নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য কথা বলা এবং সুন্দর করে লেখা অভ্যাসের উপর নির্ভর করে

অদৃশ্য যোদ্ধা

সত্য কথা বলা এবং সুন্দর করে লেখা অভ্যাসের উপর নির্ভর করে

অদৃশ্য যোদ্ধা › বিস্তারিত পোস্টঃ

অকালে চলে যাওয়া এক ক্রিকেটার সেতুর গল্প

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪২

২০০৭ সালের ১৬ই মার্চ পুরো ক্রিকেট পাগল বাঙ্গালি জাতির মনে শুধু উৎকন্ঠা। কারণ আর মাত্র ২৪ ঘন্টা পরই ক্যারিবিয় দ্বীপে বিশ্বকাপের নিজেদের প্রথম ম্যাচে ফেবারিট ভারতের মুখোমুৃখি হবে বাশার বাহিনী। কেমন করবে টাইগাররা প্রথম ম্যাচে? পারবে কি আরেকটি ভারতবধের জন্ম দিতে??? কিন্তু মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে স্তব্ধ হয়ে গেলো পুরো দেশের ক্রিকেট প্রেমীরা। কারণ টিভির শিরোনামে তখন ভাসছে “সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশ দলের অলরাউন্ডার মানজারুল ইসলাম রানা এবং তার এক বন্ধু আর বেঁচে নেই” ।

সুদুর ক্যারিবিয় দ্বীপ থেকে শুনল বাশার বাহিনী, শুনলো তার সবচেয়ে কাছের বন্ধু কৌশিক। বন্ধু হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে হারিয়ে দিলেন ভারতকে। এই কথাগুলো প্রায় সবারই জানা। কিন্তু ওই যে বলা হলো রানা এবং তার এক বন্ধু সড়ক দূর্ঘটনায় আর নেই। আপনারা কি জানেন সেই বন্ধুটি কে ছিলো?? তার বন্ধুটি ছিলো আরেক ক্রিকেটার সাজ্জাদুল হাসান সেতু। আজ আমরা অনেকেই রানাকে জানি কিন্তু সেতুকে জানি না। জানবেই বা কিভাবে সেতুর নামে নেই মাঠের কোন অংশের নাম। রানার নামে যখন স্টেডিয়ামের একটা স্ট্যান্ডের নামকরণ করা হলো, তখন সেতুর নামের কোন একটার নামকরণের দাবী তুলেছিলো তার পরিবার। কিন্তু বিসিবি থেকে বলা হয়েছে যেহেতু সে জাতীয় দলে খেলেনি তাই তার নামে কিছু্ দেওয়া হবে না। এখনও মাঝে মাঝে অনেকে রানার বাড়ি গিয়ে খোঁজ খবর নেয়। সেদিন হোয়াইটমোর গেলেন, মাঝে মাঝে ম্যাশও যায়। কিন্তু সেতুর বাসায় কেউ উঁকি দেয় না। সেতু হয়ত জাতীয় দলে খেলেনি, কিন্তু জাতীয় লিগে খুলনা দলের অসাধারণ ক্রিকেটার ছিলেন তিনি। মানজারুল ইসলাম রানাই ছিলেন এই দলের ক্যাপ্টেন।ঘরোয়া ক্রিকেটে এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ছিলেন মোটামুটি পরিচিত নাম। মৃত্যুর আগের দিন জাতীয় লিগের যে ম্যাচটি খেলেছিলেন, প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে সেটি ছিল তার ৫০তম ম্যাচ। ৩টি শতক ও ১২টি অর্ধশতকে রান করেছিলেন ২ হাজার ৪৪৩। ৩৯টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে ১টি শতক ও ২টি অর্ধশতকে ৬৮০ রান।



ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটেও খেলেছেন নিয়মিতই। খেলেছেন ধানমণ্ডি ক্লাব, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, সিটি ক্লাবে। কিন্তু অাজ সবার কাছে অপরিচিত এক নাম সাজ্জাদুল ইসলাম সেতু।

