![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেশের সরকার পদ্ধতি ফের পরিবর্তন হতে যাচ্ছে এই মর্মে ছড়িয়ে পড়ছে অন্তহীন গুজব। বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর গুজবের ডালপালা ছড়িয়েছে। বলাবলি হচ্ছে অনেকটা নাটকীয়ভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রেসিডেন্ট হয়ে যেতে পারেন। একটা দেশে যখন নানা রকম গুজব ছড়াতে থাকে তখন বুঝতে হবে যে, সে দেশের অবস্থা ভালো নয়। যখনই কোনো গুজব ছড়ায় তখন অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণেই সেটা দেখা যায়। দ্বিতীয়ত, গুজবের অন্য একটি দিক হলো, অবস্থা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য বা সত্য জানার উপায় না থাকা। এ কারণে গুজব ছড়ানো বন্ধ করার সব থেকে কার্যকর উপায় হচ্ছে কোনো অবস্থা বা ঘটনা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জনসমক্ষে উপস্থাপিত করা। বাংলাদেশের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই এটা দেখা যায় না।
গুজব সংক্রান্ত গবেষণা
সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের মাঝে প্রায়শই নানা বিষয়ে নানা ধরনের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এগুলোর কোনো কোনোটি যেমন শেষ পর্যন্ত হাসি-ঠাট্টার বিষয় হয়ে দাঁড়ায় আবার কোনো কোনো গুজবে কান দেওয়ার কারণে নানা ধরনের ক্ষতির সম্মুখীনও হতে হয় সাধারণ মানুষকে। অতি দ্রুত ছড়ানো প্রমাণবিহীন বিভিন্ন ধরনের তথ্যকে গুজব বলা হয়। সম্পূর্ণ মিথ্যা না হলেও গুজবের তথ্য এত বেশি বিকৃত হয়ে যায় যে তার সাথে সত্য ঘটনার কোনো মিল থাকে না বললেই চলে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে গুজব হলো একটি বিশেষ ধরনের অভিভাবন, কোনো ব্যক্তি বা ঘটনা সম্পর্কে কোনো বাস্তব বা কাল্পনিক গল্প, যেটা ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে বাড়তেই থাকে। বাংলা প্রবাদ ‘তিলকে তাল করা’ গুজবের ক্ষেত্রে খুবই প্রযোজ্য।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে গুজব সংক্রান্ত প্রথম গবেষণার কাজ শুরু হয়। সাধারণত যুদ্ধের সময় জনগণ হতাশাগ্রস্ত, ভীত সন্ত্রস্ত এবং নতুন কিছু ঘটনা শোনার জন্য উদগ্রীব থাকে। এ সময় ঘন ঘন সরকার পক্ষ থেকে নানারূপ প্রচারণা চালানো হয়। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় আমেরিকার বোস্টন শহরে ‘গুজব চিকিৎসালয়’ নামক কেন্দ্র খোলা হয়। গুজব ব্যক্তির মধ্যে দুশ্চিন্তার উদ্রেক করে। এ কারণেই ব্যক্তি তার দুশ্চিন্তা কমানোর জন্য তথ্যটি অন্য ব্যক্তির নিকট সরবরাহ করে। যথা-যুদ্ধকালীন অবস্থায় যারা যুদ্ধের পক্ষে তারা এক ধরনের গুজব ছড়ায় এবং যারা এর বিপক্ষে তারা আরেক ধরনের গুজব ছড়াতে থাকে। গুজব ব্যক্তির আবেগীয় দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হবার কারণে ছড়ায় এবং এ কারণে সাধারণত গুজব সংকটপূর্ণ ও যুদ্ধকালীন সময়ে ছড়ায়।
গুজব সঞ্চালনের আরও একটি উপাদান হচ্ছে পূর্বে ধারণকৃত ধারণা এবং ব্যক্তিবর্গের মনোভাব। ব্যক্তিরা সে ধরনের ঘটনাই পছন্দ করে, যে ঘটনা সম্পর্কে পূর্ব হতেই একটি ধারণা এবং মনোভাব তৈরি হয়ে আছে। স্মিথ (১৯৪৭) একটি অনুধ্যান দেখেন যে, কিভাবে বাক্যগুলো গৃহীত হয়। তিনি একগুচ্ছ রাশিয়ার পক্ষে এবং রাশিয়ার বিপক্ষে বাক্য তার পরীক্ষককে দেন এবং দেখেন যে, ছাত্ররা যারা রাশিয়ানপন্থী তারা রাশিয়ার পক্ষে ও যারা রাশিয়ার বিপক্ষে তারা বিপক্ষীয় যুক্তি বাক্যগুলো বিশ্বাস করেছে।
গুজব মানুষের চাহিদা বা আশা আকাঙ্ক্ষার প্রকাশ। অন্যান্য গণআচরণের মতে গুজব মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা ও পুর্ব সংস্কার প্রকাশের সুযোগ ঘটায়। উইনিক (১৯৪১) উমমার বোমা নিক্ষেপকারী গুজবের দৃষ্টান্তটি উল্লেখ করেছেন। এই বোমা নিক্ষেপকারী সংক্রান্ত গুজব থেকে দেখা যায়, শহরের বিভিন্ন জন ভিন্ন ভিন্নভাবে বর্ণনা করেছে। এছাড়াও গুজবে পূর্ব সংস্কারের বিভিন্ন সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠীর মধ্যে পূর্ব সংস্কারের মধ্যে প্রতিফলন ঘটে। এক গোষ্ঠী অন্য জনগোষ্ঠীকে ক্ষতির কথা বিভিন্ন প্রকার মুখরোচক করে প্রকাশ করে। জনতার আচরণের ওপর অভিভাবন ও সংক্রামণ যেভাবে কাজ করে।
কিছু তথ্য
• গুজব রটনার মাধ্যমে রটনাকারীর অহংবোধ ও তৃপ্ত হয়। অনেক সময় শুধুমাত্র মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্যও অনেকে গুজব ছড়িয়ে থাকে।
• জনসাধারণের মনোভাব এবং সংস্কারও গুজব রটনার পেছনে কাজ করে।
• মানুষের মনে কোনো কিছু সম্পর্কে তীব্র চাহিদা বা আকাঙ্ক্ষা থাকলে সে বিষয়কে সত্য প্রমাণিত করার জন্য তারা গুজব সৃষ্টি করে।
• রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তি বা সমাজ জীবনে নাম করা ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও গুজব রটতে পারে।
• আবেগজনিত মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পাওয়ার বাসনা থেকেও গুজবের উৎপত্তি হয়।
• গুজবের কাহিনীতে নাটকীয় গুণ থাকে এবং নির্ভরযোগ্যতার একটা ভাব বা ভান থাকে। তাছাড়া যে সামাজিক পরিবেশে গুজব প্রচারিত হয়, সে সামাজিক পরিবেশের সাথে গুজবের প্রাসঙ্গিকতা থাকে।
©somewhere in net ltd.