নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সত্য কথা বলা এবং সুন্দর করে লেখা অভ্যাসের উপর নির্ভর করে
১৯৪৮ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ফাল্গুন মাস। তখন মনে হয় বসন্তকাল ছিলো। পূর্ববাংলায় পলাশ ফুটেছে পলাশ ফুটেছে, কোকিল ডাকছে, দখিনা বাতাস বইছে। পূর্ববাংলা থেকে নির্বাচিত গণপরিষদের ধীরেনদ্রনাথ দত্ত বাংলার মাটি, মা আর মানুষের কথা পেরে বসলেন পশ্চিম পাকিস্তানের পার্লামেন্টে। পাকিস্তানের স্থপতি মুহাম্মদ আলী জিন্নার সভাপতিত্ত্বে শুরু হলো প্রথম অধিবেশন। পার্লামেন্টে একটা নতুন বিধির প্রস্তাব করা হয়েছে। বিধিটা কি?? সেটা হলো গণ পরিষেদের সরকারি ভাষা হিসেবে ইংরেজির সঙ্গে উর্দুও বিবেচিত হবে। ফুঁসে উঠলেন বাংলা মাটির ছেলে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। নোটিশ দিলেন তিনি। বললেন ছোট, খুবই ছোট একটা সংশোধনী আছে। সুযোগ আসলো দুদিন পর। ধীরে ধীরে উঠে দাড়ালেন তিনি। পায়ের নিচে পার্লামেন্টের পাথরের মেঝেতে দাড়িয়ে তিনি অনুভব করলেন বাংলার মাটির গন্ধ। জানান দিচ্ছে তার পায়ের নিচে মাটি আছে, তার শরীরের মধ্যে রক্ত আছে। আছে মায়ের কাছ থেকে শেখা ছোট বেলার ভাষা। তিনি বললেন- “মিস্টার প্রেসিডেন্ট স্যার, আমার সংশোধনী ২৯ এর ১নং উপবিধির ২ নং লাইনে ইংরেজী/শব্দের পর অথবা বাংলা শব্দদুটি যুক্ত করা হোক।”
বাংলার বসন্তকালের সমস্ত শিমুল,আম,পলাশ আর জাম গাছের মুকুলগন্ধমাখা ডালপালার ফাকে এক কোটি কোকিল কুহু কুহু বরে ডেকে উঠলো। ধীরেন্দ্রনাথ বলতে লাগলেন- “আমি এই সংশোধনীটা ক্ষুদ্র প্রাদেশিকতার মানসিকতা থেকে উত্থাপন করিনি। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যা ছয় কোটি নব্বই লাখ। এর মধ্যে বাংলায় কেথা বলে টার লাখ চল্লিশ লক্ষ লোক। তাহলে স্যার কোনটি দেশের রাষ্ট্রভাষা হওয়া বঞ্জনীয়?? স্যার এই জন্য আমি সারাদেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর মনোভাবের পক্ষে সোচ্চার হয়েছি। বাংলাকে একটা প্রাদেশিক ভাষা হিসেবে গণ্য করা যাবে না। এই বাংলা ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহন করতে হবে।” তাকে সমর্থন জানালেন বাংলার আরেক সন্তান প্রেমহরী বর্মণ।
উঠে দাড়ালেন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান। তিনি বললেন- “এটা কোন নিরীহ সংশোধনী নয়, এটা হলো পাকিস্তানের মুসলমানদের মধ্যে যে ইস্পাত কঠিন ঐক্য প্রতিষ্ঠিত আছে তা বিনষ্ট করা। পাকিস্তান একটা মুসলিম রাষ্ট্র, তাই মুসলিম জাতির ভাষা হিসেবে উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা করতে হবে।” এবার উঠে দাড়ালেন বাংলার আরেক সন্তান ভুপেন্দ্র কুমার দত্ত। তিনি বললেন- “প্রধানমন্ত্রী এমন কিছু মন্তব্য করেছেন, যা তিনি না করলেও পারতেন।”
এবার কথা বললেন পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন। তিনি বললেন- “আমি নিশ্চিত, পাকিস্তানের বিপুল জনগোষ্ঠী উর্দুকেই রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে।”
তার একথা শুনে বাংলার আরেক সন্তান শ্রীশচন্দ্র চট্রোপাধ্যায় বললেন- “পাকিস্তান একটা মুসলিম রাষ্ট্র, একথাটা পরিষদের নেতাদের মুখে শুনে খুব দুঃখ পেয়েছি। এতদিন আমার ধারণা ছিলো, পাকিস্তান গণপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র, এই রাষ্ট্রে মুসলিম আর অমুসলিমদের সমান অধিকার।”
পরিষদের সভাপতি জিন্নাহ সংশোধনীটা কন্ঠভোটে দিলেন। কিন্তু কন্ঠভোটে ধীরেনন্দ্রনাথ দত্তের প্রস্তাবটা নাকচ হয়ে গেলো।
এক কোটি কোকিল তীব্রস্বরে ডেকে উঠলো পূর্ববাংলায়।এক লক্ষ শিমুল মাথা ঝাঁকালো। এক লক্ষ পলাশ পাপড়িতে জ্বললো আগুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল আর পুরান ঢাকার নানা স্কুল থেকে ছেলেমেয়েরা বেড়িয়ে পড়তে লাগলো স্লোগান দিতে দিতে পাখির ঠোটে ঠোটে বার্তা রটে গেলো। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। সেই ১৯৪৮ এর ফাল্গুনেই।
