নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিজেই যখন অনিয়ম

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:০১

ভদ্রলোকের সাথে পরিচয় হয়েছিলো ওয়াশিংটন এয়ারপোর্টে। উনিও দেশে যাচ্ছেন আমিও যাচ্ছি। গল্পে গল্পে বেশ সময় কাটছে। বেশীরভাগই গল্প হলো দেশে নানা অনিয়ম। অনিয়মের উটের ওপর সওয়ার হয়েছে দেশ। গন্তব্য অনিশ্চিত।
ভালোই ভালোই ঢাকা পর্যন্ত আসলাম। এয়ারপোর্টে নেমেই ভদ্রলোক কনুই দিয়ে হালকা একখান গুতো দিলেন।যার মানে হলো- এইযে এবার বিসমিল্লাহ বলে উটের ওপর চড়ে বসেন। এই উট দৌড়াতেও পারে আবার হঠাৎ করে নেতিয়েও যেতে পারে।

ঢাকা থেকে এখন আমরা সিলেটের পথে। আমার সীটে আমি বসে আছি। প্লেন ছাড়ার সময় হয়ে গেছে। কিন্তু প্লেন নড়ছেও না। পাঁচ/দশ/পনের মিনিট কেটে যাচ্ছে। প্রিয়জনকে দেখার জন্য প্রাণের ভিতর আকুপাকু করছে। মনে মনে ভাবলাম- ভদ্রলোকের কথাই ঠিক। এই উট কখন আকাশে উড়বে ঠিক নাই। অস্থির সময় পার করছি। এমন সময় শুণি পেছন থেকে তর্ক, বাকবিতণ্ডা। কৌতূহলী হয়ে দাঁড়িয়ে পেছনে দেখলাম। দেখি, পেছনে আমার সাথে আসা ভদ্রলোকের সাথে এয়ার হোস্টেসের উত্তপ্ত কথা কাটাকাটি হচ্ছে। আসলে, এয়ার হোস্টেস অনেক অনুনয় বিনয় করে উনাকে বুঝাবার চেষ্টা করছেন - উনার লাগেজ নীচে আইলে রাখা যাবেনা। এটা ওভার হেড বিনে রাখতে হবে। কিন্তু ভদ্রলোক মানতেই রাজীনা। উনি যেখানে রাখছেন সেখানেই রাখবেন। মাত্রতো ৩০ মিনিটের ফ্লাইট। ছোট একটা প্লেন। এয়ার হোস্টেস বলছেন- আমি ওপরে রেখে দিচ্ছি। না, উনি সেটাও শুণবেন না। কারণ- শুনলেই যে উনার প্রেস্টিজ টায়ারের মতো ফ্লাট হয়ে গেলো। আমেরিকার পাসপোর্ট। উনাকে আলাদা ইজ্জত দিতে হবেনা smile emoticon smile emoticon ভদ্রলোকের ইগোতে দারুণ লেগেছে। উনার উত্তেজনার মাত্রা প্লেনের সীটে বসেও রকেটের গতিতে বাড়ছে। দেখা যাক, কে উনার কি বা.....ছিড়তে পারে। সারা পৃথিবী উনি ঘুরে বেড়ান। প্লেনের নিয়মকানুন সব উনার জানা আছে। এই দেশের মানুষ কীভাবে, কেমন করে কাস্টমার সার্ভিস দিতে হয় তা জানেই না।
মনে মনে ভাবলাম- হায় আল্লাহ। এই লোকতো ওয়াশিংটন থেকে টার্কি হয়ে ঢাকা পর্যন্ত একটুও প্লেনের কোনো নিয়মের অনিয়ম করেনি।
যে যা বলেছেন- তা মুহুর্তেই মেনে নিয়েছেন। তার ইগোতে লাগেনি। এখন, নিজ দেশে এসেই তার ইগোর এরকম বিষ্ফোরণ ঘটলো।

