নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাজী হাসান সোনারং

আমি একজন নিসর্গচারী। সোনারং তরুছায়া নামে আমার একটি বাগান ও বৃক্ষরোপণ সম্পর্কিত একটি কার্যক্রম আছে।

কাজী হাসান সোনারং › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিংবদন্তী সঙ্গীতজ্ঞ আলাউদ্দিন আলী : ৭০তম জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:১৭


কাজী হাসান
আমাদের মুন্সীগঞ্জ জেলার টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামের একটি একান্নবর্তী পরিবারের কয়েকজন উদ্যোগী সন্তান নিজেদের পেশা সম্প্রসারণের সুবিধার্থে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসতি গড়েন বহু বছর আগে। তাঁরা নতুন গড়া জায়গাটির নামকরণ করেন তাঁদের গ্রামের নামে। বাঁশবাড়ি। এমন গ্রাম বা শেকড় প্রেমের নজির এ দেশে বিরল। সেই বসতিস্থলের পাশ দিয়ে চলতে গিয়ে আমি প্রায় বাড়ির প্রবেশ ফটকের পাশে নেইম প্লেটে লেখা দেখেছি, ‘...আলী, সঙ্গীত পরিচালক, বাংলাদেশ বেতার’, ‘...আলী, সঙ্গীত পরিচালক, বাংলাদেশ টেলিভিশন’, ‘...আলী, যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন’, ‘...আলী, সঙ্গীতশিল্পী, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন’। ওই পরিবারের সন্তান ওস্তাদ শের আলী ছিলেন উপমহাদেশের প্রথম মুসলমান যন্ত্রসঙ্গীতশিল্পী। তাঁর ভাই প্রখ্যাত সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব ধীর আলী মিয়া ও মনসুর আলী ছিলেন এ দেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ এ সমর দাশের সহকারী ও বহু কালজয়ী গানের সুরকার। চাচাতো ভাই বরেণ্য সঙ্গীত পরিচালক আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কাপ্রাপ্ত সঙ্গীতজ্ঞ আলাউদ্দিন আলী।

নব্বইর দশকের মাঝামাঝি বরেণ্য গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান টেলিভিশনের একটি সঙ্গীত বিষয়ক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন তখনই ওই পরিবারে ১৭জন জাতীয় মানের সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। প্রয়াত সঙ্গীত পরিচালক আবু তাহের, আলী আকবর রুপু ওই পরিবারের সন্তান। বর্তমানের আলী আকরাম শুভও। আলাউদ্দিন আলীর বোন জামিলা মুনসুর সেই আমলের একমাত্র মহিলা সেতার বাদক। যিনি বিখ্যাত সুরকার আলী আকবর রুপুর মা। সঙ্গীতজ্ঞ আলাউদ্দিন আলীর কন্যা কণ্ঠশিল্পী আলিফ আলাউদ্দিনও বংশ পরম্পরায় একই পথের যোগ্যতম পথিক। সঙ্গীতজ্ঞ আলাউদ্দিন আলী শিখেছেন সবকিছুই। এসরাজ, পিয়ানো, তবলা-অল্প অল্প সবই পারতেন। বিভিন্ন সিনেমার সঙ্গীতায়োজনে বেহালা বাজাতেন তিনি।

অমর সঙ্গীতজ্ঞ আলতাফ মাহমুদের সাথে কাজ করতেন তিনি। সত্তরের নির্বাচনের প্রচারেও ব্যাপক অংশগ্রহণ করেন। এক বাঙালি সুরকার তাঁকে ধরিয়ে দেন। পাকিস্তনি আর্মি এসে সব মিউজিক ইন্সট্রুমেন্ট ভেঙে ফেলে তাঁর। তাঁর ভাইদের ধরে নিয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হবার পর তিনি তাঁর বন্ধুর জন্য সুর করেন দেশের গান, ‘ও আমার বাংলা মা তোর’! পরে এটা সাবিনা ইয়াসমিনকে দিয়েও গাওয়ান। টিভিতে কাজ করতেন তখন। নায়ক জাফর ইকবালকে গান গাওয়ানোর পুরোটাই তাঁর অবদান। জাফর ইকবালের সব গানের সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক তিনি।

