নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

চির অম্লান হাসি

২৪ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৭





চির অম্লান হাসি



তোমার কুঁড়েঘর ছিলো। ছিলো ভাঙ্গা মাটির দেয়াল।

জননেতা তোমার বাসায় আসলেন।

তোমার সাথে হাত মিলালেন।

হাতের স্পর্শে তুমি মুগ্ধ হয়ে হাসো।



গ্রীষ্মের দাবদাহে মাঠ পুড়ে ছারখার। শস্যক্ষেতে হাহাকার।

তুমি লাঙল আর গোয়াল গরু মাঠে রেখে নেতার মিছিলে সামিল হলে।

নেতা বক্তৃতা দিলেন।

আশ্বাসের বাণী শুনে তুমি বড় মুগ্ধ হয়ে হাসো।



বর্ষায় প্লাবন তোমার কুঁড়েঘর ভেঙ্গে হানা দিলো।

বই, খাতা বৃষ্টির জলে ধুঁয়ে গেলো তোমার সন্তানের।

নেতা সফেদ পান্জাবী পড়ে সামনে এগোলেন।

নেতাকে দেখে তুমি শুধু মুগ্ধ হয়ে হাসো।



শরতের দিনগুলোতে বুভুক্ষু তুমি।

ঘরের ছাউনির ভিতর থেকে দেখা যায় সাদা আকাশ।

বাজারের টেলিভিশনে নেতার চেহারা ঝলঝল করে ।

টেলিভিশনে নেতাকে দেখে তুমি আজো মুগ্ধ হয়ে হাসো।



হেমন্তে তোমার ঘরের মাটির দেয়াল একে একে ক্ষয় হয়।

গ্রামে ওঠলো সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন দালান।

জননেতার জনসেবার ঘর।

এ ঘর দেখে তুমি আবারো মুগ্ধ হয়ে হাসো।



শীতে তোমার শরীরে কাঁপন ধরে।

সারারাত সন্তানেরা খড়কুঠো পুড়িয়ে শীতের সাথে অসম যুদ্ধ করে।

নেতা শীতার্তদের বাঁচার সেমিনার করেন।

নেতার মহত্বে তুমি এখনো মুগ্ধ হয়ে হাসো।



বসন্ত কি সে তুমি আর বোঝনা। কোকিলের ডাক শুনলেই তুমি শুধু বুঝতে পারো মহাজনের ৃণ পরিশোধের সময় এসেছে।

জননেতার কালো চকচকে গাড়ি আসে তখন গ্রামে।

তুমি অবাক চোখে নেতার গাড়ী দেখো আর মুগ্ধ হয়ে হাসো।



গ্রীষ্মে,বর্ষা,শরতে, হেমন্তে, শীত, বসন্তে দিনে দিনে তোমার সন্তান বড় হয়।

হাতের পেশী শক্ত হয় একটু একটু করে।

একদিন ভোরে তোমার সাথে এসে বিরান মাঠে লাঙলের ফলা বসায়।

আর নেতার ছেলে তখন আকাশে ওড়ে।

আকাশে উড্ডীয়মান উড়োজাহাজ দেখে বাপ-ছেলে মুগ্ধ হয়ে হাসো।



১৬ কোটি মানুষের গণতন্ত্র

গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত বসন্তে তুমি এভাবেই হাসতে থাকো।