১১ই মার্চ হরতাল। পিকেটিং করতে হবে। ১৪৪ ধারা ভাঙ্গতে হবে।ছাত্রনেতা শেখ মুজিবের জলদগম্ভীর কন্ঠ বেজে উঠলে, অলি আহাদ সমর্থন দিলেন। তোয়াহা, শওকত, শামসুল হক, অধ্যাপক আবুল কাশেম, নাইমুদ্দিন, আবদুর রহমান চৌধুরী, কামরুদ্দিন, তাজউদ্দিন, সৈয়দ নজরুল হরতালের দিন কে কোন জায়গায় পিকেটিং করবেন ঠিক করা হলো।শুরু হলো পিকেটিং। কিন্তু পুলিশ ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার অভিযোগে ছাত্রদের উপর ব্যাপক লাটিচার্জ করা শুরু করলো। এতে অনেক ছাত্র জনতা গুরুতর আহত হলেন। ভাষা আন্দোলন আরও জোরদার হয়ে উঠলো। এতে ছাত্রদের আন্দোলন দমাতে কুটচাল চাললেন পূর্ববাংলার মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন। ছাত্রদের আন্দোলন থামাতে ছাত্রদের সাথে আট দফার এক চুক্তি সাক্ষর করলেন তিনি।যাতে বলা হয় উর্দুর পাশাপাশি বাংলাও রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা পাবে। কিন্তু পূর্ব বাংলা সফরে এসে ২১ ও ২৪ শে মার্চ আলাদা আলাদা সভায় জিন্নাহ এই চুক্তির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে আবারও ঘোষনা করলেন- “উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।” এই ঘোষনার পরেই আগুনের মত ভাষা আন্দোলন ছড়িয়ে পড়লো সারা বাংলা। শুধু ছাত্রদের আন্দোলন রুপ নিলো সার্বোজনিন আন্দোলনে।এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান আততায়ীর গুলিতে নিহত হলে খাজা নাজিমউদ্দিন তার স্থলাবিশিক্ত হন।
১৯৫২ সালের ২৭ শে জানুয়ারি পূর্ব বাংলা সফরে এসে তিনিও জিন্নার প্রতিধন্নি করে বলেন । উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। এবার ধের্যের বাঁধ ভাঙ্গে বাঙ্গালির। ৪ই ফেব্রুয়ারি সারাদেশে হরতাল পালন করা হয়।চলতে থাকে লাগাতার আন্দোলন। ২০শে ফেব্রুয়ারি ছিলো প্রাদেশিক ব্যবস্থাপনা সভার বাজেট অধিবেশন। এই অধিবেশনের জন্য সকল সভা, সমাবেশ, মিছিল নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। আন্দোলনকারীরা ভাষার দাবীতে এই কার্ফু ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নেয়।সেই মোতাবেক ৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে মিছিল নিয়ে পরিষদ ভবনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।বিকাল ঠিক ৩ টা ৩০ মিনিট। হঠাৎ পুলিশ গুলিবর্ষণ করতে শুরু করে মিছিলের উপর।আর সাথে সাথে মাটিতে লুঠিয়ে পড়লেন সালাম, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ আরও নাম না জানা অনেকেই।২২ শে ফেব্রুয়ারি এই আন্দোলন গণআন্দোলনে রুপ নেয়।তখন প্রাদেশিক পরিষদ চলতি অধিবেশনেই বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে একটা বিল আনে।তবে এই বিলকে পাশ করতে বাঙ্গালিকে অপেক্ষা করতে হয় ১৯৫৬ সালের ২৯ শে জানুয়ারি পর্যন্ত যেদিন পাকিস্তানের নতুন সংবিধান কার্যকর হয়।
এভাবেই সালাম, জব্বার, বরকত, সফিউরের রক্তের বিনিময়ে আমরা পেলাম আমাদের মায়ের মুখের ভাষা বাংলা। তাই আজ আমরা বলতে পারি- “মোদের গরব, মোদের আশা আ মরি বাংলা ভাষা।” তাই আজ বুকে হাত দিয়ে গাইতে পারি- “আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি”।
২| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৪৮
অদৃশ্য যোদ্ধা বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
©somewhere in net ltd.
১| ২৬ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৩৯
রানার ব্লগ বলেছেন: এক কোটি কোকিল তীব্রস্বরে ডেকে উঠলো পূর্ববাংলায়।এক লক্ষ শিমুল মাথা ঝাঁকালো। এক লক্ষ পলাশ পাপড়িতে জ্বললো আগুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল আর পুরান ঢাকার নানা স্কুল থেকে ছেলেমেয়েরা বেড়িয়ে পড়তে লাগলো স্লোগান দিতে দিতে পাখির ঠোটে ঠোটে বার্তা রটে গেলো। রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। সেই ১৯৪৮ এর ফাল্গুনেই
মন ভরে গেল !!!