নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

এসম তামাশা কেন করেন?

২১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ২:৩৪

এসব তামাশা কেন করেন?



বাস থেকে দুজন লোক নামলেন।

একজনের মাথায় সাদা পাগড়ি, মুখে লম্বা শ্বেতশুভ্রদাড়ি,পরনে ইয়া বড়কুর্থা দেখেই মনে হয় বড় কামেল লোক। আরেকজন হালকাপাতলা শরীরের বেশ সাধারণ ।



সাধারণ লোকটি কিছুদূর হেঁটে গিয়ে পাশের দোকানের ছেলেটিকে জিগ্গাসা করলেন- সওদাগর হাজ্বি সাহেবের বাড়ির পথ কোনটি? উনার সাথে একটু দেখা করবো।



এইতো সামনেই। এই যে ছোট ব্রীজটি পার হয়েই ডানের বাড়িটিই উনাদের।

ঠিকানা পেয়েই উনারা হাঁটা শুরু করলেন। কিছুক্ষণ পর আবার ফিরে এসে ছেলেটিকে বললেন-তোমাকে দাওয়াত দিতে আসলাম।

কীসের দাওয়াত?

তুমি দোকান বন্ধ করে সওদাগরের ইবাদতখানায় চলে এসো। বন্ধু বান্দব, আত্মীয় স্বজনদেরও আসতে বলো।

সেখানে কি হবে?

আমি সেখানে থাকবো। তাছাড়া উনি একজন বিখ্যাত পীর ।হাজ্বী সাহেবের অনুরোধে শেষ পর্যন্ত রাজী হয়েছেন বলেই এখানে আসা। আজকে উনি এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তামিল দিবেন।

তাতে আমার কি হবে?

এমন সুযোগ আর পাবেনা বাছা। তোমার রুহ পরিচ্ছন্ন হবে।পরকালের সন্চয় হবে। আখেরোতের নেকি হাসিল হবে।আর সবচেয়ে বড় কথা হলো জান্নাতের পথের সন্ধান পাবে।বেহেস্তে যাওয়ার পথ খুঁজে পাবে ফলে আল্লাহর দেখা মিলবে।



একথা শুনেই ছেলেটি হোহো করে হেসে ওঠে। তারপর বলে-কেন তামাশা করেন? কেন দিগদারী করেন?

মাথা ঠিক আছে আপনার? এখান থেকে মাত্র দশ কদম দূরে নিজেরা রাস্তা চিনে হাজ্বী সাহেবের সাথে দেখা পাওয়ার পথ খুঁজে পাচ্ছেন না, আর আমাকে জান্নাতের পথ খুঁজে দিয়ে আল্লাহর সাথে দেখা করাবার দাওয়াত দিতে এসেছেন?



গতকাল আমার এক বন্ধু ওর বাড়ি থেকে মাত্র ২০ মিনিট দূরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইফতার পার্টিতে যোগ দিবে বলে অতিরিক্ত সময় নিয়ে বের হয়েছিলো। বেচারা জ্যামের মধ্যে প্রায় দু ঘন্টা আটকে থেকে রাস্তায় ইফতারি করেছে।এরকম হাজারো ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আর পৌঁছাতে পারেনি। এই জ্যামের মধ্যে আটকা পড়ে সামান্য দূরে হসপিটাল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনা বলে কত মুমুর্ষু রোগী অ্যাম্বলেন্সেই প্রাণ হারায়।এরপর এই মৃতদেহ না পারে হসপিটাল পৌঁছাতে আবার না পারে নিজের ঘরে ফিরে যেতে। একমাত্র ভুক্তভোগীরাই জানে এই দূর্বিষহ কষ্ট। কত মানুষযে প্রতিদিন ফ্লাইট মিস করে -বিশেষকরে যারা গ্রাম থেকে ঢাকা শহরে আসে তাদের দূর্গতির কোনো শেষ নাই।