সঙ্গীতজ্ঞ আলাউদ্দিন আলী ১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামের এক সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জাবেদ আলী ও মাতা জোহরা খাতুন। আলাউদ্দিন আলী তাঁর পিতা ওস্তাদ জাবেদ আলী ও ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে প্রথম সঙ্গীতে শিক্ষা নেন। ১৯৬৮ সালে তিনি যন্ত্রশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে আসেন এবং অমর সঙ্গীতজ্ঞ আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজসহ বিভিন্ন সুরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। তিনি একাধারে একজন সুরকার, বেহালাবাদক, গীতিকার এবং সঙ্গীত পরিচালক। ছোটবেলাতেই বেহালা বাজানোর জন্য অল পাকিস্তান চিলড্রেনস প্রতিযোগিতায় পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।

ষাট এর দশকেই প্রথম চলচ্চিত্রে বেহালা বাদক হিসেবে কাজ শুরু করেন। সঙ্গীত পরিচালনায় সত্তরের দশক থেকে পরিচিত নাম হয়ে ওঠেন আলাউদ্দিন আলী। ১৯৭৫ সালে প্রথম সঙ্গীত পরিচালনা করেন সন্ধিক্ষণ চলচ্চিত্রে। এরপর ১৯৭৭ সালে ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’ আর ‘ফকির মজনু শাহ’ চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেন আলাউদ্দিন আলী। তাঁর তৈরি করা গান পায় বিপুল জনপ্রিয়তা। চলচ্চিত্র, বেতার, টেলিভিশন মিলে প্রায় হাজার পাঁচেক গান তৈরি করেছেন তিনি।

আলাউদ্দিন আলী নজরুলসঙ্গীত শিল্পী সালমা সুলতানাকে বিয়ে করেন। তাঁদের মেয়ে আলিফ আলাউদ্দিন একজন সঙ্গীতশিল্পী। আলাউদ্দিন আলী ফুসফুসের প্রদাহ ও রক্তে সংক্রমণের সমস্যায় ভুগছিলেন দীর্ঘদিন। অন্যান্য শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি ক্যানসারের চিকিৎসাও চলছিলো তাঁর। ২০২০ সালের ৯ আগস্ট ৬৮ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

৭০তম জন্মবার্ষিকীতে মহান সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব আলাউদ্দিন আলীকে স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধাভরে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৩৪

সোনাগাজী বলেছেন:



উত্তম পেশার লোকজন, ভালো

২| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২২ রাত ১২:০৯

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: অনেক মেধাবী একজন সুরকার ও সঙ্গীতজ্ঞ ছিলেন। তার প্রায় সবগুলো গানই জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিল।

'ও আমার বাংলা মা তোর' গানটা এ দেশের ৩জন বিখ্যাত শিল্পী গেয়েছেন, সাবিনা ইয়াসমিন, আবিদা সুলতানা ও ফাহমিদা নবী। সাবিনা ইয়াসমিনের কণ্ঠেই এটা সেরা। সাবিনার কণ্ঠে গাওয়া দুটি ভার্সন আছে।

ও আমার বাংলা মা তোর - সাবিনা ইয়াসমিন

ও আমার বাংলা মা তোর - আবিদা সুলতানা

ও আমার বাংলা মা তোর - ফাহমিদা নবী

ভালো পোস্ট, তথ্যবহুল। আলাউদ্দিন আলী ছিলেন জেনেটিক্যালি সুপার ট্যালেন্টেড মিউজিশিয়ান।

৩| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২২ বিকাল ৩:১০

রাজীব নুর বলেছেন: শ্রদ্ধা জানাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.