![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার মনে আছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত ছোটগল্প 'ছুটি'র কথা। অল্প কথায় এ গল্পে 'বয়ঃসন্ধি'র যে লক্ষণ সপষ্ট করে তুলেছেন, তা প্রকৃত অর্থেই তুলনাহীন। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, 'তের-চৌদ্দ বছরের ছেলের মতো এমন বালাই আর নাই।' সময় বদলেছে৷ পাল্টেছে মূল্যবোধের মাপকাঠিও৷ টেলিভিশন, বিজ্ঞাপন থেকে চলচ্চিত্র-টিনএজারদের হাতের মুঠোয় যাবতীয় তথ্য-তালাশ৷ স্কুল শিক্ষার পাঠ্যক্রমই বা তার বাইরে থাকবে কী ভাবে। এবার সাবালক হয়েছে স্কুল শিক্ষা ।
আচ্ছা বলেনতো ক্লাশ ফাইভ/সিক্স/এইটে থাকতে আপনি জানতেন, মেয়েদের শারীরের কোথায় কোথায় লোম গজায়? জানতেন তাদের স্তন বড় হয় কিভাবে? কোন বয়সে কত বড় হয়? ‘যৌনরস’ কী? এটা কি রসগোল্লা নাকি রসমালাইয়ের মতো? আমি নিশ্চিত জানতেন না। আর এই না জানার কারণে আপনি প্রায়ই মেয়েদের দেখলে টিজ করেন! মেয়েদের শরীরে কোথায় কী আছে তা না জানার কারণে আপনি সেদিন একটি মেয়েকে ধর্ষণ করেছিলেন, মনে আছে? এই তো ভাল ছেলে। সব কিছু মনে পড়ছে! আরও ভাল হয়ে যান। কিভাবে হবেন আমি বলে দিচ্ছি।
আমি এখন যে সব তথ্য তুলে ধরবো, তা হুবহু মুখস্ত করা চাই। দরকার পড়লে এসবের ছবিও দেয়া হবে, তবে আগে মুখস্তকরণ। বড়কথা, রিস্ক কিন্তু আপনার নিজের। এসব তথ্য জানার পর কিন্তু আপনার আর কোনো মেয়ের (আপনি ছেলে হলে) অথবা ছেলের (আপনি মেয়ে হলে) শরীরের প্রতি আর কোনো আগ্রহই থাকবে না। এটা আমার কথা নয়। বলেছেন, বাংলাদেশের শিক্ষাসচিব। অর্থাৎ বলা যায় আপনি ধ্বজভঙ্গ হয়ে যাবেন। আর এতে লাভ হবে দেশের। এখানে আর কোনো ধর্ষণ/ইভটিজিং হবে কোনো কালে!! হুররররে!
আমার কোনো তথ্য রেফারেন্স ছাড়া নয়। সব আছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যবই থেকে নেয়া। জেনে নিন:
এক: “ছেলেদের ১০ থেকে ১৫ বছর এবং মেয়েদের ৮ থেকে ১৩ বছর বয়সকালকে সাধারণত বয়ঃসন্ধিকাল বলা হয়। ছেলেদের শরীরের বিভিন্ন অংশে লোম গজায়, বীর্যপাত হয়।মেয়েদের ঋতুস্রাব শুরু হওয়া, কোমরের হাড় মোটা, উরু ও নিতম্ব ভারী হওয়া, বুক বড় হয়ে ওঠে। এ সময় নিকটজনের মনোযোগ, যতœ ও ভালোবাসা পাওয়ার আকাক্সক্ষা তীব্র হয়, আবেগ দ্বারা চালিত হওয়ার প্রবণতা বাড়ে, যৌনবিষয়ে চিন্তা আসে এবং বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে।” রেফারেন্স: ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ‘শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বইয়ের ‘বয়ঃসন্ধিকাল’ অধ্যায়)।
দুই: “মেয়েদের গোপন অঙ্গ থেকে যে রক্তপাত হয় তা দেখে তারা ভীত ও দিশেহারা হয়ে পড়ে। কাউকে কিছু বলতে পারে না, লোকজনকে এড়িয়ে চলে, পড়াশোনায় মন বসে না। ৪৬ পৃষ্ঠায় ‘বয়ঃসন্ধিকালে মা-বাবা এবং অভিভাবকের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়ার উপায়’ শিরোনামের আলোচনায় বলা হয়েছে, মেয়েরা তাদের প্রথম ঋতুস্রাবের সময় মায়ের সঙ্গে কথা বলে কীভাবে ব্যবহার করবে তা জেনে নেবে। পরিষ্কার কাপড় বা সেনিটারি ন্যাপকিন, সাবান, গরম পানি ইত্যাদি কীভাবে ব্যবহার করবে তা জেনে নেবে। ছেলেদের বীর্যপাত হলে কীভাবে পরি”ছন্ন হতে হবে, দাড়ি, গোঁফ কামাতে কীভাবে রেজার ব্লেড, শেভিং ক্রিম ব্যবহার করতে হবে তা অভিভাবক থেকে জানবে।”