এরশাদের সময় শ্লোগান হতো-

জাতীয়পার্টির অবদান-রাস্তা ঘাট, ব্রীজ নির্মাণ।

কিছুটা রাস্তাঘাট নির্মাণ হয়েছিলো বটে ,তবে তারচেয়ে বেশি হয়েছিলো-এরশাদের প্রেম প্রীতি ভালোবাসার বিনির্মাণ।



এরপর বিএনপি ক্ষমতার আসার আগে একটা দারুন জনপ্রিয় শ্লোগান ছিলো-

"আর ফেলোনা চোখের জল, আসছে এবার জিয়ার দল"

ঠিকই জিয়ার দল ক্ষমতায় এসেছিলো। কিন্তু মানুষের চোখের জল মুছেনি, একসাথে ৬৪ জেলায় বোমা বিষ্ফোরণে মানুষের বেঁচে থাকার স্বপ্নই মুছে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিলো।



এরপর আওয়ামীলীগের সেই একেবারে মাথা খারাপ হওয়ার "আগে বাড়ার শ্লোগান হলো- ডিজিটাল বাংলাদেশ।" কতবড় ভন্ডামি। ২০ মিনিটের জ্যামে যেখানে ২/৩ ঘন্টা রাস্তায় আটকে থাকতে হয়-সেখানে দেশ আগে বাড়বে!!!



আসেন ছোট একটা ঐকিক নিয়ম করি-

২০ মিনিটের পথে সময় অতিরিক্ত নষ্ট হয় এক জন মানুষের ২ ঘন্টা।

তবে গড়পরতা ১ ঘন্টা সময়ের জন্য নষ্ট হয় ৬ ঘন্টা।

এবার ঢাকা শহরে মোট লোকসংখ্যা হলো প্রায় ১৫ লক্ষ।

এই পনের লক্ষ মানুষের প্রায় ৯ লক্ষ মানুষ প্রতিদিন দৈনন্দিন কাজে বের হয়।(উইকি)

এখন ৯ লক্ষ মানুষের শুধু ১ ঘন্টা সময়ের জন্য অতিরিক্ত খরচ হয়-

(৯০০০০০ গুন ৬=৫৪০০০০০) প্রায় ৫৪ লক্ষ ঘন্টা।

এখন গড়ে ৩৬৫ দিনে প্রতিঘন্টা হিসাবে অতিরিক্ত খরচ হয়

৫৪লক্ষ গুন ৩৬৫ ঘন্টা=১শত ৯৭ কোটি দশ লক্ষ ঘন্টা।

মানে প্রায় ৮২ লক্ষ ১ তিন শত ২৫ হাজার দিন।অর্থাৎ দুই লক্ষ ২৫ হাজার বছর অযথা নষ্ট হয় ৯ লক্ষ মানুষের ১ বছরের হিসাবে।



এখন আপনারাই বলুন-জয় বাংলা বলে মানুষ কীভাবে আগে বাড়বে?



এই অতিরিক্ত সময়ে কি পরিমাণ যে দূর্গতি, শ্রম, জ্বালানি, অর্থের ক্ষতি হয় তা প্রতিদিনই শুধু ভোক্তভোগীরাই উপলব্ধি করে। তারপরও এদেশে সবকিছু ঠিকঠাক চলে। একদল ক্ষমতায যেভাবেই পারুক ঠিকে থাকতে চায়, আরেকদল যেভাবেই পারুক ক্ষমতায় যেতে চায়। এ দেশের মানুষগুলো হলোটা কি? এরা এমন মোহগ্রস্থ হয়ে কেমন করে পড়ে থাকতে পারে।





তিন দলে মিলে ভাগ ভাটোয়ারা করে এই ৪৩ বছরে ৬৮ হাজার বর্গমাইলের প্রতি ইন্চি থেকেই লুটপাট করেছেন। সেই লুঠপাটের টাকায় কেউ জায়নামাজে বসে তাসবীহ আর কেউ মক্কা মদীনা জিয়ারত করছেন। লুঠের অন্ক করতে গেলে ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটবে। কেউ থেকে কেউ কমনা। দেশের উন্নয়ন না হোক, কিন্তু বিদেশে বাড়ি , গাড়ি, সুইচ ব্যাংকে টাকা জমানো প্রতিযোগিতামূলক ভাবেই করেছেন । আর স্বপ্ন দেখাচ্ছেন দেশ আগে বাড়বে, ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে।



