![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি পাঠক হিসেবে সর্বভূক, যখন যা পাই তাই পড়ি। যেহেতু একজন পাঠক বলছি, তাই লেখা অগোছালো বা বেখাপ্পা মনে হতে পারে। সেরকম কিছু মনে হলে এই অধমকে নিজগুণে ক্ষমা করে দেবেন আশাকরি! একজন লেখক লিখতে বসেন সর্বাগ্রে নিজের আত্মতৃপ্তির আশায়, নিজের ভাবনাগুলো ফুটিয়ে তোলার এবং তা অন্যের মনে ছড়িয়ে দেবার আশায়। এছাড়াও পাঠকের মনে ঠাঁই পাবার একটা তাগিদও থাকে হয়তো। আর এসবের জন্য যা প্রয়োজন তা হলো সহজতর ভাষা । জটিল-কুটিল, শব্দধাঁধার জট মেশানো কোন গল্প বা প্রবন্ধ যখন পড়ি আমি দাঁতে দাঁত ঘষি, আমার গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে। কবিতায় শব্দের জটিল ধাঁধা মেনে নেয়া যত সহজ, গল্পে বা প্রবন্ধে ততটা নয়। আর বিশাল একটা লেখা যদি জটিল শব্দের ভারে নুয়ে থাকে তা পাঠকের সময় খেয়ে নেয়। আজকাল এই তীব্র ছুটে চলার যুগে কে চায় খামোকা সময় নষ্ট করে কষ্ট করে জটিল কোন লেখার পাঠোদ্ধার করতে, আমার মত দু-একজন বেকার ছাড়া ?/:
আহমাদ আবদুল হালিম নামের একজন ব্লগারের অসাধারন একটি লেখা
মোহনা,
কেমন আছো ? হয়তবা ভাল , হয়তবা খারাপ, নয়তো খুবই ভাল। অনেকদিন হলো তোমার সাড়া পাইনা। তাই মনের তাগিদে আশ্রয় নিলাম রবীন্দ্রনাথে। মানে তোমাকে চিঠি লিখতে বসে গেলাম। জানো , আজ কিছুদিন থেকে, মনের ভেতরে একটা প্রশ্ন স্বর্ণলতার মতো উঁকি দিচ্ছে। অর্থাৎ "ভাল লেখা ও ভাল লেখক" । তোমাকে মনের-গহিনে বেড়ে ওঠা কিছু কথাকে আদরের নির্মল হাত বুলিয়ে পাঠিয়ে দিলাম।
মানুষ্য প্রবনতা প্রথাগত সমাজব্যাবস্থার সঙ্গে মিলেমিশে, সখ্যতা করে এগিয়ে চলা বেড়ে ওঠা । ছোট্ট শিশুর বেড়ে ওঠার মধ্যে সামাজিক ধর্মীয় ও নৈতিক বিধানগুলো এক অদৃশ্য শক্তির মতো কাজ করে। মনে হয় অদৃশ্য সুতোর আড়ালে আরেকজনের লালন প্রক্রিয়া। কিন্তু ব্যতিক্রম একটা ভাল লেখা, একজন প্রকৃত লেখক। (যদিও অদৃশ্য শক্তির বেধে দেয়া সীমার বাইরে কেউ নয়।) প্রথাগত সমাজব্যবস্থাকে অতিক্রমকরে গড়ে তুলেন নিজস্ব চিন্তার এ জগত। যেখানে বন্ধু প্রেমিক কিংবা প্রেমিকা নেই ।সম্পূর্ণ আপন আপন চিন্তার মোহগ্রস্ত বোধ। আমি লেখক নই। একজন ঝানু পাঠক। আজ আমি সৃজনশীল লেখকের কথা বলবো। ব্যাকরণ -শুদ্ধ প্রায়োগিক শব্দের বিন্যাস নয়। নিজস্ব চিন্তার আঁকাআকিঁ। যেখানে মনন, আবেগ, চিন্তা'র সৃজন প্রক্রিয়া মিলে একটি রসায়ন সৃষ্টি হয় । আর আমি মনেকরি আলোচ্য রসায়ন প্রক্রিয়া দ্বারা সৃষ্ট পদার্থই হচ্ছে মাপকাঠি।
থাকগে, মূল কথায় আসি
মোহনা, জানো , একটি ভালো লেখা কিংবা একজন ভালো লেখকের জন্ম হয় কিভাবে ? উত্তর, তার কোনো নিয়ম নেই। মানুষের জন্মের প্রক্রিয়া বৈজ্ঞানিক নিয়মে তা দেখিয়ে দেয়া ও সম্ভব। শুক্রানু আর ডিম্বানুর মিলিত রূপ একজন মানুষ। কিন্তু কোন পদ্ধতির মাধ্যমে একটি শিশুকে সেক্সপিয়র, ডা ভিঞ্চি , রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জীবনানন্দ , মোহিতলাল, হালের মান্নান সৈয়দ হিসেবে গড়ে তোলা যায়(?) আজো অমীমাংসীত ।
