নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসার গল্প -অশ্রুপাত

০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৩২

নীল শ্যামল বৃক্ষের নীচে তুমি।সূর্যের নরম আলো আর স্নিগ্ধ প্রশান্তিময় ছায়া পড়েছে তোমার শ্বাশ্বত সৌন্দর্য্যের ওপর।অসীম উন্মেষে আমি অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে আছি তোমার দিকে। হয়তোবা শেষ বিদায়ের শেষ প্রহর আজ। পৃথিবীর সব ভালোবাসা এমনি করেই দারিদ্র্যের কাছে হেরে যায়। আমিও এক হতভাগা। এক সময় রবির আলোতে গ্লানি আসে। নিভতে থাকে সূর্য।চারদিকে ধীরে ধীরে অন্ধকার গ্রাস করে। বিষণ্ন হৃদয়ে দুঃখের বার্তা জাগিয়ে এক হরিয়াল প্রান্তরের দিকে তুমি আনমনে হেঁটে গেলে। মূঢ় মন আর অশ্রুপাতন নিয়ে আমিও গৃহে ফিরি।

ঘরে এসে দীপ জ্বালি। তারপরও মনে হয় সারা ঘর আমার অন্ধকার। নিকষ আঁধার নেমেছে আজ বুকের অলিন্দে, কান্নার প্রসবন বইছে হৃদয়ের প্রতিটি হৃদকোষে। শরবিদ্ধ মুনিয়ার রাঙা রক্ত বইছে বুকের ভিতর। তোমার ঘ্রাণ আসে, শাড়ির ঘ্রাণ। টুনটুন শব্দ আসে। তোমার চুড়ির শব্দ। রুপের দ্যুতি আসে।তোমার কমনীয় মুখের দ্যুতি। ঘ্রাণ, শব্দ, দ্যুতি সব মিলে ভালোবাসার স্বাদ চায়। আবার ওরা প্রাণ চায়। আরেকবার ওরা একসাথে বাঁচতে চায়।

অন্তবিহীন অন্ধকার ভেদ করে তোমার গৃহ থেকে শেষ সানাইয়ের সুর আসে।বুক বিদীর্ণ করা সে কান্নার সুর। দূরে হঠাৎ মাছরাঙার আর্তনাদ শোনা যায়। শুনি বিরহে কাতর এক কুহকের ডাক। এভাবে কি কেউ ভালোবাসা বধ করে! অবাক আমি! কান্নাজলে সারা রজনী পার হয়।বন্ধ করতে পারিনা আঁখি। একসময় ভোরের আলো ফুঁটে। সূর্যের আলোর আগে আগে হাঁটি। দিকভ্রান্ত অজানা পথ। জানিনা কোনদিকে যাচ্ছি। শুধু অন্তর চোখ চেয়ে আছে তোমার আঙ্গিনার দিকে।

অকস্মাৎ শুণি সব শেষ! তুমি চলে গেছো। তুমি আর এ ধরিত্রীতে নেই। আমার অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে। তোমার নীলচোখ দুটো আজ আরো বেশী নীল।রেশমি চুলগুলো সব সকরুণ মৃত নদী হয়ে পড়ে আছে। জীবনরাজ্যের সব কোলাহল ছেড়ে তুমি চলে গেলে কী মর্মান্তিক নিষ্ঠুরতায়! শুধু পদ্মপাতায় লিখে গেলে-স্বর্গদুয়ারে প্রদীপ শিখা জ্বালিয়ে আমার অপেক্ষায় থাকবে অনন্তকাল।

অসূয়া আমি বেঁচে থাকার অসারতা নিয়ে কাঁদি। শুরু হয় আমার অনুধাবনীয় ক্রমাগত কান্না। আমার বুকের গহীনে তৈরী হয় দুঃখজলের এক অশ্রুনদী। সবাই কত কথা বলে। সবাই কত রকমের শান্ত্বনা দেয়। আমার অসীম শোককে সমাহিত করার কি নিদারুণ প্রচেষ্টা সবার। কিন্তু তুমিহীনা এই পৃথিবীতে আমার রোদন এক মুহুর্তের জন্যও আর বন্ধ হয়না।

কান্নার প্রসবনের মাঝে চোখে কোনো এক ফাঁকে তন্দ্রা আসে। তৈরী হয় আমার চোখের ভিতর স্বপ্নঘোর। দেখি, রুপালী পরী হয়ে স্বর্গোদ্যানে তুমি। সেই রেশমি চুল, সেই নীল চোখ। তোমার চারপাশে অপূর্ব সৌন্দর্য্যের সব পরীর দল। সবার হাতে একেকটি জ্বলন্ত প্রদীপ। প্রদীপের আলোতে উজ্জ্বল চারপাশ। সবাই বলছে-মৃন্ময়ী পরী তুমি একটু হাসো। মায়াবিনী একবার ওঠো। রাজেশ্বরী হয়ে একটিবার রোমান্চিত হও।