শুরু করা গল্পের মাঝেই ফিরে আসি,

ছেলেটি যেমন বলেছিলো হাজ্বী সাহেবের বাড়ির পথ খুঁজে পাচ্ছেন না, আর আমাকে জান্নাতের পথ খুঁজে দিবেন- এমন তামাশা কেন করেন? ঠিক তেমনি বলতে হয়-

তিন দলে মিলে ৪৩ বছরে সামান্য দূর্বিষহ ট্রাফিক জ্যাম থেকে একজন মুমুর্ষু রোগির আ্যম্বুলেন্সকে ঠিক সময়ে হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারছেন না, আর ক্রমাগত তাসবিহ জপেই যাচ্ছেন -এই দেশ রুপসি বাংলা, সোনারা বাংলা, ডিজিটাল বাংলা হবে- এসব তামাশা কেন করেন?





































মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৩:৩০

মুক্তকণ্ঠ বলেছেন: সবই ঠিক আছে, কিন্তু এই তথ্য কই পাইলেন?
" এবার ঢাকা শহরে মোট লোকসংখ্যা হলো প্রায় ১৫ লক্ষ"!

২১ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৪

খেয়া ঘাট বলেছেন: ঐটা ইফতারের আগে তাড়াতাড়ি লিখে শেষ করতে গিয়ে ভুল হয়েছে। কোটি লিখাটা বাদ পড়েছে ভাইজান। অনেক ধন্যবাদ।

২| ২১ শে জুলাই, ২০১৪ ভোর ৬:৩২

ঢাকাবাসী বলেছেন: এরশাদের সময় রাস্তাঘাটের যা উন্নতি হয়েছে তা এই দুজন মিলেও করতে পারেনি! আর ঢাকার মানুষ এখন তিন কোটি!

২১ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৬

খেয়া ঘাট বলেছেন: জ্বি। তথ্য ভুল আছে। ইফতারি আগে লিখা শেষ করতে গিয়ে এই ভুলটুকু হয়েছে। কোটি শব্দটা বাদ পড়ে গেছে। ধন্যবাদ প্রিয় ঢাকাবাসী।

৩| ২১ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৭:০৩

ডাইরেক্ট টু দ্যা হার্ট বলেছেন: খেয়া দেখি ভালোই ক্ষেপেছে দেশ দল আর দলাদলি নিয়ে :), তবে সত্যি আমরা হতাশ আছি এসব নিয়ে, আমরা উপরে না উঠে দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছি চলন্ত সিড়ির দিয়ে।


ধন্যবাদ খেয়া

২১ শে জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: কী আর করা বলুন। মাঝে মাঝে খুব ধৈর্য্যচ্যুতি ঘটে। নিজেকেই ধিক্কার দিতে মনে হয়।

৪| ২১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:৫২

মামুন রশিদ বলেছেন: ঝাঁঝালো লেখায় পিলাস++

২২ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ২:০৬

খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনাকে ঝাঁঝালো শুভেচ্ছা ভাইজান।

৫| ২১ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:৫৪

সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন: তীব্র। ভালো লেগেছে।

২২ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ২:০৬

খেয়া ঘাট বলেছেন: সবিনীত ধন্যবাদ রইলো ভাইজান।

৬| ২২ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:০২

প্রবাসী পাঠক বলেছেন: যাদের নিজেদের পথ চলার ঠিক নেই তারা কিভাবে একটি জাতিকে সঠিক পথের দিশা দেখাবে।

পোস্টে প্লাস।

২২ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ২:০৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: প্রবাসী পাঠক বলেছেন: যাদের নিজেদের পথ চলার ঠিক নেই তারা কিভাবে একটি জাতিকে সঠিক পথের দিশা দেখাবে।
+++++++++++++++++++++++