'শঙ্খ ঘোষ' একবার তরুণ লেখকদের উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, "উপদেশ হচ্ছে কোনো উপদেশই শুনবেন না।" এই কথাটার মঝে গভীরতা খুব বেশী । আমি অন্তত, বুঝে ওঠতে পারিনি । বলতে পারেন কতো সহজ কথা ! আমি বলি সহজ শব্দের গভীর বোধ। 'টমাস মান' তাই বলেছিলেন, "লেখক হলেন সেই ব্যক্তি যার কাছে লেখাটা অন্য যে-কোনো ব্যক্তির চেয়ে কঠিনতম কাজ।" তাহলে লেখাটা আসলে কী ? লেখকের কাছে লেখা কঠিন (!) তার মানে কী ? আমরা তো জানি, লেখকের কাছে সবচেয়ের সহজ কাজ লেখা । আমাদের হুমায়ুন আহমেদ জ্বলন্ত প্রমাণ। (আমার বড্ড পছন্দের একজন মানুষ।) 'ফকনারে'র আরো একটা কথা যোগ করি, তাঁর মতে, "লেখক যতই অন্য লেখকদের পছন্দ করুণ না কেন, তিনি আসলে তাঁদের ঈর্ষাও করেন, তিনি তাদের সবাইকে পার হয়ে নিজের লেখাটাই লিখতে চান।" এখানে ঈর্ষার আড়ালে প্রতিযোগিতার চিত্র এঁকে দিয়েছেন।
মোহনা, 'লেখা কি আসলেই রক্তকে কালিতে পারিণত করা? নাকি কালিকে রক্ত করে তোলা?' প্রত্যেক লেখকের আলাদা জগত। নিজস্ব আকাশ। নিজস্ব চেতন। নিজস্ব বর্ণন। একজন রবীঠাকুর, একজন নজরুল, প্রমথ চৌধুরি , একজন শামসুর রাহমান থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। প্রত্যেক লেখকই আলাদা হয়ে যান। তিনি না চাইলেও তাকে আলাদা হয়ে যেতে হয়। বিনয় মজুমদার তো বলেছিলেন, "তিনি তো জীবনানন্দের মতোই লিখতে চান কিন্তু পারেন না।"
অথচ, কতোজন লিখক নিজের স্বাভাবিক লেখাটিইবা লিখতে পারেন ? আমি অন্তত, দশ লাইন লিখতে ৫০০লাইন পড়তে হয় । এজন্য হয়তোবা আমরা পড়ার তাগিদ দিই । কারণ আমরা নিজেরা সৃষ্টিতে অপারগ। বোধকরি, মৌলিকত্বের চেয়ে বড় হল এই কাজটা করে যাওয়া এবং সীমাবদ্ধ আলোক রেখায় প্রত্যেক লেখকের উচিত নিজস্বতা বা স্বকীয়তা রক্ষা করা। আমি একটা লেখায় সাহিত্যকে শিল্প বলেছিলাম। আদতে ব্যাপারটা তো মানুষের কথা বলা। মানুষের ভেতরে অনুভূতির সৃষ্টি করা-উপলব্দির দোয়ারে কড়া নাড়া উদ্দেশ্য। কেউ শব্দ দিয়ে, কেউ রঙ দিয়ে, কেউ সুর দিয়ে, কেউ সংলাপে আর শরীরী উপস্থাপনায়- কতভাবেই না মানুষ মানুষকে মানুষেরই কথা বলতে চায়।
তারপরও লেখা হয় , আমার কথা ভাল লেখা ? এর জবাব অনেকেই অনেকভাবে দিয়ে গেছেন। বোতলে ভরে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেয়ার মতোই হয়ে আছে কতজনের কত লেখালেখি। অনেক ভাল লেখক অনেক সময় ভাল লিখতে পারেন না। কিন্তু লেখা হয়। জীবনের উপজাত অনেক অনেক 'উপ'-কে ন্যাস তথা বিন্যাসের বিষয় বানিয়ে একজন লেখকই উপস্থাপন করেন। প্রত্যেক ভাল লেখকের জীবনী পড়লে দেখা তাদের ভেতরে পাঠক্ষুধা ছিল। লেখকরা পড়েন তার অনেক কারণ থাকে, তার একটা প্রধান কারণ বোধকরি কাজ করে, যে তিনি ওই পাঠের ভেতর দিয়ে মূলত ঠিক করে নেন, তিনি