ছাউনির ভিতর দিয়ে বজ্রপাত হানা দিক,

ভয়াবহ শীতের কাঁপন তোমার শরীরের হাড় বিদীর্ণ করুক

মহাজনের লাঠিয়াল ক্ষেতের শস্য, গোয়ালের গরু লুঠে নিয়ে যাক,

তোমার সন্তানেরা বুভুক্ষু হয়ে পড়ে থাকুক,

ক্ষমতার মসনদে বাংগালি আর বাংলাদেশী জাতীয়বাদ

জয়বাংলা অথবা বাংলাদেশ জিন্ধাবাদের পালাবদল ঘটুক।

তাতে তোমার কিছুই আসে যায়না।

তুমি শুধু মুগ্ধ হয়েই হাসো।



এতিম হাফেজ শাপলা চত্বরে কীসের প্রলোভনে শহীদ হয়,

তাও তুমি বুঝনা।

মাস্টার বাড়ীর সবচেয়ে প্রগতিশীল ছেলে কেন শাহবাগে রাতভর

আলোর প্রদীপ জ্বালে , তাও তুমি বুঝনা।



সুইচ ব্যাংকে কার ঘামের টাকা কীভাবে হাজার কোটি ছাড়িয়ে যায়,

তাও তুমি বুঝনা।

ব্রিটিশ, ফরাসী, পর্তুগীজ, ওলন্দাজ,পাকি আর নব্য বাণিজ্যিক মাফিয়া ভারত সবকিছু কেমন করে লুঠে নিয়ে যায় -তাও তুমি বুঝনা।



কেন সীমান্তে বছরের পর বছর লাশ পড়ে থাকে-

তাও তুমি বুঝনা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যাওয়া ছেলে কেন সহপাঠীর গুলিতে খুন হয়

তাও তুমি বুঝনা।

কেন মানুষ আরকেজন জ্যন্ত মানুষকে সাপের মতো পিটিয়ে মেরে ফেলে

তাও তুমি বুঝনা।

কেন গার্মেন্টস ফ্যাক্টরী গুলোতে আগুন ধরে,

কেন ক্যাম্পে জীবন্ত মানুষ শুকনো কাঠের মতো পুড়ে,

কেন সংখ্যালঘুরা ভিটে মাটি ছাড়া হয়

তাও তুমি বুঝনা।



তুমি শুধু বুঝ প্রতি সূর্যোদয়ের আগেই তোমাকে মাঠে হাজির হতে হবে।

তুমি শুধু বুঝ মাটির শানকিতে কিছু সাদা ভাত সন্তান,বউ আর বৃদ্ধ বাবা মায়ের মুখে তোলে দিতে হবে।

তুমি শুধু বুঝ হাতে কাস্তে আর চোখে শস্যের স্বপ্ন।



আর শোনো সংসদে নেতার সত্য ভাষন-

দেশের মানুষের সব দুঃখ দূর হবে।

তুমি অবিরাম শোনো আর মুগ্ধ হয়ে হাসো।



জননেতার ছেলে আবার নতুন জননেতা হতে বিদেশ থেকে ফিরেছেন।

তুমি শোনো আর মুগ্ধ হয়ে হাসো।

আর এভাবেই সত্য শুনেই শুনেই একদিন আসল সত্যের মৃত্যু হবে,

মৃত্যু সময়েও সত্যের মুখে সেই চির মুগ্ধতার হাসি রয়ে যাবে।



যে কাস্তে তুমি শক্ত হাতে ধরেছিলে,

যে নতুন শস্যের শীষ তোমার কপাল স্পর্শ করেছিলো,

যে নৌকার পাল তুমি নীল আকাশে উড়িয়েছিলে,

যে জমির আইলের উপর বসে তুমি বিশ্রাম নিয়েছিলে

যে ছেড়া গামছা তোমার ঘাম মুছে দিয়েছিলো,

ঘরের ফিরার পথে যে জলে তুমি সাঁতার দিয়েছিলে -



ওরা শুধু জানে সবকিছু লুঠপাট হয়ে গেলেও -

তোমার সেই চির অম্লান ,চির দীপ্তিমান, চির প্রশান্তিময় মুগ্ধতার হাসি

কেউ লুঠে নিতে পারবেনা, কেউ কোনোদিনও না।

মন্তব্য ৩১ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (৩১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৪

