![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কথা হয়েছিলো সর্বস্ব হারানো এক মায়ের সাথে,১৯৭১ এ তার বয়স ছিলো মোটে ১৯ বসর।যুদ্ধ শুরুর আগে চোখ ভরা স্বপ্ন ছিলো তার,সেকথা দিয়েই শুরু করলেন মা তার জীবনের গল্প।
আমার নাম জামিলা,যুদ্ধের সময় বয়স আছিলো ১৯ বসর,ঐ সময় আমাগো একই গ্রামের পোলা মাহাবুব এর সাথে বালো লাগা ছিলো,দেখতে শুনতে বালো ছিলাম হেরলইগা ওর বাসার কেউ আপত্তি করতো না,বিয়া হইবো এটাও মোটামুটি ঠিক ছিলো।।হঠাট শুনি দেশ স্বাধীন হইতাছে,স্বাধীন হওয়ার ব্যাপারটা কি সেটা বুজতে ছিলাম না।মাহবুবরে জিগাস করি যে স্বাধীন হইলে কি হইবে? ও বললো..স্বাধীনতা হলো ইচ্ছে মতো মা কে জড়িয়ে ধরা,বাবার হাত ধরে বেড়াতে যাওয়া,বোন কে আলতা কিনে দিতে পাড়া,তোমার হাতটি ধরে নির্ভিগ্নে একটা ঘর সাজাতে পাড়া।।মনে মনে ভাবলাম স্বাধীনতা পাওয়া তো ভালো ব্যপার।।
ও যুদ্ধে গেলো বাসায় না বলে,ওর বাবা মা কত ভাবে আমারে বকলো যে আমি কেনো ফিরাইলাম না,,কিছু কইলাম না আমি।কারন আমার দুই চোখ ভরা স্বপ্ন ও দেশ স্বাধীন কইরা ফিরা আইলে আমাগো নতুন জীবন শুরু হইবে।
একদিন মাঝ রাইতে ও আমার ঘরের দরজায় আইসা আমারে ডাকলো,দরজা খুলতেই দেহি ওরা ৪/৫ জন,মাহাবুব কইলো এই বস্তাডা রাখো,পড়শু রাইতে নিয়া যামু।।কি আছে এইডায়?ও বললো স্বাধীনতা আছে,এগুলা না থাকলে স্বাধীনতা পামুনা।।তারপর আমি অইডারে জান দিয়া আগলাইয়া রাখলাম।দুই দিন পড় আইসা নিয়া গেলো,আর একদিন আরো কিছু অস্ত্র দিয়া গেলো আর কইলো এগুলা লাকড়ির বস্তায় ভইরা রাইতে রহিমের নৌকায় দিয়া আইতে।ওগো রে ভাত খাওয়াইয়া আমি গেলাম বস্তা লইয়া নদীর পাড়।ফেরার পথে রমজান রাজাকার এর লগে দেহা,হারামজাদা মিলিটারিগো চামচা।জিগাইলো কই গেছিলি? আমি কইলাম গাঙ্গে ডুইবা মরতে গেছিলাম। হারামজাদা কয়,মাহাবুব কই?ওয় মুক্তি হইছে শুনলাম,আর তুই নাকি হেগো লইগা কাম করতাছোস?গেরামে সাহেবেরা আছে হেগো লইগগাও মাঝে মইদ্যে কাজ কাম কইরা দে,লাভ অইবো। আমি আর কিছু কইলাম না,বাসায় গেলাম।
হের দুইদিন বাদে আর একটা ব্যাগ অস্ত্র দিতে গেলাম নদীর পাড়ে,রমজান আর কয়ডা মিলিটারি টহল দিতেছি, আমি কিছু বুইজা উঠার আগেই আমারে মুক চাইপা ধইরা লইয়া গেলো ক্যাম্পে।ওগুলা মুসলমান না,ওগুলা মানুষ না...কুত্তা।১৪ টা দিন আমার উপড় দিয়া যেই যন্ত্রনা গেলো সইতে না পাইড়া গলায় শাড়ি পেচাইয় মরতে চাইছিলাম জানোয়ারের বাচ্চারা আমার গায়ে থিক্কা শাড়িডাও নিয়া গেলো,১৪ ডা দিন আমি কাপড় ছাড়া,একটা রুটি ছাড়া কিছুই খাবার পাই নাই,যেদিন আমার জানডা আমার নাকের ডগায় আসলো দেহ থেকা বাইর অইয়া যাবার লাগি হেইদিন হারামজাদারা মনে করলো আমি মইরা গেছি।আমারে লাশ মনে কইরা নদীর ধারে ফালইয়া আইলো।
