নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কাজী হাসান সোনারং

আমি একজন নিসর্গচারী। সোনারং তরুছায়া নামে আমার একটি বাগান ও বৃক্ষরোপণ সম্পর্কিত একটি কার্যক্রম আছে।

কাজী হাসান সোনারং › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি কলম, দু’টি অটোগ্রাফ ও অ‌নেকটা দুঃখ!

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১০:১৩

.

কাজী হাসান


বরেণ্য অভিনয়শিল্পী হুমায়ুন ফরীদির আজ ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি আমাকে ২০০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর একটি অটোগ্রাফ দিয়েছিলেন আমার একটি কলম দিয়ে। সেদিন দিনভর খুব বৃষ্টি ছিলো। রিকশা নিয়ে আধাআধি ভিজে পূর্বনির্ধারিত অ্যাপয়েন্টমেন্ট রক্ষা করতে ধানমন্ডির ১০ এ রোড এ হুমায়ুন ফরীদি ভাইয়ের বাসা ‘হ্যাপি হোমস’ এ হাজির হই। যার উল্টোদিকেই হুমায়ূন আহমেদ স্যারের ঢাকার প্রথম বাড়ি। ১৯৯৫ সা‌লের ১৪ এ‌প্রিল (১ বৈশাখ) সেই বা‌ড়ির দ্বা‌রোদ্ঘাট‌নের দিন স্যার আমা‌কে যে‌তে ব‌লে‌ছি‌লেন। ওই সাদা বা‌ড়ি নিয়ে আমার বেশ কিছু স্মৃতি আছে। তা প‌রে বল‌বো।

যাই হোক সেদিন প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে আমার উপস্থিতি ফরীদি ভাইকে বিস্মিত করেছিলো। ফেরার সময় ফরীদি ভাই জানতে চেয়েছিলেন, সেখান থেকে আমি তখন কোথায় যাবো। বলেছিলাম উত্তরায় অ‌ভিনয়‌শিল্পী ঈ‌শিতার বাসায় যে‌তে হ‌বে। অ্যাপয়েন্টমেন্ট আছে। শুনে তিনি আমাকে যেতে না করেছিলেন। বলেছিলেন বাসায় গিয়ে লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতে। আমি সেই বিকেলে আর উত্তরায় যাইনি। ফিরে গিয়েছিলাম হাতিরপুলের বাসায়।

২০০৬ সা‌লের ১২ জুন ফরী‌দি ভাই‌য়ের সা‌থে আমার অ্যাপ‌য়েন্ট‌মেন্ট ছি‌লো। মুন্সীগঞ্জ থে‌কে তাঁর বাসায় গেলাম। সকাল দশটা। দরজা খুল‌লেন সুবর্ণা আপা। বল‌লেন, আজ আপনা‌কে কে‌নো সময় দি‌য়ে‌ছে? আজ তো ওর দেখা পা‌বেন না। ঘটনা হ‌লো পূর্ব নির্ধা‌রিত সম‌য়ে যে‌দিন তাঁর মে‌য়ে দেবযানী বাবার স‌ঙ্গে দেখা কর‌তে আ‌সে, সে‌দিন ফরী‌দি ভাই অন্য কাউ‌কে দেখা দেন না! বাবা, মে‌য়ে সারা‌দিন দরোজা বন্ধ এক রু‌মে গল্প ক‌রে, আড্ডা দি‌য়ে, ফুুল ভ‌লিউ‌মে গান শু‌নে সময় কাটান। ফোন রা‌খেন বন্ধ। বাই‌রে থে‌কে কেউ ডাকলেও তাঁদের কা‌ন পর্যন্ত পৌঁ‌ছে না। দেবযানীর মা ফরী‌দি ভাই‌য়ের প্রথম স্ত্রী মিনু। মা‌সে এক দু`‌দিন বাবা-‌মে‌য়ে পরস্প‌রের সা‌ন্নিধ্য লাভ ক‌রেন। তো সে‌দিন আ‌মি দুপুর অব‌ধি তাঁর বাসার ড্রয়িং রু‌মে ব‌সে ছিলাম। সুবর্ণা আপা একবার দুপু‌রে খাবার জন্য সাধাসা‌ধিও ক‌রেছেন। ফরী‌দি ভাই‌য়ের দেখা না পে‌য়ে আমার একটুও খারাপ লা‌গে‌নি। পিতার অপত্য স্নেহ ও কন্যার ভা‌লোবাসার প্রসঙ্গ‌টি আমা‌কে বরঞ্চ মুগ্ধই ক‌রে‌ছি‌লো। ভর দুপু‌রে ফি‌রে আ‌সি আ‌মি। যখন ধ‌লেশ্বরী নদী পার হ‌চ্ছিলাম, ফোন আ‌সে ফরী‌দি ভাই‌য়ের। জানান, দ‌রোজা খু‌লে জান‌তে পা‌রেন, আমার ফি‌রে যাওয়ার কথা। দুঃখ প্রকাশ ক‌রেন।