নাছির84 বলেছেন: অদ্ভুত, অসাধারন,বৈপ্লবিক। কয়েকবার পড়ার ফলাফল হিসেবে রক্তে..........!!!
কি কবিতা, কি গল্প
সবখানেই খেয়াঘাটের
আশ্চর্য রাজত্ব।
প্রিয়তে।

২৪ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:০২

খেয়া ঘাট বলেছেন: মনটা ভরে গেলো প্রিয় নাছির ভাই মন্তব্যটা পেয়ে।
বিশাল অনুপ্রেরণা। আসলে অন্যকারো মতামত না পেলে বুঝা যায়না যে লিখাটা কেমন হলো। নিজের লিখাতো নিজের কাছে ভালোই লাগবে। কিন্তু অন্য কেউ পড়ে যখন বলে- লিখাটা কেমন হলো।তখনই মনে হয়, না পরিশ্রম, চিন্তাটা, দীর্ঘসময় নিশ্চুপ বসে থাকাটা স্বার্থক হলো।

অনেক ধন্যবাদ ভাই।

২| ২৪ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:১০

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: সুন্দর বিপ্লবী ঝলসানো কবিতা
মুগ্ধপাঠ ও ভাললাগা +

২৪ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:১৯

খেয়া ঘাট বলেছেন: বিনীত ধন্যবাদ রইলো পড়ার জন্য, মন্তব্য করার জন্য।

৩| ২৪ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:৩৫

দুঃখ বিলাস বলেছেন: চমৎকার কবিতা ।

+++++

২৪ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:১৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: সবিনীত ধন্যবাদ রইলো।

৪| ২৪ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:৫২

মামুন রশিদ বলেছেন: দুখিনী বাংলা মায়ের বাস্তবিক করুণ চিত্রটাই তুলে এনেছেন পুরো কবিতা জুড়ে । এ হাসি পরিহাসের, এ হাসি প্রতারিতের ।

২৪ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:১৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ মামুন ভাই।

৫| ২৫ শে জুন, ২০১৪ রাত ১২:২৫

আহসানের ব্লগ বলেছেন: কি বলবো বুঝতে পারছিনা ।

২৫ শে জুন, ২০১৪ রাত ২:৫৩

খেয়া ঘাট বলেছেন: বলার আসলেই কিছু নাই। ধন্যবাদ ভাই।

৬| ২৫ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১০:৩৮

ঢাকাবাসী বলেছেন: চমৎকার একটা ছবি সহ সুন্দর কবিতা।

২৫ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৫

খেয়া ঘাট বলেছেন: বিনীত ধন্যবাদ রইলো প্রিয় ঢাকাবাসী ভাই।

৭| ২৫ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:৫৬

আমি স্বর্নলতা বলেছেন: আর এভাবেই সত্য শুনেই শুনেই একদিন আসল সত্যের মৃত্যু হবে,
মৃত্যু সময়েও সত্যের মুখে সেই চির মুগ্ধতার হাসি রয়ে যাবে।



অসাধারন নাকি চমৎকার বলব বুঝতেছিনা। অনেক অনেক ভালোলাগা রইল কবিতায়।

এত সুন্দর লেখায় এত কম কমেন্ট এটা মানা যায় না। :( :(


ভাইয়া শুভকামনা রইল অনেক।

২৫ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৮

খেয়া ঘাট বলেছেন: বিনীত ধন্যবাদ রইলো আপু।
কমেন্ট কম। কিছুই করার নাই।
তবে অনেকেই স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন -কার্টেসি দিয়েছেন। উনাদের হৃদয়ের গভীর থেকে ধন্যবাদ।
আর যারা কার্টেসি ছাড়াই কবিতার বিভিন্ন লাইনগুলো নিজেদের নামে চালিয়ে দিলেন -উনাদেরকেও ধন্যবাদ।

৮| ২৫ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৮

আহসানের ব্লগ বলেছেন: :(

২৫ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৯

খেয়া ঘাট বলেছেন: :( :( :( :(

৯| ২৫ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:০৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: +++

২৬ শে জুন, ২০১৪ রাত ১:১৪

খেয়া ঘাট বলেছেন: বিনীত ধন্যবাদ রইলো ভাই।

১০| ২৬ শে জুন, ২০১৪ রাত ১২:১৪

শুঁটকি মাছ বলেছেন: অনেক সুন্দর হইছে ভাই!!!!!!!!!!!