আরও: ‘পালনীয় স্বাস্থ্যবিধিসমূহ’ শিরোনামের ১ নম্বর আলোচনায় বলা হয়েছে, ঋতুকালীন প্রতিদিন সাবান দিয়ে গোসল করতে হবে। পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত নরম কাপড় অথবা কাপড়ের মোড়কে নরম তুলা কিংবা সেনিটারি প্যাড ব্যবহার করতে হবে। ৫০ পৃষ্ঠায় ২ নম্বরে বলা হয়েছে, রোগ সংক্রমণ থেকে বেঁচে থাকার জন্য যে কাজটি খুবই গুর“ত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, প্রতিবার কাপড় বা প্যাড বদলে নেয়ার সময় হালকা গরম পানি সম্ভব হলে সাবান পানি সহযোগে প্রজনন অঙ্গ পরিষ্কার করতে হবে।
সপ্তম শ্রেণীর শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বইয়ের চতুর্থ অধ্যায়টির নাম ‘বয়ঃসন্ধিকালের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা’। বইয়ের ৩০ থেকে ৩৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত ওই অধ্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ৩৩ পৃষ্ঠায় ‘যৌন নিপীড়ন’ শিরোনামে আলোচনায় বলা হয়েছে ‘অসৎ উদ্দেশ্যে কারও শরীরের কোনো অংশে বিশেষত পোশাক ঢেকে রাখা অংশে হাত বা অন্য কোনো অঙ্গ দিয়ে স্পর্শ বা আঘাত করা হলে তাকে যৌন নিপীড়ন বলা হয়।’
অষ্টম শ্রেণীতে প্রজনন স্বাস্থ্যের আড়ালে যৌনতা শিক্ষা: ‘শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য’ বইটির ৩২ থেকে ৩৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত চতুর্থ অধ্যায়ে ‘আমাদের জীবনে প্রজনন স্বাস্থ্য’ বিষয়টি ছবিসহ আলোচনা করা হয়েছে। এ অধ্যায়ের পাঠ-১ ও পাঠ-২ এ প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে অত্যন্ত নগ্নভাবে বিস্তারিত উপস্থাপন করা হয়েছে। ৩৩ পৃষ্ঠায় পাঠ-১ এ ‘প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষার উপায় ও প্রয়োজনীয়’ অংশে লেখা হয়েছে, ‘ঋতস্রাব বা বীর্যপাত ঘটলে পরিষ্কার-পরি”ছন্ন থাকা, নিয়মিত গোসল করা দরকার।’ এই পাঠ আলোচনা শেষে শিক্ষার্থীদের কাজ দেয়া হয়েছে। কাজ-১ এ লেখা হয়েছে, ‘প্রজনন স্বাস্থ্য রক্ষায় কী কী সমস্যা হয় তা বাড়ি থেকে লিখে এনে শ্রেণীতে উপস্থাপন কর।’
৩৪ পৃষ্ঠায় পাঠ-২ এ ‘বয়ঃসন্ধিকালে প্রজনন স্বাস্থ্য' অংশে লেখা হয়েছে, ‘বয়ঃসন্ধিকালের সময় থেকেই ছেলে ও মেয়েরা প্রজননক্ষম হয়ে ওঠে। মেয়েদের মাসিক বা ঋতস্রাব দেহের একটি নিয়মিত স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। গ্রীষ্মপ্রধান দেশে সাধারণত ৯-১২ বছর বয়সে মাসিক শুরু হয় এবং তা প্রতিবার তিন থেকে পাঁচদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। মাসিক শুরু হলে পরিষ্কার-পরি”ছন্ন থাকার জন্য প্রতিদিন গোসল করে পরিষ্কার শুকনো কাপড় পরা, জীবাণুমুক্ত নরম কাপড় বা সেনিটারি প্যাড ব্যবহার করতে হবে। দিনে কয়েকবার। ছেলেদের বীর্যপাত ঘটলে নিয়মিত সাবান সহযোগে গোসল করবে, পরিষ্কার কাপড়-চোপড় পরবে।’
৩৪ ও ৩৫ পৃষ্ঠায় ‘গর্ভধারণ কী’ এ বিষয়ে লেখা হয়েছে- ‘গর্ভধারণ হচ্ছে একটি মেয়ের শরীরের একটি বিশেষ পরিবর্তন। সন্তান গর্ভে এলেই শুধু শরীরের এই বিশেষ পরিবর্তন ঘটে। যৌনমিলনের সময় পুরুষের শুক্রাণু যখন মেয়েদের ডিম্বাণুর সাথে মিলিত হয়, তখনই একটি মেয়ের গর্ভে সন্তান আসে। গর্ভধারণের প্রথম কয়েক মাসে মেয়েদের শরীরে কিছু কিছু অস্বস্তিকর লক্ষণ দেখা যায়। যেমন- ১. মাসিক বন্ধ হওয়া ২. বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া ৩. মাথা ঘোরা ৪. বারবার প্রস্রাব হওয়া ৫. স্তন বড় ও ভারী হওয়া’।
৩৫ পৃষ্ঠায় ‘গর্ভপাতজনিত সমস্যা’ অংশে বলা হয়েছে, ‘একটি মেয়ের গর্ভে যখন সন্তান আসে, তখন প্রথম অবস্থায় জরায়ুর ভ্রূণের বৃদ্ধি ঘটে। ভ্রূণের বৃদ্ধি অব¯’ায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে যদি জরায়ু থেকে ভ্রূণ বের হয়ে যায়, তখন গর্ভপাত ঘটে। ই”ছাকৃতভাবেও অনেকে গর্ভপাত ঘটায়।’
নবম-দশমে প্রজনন স্বাস্থ্য : নবম-দশমের শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যবিজ্ঞান বইয়ে ষষ্ঠ অধ্যায়ের ৪৮ থেকে ৬৬ পৃষ্ঠা পর্যন্ত ‘মাদকাসক্তি ও এইডস’ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
৪৮ পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে, ‘এইচআইভি তেমনই একটি ভাইরাস। এইচআইভি ভাইরাস রক্ত, বীর্য, যৌনিরস, বুকের দুধ প্রভৃতির মাধ্যমে অন্যের দেশে সংক্রমিত হয়।’ ৫৪ পৃষ্ঠায় ‘এইচআইভি এবং এইডস-এর বিস্তার’ বিষয়ে লেখা হয়েছে, মানুষের শরীরের ভেতরে উৎপন্ন বিভিন্ন তরল পদার্থ যেমন রক্ত, বীর্য, যৌনিরস, মায়ের বুকের দুধ এগুলোতে এইচআইভি বাস করে।
এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তিরা রক্ত, বীর্য, যৌনিরস সুস্থ ব্যক্তির দেহে প্রবেশ করলে বা মায়ের বুকের দুধ খেলে এইচআইভি সংক্রমণ ঘটে। সুনির্দিষ্টভাবে যে যে উপায়ে এইচআইভি বিস্তার লাভ করে তা হলো : ১. অনৈতিক ও অনিরাপদ দৈহিক মিলন এইচআইভি ছড়ানোর সবচেয়ে বড় কারণ অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক। আক্রান্ত ব্যক্তির বীর্য বা যৌনিরসের মাধ্যমে যৌনসঙ্গীর দেহে এইডসের ভাইরাস প্রবেশ করে। বইটির সপ্তম অধ্যায়ে ৬৭ থেকে ৭৫ পৃষ্ঠা পর্যন্ত ‘বয়ঃসন্ধিকাল ও প্রজনন স্বাস্থ্য’ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
৬৮ পৃষ্ঠায় বয়ঃসন্ধিকালে শারীরিক পরিবর্তন প্যারায় লেখা হয়েছে- কিশোরদের ক্ষেত্রে যেসব পরিবর্তন লক্ষ করা যায় তা হচ্ছে- শরীরের বিভিন্ন অংশে লোম গজায়, প্রজনন অঙ্গ বড় হয়ে ওঠা, বীর্যপাত হয়। কিশোরীদের ক্ষেত্রে স্তন বৃদ্ধি পায়, বিভিন্ন অঙ্গে লোম গজায়, ঋতুস্রাব ও মাসিক শুর“ হয়। ৭২ পৃষ্ঠায় ‘প্রজনন স্বাস্থ্যরক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও উপায়’ শীর্ষক আলোচনায় ছেলেদের বীর্যপাত ও মেয়েদের মাসিক, ঋতুস্রাব বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। ৭৩ পৃষ্ঠায় ‘প্রজনন স্বাস্থ্যবিধি ও গর্ভকালীন স্বাস্থ্যসেবা’ পাঠেও খোলামেলা আলোচনা করা হয়েছে।”
উপরের তথ্যগুলো পত্রিকা ও বইয়ের পাতা থেকে হুবহু তুলে দেয়া হল। এবার আশাকরি ধর্ষণ পুরুষরা এসব তথ্য জেনে আর ধর্ষণে আগ্রহী হবেন না। কারণ, আমাদের বুদ্ধিজীবিরা বলেছেন, এসব বিষয় না জানার কারণে কৌতুহলবশত ছেলেরা এসব আকাম কুকাম করে বেড়ায়। মুল তথ্য জেনে গেলে আর আগ্রহ থাকবে না। কি বলেন? উনাদের কথা ঠিক না। কিন্তু এরপরও যদি বাংলাদেশে কোনো ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, তার জন্য কিন্তু আমি অথবা এদেশের বুদ্ধীজীবিরা দায়ী থাকবেন না আগেই বলে দিলাম!
তবে আমার ব্যক্তিগত অভিমত, যদি এই কথাগুলো জানার পরও ছেলেরা ধর্ষন ইভটিজিং থেকে দুরে না থাকে, তাহলে কথার সাথে পাঠ্যবইয়ে ছবিও যুক্ত করে দিতে হবে! তাহলে শিশু-কিশোরদের কৌতুহল বলতে আর কিছু থাকবেই না!
©somewhere in net ltd.