ভাগ্য ভালো- আমার পাশে বসা ছিলেন পুলিশের ডিসি। উনি গিয়ে বললেন- দেখুন। আপনি ভারী অন্যায় করেছেন। আপনার আইলে রাখা লাগাজের ছবি আমি ফোনে ওঠিয়েছি। আপনার ঔদ্বত্যপূর্ণ কথোপথন আমি রেকর্ড করেছি। এখন যদি প্লেনের নিয়ম অনুযায়ী আপনি ঠিক জায়গায় আপনার লাগেজ না রাখেন-তবে আইনের আশ্রয় নিতে বাধ্য হবো। আপনি আমেরিকার পাসপোর্ট নিয়ে হুমকি ধামকি করে- আমার দেশের কানুনকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছেন। দেখুন, এ দেশের নাগরিকের সম্মান রাখাও আমার কর্তব্য।

খুব দ্রুত কাজ হলো।
ভদ্রলোক গেজ গেজ করতে করতে লাগেজ ছেড়ে দিলেন।
ডিসিকে আমি বললাম- আপনিতো আমার পাশেই বসা ছিলেন। এতোসব কখন রেকর্ড করলেন।
উনি বললেন- আরে এগুলোতো এমনিই বললাম। এসব দুরন্দরদের লাইনে আনার জন্য এরকম মাঝে মাঝে বলতে হয়।
বুঝলাম- পুলিশরা শুধু ক্রশফায়ারের ভয় দেখিয়ে বলদের মতো কাজ করেনা। ব্রেণ খাটিয়ে অনেক পুলিশ অফিসার স্মার্টলি কাজও করে। স্যালুট অফিসার। প্লেন ২০ মিনিট লেট করে আকাশে ওড়লো।

এপ্রসঙ্গে একটা ছোট গল্প মনে পড়লো।
এক হুজুর দুপুর বেলা হেঁটে হেঁটে উনার বাড়ীর দিকে যাচ্ছেন। উনার পাশ দিয়ে হাঁটছেন- এক যুবক ভদ্রলোক। একবার মাছের মাথায় পচন ধরেছিলো ঠিক সেই সময়কালীন ঘটনা। তো, যুবক - হুজুরকে সালাম দিয়ে বললেন- আচ্ছা হুজুর বলেনতো- দেশের মানুষ কী এমন পাপ করলো যে - মাছের মাথায় পর্যন্ত আজ পচন ধরেছে।

হুজুর মনে মনে বলছেন-ও আল্লাহ আমি কি হাসবো না কাঁদবো। আরে বেটা। এখন রমজান মাস। আর তুমি দিনদুপুরে মনের সুখে সিগারেট পান করছো আর ভুঁশ ভুঁশ করে ধোঁয়া ছাড়ছো। আবার জানতে চাইছো- দেশে কী এমন পাপে ধরছে যে মাছের মাথা পর্যন্ত পচে যাচ্ছে। নিজের মাঝেই পাপ রেখে আবার পাপ খুঁজে বেড়াচ্ছো।পাপের মূল যে নিজেই সেটাইতো বুঝতে পারছোনা।

বাইরের দেশে যে লোক গাড়ীর জানালা খুলে থু থু ফেলতে চায়না, সে লোক দেশে গিয়ে অবলীলায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে হিসু করে দেয়। যে ক্যান্ডি খোসা পকেটে নিয়ে ঘুরে ট্রাসক্যান খুঁজে সে দেশে গিয়ে চানাচুরের টোঙগা, খালি কোকের ক্যান এদিকে ওদিকে ছুঁড়ে গালি দেয়- ছিঃ দেশটা কি নোংরা।
আমরা নিজের মাঝেই অনিয়ম রেখে পুরো দেশে নিয়মের আশা করি। শৃঙ্খলা নিজের মাঝে তৈরী না করে পুরো দেশটাকে বিশৃঙ্খলার জন্য গালি দেই।

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:১৫

সৌরভ খাঁন বলেছেন: সুন্দর নিয়মের মাঝে থাকলে অনিয়ম কম হয়। তবে এ কথা সত্য যে নিজে ঠিক তো দুনিয়া ঠিক।