যেভাবে হারিয়ে গেলেন সেতুঃ‬ আগের দিনই ফতুল্লায় জাতীয় লিগের ম্যাচে ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে খুলনার হয়ে মাঠে নেমেছিলেন রানা ও সেতু। রানা তখন খুলনার অধিনায়ক, সেতু নির্ভরযোগ্য টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। চার দিনের ম্যাচ শেষ করে রাতেই খুলনা ফিরে পর দিন দুজনে খেলেছেন স্থানীয় একটি ম্যাচ।

ম্যাচ শেষে কিটব্যাগ রিকশায় তুলে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন সেতু। পেছন থেকে ডাকেন খুলনা দলেরই সতীর্থ, বাংলাদেশের হয়ে দুটি টেস্ট খেলা উইকেটকিপার মোহাম্মদ সেলিম, ‘সেতু, চল আব্বাসের হোটেল থেকে খেয়ে আসি।’ সেতুর মনটা সায় দেয় না, ‘নারে, মা খাবার নিয়ে বসে আছে, তোরা যা।’ সেলিম-রানারা তবু জোর করেন, ‘চল, বেশি দেরি হবে না।’

বন্ধুদের আর উপেক্ষা করতে পারেন না সেতু। এই রিকশাতেই কিটব্যাগ পাঠিয়ে মাকে খবর পাঠিয়ে দেন, ‘মাকে গিয়ে বলিস খেয়ে নিতে। রাতে ফিরে একসঙ্গে খাব।’ একটি মোটরসাইকেলে সেলিম ও সেতু, আরেকটি মোটরসাইকেলে রানা ও আরেক ক্রিকেটার শাওন, চারজনে চললেন খুলনার অদূরেই চুকনগরে বিখ্যাত আব্বাস হোটেলের খাসির মাংসের টানে। কে জানত, সেটিই হবে শেষ যাত্রা।
বাইকে পেছনে বসে রানার সঙ্গে বারবার খুনসুটি করছিলেন শাওন। বিরক্ত রানা মাঝ পথে গিয়ে শাওনকে সেলিমের বাইকে পাঠিয়ে নিজের মোটরসাইকেলে নিয়ে আসেন সেতুকে। এক পর্যায়ে সেলিম ও শাওন অনেকটা এগিয়ে গিয়েও পেছনে রানাদের দেখতে না পেয়ে আবার ফিরে আসে পেছন দিকে। পথেই দেখতে পান তারা মর্মান্তিক সেই দৃশ্য। রাস্তায় পড়ে আছে রানা ও সেতুর রক্তাক্ত শরীর। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু।

পুরো ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন সেতুর প্রতিষ্ঠিত ‘পপুলার প্লাস’ সংগঠনের একনিষ্ঠ এক সদস্য মো: হাশেম আলি। সেতুর ঘনিষ্ঠ এই সঙ্গী জানালেন, সম্ভবত দ্রুতগতির একটা অ্যাম্বুলেন্স ধাক্কা দিয়েছিল রানা-সেতুর মোটরসাইকেলকে। মাথায় আঘাত পেয়ে মৃত্যু হয় সেতুর।
রানার বয়স ছিল ২৩ বছর ছুঁইছুঁই, সেতুর ২৮।

সেতুর মায়ের আক্ষেপঃ‬ “এই যে খেলা চলছে, আমি জানি। যখনই খেলা-টেলা হয়, সবই জানি। আমার ভেতরটা কেঁদে ওঠে। অনেক সময়ই রানাদের বাড়িতে অনেকে আসে, আমি জানি, খবর পাই। আমার বাড়ি কি খুব দূরে? কেউ আসে না।একটা গ্যালারি না হোক, মাঠে কিছু একটার নামকরণ করা যায় সেতুর নামে। কিছু না হলে অন্তত বাড়ির পাশের রাস্তাটি তো সেতুর নামে করা যায়।”

এভাবেই হারিয়ে যায় সেতু। সেতুকে কেউ মনে রাখেনা, রাখবে না..............

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:০৬

মহা সমন্বয় বলেছেন: সেদিন এত খারাপ লেগেছিল যে তা আর বলে বুঝাতে পারব না। সেতুর কথা জানতাম না আজকে আবার সেই অনুভুতি হচ্ছে :((

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩৭

অদৃশ্য যোদ্ধা বলেছেন: কেউ তার মায়ের খোঁজ খবর পর্যন্ত নেয় না.......

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.