২৬ শে জুন, ২০১৪ রাত ১:১৫

খেয়া ঘাট বলেছেন: বিনীত ধন্যবাদ রইলো আপু।

১১| ২৬ শে জুন, ২০১৪ ভোর ৬:২২

সায়েদা সোহেলী বলেছেন: ।আরিফ ভাই নিরাবতাই সম্মতির লক্ষন কথাটা যেমন সব ক্ষেত্রে সঠিক নয় তেমনি কেউ চুপ করে থাকা মানেই সে কিছু বুঝেনি তা নয় , আমাদের খেটে খাওয়া মানুষ গুলোর সহনশীলতা একটু বেসি মাত্রায় বেসি দিয়েছেন সৃস্টিকর্তা । আর তিনি ন্যায়বিচারক , সবার সব কর্মের ন্যায় বিচার একদিন অবশ্যই হবে ,পাব । ততদিন পর্যন্ত হাসি অম্লান থাক । :|

কবিতায় +++

২৬ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৩০

খেয়া ঘাট বলেছেন: মুটেরারাও ন্যায় বিচার পাবে,
লুঠেরাও ঐ পর্যন্ত সবকিছু লুঠে নিবে।
সুন্দর মন্তব্যে +++++++++++++ আপু।
অনেক ধন্যবাদ রইলো।

১২| ২৭ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৯:২১

খেয়া ঘাট বলেছেন: চট্টগ্রাম বন্দরের বহিঃনোঙরে লোহার শিটবাহী দেশিয় জাহাজ এমভি সুন্দরবন ডুবে গেছে, ৮ নাবিক উদ্ধার। ইন্ডিপেনডেন্ট নিউজ।

১৩| ২৭ শে জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪৬

একজন ঘূণপোকা বলেছেন:
সুন্দর কবিতায় ৫ম প্লাস

২৮ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:২৬

খেয়া ঘাট বলেছেন: বিনীত ধন্যবাদ রইলো ভাই। অনেক শুভকামনা।

১৪| ২৮ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:৩১

মুনতাসির নাসিফ (দ্যা অ্যানোনিমাস) বলেছেন: ব্লগে ছিলাম না বেশ কদিন, তাই দেরীতে দেখা....

চমৎকার বর্ণনায় এবং সুন্দর উপস্থাপনায় মুগ্ধপাঠ্য ...
ভালোলাগা( ৬ষ্ঠ+) জানিয়ে গেলাম...
শুভকামনা নিরন্তর ...

২৮ শে জুন, ২০১৪ বিকাল ৫:২৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই।
আপনার জন্যও রইলো অনেক শুভকামনা।

১৫| ২৮ শে জুন, ২০১৪ রাত ১১:৪২

আমি তুমি আমরা বলেছেন:




ওরা শুধু জানে সবকিছু লুঠপাট হয়ে গেলেও -
তোমার সেই চির অম্লান ,চির দীপ্তিমান, চির প্রশান্তিময় মুগ্ধতার হাসি
কেউ লুঠে নিতে পারবেনা, কেউ কোনোদিনও না

চমৎকার :)

২৯ শে জুন, ২০১৪ রাত ১:৫৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: বিনীত ধন্যবাদ ভাই।

১৬| ১৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:৪৪

দৃষ্টিসীমানা বলেছেন: সুন্দর ,সত্যের বর্ণনা ।+ + + + + + + ।

১৮ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:১০

খেয়া ঘাট বলেছেন: বিনীত ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.