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪৮

খেয়া ঘাট বলেছেন: তবে এ কথা সত্য যে নিজে ঠিক তো দুনিয়া ঠিক।

২| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:২৯

সায়েম মুন বলেছেন: প্রত্যেকে আমরা যদি নিজেই নিয়ম মানি তো সব ল্যাটা চুকে যায়। তা না করে এর দোষ ওর, ওর দোষ তার গায়ে চাপিয়ে দিয়ে আদতে কোন লাভ হবে না। ফাঁকা বুলি দিয়ে দেশোদ্ধার করে লাভ কী!

১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৪৮

খেয়া ঘাট বলেছেন: ++++++++++++++্

৩| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৩৭

উল্টা দূরবীন বলেছেন: আসল নিয়ম শৃঙ্খলার চর্চা নিজের থেকেই শুরু করতে হয়।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:১১

খেয়া ঘাট বলেছেন: ধন্যবাদ রইলো।

৪| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:০৩

মুদ্‌দাকির বলেছেন: কথা গুলা ২০০%সত্য।

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:১১

খেয়া ঘাট বলেছেন: ধন্যবাদ রইলো

৫| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:০৯

জনৈক অচম ভুত বলেছেন: আমরা নিজের মাঝেই অনিয়ম রেখে পুরো দেশে নিয়মের আশা করি।

অনিয়ম বড্ড আজব জিনিস। অন্যেরটা দেখা যায়, নিজেরটা অদৃশ্য। :|

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৭:১৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: ঠিক বলেছেন ভাই। ধন্যবাদ রইলো।

৬| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:০৬

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:

নিজের মাঝেই পাপ :(

ভাই আপনার লেখা খালি শরমিন্দা করে /:)

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৫২

খেয়া ঘাট বলেছেন: ) :) :)

৭| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:২৪

আরাফআহনাফ বলেছেন: ভালো লাগলো বিশেষ করে "উনার উত্তেজনার মাত্রা প্লেনের সীটে বসেও রকেটের গতিতে বাড়ছে"।

শুভ কামনা জানাই।
ভালো থাকুন নিরন্তর।

৮| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:০১

রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: আমরা নিজের মাঝেই অনিয়ম রেখে পুরো দেশে নিয়মের আশা করি। শৃঙ্খলা নিজের মাঝে তৈরী না করে পুরো দেশটাকে বিশৃঙ্খলার জন্য গালি দেই।

এটাই আসল কথা।

৯| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২৬

কল্লোল পথিক বলেছেন: চমৎকার একটা বিষয় তুলে ধরেছেন।
ধন্যবাদ।

১০| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৪:৪৪

ফেরদৌসা রুহী বলেছেন: আমাদের দেশের যে অবস্থা সেখানে নিজে ভাল হওয়ার সাথে আইনের প্রয়োগ ও দরকার। অন্য দেশে সাথে সাথে জরিমানা করে তাই সবাই আইন মানতে বাধ্য আর মেনে চলতে চলতে আর অনিয়ম তার মধ্যে আসেনা।

১১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২০

শাহাদাত হোসেন বলেছেন: আমরা পারি আর না পারি খোচাঁ দিতে ভালো জানি

১২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:১০

দিশেহারা রাজপুত্র বলেছেন: নিজেরা মহাপুরুষ। দোষ যতো সমাজের। আইনের।
দায়বদ্ধতা এড়াতে আমরা বেজায় দক্ষ।

১৩| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:৪৭

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: ব্যক্তি থেকেই তো পরিবর্তন শুরু হয়। ভাল কিংবা মন্দের দিকে।

১৪| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:২৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: সর্ষের মধ্যেই ভূত, নাকি ভূতের মধ্যে শর্ষে? সব অনাচার এই বাংলা মায়ের চরণে নিবেদিত! মা কিছু বলেন না। হাজার হোক, তিনি বাঙালি মা!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.