আসলে কী কী লিখবেন না। কোনভাবে লিখবেন না- এটাও একটা। তার মানে কি তিনি এমন কিছু লিখবেন যেমন লেখা পৃথিবীতে তাঁর হাত দিয়েই প্রথম সৃষ্টি হতে যাচ্ছে? যা-ই লিখবেন নিজের বিচারে ও সাহিত্যের বিচারে যা মৌলিক না হলে তিনি প্রাকশ করবেন না- তেমন করেই কি তিনি লিখবেন। এটা একজন প্রকৃত লেখকের ভাল লেখার মূল রহস্য। তার মানে একজন লেখক (ভাল লেখক) ও নিজস্ব ব্যক্তি সত্তার আড়ালে অনুসরণ প্রীয়।
মোহনা,
কবিদের বলা হয় ভাষার অভিভাবক, গার্জিয়ান। কারণ তাঁদের হাতে ভাষা পরিশুদ্ধ হয়। বৈচিত্রে নতুনত্ব আসে, নতুন মাত্রা পায়। একটা সময় সাহিত্যের গদ্য তথা কথাসাহিত্যকে কবিতার তুলনায় হীন মনে করা হত। কিন্তু বর্তমান সময়ে গদ্য সাহিত্যে নতুনত্ব এসেছে। আপন স্থানকে সুদৃঢ় করতে পেরেছে।বর্তমানে নাগরিক মানুষ আমলাতন্ত্রের হাতে পুঁজির পোকা হয়ে ওঠার বিরোধীতা আসছে প্রবন্ধের মাধ্যমে। সাহিত্যের আছে আরো অনেক গাঢ় ও গূঢ় সমাচার, যার অনেকটা এখন পড়ে আছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ।
আমি মনে করি সাহিত্যের কাজ কেবল ওই ভাষার ভেতরে সীমাবদ্ধ নয়। শিল্পীর একটাই ভাষা, তা হল মানুষের অনুভূতির ভাষাকে নিয়ে আসা বা তুলে ধরা অনেকক্ষেত্রেই নতুন করে আবিষ্কার করা। সাহিত্য ও ভাষা তাই আলাদা । সাহিত্যে ব্যাপকতার অপূর্ব সমন্বয়। আবার যিনি যে ভাষায় লেখেন তাকে তো ওই ভাষা দিয়েই লিখতে হয়। গল্প বলতে হয়, মানুষের কথা বলতে হয়। তার জন্য ওই ভাষাটা ব্যাকরণ সম্মতভাবে জানা থাকলে বোধকরি ভালই হয়। নিশ্চয়ই অর্থহীন বাক্যে বা ভুল বাক্যে আকীর্ণ না হওয়াই উত্তম। এ কথা বলার অর্থ এই না যে রবীন্দ্রনাথের "সঞ্চয়ীতা" ব্যাকরণ শুদ্ধ না হওয়ায় ভুল বলবো !
মোহনা, আসলে মনের জোরই সবচেয়ে বড়। আমরা আমাদের সাহিত্যে চিন্তাবিভূত, কল্পনাশক্তিময়, সৃজনপ্রয়াসী লেখকের তীব্রতা অনভব করছি।সবশেষে একটাই কথা ভাল লেখা সবচেয়ে যতনে বেড়ে ওঠা কলমের আচড়টিই। আর লেখক, তার কোন পরিচয় নেই... ভাল থেকো।
২| ০২ রা এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:২৩
আমি তুমি আমরা বলেছেন: স্বাগতম
৩| ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:২০
পথিকরাজপুত্র বলেছেন: অদ্ভুত পাঠক, আপনি লেখার শিরোনাম এবং লেখার প্রথম অংশ আমার একটি লেখা থেকে হুবহু কপি করেছেন। আমার লেখাটি ২০১২ সালের দিকে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল (এটা নিশ্চয়ই আপনি জানেন)। আশা করছি আপনি ক্ষমা প্রার্থনা করবেন। এবং পোস্ট এডিট করে নেবেন। নতুবা আমি ব্লগ কর্তৃপক্ষের কাছে পত্রিকার প্রকাশিত লেখাটির কপি সহ লিখিত আবেদন করতে বাধ্য হব। ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে মার্চ, ২০১৩ বিকাল ৪:০৬
হাসান মাহবুব বলেছেন: স্বাগতম পাঠক! পাঠকের দরকার আছে ব্লগে। আহমাদ আব্দুল হালিমের লেখা পড়েছি অনেক। এ লেখাটা আগে পড়া হয়নি।