাম, কাজের মেয়ে দরজা খুলে চলে গেলো। আর এলো না। এটা যে আপনার বাসা তাও বুঝতে পারছি না। ঢুকি কী করে? তারপর ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসলাম। উনিও কাজের মেয়েকে অনেকক্ষণ ডাকলেন। সে আর আসলো না। পরে সেই ভদ্রমহিলা নিজেই চা বানিয়ে আনলেন। খেলাম। আলাপ আলোচনা শেষে ঘণ্টাদেড়েক পর আমি চলে আসি। শোয়ের দিন ভদ্রমহিলা আমাকে বললেন, সে দিন কী হয়েছে জানেন? আমি জানতে চাইলাম, কী হয়েছে? উনি বললেন, ওই কাজের মেয়ে বাথরুমে গিয়ে ঢুকেছিলো। আমি ভেবেছিলাম, কোনও কাজে ঢুকেছে। আপনি চলে আসার এক ঘণ্টা পরও সে বাথরুম থেকে বেরোয় না! আমি খুব রেগে দরজা ধাক্কানোর পর সে ভেতর থেকে বলে ওঠে, গুন্ডা বেডাডা গেছে?

২০১৭ সালের ১৫ জুন আমরা আমাদের এলাকার পথিকৃৎ সমাজসেবক, শিক্ষানুরাগী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মোঃ কলিমউল্লাহকে হারিয়েছি। তিনি আমাদের গজারিয়া উপজেলা পরিষদ এর প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান। গজারিয়ায় তিনি প্রথম কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। আমাদের এলাকায় সমাজসেবার ক্ষেত্রে তিনি একটি নতুন ধারা তৈরি করেছিলেন। তাঁর অবর্তমানে পুত্র হিসেবে তাঁর অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ তথা নিয়মিত সমাজসেবায় আমরা আপনাকে পাশে পাবো কি?
রফিকউল্লাহ সেলিম
: সমাজসেবার সহজাত প্রবৃত্তি জন্মগতভাবেই আমাদের পরিবারের সবার মধ্যে রয়েছে। যেহেতু আমার আব্বা বিষয়গুলো পরিচালনা করতেন। দেখতেন। তাই আমরা তা সরাসরি করিনি। আমাদের মতো করে আমরা নীরবে আশপাশের স্বজনদের মধ্যে একটা ভূমিকা তো সবসময়ই রেখেছি। আমরা আব্বার প্রতিষ্ঠিত স্কুল, কলেজ, এতিমখানায় সহযোগিতা পূর্বের মতোই অব্যাহত রাখবো। তার নামে প্রতিষ্ঠিত গজারিয়া উপজেলা কলিমউল্লাহ কলেজ এর গভর্নিং বডিতে সদস্য হিসেবে আমাদের রাখা হয়নি। আমরা থাকলে হয়তো একটা সাংগঠনিকওয়েতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে এর সঙ্গে যুক্ত থাকতাম। এখনও আমরা সহযোগিতা করবো। আব্বা সরাসরি রাজনীতি করতেন বলে তার সমাজসেবার ধরনটা একটু ভিন্ন ছিলো। আমরা তার সন্তানরা রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নই। আমাদের সামাজিক সেবার ধরনটা তাই ভিন্ন রকম হবে। আমার মাকেও আমরা আব্বার মৃত্যুর চারদিন আগে হারিয়েছি। তাদের বিদেহী আত্মার জন্য আপনারা দোয়া করবেন।
জনসেবা করবো বলেই ২০১৯ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলাম। সুষ্ঠু নির্বাচন যে হয়নি, তা কমবেশি সবাই জানেন। নির্বিরোধী লোকদের জন্য নির্বাচন নয়।

[email protected]
www.facebook.com/kazihasan0

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২২ সকাল ৯:১৬

িজল্লুর রহমান সবুজ বলেছেন: ছবিতে দুজনকেই সুন্দর লাগতেছে, ধন্যবাদ।

০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ৮:১৩

কাজী হাসান সোনারং বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ!

২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২২ সকাল ৯:৩৬

ইমরোজ৭৫ বলেছেন: আপনার লেখা প্রথম পৃষ্টাতে প্রকাশিত হওয়ার কারনে আমি আনন্দিত। আজ কে আমার ঈদের দিন মনে হচ্ছে।

০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ৮:১৪

কাজী হাসান সোনারং বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ!

৩| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:৪১

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: প্রথম পাতায় স্বাগতম।

০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ৮:১৪

কাজী হাসান সোনারং বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ!

৪| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২২ দুপুর ১:৪৫

অর্ক বলেছেন: বহু বছর আগে শীতের এক সন্ধ্যা। অনূর্ধ্ব একুশ দাবা টুর্নামেন্ট খেলে ফেরার সময় আবিষ্কার করলাম, মূল গেটের পাশে চা’র দোকানে ফুটপাতে সস্ত্রীক চা পান করছে রফিকুল্লাহ সেলিম। আমরাও (দুজন দাবাড়ু বন্ধু) সেখানে চা পান করতে লাগলাম। দেখলাম যে, অমায়িক বন্ধুবাৎসল হাসিখুশি নিপাট সোজা একজন ভদ্রলোক রফিকুল্লাহ সেলিম। চা খেতে খেতে আশেপাশের এর ওর সাথে এটা সেটা নিয়ে আড্ডা দিতে লাগলো। অবাক হয়েছিলাম, চারপাশে লোকজনদের সঙ্গে এমনভাবে হেসে হেসে আন্তরিকতাপূর্ণ কথা বলতে লাগলো যে দেখে মনে হচ্ছিলো, সবাই যেন কতো চেনা! আমি তার সুখী দীর্ঘ জীবন কামনা করি।

খুন ভালো লাগলো সাক্ষাৎকারটি। অনেককিছু জানলাম তার সম্পর্কে। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা নিন।

০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ৮:১৬

কাজী হাসান সোনারং বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ! জ্বি, সেলিম ভাই অনেক বিনয়ী মানুষ।

৫| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:১৮

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: ভালো লাগে ওনাকে। উনি ভালো মনের মানুষ।

০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ৮:১৬

কাজী হাসান সোনারং বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ!

৬| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:২৩

পুরানা দামান বলেছেন: বিউটি, বিউটিফুল! আবারও দুর্দান্ত পোস্ট বড় ভাই। এখন আমার একটা প্রশ্নের জবাব দিন দয়া করে। এটা আমার কমপক্ষে ৩০ বছরের কৌতূহল।
রফিকউল্লাহ সেলিম ভাইয়ের মাথায় কি কোন চুল আছে নাকি টিভিতে কোঁকড়ানো যেটা দেখা যেতো সেটা উইগ ছিল? ইত্যাদিতে একবার ছিনতাইকারীর অভিনয়ে একটানে মাথার চুল খুলে ফেলেছিল। সেদিনই জেনেছিলাম তিনি আলগা চুল পড়েন।

দেশে গণতন্ত্র ফিরে আসুক এবং উনার মতো ভালো ব্যক্তিরা এলাকার উন্নয়ন করুন এটাই কাম্য।

আর মন্তব্যের উত্তর মন্তব্যের নীচেই ক্লিক করে দিয়েন ভাই। আলাদা কমেন্ট বক্সে না।

০৫ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ৮:১৮

কাজী হাসান সোনারং বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ! সেলিম ভাই অভিনয়ের প্রয়োজনে উইগ ব্যবহার করতেন। এখন সব সময় টুপি পরেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.