জার্মান যাওয়ার আগের দিন, মৃত্যুর ৬ দিন আগে ২০০৪ সালের ৬ আগস্ট শুক্রবার বরেণ্য সাহিত্যিক হুমায়ুন আজাদ স্যার আমাকে তাঁর একটি বই উপহার দিয়েছিলেন ওই কলমে দেয়া একটি অটোগ্রাফসহ। যেহেতু স্যার পরদিন জার্মানিতে চলে যান, আমার অনুমান ওইটিই ছিলো বাংলাদেশের কাউকে দেয়া স্যারের জীবনের শেষ অটোগ্রাফ।

সেই কলমটি আমাকে উপহার দিয়েছিলেন বরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক মোরশেদুল ইসলামের সহধর্মিনী আলোকচিত্রশিল্পী মুনিরা মোরশেদ মুননী আপা। যিনি ১৯৮৯ সালের ২০ জানুয়ারি চলচ্চিত্রকার আলমগীর কবির এর সাথে নগরবাড়ি ফেরিঘাটে গাড়িসহ পানিতে ডুবে গিয়েছিলেন। ওই গাড়িতে থাকা আলমগীর কবির ও চিত্রনায়িকা টিনা খান মারা যান। তাঁরা কিন্তু সাঁতার জানতেন। সাঁতার না জানা মুননী আপা মৃত্যুর খুব কাছাকা‌ছি গি‌য়ে, তা জয় করে ভেসে ওঠেন, বেঁচে ওঠেন। পরবর্তীতে আমি মুননী আপাকে দিয়ে আমাদের ‘সোনারং’ থেকে ‘চলচ্চিত্রাচার্য আলমগীর কবির’ নামে একটি বই সম্পাদনা করিয়েছিলাম। আমাদের সাহিত্য সাময়িকী ‘সোনারং’ এ তিনি নিয়মিত লিখতেনও। যে কারণে তার সঙ্গে আমার কিছুটা সখ্যও তৈরি হয়েছিলো। তিনি ২০০৪ সালের জুলাই বা আগস্ট মাসে কলকাতায় যাবেন, আমার কাছে জানতে চান আমার জন্য কী আনবেন। আমি জানাই, আমার পছন্দ কলম। তিনি এক‌টি কলম আমার জন্য এনেছিলেন। যে কলমে অটোগ্রাফ পেলাম প্রিয় দুই শ্রদ্ধেয় প্রিয়ভাজন ‘হুমায়ুন’ এর। যাঁরা কেউ আর পৃথিবীতে নেই। আর অটোগ্রাফ দুটোও আমার হাতছাড়া হয়ে গেছে।

আ‌মি যখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র তখন বাংলা‌দেশ টে‌লি‌ভিশ‌নে সে‌লিম আল দীন এর লেখা `ভাঙ‌নের শব্দ শু‌নি` না‌মে এক‌টি ধারাবা‌হিক নাটক প‌রিচালনা কর‌তেন না‌সির উদ্দীন বাচ্চু ভাই। বেশ জন‌প্রিয় হ‌য়ে‌ছি‌লো নাটক‌টি। তা‌তে সেরাজ তালুকদার না‌মের এক বৃদ্ধ গ্রাম্য মাতব্ব‌রের চ‌রি‌ত্রে দুর্দান্ত অ‌ভিনয় ক‌রে‌ছি‌লেন টগব‌গে যুবা হুমায়ুন ফরী‌দি। নাটক‌টির প্রথম‌দি‌কে আ‌মি তাঁর নাম জানতাম না! নাম‌টি জানায় সহপাঠী হুমায়ুন ক‌বির মিয়াজী। এক হুমায়ু‌নের কা‌ছে আ‌রেক হুমায়ু‌নের নাম জানতে পারা।

আজ ১১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে প্রিয় সংস্কৃতিজন হুমায়ুন ফরীদি’র প্রতি প্রকাশ করছি বিনম্র শ্রদ্ধা।
.

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:১৪

স্মৃতিভুক বলেছেন: খুব ভালো লাগলো আপনার স্মৃতিচারণমূলক লেখাটা পড়ে। আবেগের বাহুল্য নেই, কিন্তু হৃদয় ছুঁয়ে যায়।

ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৮:৩৯

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: ভালো লাগলো আপনার স্মৃতিচারন পড়ে।

৩| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টি পড়ে ভালো লাগলো।

৪| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৬

নাহল তরকারি বলেছেন: সুন্দর লেখা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.