নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

এইসব অখ্যাত মায়েদের চিরন্তন, চিরসত্য গল্প

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৫:৫০

এইসব অখ্যাত মায়েদের চিরন্তন, চিরসত্য গল্প

এই মায়েরা হচ্ছেন সংসারের সবচেয়ে বড় সঞ্চয়কারী। তাদের কোনো ব্যাংক ব্যালেন্স থাকেনা। তাদের সবচয়ে বড় সন্চয় হলো- ভাত রান্নার হাঁড়িতে চাল রেখে তা থেকে আবার একমুঠো চাল আলাদা করে রাখা। এভাবে প্রতিমাসের শেষে জমা হয়ে যায় কমপক্ষে চার থেকে পাঁচ কেজি চাল। তা দেখেই এই মায়েদের মুখে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর হাসি ফুটে ওঠে। সুইচ ব্যাংকে যাদের বিলিয়ন ডলার জমা তাদের মুখের হাসিও এই হাসির তুলনায় নিতান্তই অতি তুচ্ছ।

নিম্নবিত্ত পরিবারের মায়েরা জানেনা রেফ্রিজারেটর কি? বাবা যখন খুব সস্তায় পেয়ে অনেকগুলো পচা মাছ কেনে ঘরে আনেন- এইসব মায়েরা তখন বিশেষ এক প্রক্রিয়ার পচা মাছের সাথে হলুদ-লবণ মিশেয়ে এই পচামাছগুলো একটি হাড়িতে সংরক্ষণ করে তাজা রাখেন। এই হাড়িটাই হলো তাদের জীবনের একমাত্র রেফ্রিজারেটর।

এইসব মায়েরা জানেন দৈবাৎ রাতে বেঁচে যাওয়া ভাতকে কীভাবে হাড়িতে পানি দিয়ে রেফ্রিজারেটর ছাড়া পরেরদিনের জন্য সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। ক্ষুধা নিবারণের সেই পান্তা ভাত ঢাকা শহরে বৈশাখী পান্তাভাত খাওয়ার অাভিজাত্যের প্রতীক হয়।
এইসব মায়েরা জানেনা ভ্যাকেশান কি? দার্জিলিং-সিঙ্গাপুরের গল্পও এরা কোনোদিন শুণেনি।এমনকি কোনোদিন বড় একটা শহরও এরা দেখেনি। উনাদের জীবনে সবচেয়ে বড় ভ্যাকেশান স্পট হলো বাপের বাড়ী। বছরের কোনো এক সময় শ্বশুর বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি যেতে পারাটাই এদের জীবনে সবচেয়ে বড় ভ্যাকাশানের আনন্দ।

রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া এরা জীবনে কল্পনাও করতে পারেনা। এদের সবচেয়ে আনন্দের খাবারটা হলো- ঘরের পালা মুরগিটা বেশি বুড়ো হয়ে গেলে তা জবাই করে সংসারের সবাইকে নিয়ে একসাথে খেতে খেতে মাংসের ভালো টুকরোগুলো স্বামী-সন্তানের প্লেটে তোলে দেয়া।
স্কুলে যাওয়া ছেলেমেয়েদের শার্ট-প্যান্ট ইস্তিরি করে এরা এক অদ্ভূত উপায়ে। যেটা হয়তো আপনারা কল্পনাও করতে পারেন না। আর তা হলো- ভাঁজ করা শার্ট-প্যান্ট বালিশের নিচে রেখে দেয়া।
নিম্নবিত্ত পরিবারেরা মায়েরা হলো সবচেয়ে সুষম বন্টনকারী। এরা জানেন একটা ডিম ভাজাকে কীভাবে চার ভাই বোনের মাঝে খুব সুন্দর করে ভাগ করে দিতে হয়। আর সন্তানদের কাছে এর চেয়ে প্রিয় খাবার যেন পৃথিবীতে আর কিছুই নেই।
এসব মায়েদের সবচেয়ে প্রিয়মাস হলো ফেব্রুয়ারী মাস। কারণ-এই মাসটি ২৮ দিনে শেষ হলে গরীব স্বামীর বেতনের টাকাটা দুদিন আগেই তাদের হাতে আসে। এই সামান্য বেতনের টাকা দিয়ে পুরো সংসারটাকে এক অলৌকিক ক্ষমতায় এসব মায়েরা আরেক মাস পর্যন্ত টেনে নিয়ে যান।
এইসব মায়েরা সন্তানদের নিয়ে পার্কে যাওয়াটা কি জিনিস তাও বুঝেন না। এদের সবচেয়ে বড় বিনোদনের পার্ক হলো লুডুর বোর্ড। সারাদিনের ক্লান্তির পর স্বামী-বাচ্চাদের নিয়ে লুডু খেলতে বসাই এদের জীবনে সবচেয়ে বড় আনন্দ।
উনাদের জীবনে উইকএণ্ড বলতে কিছুই নেই। উইকেন্ডের পর গেটটুগেদার কি তাও জানেন না। এসব কল্পনাও করতে পারেন না। উনাদের গেটটুগেদার হলো- স্বামী-সংসার-ছেলে মেয়ে সবার কাজ গুছানোর পর যদি এতোটুকু অবসর পাওয়া যায়। তখন প্রতিবেশী মহিলার সাথে একটু খোশগল্প করা।
নিম্নবিত্ত পরিবারের মায়েরা জানেন-রান্না করার চুলোয় পুড়ানো কাঠ যখন পুড়তে পুড়তে কয়লা হয়ে যায়, তখন তা কীভাবে সংরক্ষণ করে বাজারে বানিয়ার দোকানে বিক্রি করে টাকা সন্চয় করতে হয়। তারা জানেন স্বামী,সন্তান অসুস্থ হয়ে গেলে এই সন্চয়কৃত টাকা থেকেই কীভাবে ঔষধ কেনার ব্যবস্থা করতে হয়।
নিম্নবিত্ত পরিবারের মায়েরা এক অদ্ভূত অটো গাড়ীর কারিগর। এরা কাদামাটি দিয়ে গাড়ি বানিয়ে সেই গাড়ী চুলোর আগুনে পুড়িয়ে শক্ত করে সন্তানদের হাতে খেলনা হিসাবে তোলে দেন। মায়ের হাতে গড়া এই খেলনা গাড়ীর সাথে পৃথিবীর আর কোনো খেলনারই কোনো তুলনা হয়না।
এইসব মায়েরা জানেনা -ফ্যাশান কি? দামী ব্রান্ড এর কাপড় কি? রাস্তায় হেঁটে হেঁটে বিক্রি করা ফেরীওয়ালার কাপড়ই এদের একমাত্র ফ্যাশান। আর সন্তান-স্বামীর জন্য বাজারের এক অখ্যাত খলিফার তৈরী করা কাপড় আর নিজের হাতের সুই-সুতোই হলো এসব মায়েদের সারাজীবনের ব্রান্ড।

নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা জানেনা হ্যারিপটার ছবি, স্পাইডার ম্যান ছবি, ব্যাটম্যান ছবি এসব কি। কিন্তু এদের মায়েরাই সবচেয়ে বড় ম্যুভি তৈরীর পরিচালক। জ্যোৎস্না আলোতে উঠোনে বসে সন্তানের মাথা কোলে রেখে এরা অদ্ভূত সুন্দর রূপকথার গল্প বলে সন্তানের চোখের মাঝেই থ্রিডি স্ক্রিন তৈরী করে দেন। সন্তানের চোখ থেকে ছবির সেই ঘোর যেমন সারা জীবনেও আর কাটেনা। ঠিক তেমনি এই সন্তান যত দূরেই থাকুক এইসব পরম মমতাময়ী মায়ের আঁচলের বাইরেও এরা যেতে পারেনা। এসব মায়েদের সারা জীবনের সুখটাই হলো শুধু সংসারময়। আর সন্তানদের সারাজীবনটাই হলো মাময়।

সংসার আর সন্তানদের বেড়ে ওঠার প্রতিমুহুর্তেই জীবনের সাথে লেগে থাকে এইসব সংগ্রামী মায়েদের এক অন্যরকমের ত্যাগ।যে ত্যাগ কেউ স্বচক্ষে না দেখলে কল্পনাও করতে পারবে না। এইসব মায়েদের কথা কেউ কখনো বলেনা। ওনাদের ত্যাগের মহীমা সবসময় সবকিছুর আড়ালেই রয়ে যায়। আর বলতে চাইলেও পৃথিবীর কোনো শ্রেষ্ঠ ছবিতে, উপন্যাসে কিংবা গল্পে এই আত্মত্যাগের এক কণাও বলা হবেনা। ভালো থাকুন বাংলার প্রতিটি নিভৃত পল্লীতে ত্যাগের মহীমায় চির ভাস্বর নাম না জানা সব অখ্যাত মায়েরা।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৩৬

মুদ্‌দাকির বলেছেন: আসলে মা এর মমতার বিচার বিত্তের প্রাচুর্য বা নিষ্ঠুর দারিদ্র দ্বারা পার্থক্য করা যাবে না।

২| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৪৩

শাহ আজিজ বলেছেন: মায়েদের কি এক কারিশমা ছিল তখন ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.