![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাইরে প্রচন্ড হিমশীতল ঠান্ডা। কাশ্মীরে এমন নাকি আগে আর কখনো পড়েনি। কিন্তু এরকম ঠান্ডা আমাকে তেমন স্পর্শ করেনা। আমি
অফিস থেকে বের হয়েই গাড়ী,তারপর সোজা বাসা।
অফিস বারান্দায় জীর্নশীর্ন একটি মেয়ে ফুলের তোড়া বিক্রী করে।বয়স বড়জোর এগার,বার।
সাথে আরো কয়েকজন। নাম না জানা এ মেয়েটি একেবারে নাছোড়বান্দা।প্রতিদিন আমার গাড়ী পর্যন্ত আসে,কাকুতি মিনতি করে, একসময় ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়।
আমি দেখেও না দেখার ভান করি।আমার পাষান হৃদয় গলেনা।
মেয়েটির সাথে আরো যারা বিক্রি ফুল বিক্রি করে তারা এতো অনুনয়,বিনয় করেনা। আর এ মেয়েটি গাড়ি নাচলা পর্যন্ত একেবারে আটার মতো লেগে থাকে।
একদিন প্রচন্ড জ্যামে আটকে আছি। আজ নিশ্চিত অফিস লেট। কোনোরকমে গাড়ি পার্ক করে, লিফট অবধি এসেছি। দেখি সেই নাছোড়বান্দা ফুলওয়ালা মেয়েটি।
বাবু, একটা ফুল নে, বাবু একটা ফুল নে। তোর পায়ে ধরি বাবু, নে না একটা ফুল,বাবু, বাবু। দেখি, মেয়েটি আমার পলিশ করা জুতোয় নখের আঁচড় লাগিয়ে দিয়েছে।আমার ইচ্ছে করে, মেয়েটির গালে প্রচন্ড জোরে একটা চড় বসিয়ে দেই। এই সব ছোটলোক ইতর শ্রেণীর মানুষের কাছে যে পরিচ্ছন্নতা আর সময়ের কোনো মূল্য নেই। আরে, অফিস কি আমার শশুড়বাড়ি যে, ফুল নিয়ে যাবো।
দুমাসের কাজ শেষ করে আমি আটলান্টায় ফিরে আসি। অবসরের বর্ণিমায় সোনালী রোদের ঝিলিক একসময় অস্তমিত হয়। এক মাসের ছুটি শেষে আমি আবার ফিরে আসি মগজ পিষে ফেলা প্রজেক্টের কাজে।
অফিস শেষ করে ফিরে দেখি-সেই ছেলেমেয়েরা ফুলের পসরা নিয়ে বসে আছে। আমি ওদের সামনে দিয়ে হেঁটে গাড়িতে আসি।
কয়েকজন জিগ্গেস করে, ফুল কিনবে বাবু? ফুল ।
কিন্তু মেয়েটির এবার যেন আমার প্রতি অথবা ওর ফুল বিক্রির প্রতি কোনো আগ্রহ নেই।কেমন যেন অবহেলা। পুরো সপ্তাহটাই এভাবে গেলো। ভাবলাম ,হয়তোবা মেয়েটির পারসোনালিটি গ্রু করেছে। আমি নিজের মতো কাজে ডুবে যাই।
কিছুদিন পর আমার কৌতুহল হলো । কথা বলার লোভ সামলাতে পারলামনা। কাছে গিয়ে বললাম-আচ্ছা বলতো ,তুমি আর আমার কাছে আগের মতো ফুল বিক্রির চেষ্টা করোনা। কী ব্যাপার।
মেয়েটি কেমন যেন উদাস। চেয়ে থাকে, কী নিদারুন অবহেলায় সাজানো ফুলের তোড়াগুলোর দিকে। আমার পাণে মুখ তোলে থাকালে যেন ওর ধ্যানের ব্যাঘাত ঘটবে। আমার আগ্রহ এতে আরো বাড়তে থাকে।অনেক পীড়াপিড়িতে বলে,
বাবু, গত ছ মাস যাবত আমার একমাত্র ভাই অসুস্থ। হাসপাতালে শুয়ে আছে।বাবা অনেক আগেই আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। মা সারাভোর ফুলের মালা আর ফুলের তোড়া বানান,আর আমি তা বিক্রি করে ভাইয়ের চিকিতসার টাকা জমাই। আমাদের একসময় বড় বেশী টাকার দরকার ছিলো, বাবু।
আমি বললাম , ছিলো মানে কি ?এখন বুঝি আর টাকার দরকার নেই।
মেয়েটি এবার ডুকরে কেঁদে ওঠে। কান্না জড়ানো কন্ঠে বলে -আছে,তবে এতো বেশীর আর দরকার নেই। আমার সেই ভাই -গত সপ্তাহে মাকে আর আমাকে ছেড়ে চিরদিনের জন্য চলে গেছে।আর ও নিজেই এখন এক অদেখা বাগানের ফুল হয়ে আছে। তুমি এখন চাইলে আমি তোমাকে একবারে মুফতই ফুলের মালা দিতে পারি। কোনো টাকা দিতে হবেনা বাবু। কেউ নিলে ভালো,আর যদি সব বিক্রি নাও হয়,তাও ভালো।আমি বাড়ি ফিরার পথে প্রতিদিন সব ভাইয়ের কবরে রেখে দিই।
©বিহঙগ
২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৪:২৭
খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, পড়ার জন্য।
২| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৫:২৯
না পারভীন বলেছেন: +++
২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৫:৩২
খেয়া ঘাট বলেছেন: বিনীত ধন্যবাদ।
৩| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১১:০৬
বিকারগ্রস্থ মস্তিস্ক বলেছেন:
এইটাই জীবন কেউ পায় না কেউ অনেক পেয়েওওও আরো চায়
মাঝে মাঝে চোখে না সামলাতে পারা জলের ধারা দেখে মানুষ মানুষত্ব বোধ জাগে - অতঃপর আমি যান্ত্রিক এক রোবট এই শহরের
২২ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:৪৭
খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
৪| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১১:০৮
s r jony বলেছেন:
চোখে পানি চলে আসল রে ভাই।
++++++++
২২ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৩:২৭
খেয়া ঘাট বলেছেন: হুমম, আমারও।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
৫| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৩:২১
নাজিম-উদ-দৌলা বলেছেন: কোনও সত্যি ঘটনা অবলম্বনে লিখেছেন? ভাল হয়েছে লেখাটা। আবেগটুকু ধরতে পারছিলাম। কষ্ট লাগল শেষে এসে।
২২ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ৯:৫৩
খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
৬| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:০৭
বোকামন বলেছেন:
নিজের জন্য কখোনই হয়তো এদের ফুলের মালা গাথা হবেনা ....
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৪:৪৪
খেয়া ঘাট বলেছেন: আমার গল্পের চেয়েও আপনার মন্তব্যটি অনেক সত্য আর সুন্দর হয়েছে।
বিনীত ধন্যবাদ।
৭| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৭
সোহানী বলেছেন: অসাধারন...+++++
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৬:০৩
খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনাকে বিনীত ধন্যবাদ।
২৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৪:৩৮
খেয়া ঘাট বলেছেন: মন্তব্য পেয়ে অনেক প্রীত হলাম, অনেক ধন্যবাদ।
৮| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১১:১৪
মনিরা সুলতানা বলেছেন: আর একবার মুগ্ধ হলাম ...।
২৪ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:৪৩
খেয়া ঘাট বলেছেন: বিনীত ধন্যবাদ।
৯| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১:৪৫
শ্রাবণ জল বলেছেন: অনেক টাচি লেখা।
ভাল লাগল, ভাইয়া।
২৪ শে এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৪:০৭
খেয়া ঘাট বলেছেন: বিনীত ধন্যবাদ।
১০| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৩ সকাল ১১:৪১
কালা মনের ধলা মানুষ বলেছেন: আপনি অনেক বড় মাপের লেখক।
অল্প কথায় মনটা বিষন্ন করে দিলেন।
২৭ শে এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৬:৪২
খেয়া ঘাট বলেছেন: বিনীত ধন্যবাদ আপনাকে। আনজ্জিত হলাম।
১১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০১৩ দুপুর ১২:৪৪
জাকারিয়া মুবিন বলেছেন:
অসাধারন লেখা।
২৯ শে এপ্রিল, ২০১৩ রাত ৩:০৬
খেয়া ঘাট বলেছেন: পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে বিনীত ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে এপ্রিল, ২০১৩ ভোর ৪:১৬
বিলাল বলেছেন: এটা কি গল্প না কি সত্যি ঘটনা?
এতো করুণ, এতো মর্মান্তিক। আমি অঘোর কাঁদলাম।