সহসা আমার খেয়াল হলো- শত প্রদীপের মাঝে শুধু তোমার হাতের প্রদীপটি অন্ধকার। সেখানে আলো নেই, আগুনের কোনো শিখা নেই। অপ্সরা, উর্বশী তুমি-যেন কেমন ম্রীয়মান। ব্যথাভরা নয়নে চেয়ে আছো আমার দিকে।
বললে- এতোদিন পরে এলে?
আমি বললাম- ভালো আছো পরী? সুখে আছো প্রণয়িনী? মনে পড়ে সেই পৃথিবী তোমার? মনে পড়ে সেই নীল শ্যামল বৃক্ষের ছায়া? মনে পড়ে- এক হতদরিদ্র দুঃখমানবের এক বিকেলে পরাজয়ী প্রস্থানের কথা।
হংসীর মতো তুমি মাথা নোয়ালে।
মনে পড়ে পদ্মপাতায় লিখেছিলে- প্রদীপ জ্বালিয়ে স্বর্গদুয়ারে থাকবে জনম জনম আমার অপেক্ষায়?
তুমি এবার দুঃখভরা চোখ তোলে তাকালে। ধ্রুব সুখ লেগে আছে তোমার ঠোঁটে।

তোমাকে ঘিরে সবার হাতে দেখো কী সুন্দর প্রদীপগুলো জ্বলছে। আলোর কি সুন্দর ঐক্যতান। শুধু তোমার প্রদীপটি অন্ধকার। কেন বলবে আমায়?
তুমি কেঁপে কেঁপে ভরাট ঠোঁট দুটো ধীরে ধীরে খুললে। আমি চেয়ে আছি অপলক। তোমার ভেজা প্রান্ত অধরের দিকে।তন্দ্রাঘোরের মাঝেও কাঁদি। গণ্ডদেশে আমার অশ্রুবহমান।

তুমি বললে- এখানে আসার পর থেকেই চেষ্টা করেই যাচ্ছি। একটিবার প্রদীপটি জ্বালাতে। প্রদীপের আলোতে দেখতে পৃথিবীতে রেখে আসা তোমার মুখ। কিন্তু পারিনা। শত চেষ্টাতেও জ্বালাতে পারিনা এই প্রদীপ।

ওর কথা শুণে আমার কান্না আরো বাড়তে থাকে। থামলে কেন প্রণয়িনী? বলো। সবকথা বলে শেষ করো।
জ্বালাবো কেমন করে বলো?এভাবে আর কত কাঁদবে তুমি! কেঁদে কেঁদে নষ্ট করোনা আঁখি।দয়া করো একটিবার। বন্ধ করো এ অশ্রুপাত। যতবারই এ প্রদীপ জ্বালাতে চাই। ততবারই তোমার অঝোর কান্না এসে জ্বলে ওঠা শিখা বারবার নিভিয়ে দেয়। ফলে এ প্রদীপ শিখা আর জ্বালাতে পারিনা।

আমি আমার গন্ডুষবেয়ে নামা অশ্রুবিঁদু মুছতে মুছতে বলি-তবে এবার ওঠে এসো প্রিয়তমা। একটিবার আমার হাতটি ধরো।
তুমি বললে-ওঠবো কেমন করে বলো? তাও তো পারিনা। যতবার ওঠে দাঁড়াতে চাই। ততবারই তোমার প্রলম্বিত ভারী দীর্ঘশ্বাস এসে শরীরের ওপর পড়ে। এই দুঃখের দীর্ঘশ্বাস ভেদ করে ওঠে দাঁড়াবার শক্তিও যে আমার নেই।

© আরিফ মাহমুদ
আটলান্টা,

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৫

প্রবাসী পাঠক বলেছেন: কষ্টমাখা ভালবাসার গল্প।

২| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভাল লাগছিল পড়তে।

৩| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:০৫

কল্লোল পথিক বলেছেন: ভালো লেগেছে।

৪| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:০৫

হাসান মাহবুব বলেছেন: কাব্যিক ব্যঞ্জনায় পরিপূর্ণ।

৫| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:১৭

মনিরা সুলতানা বলেছেন: চমৎকার শব্দ চয়নে বিষাদ কাব্য.....

৬| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:০১

উল্টা দূরবীন বলেছেন: পড়তে ভালো লাগছে।

৭| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৫৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: শব্দচয়ন কিছু ক্ষেত্রে অলঙ্কার না হয়ে বোঝা হয়ে উঠছিল, কিন্তু সার্বিক ভাবে লেখা উপভোগ্য।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:০৯

খেয়া ঘাট বলেছেন: বিনম্র ধন্যবাদ রইলো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.