নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

শেষ মুহুর্তের গল্প- এক অলৌকিক সকাল

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৪১

মানুষ হিসাবেই শিক্ষা সমাপন করেছিলাম, কিন্তু চাকুরিতে ঢুকে সর্পশ্রেনীভুক্ত আর কাছিম গোত্রিয় হয়ে গেলাম। এখানে প্রতিনিয়ত নিজের খোলস বদলাতে হয়,আর মাথা গুজে রাখতে হয় নিজের দেহের ভিতরে। সাহস করে বলবো-চাকুরির নিকুচি করি।কিন্তু ঘর আছে,সংসার আছে,সবচেয়ে বড় কথা চাকুরি ছেড়ে দিলে মৃত্যুর ঝুকিও আছে। এতো কিছুর পরও মনে হয়ে এবার ফেঁসে গেলাম।ত্রিমুখি ধারালো ,তীক্ষন সেলের ত্রি চক্রের ভিতর আটকা পড়ে গেছি।

মন্ত্রনালয়ের গোপন বার্তা-কাজটা যেন ঠিকমতো করা হয়।এই ঠিকমতোর মানে আমি ঠিকই বুঝি।স্থানীয় সাংসদ ,পত্রিকার সাংবাদিক আর পান্ডাদের হুমকি-পুরা যেন স্বচ্ছ থাকে কাজ। এ স্বচ্ছ থাকার মানেও আমি বুঝি। এদুয়ের মাঝে মধ্যবিত্ত সংসারে বেড়ে ওঠা আজন্ম লালিত বিবেক কখনো সাপ হয়, কখনো কাছিম হয়,অবশেষে পুড়ে পুড়ে ছারখার হতে থাকে।

হটলাইনের ফোনগুলো যখন আসে তখন দাঁড়িয়ে শুধু জ্বি স্যার, জ্বি স্যার বলি।এরপর আমি আমার নিজস্ব বাথরুমে গিয়ে একটা গোপন ছবি আছে,সেই ছবির উপর হিসু করে নিজের দ্রোহকে হালকা করি,আর ছবিটাকে বলি তুইতো ভাত খাসনা, গু খাস,মাদারচোত।করিম সাহেব একবার মেরুদন্ড সোজা করিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনের উপর বলেছিলেন-বুকে বিধুক বুলেট তবুও বিবেকের সাথে আপোস করবেন না। কিন্তু কী হলো-পরিবারকে অকুল সাগরে ভাসিয়ে নিজেই বিবেকের উর্ধে চলে গেলেন।



এবারতো পুরো ফেঁসে গেছি, সাপের খোলস বদলে, কাছিমের মতো মুখ লুকিয়েও আর পার পাওয়া গেলোনা। মনে মনে বলি-মন্ত্রি মহোদয়, সাংসদের বালও কেউ ছিঁড়তে পারবেনা কোনো কমিশন।অত লম্বা হাতও কারো নেই।তদন্ত কমিটির শুয়োরের বাচ্চাদের হাতের দৈর্ঘ্যতো শুধু নিজের গোপন জায়গা অবধি। আর আমাদের মতো কয়েকজন সরকারী চাকুরজীবী নামের চাকর আবালদের চৌদ্দ শিকলের ভিতর আটকাতে পারলেই খেল খতম।



আমি এসব ভাবতে ভাবতে ঘোর লাগা বিভ্রান্ত মানুষের মতো শীতাতপ অফিস থেকে বের হয়ে রোদে পুড়া শহরে পা বাড়াই। দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা হিসাবে যখন কাল ছবি আসবে -তখন স্ত্রী,সন্তান,মাতা পিতার সামনে মুখ দেখাবো কী করে।একদিন আমার ছেলেকে অফিসের রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে জিগ্গাসা করেছিলাম, বলোতো বাবা এখান থেকে ঐ অফিসে যেতে তোমার কতসময় লাগবে।ছেলে বলেছিলো- মনে হয় ছয় মিনিট।আমি বলেছিলাম, বাবা ঐ অফিসে পৌঁছাতে আমার সময় লেগেছে ৩৬ বছর। আর এখন ভাবছি আমি কি পালিয়ে যাবো, নাকি কোর্টে সারেন্ডার করবো।নাকি প্রেস কনফারেন্স করে সব কিছু খুলে বলবো। শেষেরটা খুব রিস্কি, কেউতো বিশ্বাস করবেনা, আর পুলিশও ২৪ ঘন্টা পাহারা দিবেনা। ধুক করে মনে পড়ে গেলো করিম সাহেবের কথা। এই নগরে এখন আমাকে হাউ মাউ করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে।



আমার মাথা টলতে থাকে, দেহে অবসাদ বাড়তে থাকে, চোখ পুড়তে থাকে। আমি পুরো নেশাগ্রস্থ হয়ে কখন যে হসপিটালের লিফটে চড়ে ১৯ নাম্বার কেবিনের সামনে এসে দাঁড়িয়েছি বুঝতেই পারিনি।আশ্চর্য্য হলাম-মায়ের কথা কেন একবারও মনে আসেনি আজ সারাদিন।দেখি সাদা ধবধবে বেডের ওপর মা শুয়ে আছেন। ঘড়ি দেখলাম বাজে রাত নটা।চিন্তা করলাম- মাকে ডাকবো কিনা। হয়তোবা ঘুমিয়ে পড়েছেন। মায়ের কপালে আলতো করে চুমু খেলাম। জাস্ট রুটিন চেকআপ করাতেই গতপরশু মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে এসেছিলাম। আর গতকালই জানলাম -মায়ের শরীরে নিবৃত্তে ক্যানসার বাসা বেঁধেছে। এই দেশে ভালো চিকিৎসা নেই। মায়ের মুখের দিকে চেয়ে আমার হাহাকার বাড়তে থাকে। আলতো করে মায়ের একটা হাতে আমার হাতের মুঠোয় নেই। একসময় আমি টুলের উপর বসে দেয়ালে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি।



একসময় ঘুম ভাংগে। মসজিদের আজান শুনতে পাই।ভোরের স্নিগ্ধতা আস্তে আস্তে মিলিয়ে যায়। নার্স আমাকে ডাক্তারের রুমে ডেকে পাঠায়।মায়ের এখনো ঘুম ভাংগেনি। আমি একবার মায়ের দিকে থাকিয়ে ভীরু পায়ে-প্বথিবীর সবচেয়ে দুখী মানুষের মতো ডাক্তারের রুম এসে হাজির হই। ডাক্তারকে আমার মনে হয় আজরাইল।এখনি হয়তোবা দিনক্ষণ বলে দিবে। মায়ের আর বুঝি সময় নাই। ডাক্তার আমাকে বলে-সোহেল সাহেব- আমরা আন্তরিক ভাবে দুঃখিত। আপনার মায়ের ব্লাড রিপোর্টটা অন্য একজন রোগীর সাথে বদলে গিয়েছিলো। একই নাম কিনা।

আমরা নতুন করে রক্ত পরীক্ষা করে দেখেছি, উনি সম্পুর্ণরুপে বিপদমুক্ত।



আমি দৌড়ে মায়ের রুমে আসি।দেখি মা ওঠে বসেছেন। মাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরি। মাও কাঁদেন আমি ও কাঁদি। মা বলেন-কাঁদিসনারে বাপ। সবার মা বাপ কি আর সারাজীবন বেঁচে থাকেন। সময় যখন আসে তখন চলে যেতে হয়। আম বলি মাগো- তোমার কোনো রোগ নেইগো মা। ডাক্তার ভুল রিপোর্ট দিয়েছিলো।



আমি মুহুর্তে চাকুরি, জেল, পত্রিকার রিপোর্ট, পরিবার, সামাজিক সম্মানবোধ, ঘুষের কেলেংকারি, করিম সাহেবের মৃত্যু সব কিছু ভুলে যাই।

মাকে বলি ,,মাগো তোমার হাতটা আমার মাথার উপর রাখোগো মা। পৃথিবীতে এর চেয়ে বড় শান্তি যে গো মা আর কোথাও নাই।

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৫১

মাসুম আহমদ ১৪ বলেছেন: প্রথম দিকটা পড়ে বুঝিনি শেষের দিকটা এরকম হবে - প্রথম দিকে করিম সাহেবের প্রস্হান যেমন মন খারাপ করে দিয়েছিল তেমনি শেষের দিকে মায়ের রোগমুক্তি মন ভাল করে দেয় !

গপ পড়ে ভাল লাগলো খেয়া ঘাট ভাই

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১০:৫৫

খেয়া ঘাট বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই।

২| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৩১

পেলব চক্রবর্তী বলেছেন: দারুণ লিখেছেন ভাই...........মাঝরাতে ঘুমোতে যাবার আগে মনটা ভাল করে দিলেন । আপনাকে ধন্যবাদ।।

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:২৮

খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনাকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ । সুখ নিদ্রা হোক।

৩| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৪৫

আরজু পনি বলেছেন:

মা ভালো থাকুক সবসময়ই।

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:২৮

খেয়া ঘাট বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৪| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:২১

এম . এম ওবায়দুর রহমান বলেছেন: দারুন লিখেছেন । পড়ে খুব ভালো লাগলো। আরো লিখুন

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৪৮

খেয়া ঘাট বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৫| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:১১

শাহিন বলেছেন: খুবই ভালো লিখেছেন । অভিনন্দন ।

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৪৮

খেয়া ঘাট বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৬| ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:১১

হাসান মাহবুব বলেছেন: ভালো লাগলো।

২০ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৯:৪৮

খেয়া ঘাট বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৭| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:৫৪

মহামহোপাধ্যায় বলেছেন: ভালো লাগলো।

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫৪

খেয়া ঘাট বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৮| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:২৩

বেবিফেস বলেছেন: আবারো কাঁদালেন আমায়!

২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩৪

খেয়া ঘাট বলেছেন: পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ।

৯| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১২:২৯

মনিরা সুলতানা বলেছেন: :)

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:২২

খেয়া ঘাট বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.