৭| ২২ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ১:০২

মনে নাই বলেছেন: আমাদের দেশে কে যে কাকে চালাবে সেটারই ঠিক নাই, জনগন ভালো না হলে নেতানেত্রীরা ভালো হবেন কিভাবে, আবার নেতারা খারাপ হলে আমজনতার ভালো-খারাপের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই। আমাদের জনতা আর জননেতা দুইটাই খুব একটা সুবিধার না, তাই চিল্লাচিল্লি করে লাভ নাই।

যেখানে প্রকাশ্যে খুনের ভিডিও থাকার পরেও বিচার হয়না, ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করলেও সেটা অপরাধ হয়না, আইন রক্ষাকারী বাহিনী গুম-খুন করে, স্পেসিফিক কোন বিজনেস না থাকলেও ৫ বছরে সম্পদের পরিমান কয়েকশগুন বেড়ে যায়, শেয়ার বাজারে সাধারন মানুষকে ফতুর বানিয়ে দিলেও কোন সমস্যা হয়না, নির্বাচনের নাম করে সব দখল করে নেয়া হয়, (আরো অনেক কিছু বলা যায়......।)
-সেখানে এইসব কোন সমস্যা হয়না, কিন্তু আমরা এতই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল জাতি যে ডঃ ইউনূস কেন বেশীদিন ব্যাংকে থাকলো সেটা নিয়ে মাথা ব্যাথা হয়ে যায়, এখানে আমরা বলি আইন সবার জন্য সমান।আরে বাবা যেখানে আইনের কোন প্রয়োগ-ই নাই, সেখানে আবার সমান-অসমান কি!!!

আবার সাকিব কেন বেয়াদবি(!!!) করলো, সেজন্য তাকে শাস্তি দিয়ে দেশের বারোটা বাজালে আমরা খুশীতে বগল বাজাই। ম্যানেজমেন্টের লোকদের পা না চাটতে পারলে বেয়াদব, সেই বেয়াদবকে যা ইচ্ছে শাস্তি দেয়াতে আম জনতার খুশী দেখতে ভালোই লাগে ।

কিসব আবোল-তাবোল লিখে ফেল্লাম, কিছু মনে কইরেন না।

২২ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ২:০৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনার প্রতিটি কথার সাথেই একমত। একটা চুড়ান্ত রকমের ওলটপালট হওয়া দরকার ভাই। অনেক ধন্যবাদ রইলো।

৮| ২২ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ২:০২

ডি মুন বলেছেন: দারুণ লিখেছেন।

আমাদের সাথে শুধু তামাশাই করা হয়।

ভালো থাকুন সবসময়।

২২ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ২:০৮

খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনি ভালো থাকবেন ভাই। অনেক শুভকামনা রইলো।

৯| ২২ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ২:৪৬

প্রবাসী পাঠক বলেছেন: ব্লগার মনে নাই ভাই এর মন্তব্যের সাথে একমত। তবে চূড়ান্ত রকমের ওলট পালটের জন্য মনে হয় আমাদের আরো দুইটি জেনারেশন লাগবে। আমাদের এই জেনারেশন সত্য-মিথ্যা, ভালো মন্দের পার্থক্য করা শিখেছে। কিন্তু আমাদের ব্যর্থতা আমরা জোর দিয়ে কিছু বলছি না। কারণ আমাদের সামনে ফুটন্ত কড়াই থেকে জলন্ত উনুনে ঝাঁপ দেয়ার মত অবস্থা। তবে আমাদের পরবর্তী জেনারেশন এভাবে মুখ বুজে সহ্য করবে না। তারা প্রতিবাদ করবে, চেষ্টা করবে পরিবর্তনের। যার ফল তার পরবর্তী প্রজন্ম পাবে।

তবে আমরা যদি একটু সাহসী হয়ে এখনই পদক্ষেপ নেই তাহলে হয়ত আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সুন্দর ভোরের জন্য সংগ্রাম করতে হবে না।

২২ শে জুলাই, ২০১৪ সকাল ৭:২১

খেয়া ঘাট বলেছেন: কারণ আমাদের সামনে ফুটন্ত কড়াই থেকে জলন্ত উনুনে ঝাঁপ দেয়ার মত অবস্থা।
++++++++++++++++++++++++++++

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.