আমার হুশ আসার পর দাড়াইতে পাতাছিলাম না,লজ্জায়।পড়নে কিছু নাই।সামনে দেখি লাশ ভরা বস্তা,লাশটারে বাইর কইরা বস্তা দিয়া শরীরডারে ঢাকলাম,বাড়ির দিকে যাইতেছি এর মইদ্যে হেই রমজাইনা আমারে দেইখা কইলো কর আরো মুক্তি যুদ্ধ কর,,এহন তোর সমাজেও যায়গা হইবো না।তোর নামে শালীস হইবো।শালীসদাররা সিদ্ধান্ত নিলো আমি আমার পরিবারের লগে থাকলে হেগোরে একঘরা করবো,গেলাম গিয় নদীর পাড়ে,গেরাম ছাড়লাম না।মাহবুব স্বাধীনতা নিয়া আসবো এই আসায়।।
দুই মাস পড় স্বাধীন হইলো দেশ,মাহবুব ও ফিরা আসলো,সবকিছু শুনে আমারে গ্রহনও করতে চাইলো,কিন্তু ওর বাপ মা কইলো আমারে বিয়া করলে হেরা আত্মহত্যা করবে,কারন তখন আমি ৩ মাসের গর্ভবতী।।পেটের বাচ্চার বাপের ঠিক নাই তাই এইটা আমার পাপের ফল।আমার আশাটুক শেষ হইয়া গেলো।কিছুদিন পর মাহাবুব আর ওর লগে যারা যুদ্ধ করছিলো হেগোরে দেশ কইলো বীরমুক্তি যোদ্ধা,তারা অস্ত্র হাতে দেশ স্বাধীন করছে।।
অনেকদিন পড় আমার এবং আমার মতন যারা নিজেগো বিলাইয়া দিয়া দেশ স্বাধীন এ অংশ নিছিলো হেগোর খোঁজ পড়লো।।আমাগো নাম দিলো বীরাঙ্গনা....কেনো আমাগো খুইজা আবার বাইর করলো?আবার সমাজের সবাইর সামনে উলঙ্গ করলো।।মাইয়াডা নিয়া আছিলাম তো একরকম নাম পড়িচয় গোপন করে,আশা ছিলো ম্যাট্রিক টা পাশ করলেই বিয়া দিমু।আশা আর পুড়া হইবো না,একবার স্বাধীনতা পাইতে গিয়া আশাডারে ধংস করছি আর এহনে সেই ধংসের খেতাব লইতে গিয়া শেষ আশাডাও শেষ করলাম।কেন আমরা বীরঙ্গনা নাম নিয়া সমাজে সবাইরে জানামু যে ৭১ এ আমাগো শরীর ছিন্ন কইরা স্বাধীনতা আনছিলাম,কেনইবা মাইনসে এহন আমাগো দেইখা কইবো এই বেটি ক্যাম্পে ছিলো,ওর মাইয়া জারজ সন্তান।।
আমরাও যুদ্ধ করছি, তাইলে আমরা কেনো মুক্তি যোদ্ধা না???কেনো বীরঙ্গনা খেতাব???তার থেকা আমার মাইডারে বিয়া দিয়া দেন।আমার খেতাব চাইনা।
পাঠক বন্ধুরা আসুন না আমরা তাদের আর বীরঙ্গনা না বলে বীর যোদ্ধা বলে এতটুকু সম্মানে সম্মানিত করি।
২| ২৯ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:১৯
শিখা আমিন বলেছেন: thanx
৩| ০৯ ই এপ্রিল, ২০১৫ দুপুর ১:৪৫
দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: স্বাধীনতা হলো ইচ্ছে মতো মা কে জড়িয়ে ধরা,বাবার হাত ধরে বেড়াতে যাওয়া,বোন কে আলতা কিনে দিতে পাড়া,তোমার হাতটি ধরে নির্ভিগ্নে একটা ঘর সাজাতে পাড়া।
এর থেকে সুন্দর করে স্বাধীনতা আমি বোধ হয় আগে পড়ি নি। অসাধারণ।
মুগ্ধ হতেও ভুলে গেছি। অবাক হতেও ইচ্ছে হচ্ছে না। শুধু গলার কাছে কি যেন জমাট বাঁধছে।
ভালো থাকবেন।
৪| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৪
শিখা আমিন বলেছেন: ভাই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমার নিজস্ব অনুভূতিটা কে সম্মান দেয়ার জন্য।আপনি এত সুন্দর করে প্রশংসা করলেন এতে করে আমার লিখবার মনটা সাহসী হলো।
©somewhere in net ltd.
১|
২৯ শে মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৩:১৫
লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: সকল বীরাঙ্গনাদের শ্রদ্ধা --- তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা