নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমাকে আমার মত থাকতে দাও......

মন কি যে চায়......

ভালোবাসার চিঠি

আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ৫ম ব্যাচের ছাত্র।

ভালোবাসার চিঠি › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুরা নিসা ও আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের আলোড়ন

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:২৯

সুরা নিসায় মোট ১৭৬ টি আয়াত আছে। এ সুরার অধিকাংশ আয়াতে পারিবারিক জীবনের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। আর পারিবারিক জীবনে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক অপরিহার্য অঙ্গ। স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক সম্পর্কের মাধ্যমে জীবনব্যবস্থা তথা সামাজিক জীবনের প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে। সুরা নিসায় পারিবারিক জীবনে নারী-পুরুষের পারস্পারিক সম্পর্ক ও অধিকারের ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাচীন যুগ থেকেই পুরুষতান্ত্রিকভাবে পরিচালিত হচ্ছ্।ে পুরুষরা তাদের শক্তি ও ক্ষমতার বলে আজীবন নারীকে তাদের অধীনে রাখতে চাই। আর এ ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন পন্থা অবরম্বন করে। ধর্ম এসবের মধ্যে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। পৃথিবীতে প্রচলিত ধর্মগুলো আলোচনা করলেই দেখা যাবে যে, প্রতিটি ধর্মেই কোন না কোন ভাবে নারীকে পুরুষের তুলনায় ছোট করা হয়েছে। মূলত ধর্ম ওইসব ব্যক্তিদের রচিত,যারা সবসময় সবার উপরে থাকতে চেয়েছে। অন্যান্য ধর্মের ন্যায় ইসলাম ধর্মেও নারীকে পুরুষের তুলনায় ক্ষুদ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। সুরা নিসা আলোচনা করলে তা দেখা যায়। এখন যদি কোন গোড়া মুসলিমানকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হয় তবে দেখা যাবে যে, সে হয়ত বিভিন্ন পন্থায় দেখাতে চাইবে যে ইসলামের আইন-ই সবক্ষেত্রে সঠিক। কিন্তু আপনি যদি প্রগ্রেসিভ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখেন তাহলে বৈষম্যগুলো দেখতে পাবেন। তাই এখানে আমি একজন মুসলমানের দৃষ্টিতে এবং পরবর্তীতে প্রগ্রেসিভ দৃষ্টি দিয়ে সুরা নিসায় উল্লেখিত নারী-পুরুষের পারস্পারিক সম্পর্ক আলোচনা করছি।



১ নং আয়াত

হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লহকে ভয় কর, যার নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচ্ঞা করে থাক এবং আত্মীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন।



সুরা নিসার প্রথম আয়াতেই দ্’ুদুবার খোদাভীরু হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্ম, প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারেই হয়ে থাকে। তাই পরিবারের এই সব ভিত্তি যদি আল্লাহর আইন অনুযায়ি না হয়, তাহলে ব্যক্তি ও সমাজের মানসিক সুস্থতা বলে কিছুই থাকবে না। আল্লাহ মানুষের মধ্যে নিজেকে বড় হওয়ার ঝোঁক বা প্রবণতাকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, সমস্ত মানুষকে একই ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই বংশ, বর্ণ ও ভাষাকে শ্রেষ্ঠত্বের লক্ষণ মনে না করে বরং খোদাভীরু হওয়াকে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি মনে করা উচিত। এমনকি নারী ও পুরুষের মধ্যে মানসিক এবং দৈহিক পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও তাদের কেউই একে অপরের চেয়ে বড় নয়। করণ সমস্ত নারী ও পুরুষ একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে অস্তিত্ব লাভ করেছে। পবিত্র কুরআনের অন্য এক আয়াতে আল্লাহর আনুগত্যের পরই বাবা-মায়ের প্রতি আনুগত্যের কথা বলা হয়েছে। এভাবে তাদের উচ্চ মর্যাদার বিষয়টি স্পষ্ট করা হয়েছে। আর এই আয়াতে আল্লাহর নামের পর সমস্ত আত্মীয় স্বজনদের অধিকার রক্ষার আহবান জানানো হয়েছে এবং তাদের প্রতি যাতে কোন রকম অবিচার না হয় সে দিকেও সজাগ দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে।





এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল :

১. ইসলাম একটি সামাজিক ধর্ম। তাই এ ধর্মে সমাজ ও পরিবারে পরস্পরের সম্পর্কের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। খোদাভীরু হবার জন্য আল্লাহর ইবাদাত তথা দাসত্ব করার জন অন্যদের অধিকার রক্ষা জরুরি।

২. মানব সমাজকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং প্রত্যেক মানুষকেই মানব সমাজের সম্মানিত সদস্য হিসেবে ধরে নিয়ে অন্যদের সমান অধিকার দিতে হবে। কারণ, মানুষের মধ্যে অঞ্চল, বর্ণ, গোষ্ঠী ও ভাষার ভিত্তিতে বৈষম্য করা নিষিদ্ধ। আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকেই একই উপাদান থেকে সৃষ্টি করেছেন।

৩. গোটা মানব জাতি একে অপরের আত্মীয়। কারণ, তাদের সবার আদি পিতা ও মাতা ছিলেন হযরত আদম (আ.) এবং বিবি হাওয়া। তাই সব মানুষকেই ভালবাসতে হবে এবং তাদেরকে ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনের মতই শ্রদ্ধা করতে হবে।



৩ নং আয়াত

আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতীম মেয়েদেরকে যথাযথভাবে পূরণ করতে পারবে না তবে সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা থাকে যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরেকে, এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা।



এতিম সংক্রান্ত আয়াতের ধারাবাহিকতায় এই আয়াতে এতিম কন্যাদের কথা বলা হয়েছে। এতিম কন্যাদের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করার কারণ হলো তারা এতিম ছেলে শিশুদের তুলনায় বেশি বঞ্চিত ও অত্যাচারের শিকার হয়। তাই ন্যায় বিচারক মহান আল্লাহ বলেছেন, এতিম কন্যাদের ওপর যে কোন অন্যায় আচারণ নিষিদ্ধ। অনেক স্বার্থান্বেষী মানুষ এতিম কন্যাদের সম্পত্তি দখলের জন্য তাদেরকে বিয়ে করতে চায় এবং এ জন্য সব ধরণের কুট কৌশলের আশ্রয় নেয়। কিন্তু আল্লাহ বলেছেন এতিম কন্যাদের বিয়ে করার ফলে তাদের প্রতি যদি সামান্য জুলুমেরও আশঙ্কা থাকে, তবে তাদের বিয়ে করো না।

বিভিন্ন সূত্রের বর্ণনায় বলা হয়েছে, এক শ্রেণীর লোভী মানুষ এতিম কন্যাদের লালন পালনের নামে নিজেদের ঘরে নিয়ে আসত এবং কিছুকাল পর ওইসব কন্যাদের বিয়ে করে তাদের সম্পত্তি দখল করত। তাদেরকে বিয়ের মোহরানাও প্রচলিত রীতির তুলনায় অত্যন্ত কম দেয়া হত। এ অবস্থায় এতিম কন্যাদের ওপর যে কোন অবিচারকে নিষিদ্ধ করে। এই আয়াতসহ ১২৭ নং আয়াত নাজিল হয়। বহু পুরুষ তাদের দ্বিতীয় বা তৃতীয় অথবা চতুর্থ স্ত্রী হিসবে এতিম কন্যাদের বিয়ে করত। আল্লাহ তাদের মর্যাদা রক্ষার জন্য এসব পুরুষদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, যদি নতুন বিয়ের ইচ্ছে থাকে তবে শুধু এতিমদের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছ কেন? অন্যান্য মেয়েদেরও বিয়ের প্রস্তাব দাও অথবা অন্তত তোমাদের অন্তর্ভুক্ত দাসীদেরকেই বিয়ে কর। এই আয়াতে পুরুষদেরকে চারটি বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে, যদিও এই রীতি ইসলামের আবিষ্কার নয় বরং সামাজিক কারণে চার বিবাহ কোন কোন অবস্থায় অতীতের মত বর্তমানেও অনেক ক্ষেত্রে প্রয়োজন হয়ে দাড়ায়। আসলে ইসলাম ধমে বহু বিবাহ প্রথা চালু করেনি বরং সামাজিক বাস্তবতা হিসেবে বিরাজমান এই প্রথাকে বিশেষ নিয়মের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রন করেছে। ইসলাম এক্ষেত্রে অর্থাৎ একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে স্ত্রীদের মধ্যে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার শর্ত বেঁধে দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে,“যদি তোমরা স্ত্রীদের সবার সাথে সমান ও ন্যায় আচরণ করতে পারবে না বলে ভয় কর তাহলে একেরে বেশি স্ত্রী গ্রহণ করা বৈধ নয়।”

এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল :

১. এতিম কন্যাদের সম্পদ ও সম্মান নিয়ে হেলাফেলা বন্ধের জন্য তাদের সাথে সব সময় এমনকি বিয়ের সময়ও ন্যায় বিচার করার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম।

২. স্বামী ও স্ত্রী নির্বাচনের অন্যতম শর্ত হল অন্তর দিয়ে পছন্দ করা। জোরপূর্বক কারো সাথে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ করা বৈধ নয়।

৩. একই সাথে চারজন স্ত্রী রাখা ইসলাম ধর্মে স্বীকৃত। কিন্তু কোন পুরুষ যদি এ আইনের অপব্যবহার করে, তাহলে এ আইনটি ভাল নয় এমন বলা যাবে না, বরং এটা সমাজের বিশেষ প্রয়োজন বা চাহিদা মেটানোর প্রতি ইসলাম ধর্মের প্রতি উদার নীতির প্রকাশ।



৪ নং আয়াত

আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশিমনে। তারা যদি খুশি হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমারা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।



সুরা নিসার আয়াতগুলো শুরু হয়েছে পারিবারিক বিধি বিধানের বর্ণনা দিয়ে। পরিবার গঠন বা বিয়ের সময় বরের পক্ষ থেকে নববধুকে মোহরানা দেয়ার রীতি ইসলামের আবির্ভাবের আগে আরবদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে মহিলাদের কোন মর্যাদা ছিল না। সে সময় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুরুষরা স্ত্রীদেরকে মোহরানা দিত না অথবা দিলেও পরে তা জোর করে ফেরত নিত। পবিত্র কোরআন নারীর পারিবারিক অধিকার রক্ষার জন্য স্বেচ্ছায় ও সন্তুষ্টচিত্তে মোহরানা পরিশোধ করতে বিবাহিত পুরুষদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছে এবং এ ব্যাপারে সব ধরণের কঠোরতা বা কর্কশ আচরণ পরিহার করতে বলেছে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ আরও বলেছেন, মোহরানা ফিরিয়ে নেয়া বা এর অংশবিশেষ ফিরিয়ে নেয়াও তোমাদের জন্য বৈধ নয়। যদি স্ত্রীরা নিজেরাই খুশিমনে মোহরানার কিছু অংশ ফিরিয়ে দিতে চায়, তাহলে তা গ্রহণ করা যেতে পারে। এই আয়াতে উল্লেখিত না হলেও শব্দটির অর্থ হল ‘মৌচাকের মৌমাছি’। মৌমাছি যেমন কোন স্বার্থের আশা না করেই মানুষকে মধু দেয়, সে রকম পুরুষেরও উচিত জীবনসঙ্গকে দাম্পত্য জীবনের মধু হিসেবে মোহরানা দেয়া। আর যা উপহার হিসেবে দেয়া হয় তা ফিরে পাবার আশা করা কি অন্যায় নয়?

এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল :

১. স্ত্রীর প্রাপ্য মোহরানা তার ক্রয়মূল্য নয় বরং এটা স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালবাসার নিদর্শন ও উপহার। কোরআনের আয়াতে মোহরানা শব্দটিকে বলাহয়েছে ‘সাদাক্কাত’ বা ‘আন্তরিকতা’ থেকে উদ্ভূত।

২. মোহরানা স্ত্রীর অধিকার এবং স্ত্রীই এর মালিক। স্ত্রীকে মোহরানা দেয়া যেমন বন্ধ রাখা যায় না, তেমনি তা ফেরতও নেয়া যায় না।

৩. মোহরানা মাফ করার জন্য স্ত্রীর বাহ্যিক সন্তুষ্টি যথেষ্ট নয়। এজন্যে স্ত্রীর প্রকৃত আন্তরিক সন্তুষ্টি জরুরি।



৭ নং আয়াত

পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদেরও অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে; অল্প হোক কিংবা বেশি। এ অংশ নির্ধারিত।



সুরা নিসার প্রথম কয়েকাট আয়াতে এতিম ও অনাথ শিশুদের প্রসঙ্গসহ বিভিন্ন পরিবারিক সমস্যা সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হয়েছে। একটি হাদিস থেকে জানা যায়, রাসুল (স.) এর একজন সাহাবির ইন্তেকালের পর তার সমস্ত সম্পত্তি কয়েকজন ভাতিজা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেয়। অথচ ওই সাহাবির স্ত্রী ও তার কয়েকটি শিশুকে সম্পত্তির কোন অংশ দেয়া হয়নি। এর কারণ অজ্ঞতার যুগে আরবদের বিশ্বাস ছিল শুধুমাত্র যুদ্ধ করতে সক্ষম পুরুষরাই উত্তরাধিকার বা মৃত ব্যক্তির সম্পত্তির অংশ পাবার যোগ্য। মহিলা বা শিশুরা যুদ্ধ করতে সক্ষম নয় বলে তারা উত্তরাধিকার সূত্রে কোন সম্পদের অংশ পাবার যোগ্য নয়। এ অবস্থায় পবিত্র কুরআনের এ আয়াত নাজিল হয়। এতে নারীর অধিকারের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলা হয়েছে মীরাস বা উত্তরাধিকারগত সম্পদে পুরুষদের যেমন অংশ আছে, তেমনি তাতে নারীদেরও অংশ রয়েছে। উত্তরাধিকারগত সম্পদ কম বা বেশি যাই হোক না কেন তাতে নারীর অংশ আল্লাহর পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট।

এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল :

১. ইসলাম শুধু নামাজ রোজার ধর্ম নয়। দুনিয়ার জীবনও এ ধর্মে গুরুত্ব পেয়েছে। আর তাই ইসলাম অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নারী ও এতিমদের অধিকার রক্ষাকে ঈমানের শর্ত বলে মনে করে।

২. আল্লাহর বিধান অনুযায়ি উত্তরাধিকারগত সম্পদের ভাগ-বন্টন করতে হবে, সামাজিক প্রথা বা পরলোকগত কোন ব্যক্তির সুপারিশ অনুযায়ী নয়।

৩. উত্তরাধিকারগত সম্পদ বন্টনের ক্ষেত্রে এর পরিমান কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। মোট পরিমান যাই হোক না কেন সমস্ত ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারীর ন্যায়সঙ্গত অধিকার রক্ষাই গুরুত্বপূর্ণ। উত্তরিধকারগত সম্পদের মোট পরিমান কম হবার অজুহাতে কোন উত্তরাধিকারীর অধিকারকে উপেক্ষা করা যাবে না।



১১ ও ১২ নং আয়াত

আল্লাহ তোমাদেরকে তোমাদের সন্তানদের সম্পর্কে আদেশ করেন : একজন পুরুষের অংশ দু’জন নারীর অংশের সমান। অতঃপর যদি শুধু নারীই হয় দু এর অধিক, তবে তাদের জন্য ওই মালের তিন ভাগের দুই ভাগ এবং যদি একজনই হয়, তবে তার জন্যে অর্ধেক। মৃতের পিতা-মাতার মধ্য থেকে প্রত্যেকের জন্য ত্যাজ্য সম্পত্তির ছয় ভাগের এক ভাগ, যদি মৃতের পুত্র থাকে। যদি পুত্র না থাকে এবং পিতা-মাতাই ওয়ারিশ হয়, তবে মাতা পাবে তিন ভাগের এক ভাগ। অতঃপর যদি মৃতের কয়েকজন ভাই থকে, তবে তার মাতা পাবে ছয় ভাগের এক ভাগ ওছিয়্যতের পর, যা করে মরেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। তোমাদের পিতা ও পুত্রের মধ্যে কে তোমাদের জন্যে অধিক উপকারী তোমরা জান না। এটা আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত অংশ নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, রহস্যবিদ। আর, তোমাদের হবে অর্ধেক সম্পত্তি, যা ছেড়ে যায় তোমাদের ¯ত্রীরা যদি তাদের কোন সন্তান না থাকে। যদি তাদের সন্তান থাকে, তবে এক-চতুর্থাংশ হবে ওই সম্পত্তির, যা তারা ছেড়ে যায়; ওছিয়্যতের পর, যা তারা করে এবং ঋণ পরিশোধের পর। স্ত্রীদের জন্যে এক-চতুর্থাংশ হবে ওই সম্পত্তির, যা তোমরা ছেড়ে যাও তোমাদের কোন সন্তান না থাকে। আর যদি তোমাদের সন্তান থাকে, তবে তাদের জন্যে ওই সম্পত্তির আট ভাগের এক ভাগ, যা তোমরা ছেড়ে যাও ওছিয়্যতের পর, যা তোমরা কর এবং ঋণ পরিশোধের পর। যে পুরুষের, ত্যাজ্য সম্পত্তি, তার যদি পিতা-পুত্র কিংবা স্ত্রী না থাকে এবং এই মৃতের এক ভাই এক কিংবা এক বোন থাকে, তবে উভয়ের প্রত্যেকে ছয়ভাগের এক ভাগ পাবে। আর যদি ততোধিক থাকে, তবে তারা এক তৃতীয়াংশ অংশীদার হবে ওছিয়্যতের পর, যা করা হয় অথবা ঋণের পর এমতাবস্থায় যে , অপরের ক্ষতি না করে । এ বিধান আল্লাহর। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সহনশীল।



কুরআনের ১১ ও ১২ নং আয়াতে সম্পদের বন্টনের নিয়ম ও পরিমান উল্লেখ করা হয়েছে। মানুষকে যিনি সৃষ্টি করেছেন সেই আল্লাহ যেহেতু ধর্মীয় বিধি-বিধান দিয়েছেন তাই তার নির্দেশ ও আইন কানুন মানুষের প্রকৃতিগত চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের সাথে বস্তু জগতের সম্পর্ক, মালিকানা, কর্তৃত্ব সব কিছু ছিন্ন হয় এবং মানুষ অন্য জগতে প্রবেশ করে। কিন্তু প্রশ্ন হলো মানুষ জীবদ্দশায় যা কিছু অর্জন করে সেসবের কি পরিণতি হয় এবং সেগুলো কার কাছে হস্তান্তর করা যায়? কিছু গোত্রের মধ্যে মৃত ব্যক্তির ধন সম্পদ তার পিতা, পুত্র, ভাই এ ধরণের নিকটাত্মীয়দের মধ্যে ভাগ করে দেয়ার রীতি প্রচলিত আছে। ওই সব গোত্রে মৃত ব্যক্তির স্ত্রী, কন্যা সন্তান বা মহিলারা কোন সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পান না। আর বর্তমানে কিছু দেশে মৃত ব্যক্তির সম্পদকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং ওই সম্পদে সন্তাস-সন্তুতি বা আত্মীয়-স্বজনের অধিকারের কোন স্বীকৃতি দেয়া হয় না।কিন্তু ইসলামের বিধান এ থেকে ভিন্ন। ইসলাম ধর্মে উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী মৃত ব্যক্তি রেখে যাওয়া সম্পদ ছেলে ও মেয়ে সন্তান, স্ত্রী এবং নিকট আত্মীয়দের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হয়। একই সাথে ইসলাম ধর্মে মৃত ব্যক্তির জন্যও কিছু অধিকার দেয়া হয়েছে। মৃত ব্যক্তি তার সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ ইচ্ছেমত ওসিয়ত করতে পারবে যাতে তা তার মৃত্যুর পর ইচ্ছা অনুযায়ী ব্যয় করা হয়। ইসলামের এ অসাধারণ উত্তরাধিকার আইনের ফলে যাদের যথেষ্ট সম্পদ আছে তারা জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কর্মতৎপরতা চালায়। কারণ তারা জানে যে তাদের মৃত্যুর পর সম্পদের মালিক হবে তাদেরই সন্তান-সন্তুতি যরিা কিনা তার নাম ও স্মৃতি চিরঞ্জীব রাখবে। এ জন্য ইসলাম ধর্মে প্রথম ধাপে উত্তরাধিকার ভাগ করা হয় সন্তানদের মধ্যে এবং এরপর নিকটাত্মীয়দের মধ্যে। উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ি পুত্র সন্তানকে কন্যা সন্তানের দ্বিগুণ সম্পদ দেয়া হবে। কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে সংসারের ভরণ-পোষনের দায়িত্ব পুরুষের। এ দায়িত্ব পালনের জন্য অধিক অর্থ উপার্জনের চেষ্টা চালাতে হয়। তাই তার মূলধন ও পুঁজির প্রয়োজন হয় বেশি। বাহ্যিকভাবে দেখলে মনে হবে ইসলামের উত্তরাধিকার আইন মহিলাদের বিপক্ষে। কিনÍু ইসলামের অন্যান্য আইন কানুনের দিকে তাকালে বুঝা যায় যে আসলে উত্তরাধিকার আইন নারীর স্বার্থের অনুকূলে। কারণ ইসলামের পারিবারিক ব্যবস্থায় অর্থ উপার্জনের কোন দায়িত্ব স্ত্রী উপর অর্পিত হয় নি। স্ত্রীর ভরন-পোষণ, পোশাক-আশাক, বাসস্থানসহ যাবতীয় চাহিদা মেটানোর দায়িত্ব স্বামীর। ফলে মহিলারা উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী একভাগ সম্পত্তি পেলেও পুরোটাই ব্যক্তিগত কাজে ব্যয় কিংবা সঞ্চয় হিসেবে রেখে দিতে পারেন। পুরুষ উত্তরাধিকারসূত্রে দুই ভাগ সম্পত্তি পেলেও তাকে কমপক্ষে অর্ধেক সম্পদ বা তারও বেশি স্ত্রীর মোহরানা বা ভরণ-পোষণ বাবদ ব্যয় করতে হয়। প্রকৃতপক্ষে মহিলারা উত্তরাধিকার সূত্রে যে একভাগ সম্পত্তি পান সেটার মালিক এবং পুরুষরা যে দু ভাগ পান তারও এক অংশের মালিক। অর্থাৎ মহিলারা একভাগ সম্পত্তি সঞ্চয় হিসেবে রাখতে পারে এবং স্বামীর সাথে অংশীদার আরেক ভাগ সম্পদ দৈনন্দিন ব্যয় হিসেবে বিবেনা করেিত পারে। অথচ স্ত্রীর সম্পত্তির ওপর পুরুষের কোন অধিকার নেই এবং পুরুষকে নারীর সব প্রয়োজন ও চাহিদা মেটাতে হয়। সূরা নিসার ১১ ও ১২ নং আয়তে মৃত ব্যক্তির বাবা, মা, সন্তান সন্তুতি এবং স্ত্রীর মধ্যে সম্পদ বন্টনের নিয়ম বলা হয়েছে। অবশ্য ইসলামের উত্তরাধিকার আইনের খুাটনাটি সবকিছু এ দুই আয়াতে বলা হয়নি। নির্ভরযোগ্য হাদিসে এ সম্পর্কে বিস্তারিত বলা হয়েছে। অবশ্য বলে রাখা দরকার যে, মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী বন্টনের আগে প্রথমে মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ এবং তার ওসিয়ত বাস্তবায়ন করতে হয়। কারণ উত্তরাধিকারদের চেয়ে মৃত ব্যক্তি ও অন্যান্য মানুষের অধিকার অগ্রগন্য।

এই দুই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল :

১. উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে মহিলারা পুরুষদের অর্ধেক সম্পত্তি পেয়ে থাকে। এটা তাদের প্রতি অবিচার নয়। বরং এটা সামাজিক জীবনের পার্থক্য এবং মহাবিজ্ঞ আল্লাহ পাকের নির্দেশ থেকে উৎসারিত হয়েছে।

২. মানুষের অধিকার আদায় এতই গুরুত্বপূর্ণ যে এ দুই আয়াতে চার বার এ সম্পর্কে জোর দেয়া হয়েছে। যাতে মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারীরা অন্য মানুষের অধিকার ভুলে না যায়।

১৫ নং আয়াত

আর তোমাদের নারীদের মধ্যে যারা ব্যাভিচারিণী তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের মধ্য থেকে চারজন সাক্ষী হিসেবে তলব কর। অতঃপর যদি তারা সাক্ষ্য প্রদান করে তবে সংশ্লিস্টদেরকে গৃহে আবদ্ধ রাখ, যে পর্যন্ত মৃত্যু তাদেরকে তুলে না নেয় অথবা আল্লাহ তাদের জন্য অন্য কোন পথ নির্দেশ না করেন।



এই আয়াতে স্বামীর সাথে ঘর সংসার করছে এমন মহিলারা যদি পর-পুরুষের সাথে ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়, তাহলে তাদের শাস্তি কি হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য এটাও জানা দরকার যে, ইসলাম পারিবারিক মর্যাদা রক্ষার লক্ষ্যে অন্যদের ব্যাপারে গোয়েন্দাগিরি নিষিদ্ধ করেছে। অন্যদের অবৈধ কাজ প্রমান করতেও ইসলাম উৎসাহ দেয় না। তাই তিন জন ন্যায়পরায়ন ব্যক্তিও যদি কোন বিবাহিত মহিলার ব্যাভিচারের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেয় তা গ্রহণযোগ্য হবে না। অবশ্য একসাথে চারজন ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তি এ ধরনের সাক্ষ্য দিলে তা গ্রহণযোগ্য হবে। আর এ ক্ষেত্রে বিবাহিতা ব্যাভিচারি মহিলার শাস্তির যে বিধান দেয়া হয়েছে, তা অস্থায়ী বিধান অর্থাৎ মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাকে স্বামীর ঘরে বন্দী রাখতে হবে। পরিবারের মর্যাদা রক্ষার জন্যেই আল্লাহ এ ধরনের নির্দেশ দিয়েছেন যাতে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হওয়া মানুষেরা এক জায়গায় সমবেত হয়ে একে অন্যের কাছে খারাপ কাজের বিভিন্ন পদ্ধতি না ছড়িয়ে দেয়। যেমন, আজকাল আমরা দেখেছি গণ কারাগুলো অবৈধ তৎপরতা শিক্ষার কেন্দ্রে রূপান্তরিত হয়েছে। অবশ্য পরে বিবাহিত ব্যাভিচারীদের শাস্তির চ’ড়ান্ত বিধান তথা পাথর মেরে মৃত্যুদন্ড দেয়ার বিধান আসার পর যাবজ্জীবন গৃহবন্দীত্বের দন্ড পাওয়া বিবাহিত মহিলারা মুক্তি লাভ করেন।

এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল :

১. মুমিনদের সম্মান রক্ষা তার রক্তের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ। তাই হত্যাকারী প্রমানের জন্য দুইজন সাক্ষী প্রয়োজন হলেও ব্যাভিচারী প্রমানের জন্য চারজন সাক্ষী প্রয়োজন। নিঃসন্দেহে ব্যাভিচার খুবই নোংরা কাজ, কিন্তু ব্যাভিচারীর সম্মান ক্ষুন্ন করার পদক্ষেপ আরও নিকৃষ্ট কাজ।

২. ইসলাম পারিবারিক ও সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সমাজ ও পরিবারে সংগঠিত অপরাধের কঠিন শাস্তির নির্দেশ দিয়েছে। ব্যাভিচারিকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেয়া এ ধরনের একটি শাস্তি।



১৬ নং আয়াত

তোমাদের মধ্য থেকে যে দু’জন কুকর্মে লিপ্ত হয়, তাদেরকে শাস্তি প্রদান কর। অতঃপর যদি উভয়ে তওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে, তবে তাদের হাত গুটিয়ে নাও। নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবা কবুলকারী, দয়ালু।



অনেকের মতে, এই আয়াতের অর্থ সবার জন্য প্রযোজ্য এবং যে পুরুষ ব্যাভিচার করবে তা কোন নারীর সাথেই বা পুরুষের সাথেই হোক না কেন তারা উভয়ই শাস্তির যোগ্য হবে। কিন্তু অধিকাংশ তফসীরকারীদের মতে, এখানে অবিবাহিত নারী ও পুরুষ ব্যাভীচারীর কথা বলা হয়েছে। আর তাদের শাস্তি হলো বেত্রাঘাত। কিন্তু আদালতে তাদের অপরাধ প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত এ শাস্তি কার্যকর করা যাবে না। আর ব্যাভিচারী নারী ও পুরুষ যদি তওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করা নেয়, তাহলে তাদেরকে অবশ্যই ক্ষমা করতে হবে এবং তাদের বিষয়টি আল্লাহর ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দিতে হবে। আল্লাহও ক্ষমাশীল ও দয়ালু। তিনি প্রকৃত তওবা বা ক্ষমা প্রার্থনা কবুল করেন।

এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল :

১. ইসলামী সমাজে কোন অপরাধীকে প্রশ্রয় বা নিরাপত্তা দেয়া উচিত নয়, বরং অপরাধীকে তাদের অপরাধের উপযুক্ত শাস্তি দেয় ইসলামী রাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব।

২. অপরাধীদের জন্য সংশোধন ও ক্ষমার পথ বন্ধ করে দেয়া উচিত নয়। যারা আসলেই অনুতপ্ত ও লজ্জিত তাদেরকে সমাজে পুনর্বাসন করতে হবে।



১৯ নং আয়াত

হে ঈমানদারগণ! বলপূর্বক নারীদেরকে উত্তরাধিকারে গ্রহণ করা তোমাদের জন্য হালাল নয় এবং তাদেরকে আটক রেখো না যাতে তোমরা তাদেরকে যা প্রদান করেছ তার অংশবিশেষ নিয়ে নাও; কিন্তু তারা যদি কোন প্রকাশ্য অশ্লীলতা করে। নারীদের সাথে সদ্ভাবে জীবন-যাপন কর। অতঃপর যদি তাদেরকে অপছন্দ কর, তবে হয়ত তোমরা এমন এক জিনিসকে অপছন্দ করছ, যাতে আল্লাহ অনেক কল্যান রেখেছেন।



এই আয়াতের প্রথম অংশে পারিবারিক বিষয়ে মহিলাদের অধিকারের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করা হয়েছে এবং মহিলাদের ব্যাপারে যে কোন ধরনের অপছন্দনীয় আচরণ থেকে বিরত থাকতে পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছে। আয়াতের শেষাংশে পরিবার ব্যবস্থা রক্ষার ব্যাপারে একটি মূলনীতি উল্লেখ করা হয়েছে। সম্পদের প্রতি লোভ স্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটি অপছন্দনীয় রীতি। এ আয়াতে ঈমানদারদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, স্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এই মাপকাঠি বৈধ নয়। একই সাথে স্ত্রীদেরকে মোহরানা দেয়ার পর তার কিছু অংশ জোর করে ফেরত নেয়াও থুবই নোংরা রীতি। বিশেষ করে মোহরানার অংক যদি খুব বড় হয়, তার অংশবিশেষ ফেরত দেয়া স্ত্রীদের খুবই কষ্টকর। পবিত্র কোরআন এ ধরণের কাজ করতে নিষেধ করেছে এবং স্ত্রীদের সম্পদ ও অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাতে বলেছে। শুধুমাত্র স্ত্রীদের প্রকাশ্য ব্যাভিচারের শাস্তি হিসেবে তাদের সাথে কঠোর আচরণ করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করেছে। যেমন স্ত্রী প্রকাশ্যে ব্যাভিচারী হলে তাকে মোহরানা না দিয়ে তালাক দেয়া যেতে পারে। এরপর মহান আল্লাহ এক সামগ্রিক নীতির বর্ণনা দিয়ে স্ত্রীদের সাথে ভালো আচরণ করতে পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন, কোন কারণে যদি স্ত্রীদের প্রতি অসন্তুুষ্ট হও অথবা স্ত্রী প্রতি তোমার ভালবাসা কমে যায় এবং স্ত্রীকে ভাল না লাগে তাহলে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিও না এবং তার সাথে খারাপ ব্যবহার করো না। কারণ অনেক কিছুই মানুষের কাছে অপছন্দনীয় হলেও আল্লাহ সেসবের মধ্যে অনেক কল্যান ও বরকত রেখেছেন।

এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল :

১. স্ত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে সম্পদের আকাক্সক্ষা যেন মানদন্ড না হয়। ভালবাসাই বিয়ের মূল ভিত্তি হওয়া উচিত।

২. স্ত্রী মোহরানার একমাত্র মালিক। পুরুষ স্ত্রীকে দেয়া মোহরানার বা স্ত্রীর অন্য কোন সম্পদের ওপর কোন ধরণের মালিকানার অধিকার রাখে না।

৩. পরিবার ব্যবস্থা রক্ষার দায়িত্ব পুরুষের। কঠোরতা বা ভুল বোঝাবুঝি যেন খারাপ আচরণ এবং তালাক বা বিচ্ছিন্নতার কারণ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।



২০ ও ২১ নং আয়াত

যদি তোমরা এক স্ত্রীর স্থলে অন্য স্ত্রী পরিবর্তন করতে ইচ্ছা কর এবং তাদের একজনকে প্রচুর ধন-সম্পদ প্রদান করে থাক, তবে কিছুই ফেরত গ্রহন করো না। তোমরা কি তা অন্যায়ভাবে ও প্রকাশ্য গোনাহ্র মাধ্যমে গ্রহণ করবে? তোমরা কিরূপে তা গ্রহণ করতে পার, অথচ তোমাদের একজন অন্য জনের কাছে গমন এবং নারীরা তোমাদের কাছে সুদৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেছে।



২০ ও ২১ নং আয়তে অজ্ঞতার যুগে আরব সমাজে বহুল প্রচলিত একটি নোংরা প্রথার উল্লেখ করা হয়েছে। ওই প্রথা অনুযায়ী পুরুষরা নতুন স্ত্রী গ্রহণ করতে চাইলে, প্রথম স্ত্রীর নামে মিথ্যা অপবাদ রটাতো, যাতে প্রথম স্ত্রী মানসিক চাপের শিকার হয়ে মোহরানা মাফ করে দেয় এবং স্বামী সহজেই তাকে তালাক দেয়। এরপর পুরুষ ওই টাকা দিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করতো। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ এই নোংরা প্রথা নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, তোমরা দাম্পত্য জীবণের চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছ এবং তাতে স্ত্রীকে মোহরানা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছ। আর এরই ভিত্তিতে অনেক বছর এক সাথে ঘর-সংসারও করেছ, এখন কিভাবে অন্যকে পাবার জন্য আগের চুক্তি ভঙ্গ করবে? এমনকি নিজের স্বতী স্ত্রীকেও অপবাদ দিতে দ্বিধাবোধ করছ না?

এই দুই আয়াতের শিক্ষনীয় দিকগুলো হল :

১. ইসলাম নারীর ন্যায্য অধিকারের সমর্থক এবং ইসলাম প্রথম স্ত্রীর অধিকার ক্ষুন্ন করে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহনের অনুমতি পুরুষকে দেয় নি।

২. মোহরানা ফেরত নেয়া বৈধ নয়। বিশেষ করে কেই যদি স্ত্রীকে অপবাদ দিয়ে বা তার মর্যদাহানি করে মোহরানা ফেরত নেয়ার যুক্তি দেখায়, তাহলে তা ওই পুরুষের পাপ আরও বৃদ্ধি করবে।

৩. বিয়ের চুক্তি একটি সুদৃঢ় চুক্তি। এই চুক্তির মাধ্যমে আল্লাহ নারী ও পুরুষকে পরস্পরের জন্য বৈধ করেছেন। তাই এ চুক্তি রক্ষা স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের জন্য জরুরী।



২২ ও ২৩ নং আয়াত

যে নারীদের তোমাদের পিতা-পিতামহ বিবাহ করেছে তোমরা তাদের বিবাহ করো না। কিন্তু যা বিগত হয়ে গেছে। এটা অশ্লীল, গযবের কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ। তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকন্যা; ভগিনীকন্যা তোমাদের সে মাতা, যারা তোমাদেরকে স্তন্যপান করিয়েছে, তোমাদের দুধ-বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালনপালনে আছে। যদি তাদের সাথে সংগত না করে থাক, তাহাতে তোমাদের কোন গোনাহ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা; কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকারী, দয়ালু।



যেসব মহিলাকে বিয়ে করা হারাম এই দুই আয়াতে তাদের তালিকা দেয়া হয়েছে। এই সব মহিলাদের বিয়ে করা মানব প্রকৃতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সামগ্রিকভাবে তিনটি ক্ষেত্রে বিয়ে বৈধ নয়।

১. রক্তের সম্পর্কের অধিকারী মহিলারা। যেমন : মা, বোন, ফুফ,ু খালা, ভাগনি ও ভাইঝিকে বিয়ে করা হারাম।

২. বৈবাহিক সম্পর্কের মাধ্যমে সৃষ্ট বাধার ক্ষেত্রে যেমন : স্ত্রীর মা, বোন ও স্ত্রীর পূর্ববর্তী স্বামীর ঔরসে জন্ম নেয়া কন্যাকে বিয়ে করা হারাম।

৩. দুধের সম্পর্ক যেমন : দুধ মা ও দুধ বোনকে বিয়ে করা হারাম।



২৪ নং আয়াত

এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল স্ত্রীলোক তোমাদের জন্য নিষিদ্ধ-এটা তোমাদের জন্য আল্লাহর হুকুম। এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা তাদের স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য-ব্যাভিচারের জন্য নয়। অতঃপর তাদের মধ্যে যাকে ভোগ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ্ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ।

পূর্ববর্তী আয়াতের ধারাবাহিকতায় এই আয়াতে আরো দুই ধরণের বিয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং আল্লাহ তা’য়ালা এই দুই ধরণের বিয়েকে বৈধ করে মুমিনদেরকে আল্লাহর বিধান মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। যুদ্ধ মানব সমাজের একটি তিক্ত বাস্তবতা। যুদ্ধে জড়িত উভয় পক্ষের বহু পুরুষ প্রাণ হারায় বলে বহু নারী ও পরিবার অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, যুদ্ধ বিগ্রহের প্রাচীন প্রথায় যুদ্ধ-বন্দীদের রাখার জন্য কোন স্থান বা বিশেষ কারাগার ছিল না বলে পুরুষ যুদ্ধ-বন্দীদেরকে দাস এবং বন্দিনী নারীদেরকে দাসীতে পরিণত করা হত। ইসলাম এই প্রথাকে একতরফাভাবে নিষিদ্ধ না করলেও মুক্তিপণ প্রথার মত বিভিন্ন নিয়মের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে বন্দী মুক্তির সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ইসলাম নারী বন্দিনীদের বিয়ে করাকে বৈধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। কারণ তারা এর ফলে স্ত্রী ও মায়ের মর্যাদা পাচ্ছেন। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় যেসব নারী বন্দিনীদের ভবিষ্যত নিয়ে যাদের স্বামী জীবিত রয়েছে। ইসলাম তাদের বন্দীদশাকে স্বামী বিচ্ছিন্নতা বা তালাকের মত বলে দরে নিয়েছে এবং এ ক্ষেত্রেও তারা অন্তসত্বা কিনা তা স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত পুণরায় তাদের বিয়ে অনুমতি দেয়নি। বন্দিনী মহিলাদেরকে তাদের নিজেদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দেয়া বা তাদের স্বাভাবিক চাহিদার প্রতি গুরুত্ব না দেয়ার চেয়ে ইসলামের এই বিধান বেশি যৌক্তিক ও উন্নত। অন্যদিকে বহু মুসলমান পুরুষও শহীদ হওয়ায় তাদের পরিবারবর্গ অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে। ইসলাম এই সমস্যা সমাধানের জন্য দুই ধরণের পদ্ধতি পেশ করেছে। একটি হল পুরুষদেরকে বহু স্ত্রী রাখার অনুমতি দেয়া। আর দ্বিতীয় বিধান হলো, স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করা এবং তাদের সাথে প্রথম স্ত্রীর মত আচরণ করা। এ আয়াতে আরও একটি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আর এটি হলো অস্থায়ী বিয়ে। স্থায়ী বিয়ের মত এ বিয়ের চুক্তিকেও আল্লাহ বৈধ এবং শর্তযুক্ত করেছেন। অস্থায়ী বিয়ের সময়সীমা সীমিত বা নির্ধারিত হলেও তা নবায়নযোগ্য। তবে অনেক বুদ্ধিজীবী ও পাশ্চাত্যপন্থী ব্যক্তি এই রীতি তথা অস্থায়ী বিয়েকে উপহাস করে একে মহিলাদের প্রতি অসম্মান বলে মন্তব্য করেছেন। অথচ পাশ্চাত্যে নারী ও পুরুষের সম্পর্কে কোন লাগাম ও নিয়ন্ত্রন নেই। পাশ্চাত্যে বহু পুরুষের সাথে একজন নারীর অবাধ ও গোপন সম্পর্ককে বৈধ মনে করা হয়। তাহলে কি নারী ও পুরুষের লাগামহীন সম্পর্ক এবং তাদের মধ্যে পাশবিক তাড়নার সম্পর্ক নারী অধিকার লঙ্ঘন নয়? আর নারী ও পুরুষের সম্পর্ক যদি বিয়ের চুক্তির মত নীতিমালার াওিতায় পবিত্র থাকে তবে তা কেন নারীর প্রতি অসম্মান হবে। দুঃখজনকভাবে আল্লাহর এই বিধানের ব্যাপারে ইসলামের প্রাথমিক যুগেই দৃষ্টিভঙ্গিগত মতবিরোধ দেখা দিয়েছিল এবং অস্থায়ী বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে গোপন সম্পর্ক ও ব্যাভিচারের পথ প্রশস্ত হয়। কারণ অস্থায়ী বিয়ে নিষিদ্ধকরা হলেও মানুষের স্বাভাবিক চাহিদা বন্ধ হয়ে যায়নি এবং অনেক মানুষ চাহিদা মেটানোর জন্য অবৈধ পন্থার আশ্রয় নেয়।

এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিক গুলো হল :

১. সামাজিক ও পারিবারিক বিষয়ে বাস্তববাদী হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত অভিরুচি বা গোষ্ঠিগত দৃষ্ঠিভঙ্গির অনুসরণ না করে আল্লাহর বিধানই মেনে নেয়া উচিত। কারণ আল্লাহ মানুষের ¯্রষ্টা ও সর্বজ্ঞ হিসেবে তাদের ব্যক্তিগত এবং সামাজিক চাহিদা সম্পর্কে বেশি অবগত।

২. বিয়ে স্থায়ী বা অস্থায়ী যাই হোক না কেন, তা নারী ও পুরুষের সম্ভ্রম এবং চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার শক্তিশালী দূর্গ।

৩. বিয়ের মোহরানা নির্ধারণের ক্ষেত্রে উভয় পক্ষের সন্তুষ্টিই এর বৈধতার মূল শর্ত। শুধু পাত্র পক্ষই মোহরানা নির্ধারনে অধিকারী নয়।

২৫ নং আয়াত

আর তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি স্বাধীন মুসলমান নারীকে বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে না, সে তোমাদের অধিকারভুক্ত মুসলিম ক্রীতদাসীদেরকে বিয়ে করবে। আল্লাহ তোমাদের ঈমান সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞাত রয়েছেন। তোমরা পরস্পর এক, অতএব, তাদেরতে তাদের মালিকের অনুমতিক্রমে বিয়ে কর এবং নিয়ম অনুযায়ী তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর এমতাবস্থায় যে, তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে-ব্যাভিচারিনী কিংবা উপ-পতি গ্রহণকারিণী হবে না। অতঃপর যখন তার বিবাহ বন্ধনে এসে যায়, তখন যদি অশ্লীল কাজ করে, তবে তাদেরকে স্বাধীন নারীদের অর্ধেক শাস্তি ভোগ করতে হবে। এ ব্যবস্থা তাদের জন্যে, তোমদের মধ্যে যারয ব্যাভিচারে লিপ্ত হওয়ার ব্যাপারে ভয় করে। আর যদি সবুর কর, তবে তা তোমাদের জন্য উত্তম। আল্লাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়।



আগের আয়াতে দাসী ও যুদ্ধ বন্দিনী নারীদের বিয়ে করাকে বৈধ বলে উল্লেখের পর এ আয়াতে মোহরানার অর্থ পরিশোধে অক্ষম মুসলিম পুরুষদেরকে যুদ্ধ বন্দিনী নারী বিয়ে করতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। এই উভয় শ্রেণীর নারী ও পুরুষ যাতে অনৈতিক পন্থায় জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকে, সে জন্যই আল্লাহ এ নির্দেশ দিচ্ছেন। উপরুক্ত এ ব্যবস্থার ফলে বন্দিনীরা স্বামিহীন অবস্থায় থাকবে না। একটি লক্ষণীয় দিক হল, ইসলাম যে কোন নারী ও পুরুষের বিয়ের জন্য ঈমানদার হওয়াকে মূল শর্ত বলে উল্লেখ করেছে। এ থেকে বোঝা যায়, যদি কোন ঈমানদার যুবক ও ঈমানদার যুবতী সম্পূর্ণ অপরিচিতও হয় এবং সামাজিক ক্ষেত্রে তারা একই শ্রেণীর নাও হয়ে থাকে তবুও তারা দাম্পত্য জীবনে সুখী হতে পারে। কিন্তু তাদের যদি ঈমানই না থাকে, তাহলে তারা যত সুন্দর বা সুন্দরী এবং অর্থ সম্পদ ও উচ্চ পদের অধিকারী হোক না কেন তাদের সুখ বা সুন্দর জীবনে স্বপ্নই থেকে যাবে। কারণ সময়ের পরিক্রমায় এসব বাহ্যিক দিকগুলো বিলীন হয়ে যায়।

এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল :

১. প্রয়োজনে দাসীকে বিয়ে করার বিষয়টি মেনে নেয়া উচিত। কিন্তু পাপের কলঙ্কে লিপ্ত হওয়া কখনও উচিত নয়।

২. যারা বিয়ের খরচ বহন করতে অক্ষম, ইসলামে তাদের জন্যেও অচলবস্থার কোন অবকাশ নেই।

৩. বিয়ের মূল ভিত্তি ও এর স্থায়ীত্বের শর্ত হলো চারিত্রিক পবিত্রতা বজায় রাখা এবং অবৈধ সম্পর্ক থেকে দূরে থাকা।

৪. অসৎ চরিত্রের লোকেরা সমাজেও অসৎ কাজের বিস্তার ঘটায়। এইসব লোকদেরকে আল্লাহ পরকালে কঠোর শাস্তি দিবেন।এ ধরণের অসৎ লোকদেরকে এ পৃথিবীতেও শাস্তি দেয়া উচিত, যাতে তাদের দেখে অন্যরাও শিক্ষা পেতে পারে।





৩২ নং আয়াত

আর তোমর আকাক্সক্ষা করো না এমন সব বিষয় যাতে আল্লাহ তোমদের একের ওপর অপরের শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। পুরুষ যা অর্জন করে সেটা তার অংশ এবং নারী যা অর্জন করে সেটা তার অংশ। আর আল্লাহর কাছে তার অনুগ্রহ প্রর্থনা কর। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত।



সৃষ্টি জগত পার্থক্য ও বৈচিত্র্যে ভরপুর। মহান আল্লাহ সৃষ্টি জগত পরিচালনার জন্য মানুষ, উদ্ভিদ, নানা জীব-জন্তু, কীট-পতঙ্গ ও সরিসৃপসহ বহু জীবন্ত সত্ত্বা সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ মানুষের মধ্যেও একদলকে নারী ও অন্য একদলকে পুরুষ হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেক মানুষের শারীরিক ও মানসিক গঠন ভিন্ন ধরণের। সৃষ্টিজগত এত বিশাল হওয়া সত্ত্বেও এর যথাযথ পরিচারনার জন্যেও শতশত কোটি সৃষ্টি বা অস্তিত্বের প্রয়োজন। আর প্রতিটি সৃষ্টিরই রয়েছে বিশেষ দায়িত্ব। তেমনি মানব সমাজেও শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে প্রত্যেক মানুষেরই বিশেষ মেধা ও ক্ষমতা থাকায় সমাজের বিভিন্ন চাহিদা পূরণ সম্ভব হয়। মানুষের মধ্যে এসব পার্থক্যের অর্থ কিন্তু বৈষম্য নয়। তার কারণ হচ্ছে

১. আল্লাহর কাছে কোন সৃষ্টিরই কোন পূর্ব প্রত্যাশা ছিল না, যে কেউ তার দাবি করতে পারে।

২. মানুষের মধ্যে এই পার্থক্য কৌশলময়। জুলুম, হিংসা, কৃপনতার কোন ভুমিকা এতে নেই। তবে, আল্লাহ যদি সব সৃষ্টি বা মানুষের কাছে একই ধরণের কাজের আশা করেন, তাহলে তা হবে অন্যায়। কারণ, সবাই একই ধরণের ক্ষমতা, শক্তি ও সুযোগ-সুবিধার অধিকারী নয়। কোরআন ও হাদীসের বর্ণনা অনুযায়ী আল্লাহ মানুষের কাছ থেকে তাদের সামর্থ অনুযায়ী কাজ আশা করেন। যেমন, সুরা তালাক্কের সপ্তম আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, আল্লাহ কারো কাছ থেকেই তার জন্য অর্পিত দায়িত্বের বেশি কিছু চান না। অবশ্য মানুষ ও অন্যান্য সৃষ্টির মধ্যে একটা বড় পার্থক্য হলো, একমাত্র মানুষই চিন্তাভাবনার ক্ষমতা রাখে এবং সৎ পথ বা অধঃপতনের পথ বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে স্বাধীন। তাই স্বাভাবিকভাবেই অর্জন যোগ্য বিষয়ে মানুষের উন্নতি নির্ভর করে তাদের প্রচেষ্টার ওপর। এ ক্ষেত্রে অলসতা ও নিষ্ক্রিয়তার জন্য আল্লাহ দায়ী নন। তাই এ আয়াতে মানুষের ক্ষমতার বাইরে থাকা আল্লাহর নিয়ামতগুলোর কথা ও মানুষের পক্ষে অর্জনের যোগ্য বিভিন্ন নিয়ামতের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, আল্লাহ কোন কোন মানুষকে এমন বৈশিষ্ট দান করেছেন যা অন্য অনেককেই দেননি, ফলে তা নিয়ে তোমরা একে অপরকে হিংসা করো না। এ ক্ষেত্রে অসম্ভব কিছু কামনা করা উচিত নয়। আর অর্জন যোগ্য বিষয়ে নারী ওপুরুষেরা তাদের প্রচেষ্টার ফলই থাকে। তোমরাও চেষ্টা ও পরিশ্রম কর এবং তা যেন সফল হয় সে জন্য আল্লাহর দোয়া প্রার্থনা কর।







এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল :

১. অন্যদের প্রতিভা ও নিয়ামতের দিকে নজর না দিয়ে আমাদের নিজেদের যোগ্যতা, প্রতিভা এবং সুযোগ-সুবিধার দিকে লক্ষ্য করা উচিত। অন্যের নিয়ামতের ব্যাপারে হিংসা না করে নিজের নিয়ামত ও প্রতিভাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে হবে।

২. অসম্ভব আকাক্সক্ষা ও দূরাশার মূলোৎপাটন করতে হবে। কারণ, দূরাশাই নৈতিক অধপতনের অন্যতম মূল কারণ।

৩. মানুষের নিজের চেষ্টা ও অধ্যাবসায় গুরুত্বপূর্ণ হলেও আমাদের এই উপার্জনের আল্লাহর কোন ভুমিকা নেই এমন ধারণা করা উচিত নয়। আমরা চেষ্টাও করবো এবং আল্লাহর কাছেও সাহায্য চাইবো।

৪. পুরুষের মত মহিলারাও মালিকানার অধিকারী হতে পারেন। মোহরানা বা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পত্তি ছাড়াও মহিলারা চাকরি ও ব্যবসার মাধ্যমে সম্পদের মালিক হতে পারেন।



৩৩ নং আয়াত

পিতা-মাতা এবং নিকটাত্মীয়গণ যা ত্যাগ করে যান সেসবের জন্য আমি উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করে দিয়েছি। আর যাদের সাথে তোমরা অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছ তাদের প্রাপ্য দিয়ে দাও। আল্লাহ তা’আলা নিঃসন্দেহে সব কিছুই প্রত্যক্ষ্য করেন



পূর্বের আয়াতে বলা হয়েছে নারী ও পুরুষ যা অর্জন করে তা তাদের নিজস্ব সম্পদ। আর এই আয়াতে বলা হচ্ছে, প্রত্যেক নারী ও পুরুষ উত্তরাধিকার সূত্রে য পায়, সেগুলোও তাদের নিজস্ব সম্পদ। এরপর আরো বলা হয়েছে, উপার্জন ও উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সম্পদ ছাড়াও কারো সাথে বৈধ চুক্তির ভিত্তিতে মানুষ যেসব সম্পদ অর্জন করে, সেগুলোর মালিকও তারাই। ইসলাম পূর্ব যুগে আরবদের মধ্যে এক ধরণের চুক্তি প্রথা প্রচলিত ছিল। এই প্রথা অনুযায়ী দুই ব্যক্তি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হত যে, কারা জীবণে একে অপরকে সহায়তা করবে। একজন কোন ক্ষতির সম্মুখীন হলে অন্যজন সে ক্ষতিপূরণ করবে এবং তাদের কারও মৃত্যুর পরে অন্যজন মৃত ব্যক্তির সম্পদ উত্তরাধিকার হিসেবে ভোগ করবে। ইসলাম অনেকটা বীমার মত এই চুক্তিপ্রথা মেনে নিয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার পাবার জন্য মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী না থাকার বিষয়কে শর্ত করে দিয়েছে।

এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল :

১. ইসলামের উত্তরাধিকার আইন সম্পূর্নরূপে খোদায়ী আইন। কেউ এর মূলনীতি বা এর কোন অংশ বিশেষ পরিবর্তন আনার অধিকার রাখে না ।

২. চুক্তি ও প্রতিজ্ঞা পালন করা ধর্মীয় দৃষ্টিতে ফরজ বা অবশ্য পালনীয়। বিশেষ করে যেসব চুক্তি অর্থ লেনদেন সম্পর্কিত তা মেনে চলা বাধ্যতামূলক। কারণ এসব চুক্তি লঙ্ঘনের ফলে অন্যপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

৩. প্রতিজ্ঞা এবং চুক্তিকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মৃত্যুর পরও কার্যকরী রাখতে হবে। মৃত্যুর কারণে চুক্তির অমর্যাদা করা উচিত নয়



৩৪ নং আয়াত

পুরুষেরা নারীদের ওপর কর্তৃত্বশীল এ জন্য যে, আল্লাহ একের উপর অন্যের বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং বে জন্য যে তারা তাদের অর্থ ব্যয় করে। সে মতে নেককার স্ত্রীলোকগণ হয় অনুগতা এবং আল্লাহ যা হেফাযতযোগ্য করে দিয়েছেন লোক চক্ষুর অন্তরালেও তার হেফাযত করে। আর যাদের মধ্যে অবাধ্যতার আশঙ্কা কর তাদের সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং প্রহার কর। যদি তাতে তারা বাধ্য হয়ে যায়, তবে আর তাদের জন্য অন্য কোন পথ অনুসন্ধান করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সবার উপর শ্রেষ্ঠ।



পবিত্র কুরআনের এই আয়াতে স্বামী ও স্ত্রীর পারস্পারিক সম্পর্কের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু দুঃকজনক ব্যাপার হল, পবিত্র কুরআনের পরিবারিক বিষয় সম্পর্কিত অনেক আয়াতের মত এই আয়াতেরও অপব্যবহার বা অপব্যাখ্যার সুযোগে কিছু লোক ইসলাম ধর্ম ও পবিত্র কুরআন সম্পর্কে প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে এবং এসব নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে থাকে। অজ্ঞ ও অসুস্থ শ্রেণীর একদল পুরুষ এ আয়াতের ভিত্তিতে নিজেদেরকে মালিক এবং স্ত্রীদেরকে বাদী বা দাসী বলে মনে করে। তাদের মতে, স্ত্রীদেরকে অন্ধের মত স্বামীর যে কোন নির্দেশ মানতে হবে এবং স্ত্রীদের সিদ্ধান্ত নেয়ার বা মত প্রকাশের কোন অধিকার নেই। এইসব পুরুষদের ভাবখানা এমন যে, তাদের যে কোন নির্দেশ যেন খোদারই নির্দেশ এবং স্ত্রীরা তাদের নির্দেশ অমান্য করণেই তাদেরকে কঠেরি শাস্তি দিতে হবে। এই বিভ্রান্তির কারণ হলো আয়াতের প্রকৃত অর্থকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গী অনুযায়ী অর্থ করা। এই আয়াতের প্রকৃত অর্থ হল, আয়াতের প্রথম অংশে পুরুষদেরকে পরিবারের ও স্ত্রীদের সব বিষয়ের তত্ত্বাবধায়ক বা অভিভাবক করা হয়েছে। আধুনিক সমাজবিজ্ঞানে পরিবারকে বৃহত্তর সমাজের প্রথম ও প্রধান একক বলে গুরুত্ব দেয়া হয়। একজন পুরুষের সাথে একজন নারীর বিয়ের মাধ্যমেই এই পরিবার গঠিত হয় এবং সন্তান সন্তুতি জন্মের ফলে পরিবারের আয়তন বৃদ্ধি পায়। স্বাভাবিকভাবেই পরিবার নামের এই ছোট্ট সমাজের বিভিন্ন দিক পরিচালনার জন্য একজন পরিচালক থাকা দরকার। তা না হলে পরিবারে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য দেখা দেবে। পবিত্র কুরআনে নারী ও পুরুষ তথা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে স্বামীকে দুটি কারনে পরিবারের পরিচালক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রথমত, পুরুষরা মহিলাদের তুলনায় শারীরিক দিক থেকে বেশি মক্তিশালী। আর তাই পুরুষদের আয়-উপার্জন ক্ষমতা বেশি।

দ্বিতীয়ত, জীবন যাপনের সমস্ত খরচ যেমন- খাদ্য, বাসস্থান, পোশাক ও অন্যান্য সব খরচ যোগানোর দায়িত্ব স্বামীর।

অন্যদিকে ইসলামের দৃষ্টিতে নিজের ও সংসারের কোন খরচ যোগানোর সামান্য বাধ্যবাধকতাও স্ত্রীর নেই এমনকি তার নিজস্ব আয় উপার্জন থাকলেও তা খরচ করা তার জন্য জরুরি নয়। অন্যকথায়, ইসলাম পরিবারের কল্যাণ ও সুখ সমৃদ্ধি কঠিন দায়িত্ব পুরুষরওপর অর্পন করেছে। আর এই দায়িত্ব পালনের জন্য পরিবার বিষয়ের সমস্ত ক্ষমতা পুরুষের ওপর ন্যাস্ত করা হয়েছে। পুরুষেরা এ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হলেও স্ত্রীদের ওপর বলদর্পী ব কর্তৃত্বকামী হবার কোন তাদের অধিকার নেই। পরিবার পরিচালনার ক্ষেত্রে পুরুষের দায়িত্ব সীমিত। নিজের কোন কাজে স্ত্রীকে দাসী হিসেবে ব্যবহার করা বা স্ত্রীর ওপর জুলুম করার কোন অধিকার পুরুষের নেই। পুরুষ বা স্বামী যখন কোন অন্যায় করে বা স্ত্রীর ভরণ-পোষণের খরচ দিতে অস্বীকার করে কিংবা স্ত্রী ও সন্তান সন্তুতির জীবণ দূর্বিষহ করে তোলে তাহলে স্ত্রীর অনুরোধে বিচারক বা কাজী এক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে পারে।

সামগ্রিকভাবে এটা মনে রাখতে হবে যে, পারিবারিক পরিবেশে পুরুষের পরিচালনার অর্থ কোনক্রমেই স্ত্রীর ওপর পুরুষের কর্তৃত্ব নয়। নারী ও পুরুষ তথা মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি হলো খোদাভীতি ঈমান। আয়াতের দ্বিতীয় অংশে দুই ধরণের স্ত্রীর কথা বলা হয়েছে। সতী স্ত্রীরা পারিবারিক ব্যবস্থার প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ। তারা শুধু স্বামীদের উপস্থিতিতেই নয়, তাদের অনুপস্থিতিতেও স্বামীর ব্যাক্তিত্ব, গোপনীয়তা ও অঙ্গীকার রক্ষা করে। এই শ্রেণীর স্ত্রীরা প্রশংসা পাবার যোগ্য। অন্য এক শ্রেণীর স্ত্রী দাম্পত্য জীবনে স্বামীর অনুগত নয়। এ ক্ষেত্রেই আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বরেছেন, “স্ত্রীরা অবাধ্যতার আশংকা থাকলে তাদেরকে উপদেশ দাও ও সতর্ক কর।”

যদি উপদেশ ও সতর্ক করার পরও কাজ না হয় তাহলে স্বামী তার ওপর রাগ করে কিছুকাল দাম্পত্য জীবনে স্ত্রীকে উপেক্ষো করতে পারে এবংএভাবে তার উপর নিজের ক্ষোভ বা অসন্তুষ্টি প্রকাশ করতে পারে। যদি এরপরও স্ত্রী দাম্পত্য জীবনের দায়িত্ব পালনে বিরত হয় এবং কিছুটা কঠোর হওয়া ছাড়া অন্যকোন পথ না থাকে তাহলে স্ত্রীকে শাসন করার অনুমতি স্বামীকে দেয়া হয়েছে। অবশ্য হালকা ও মোলয়েম শাসন স্ত্রীকে ভুল ধরিয়ে দিতে পারে। স্ত্রীর অবাধ্যতান মাত্রা যে তিন পর্যায়ের ব্যবস্থার কথা পবিত্র কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে তা স্ত্রীর সাথে স্বামী সম্ভোগ সম্পর্কিত। অনেক সময় স্ত্রীরা কথাবার্তার মাধ্যমে স্বামীর অবাধ্য হয়। এক্ষেত্রে মৌখিক উপদেশই যথেষ্ট। কখন ও কখনও স্ত্রীরা কাজের মাধ্যমে স্বামীর অবাধ্য হয়। এক্ষেত্রে কাজের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং স্ত্রীর শয্যা থেকে দূরে থাকতে হবে। কিন্তু অনেক সময় স্ত্রীর অবাধ্যতার মাত্রা হয় অর্তন্ত কঠোর। এ অবস্থায় শারীরিকভাবে তাকে শাসন করা উচিত। একই স্বামী যদি তার দায়িত্ব পালনে বিমূখ হয় তাহলে বিচারকের মাধ্যমে তার বিচার এবং প্রয়োজনে শারীরিকভাবে তাকে শাসন করতে হবে। কারণ স্ত্রীর ভরণ-পোষণ করা স্বামীর দায়িত্ব সত্ত্বেও তা থেকে বিমূখ হওয়া স্ত্রীর অধিকারের লঙ্ঘন এবং তাই বিয়ের চুক্তির লঙ্ঘনের দায়ে আদালতে স্বামীর াবচার হতে পারে। কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক পারিবারিক ও ব্যক্তিগত হওয়ায় ইসণাম এ ধরণের সমস্যা পরিবারের মধ্যেই মিটিয়ে ফেলাকে প্রধান্য দেয়। পুরুষ যেখানে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে বাদী সেখানে স্ত্রীকে শারীরিকভাবে শাসন করার ক্ষমতা থাকার কারনে তা প্রয়োগ করা হলে পরিবারের সম্মান ক্ষুন্ন হবে। আগেই বল হয়েছে, এই শাসন অবশ্যই হতে হবে মোলায়েম, কঠোর বা প্রতিশোধমূলক নয়। ইসলামের এই বিধানের দিকে তাকালে দেখা যাবে, ইসলাম বিভিন্ন পর্যয়ে অত্যন্ত সূক্ষ্ম পন্থায় পরিবার ব্যবস্থাকে ক্ষতি ও ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার ব্যবস্থ নিয়েছে।



এই আয়াতের শিক্ষনীয় দিকগুলো হল :

১. স্বামীর আনুগত্য করা দুর্বলতার লক্ষন নয় বরং পরিবারে প্রতি সম্মান ও পরিবার টিকিয়ে রাখার জন্যই তা জরুরি।

২. শুধু নামাজ রেজাই সৎ কাজ নয়, পরিবারের অধিকার রক্ষা করা এবং পারিবারিক দায়িত্ব পালনও সৎকাজের অন্তর্ভুক্ত।

৩. স্ত্রীর ভুল বা অপরাধের অজুহাত প্রবণ বা প্রতিহিংসা পরায়ণ হওয় উচিত নয়। তার কল্যাণ ও সংশোধনের ইচ্ছাকেই এ ক্ষেত্রে আচরণের মাপকাঠি করতে হবে, পরিবার পরিচালনার দায়িত্বটা তাদের ওপর অর্পন করা হলেও আল্লাহ তাদের আচরণ ও তৎপরতা লক্ষ্য করেছেন এবং স্ত্রী ও সন্তানদের সাথে আচরণের ব্যাপারে কিয়ামতের দিন জবাবদিহি করতে হবে।



৩৫ নং আয়াত

যদি তাদের মধ্যে সম্পর্কচ্ছেদ হওয়ার মত পরিস্থিতিরই আশঙ্কা কর, তবে স্বামীর পরিবার থেকে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন সালিশ নিযুক্ত করবে। তারা উভয়ের মীমাংশসা চাইলে আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবকিছুই অবহিত।



এই আয়াতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মতভেদ দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য পারিবারিক আদালত গঠনের প্রস্তাব দিয়ে বলা হচ্ছে, যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া বিবাদ চরমে পৌঁছে, তাহলে উভয় পক্ষের পরিবারকে এই দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলার উদ্যেগ নিতে হবে। বিবাদ যেন তলাক পর্যন্ত না গড়ায় সেজন্য তাদেরকে সক্রিয় থাকতে হবে এবং স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের অধিকার রক্ষার জন্য উভয় পক্ষের পরিবার থেকে একজন করে সালিশ বা মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করতে হবে। সালিশদের কাজ হলো স্বামী ও স্ত্রীর আচরণ সংশোধনের লক্ষ্যে তাদের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি করা। সমঝোতা প্রতিষ্ঠা করাই তাদের কাজ, কারও বিচার করে শাস্তি দেয়া নয়। ইসলামী এই প্রথার বিশেষ কিছু সুবিধা রয়েছে

প্রথমত, এর ফলে পারিবারের মর্য়াদা অক্ষুন্ন থাকে।

দ্বিতীয়ত, মধ্যস্ততাকারীরা সংশ্লিষ্ট পরিবারের মধ্য থেকে নির্বাচিত হওয়ায় পারিবারিক সমস্যা সমাধানের জন্য তারা আন্তরিক হয়ে থাকেন।

তৃতীয়ত, মধ্যস্ততাকারীরা উভয়পক্ষের মাধ্যমে মনোনীত হন বলে দু’পক্ষের পরিবারই তাদের রায় মেনে নেয়।

চতুর্থত, পারিবারিক আদালত সত্য ও মিথ্যা নির্ণয় বা স্বমী ও স্ত্রীর মধ্যে কোন একজনকে শাস্তি দেয়ার জন্য গঠিত হয় না। কারণ এসব প্রশ্ন তাদের মধ্যে কোন একজনকে শাস্তে দেয়ার জন্য গঠিত হয় না। কারণ এসব প্রশ্ন তাদের বিচ্ছিন্নতা আরও বাড়িয়ে দেয়। বরং পারিবারিক আদালত স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে মতভেদের বিষয়গুলো উপেক্ষা এবং উভয়ের মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টির পথ নির্ণয়ের চেষ্ট করবে।

এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হল :

১. পরিবারগুলোর মধ্যে বিবাদ ও তিক্ততার ব্যাপারে আত্মীয় স্বজন এবং সমাজের দায়িত্ব রয়েছে। তাদের উচিত নয় এ ব্যাপারে উদাসীন না থাকা। রোগ দেখা দেয়ার আগে জীবন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেয়া উচিত তেমনি তালাক বা বিচ্ছিন্নতা দেখা দেয়ার আগেই তা প্রতিরোধের ব্যবস্থা করতে হবে।

২. সালিশ বা মধ্যস্থতাকারী নির্বাচনের ক্ষেত্রেও নারী ও পুরুষের সমান অধিকার রয়েছে। উভয়ই শুধুমাত্র একজন মধ্যস্থতাকারী নিয়োগ করতে পারবেন।

৩. মানুষ যদি সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করে থাকে তাহলে আল্লাহও তাদেরকে সাহায্য করেন এবং এর ফলে তারা কাজে সফল হয়।



এখন আমি প্রগ্রেসিভ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সুরা নিসায় বর্নিত নারী-পুরুষের সম্পর্কের সমালোচনা করছি



বিবাহ

সুরা নিসায় বলা হয়েছে এতিম মেয়েদের হক পূরণের জন্য ছেলেরা চারটি বিবাহ করতে পারবে। অর্থাৎ ইসলামে ছেলেদের একই সাথে চারটি বিয়ের অনুমতি দান করেছে। কিন্তু মেয়েদের একাধিক বিয়ের কোন অধিকার দেয়া হয় নি। সুতরাং এখানে মেয়েদের সমান অধিকার দেয়া হয়নি। অনেক মাওলানা-মৌলভী এ সম্পর্কে বলে যে, মহিলারা হল শস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রের সাথে এবং পুরুষরা জমির মালিকের সাথে তুলনীয়। একজন মালিকের কয়েক খন্ড জমি থাকতে পারে, কিন্তু এক খন্ড জমির মালিক কয়েকজন হলে এবং সবাই বীজ ছড়ালে কার শস্য তা নিয়ে সমস্যা দেখা দেবে। সুতরাং এ ক্ষেত্রেও পুরুষদের সম্মান সর্বোচ্চ দেয়া হয়েছে এবং মহিলাদেরকে পুরুষদের দাসী বা সন্তান উৎপাদনের ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।



উত্তরাধিকার সম্পত্তি

ইসলামে উত্তারধিকার সম্পত্তির ক্ষেত্রে একজন মেয়েকে দুইজন পুরুষের সাথে তুলনা করা হয়েছে। এতে উত্তরাধিকার সম্পত্তির ক্ষেত্রে দইুজন মেয়ের সম্পত্তি ও একজন পুরুষের সম্পত্তি সমান করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে সম্পত্তির পরিমান আরও কম করা হয়েছে। এর কারণ হসিবেে আয়াতটরি শষেদকিে উল্লখে করা হয়ছেে য,ে নারীরা পুরুষরে তুলনায় অনকে কম উপকারী।সম্পত্তরি অধকিাররে ক্ষত্রেে এরকম একটি কারণ একবোরইে নগণ্য।কনেনা নারীরা তখনই কম উপকারী হবে যখন তাদরে র্আথকি ক্ষমতা থাকবে না।তাই সম্পত্ততিে নারীর অধকিারকে সমভাবে নশ্চিতি করলে তারা অবশ্যই সমাজরে জন্য উপকারী হব।ে তাছাড়া আল্লাহও সকলের জন্য সমান আলো, বাতাস দিয়েছেন তাহলে সম্পত্তির ক্ষেত্রে সমান অধিকার দিতে অসুবিথা কোথায়।



স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামী পাবে স্ত্রীর সম্পত্তরি র্অধকে অন্যদকিে স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী পাবে এক-চর্তুথাংশ (সন্তান না থাকল)ে





স্ত্রীর মৃত্যুর পর স্বামী পাবে স্ত্রীর সম্পত্তরি এক-চর্তুথাংশ অন্যদকিে স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রী পাবে স্বামীর সম্পত্তরি আট ভাগরে এক ভাগ (সন্তান থাকল)ে ।







কর্তৃত্ব

সুরা নিসায় বল হয়েছে, পুরুষরা নারীর কর্র্র্তৃত্বের অধিকারী। স্ত্রীরা তাদের সব কিছুর জন্য স্বমীর অনুমতি নেয়া লাগে। তাছাড়া সম্পত্তি ব্যায়ের অধিকারও পুরুষদের দেয়া হয়েছে। আর এ কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে পুরুষরা নারীদের তুলনায় বেশি শক্তিশালী। তাহলে এখএন দেখা যায় যে ‘জোর যার মুল্লুক তার’ নীতি অনুসরণ করা হয়েছে, যা আধুনিক যুগে সম্পূর্ণ অচল। এই নীতি আদিম বর্বর যুেেগর জন্য রচিত, কারণ তখন জীবিকার একমাত্র উপায় ছিল পশু শিকার ও কৃষিকাজ। কিন্তু বর্তমান যুগে শারীরিক শক্তির চেয়ে বুদ্ধিবৃত্তির গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই কুরআনের এ নীতি অর্থাৎ ‘পুরুষ নারীর কর্তা’ সম্পূর্ণ অচল।





ব্যাভিচার

এ সুরায় বলা হয়েছে নারীরা যদি ব্যভিাচারে লিপ্ত হয় তবে তাদের শাস্তি হবে মৃত্যুদন্ড। মুত্যুদন্ডের পদ্ধতি হবে স্বমীর ঘরে আটকে রাখা হবে যতদিন না পর্যন্ত মৃত্যুবরন করে। পরবর্তীতে এই পদ্ধতি পরিবর্তন করে হাদিসের মাধ্যমে বলা হয় ব্যভিচারিণীকে অর্ধেক মাটি পর্যন্ত পুতে সবার সামনে পাথর ছুড়ে হত্যা করা হবে। এটি কত নির্মম তা শুনেই বোঝা যাই। অথচ স্বামী যদি ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় তবে তার কোন শাস্তি বিধান করা হয় নি। আবার পরবর্তী আয়াতে বলা হয়েছে, যদি উভয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে তাদের ক্ষমা করে দিতে হবে। অর্থাৎ পুরুষের কথা আসলে সেখানে ক্ষমা করার কথা বলা হচ্ছে অথচ যখন নারী এর জন্য দায়ী তখন বলা হচ্ছে মৃত্যুদন্ডের কথা। এ থেকেই বোঝা যাই যে, সবকিছুই পুরুষকেন্দ্রিক।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.