![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ক্যামেলিয়া হাসপাতালের জানালা দিয়ে অশ্রুবিঁদু চোখে চেয়ে আছে বাইরের দিকে। মন দিয়ে ও কিছু একটা গুনে। তারপর খুব কষ্টে ডায়েরীর পাতা খুলে লিখে ৭। ডাক্তাররা প্রতিদিন ওর সাথে মিথ্যা কথা বলেন। দেহে যার মরণব্যাধি বাসা বেঁধেছে ডাক্তারদের মিথ্যা কথায় সে কি আর কোনোদিন বেঁচে ওঠবে। দিন যায়। ধীরে ধীরে মৃত্যু ওর কাছে আসে।ওর ডায়েরীতে আর কোনো কিছু লেখা নেই। শুধু অঙ্কের সংখ্যাগুলো ছাড়া। কয়েকদিন আগে লেখা ছিলো ১৫। তারপর হলো ১২।জানালার বাইরে ওর মতো একটা রুগ্ন ক্যামেলিয়া গাছ আছে। প্রতিদিন গাছটি থেকে একটা, দুটো পাতা ঝরে যায়। ঝরে পড়া পাতার পর গাছে বেঁচে থাকা পাতাগুলোই হলো ওর জীবনের শেষ দিন। গাছে আজ মাত্র ৭ টি পাতা কোনো রকমে ঠিকে আছে। ক্যামেলিয়া ভালো করেই জানে -বিধাতা মানুষ আর এই গাছের জীবনকে একসাথে বেঁধে দিয়েছেন। তা না হলে- ওর জানালার বাইরে ওর নামের সাথে মিলে যায় এরকম রুগ্ন একটা ক্যামেলিয়া গাছ থাকবেই বা কেন? আর গাছটি থেকে প্রতিদিন এভাবেই পাতাগুলো ঝরে যাবেই বা কেন?
শুধু ডাক্তাররা না ক্যামেলিয়াকে যারা হাসপাতালে দেখতে আসে-তারাও এ ঘটনাটি জানে। ওর মাথায় হাত রেখে শান্ত্বনা দিয়ে বলে- এ তোমার মিছে বাড়াবাড়ি। গাছের পাতার সাথে মানুষের জীবনের কি সম্পর্ক! এরকম কোনো কিছুই হতে পারেনা। ওরা জোর করে জানালা বন্ধ করে রাখে। ডাক্তাররা বলেন- ক্যামেলিয়ার আসনটিই অন্য জায়গায় বদলে নিতে। যেখান থেকে জানালার বাইরে যেন আর কোনো গাছই দেখা না যায়। কিন্তু ক্যামেলিয়া বলে- না। তোমরা এ নির্মম আচরণটুকু আমার সাথে করোনা। আমার জীবনের অন্তিম সময়গুলো এই জানালার পাশেই আমাকে থাকতে দাও। একজন মৃতপথযাত্রী মানুষের শেষ ইচ্ছেটুকুকে তোমরা সম্মান করো।
গাছের পাতা ঝরা আর মানুষের বেঁচে থাকার সম্পর্ক যেহেতু কেবলি মিছে একটা অলীক ব্যাপার। তাই ডাক্তাররাও আর এ ব্যাপারটা নিয়ে কোনো আগ্রহবোধ করেন না।
রাসেলের শরীরটাও কয়েকদিন থেকে খুব ভালোনা। তারপরও রাস্তায় হেঁটে হেঁটে আঁকা ছবিগুলো বিক্রি করার চেষ্টা করে। কোনোদিন সারাদিন পার হয়ে যায়। একটা ছবিও বিক্রি হয়না। রাসেল ভালো করেই জানে- ওর ছবিগুলোর কোনো মূল্য নেই এই অভিজাত সমাজে। কেউ দয়া করে যদি একটা ছবি কিনে নেয়-সেদিন ওর খাবারের কষ্ট দূর হওয়ার চেয়ে নিজের আঁকা ছবি বিক্রির আনন্দেই ও বারবার শিহরিত হয়। একটা ভবঘুরে অখ্যাত ছবি আঁকিয়ে সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে ক্যামিলিয়াকে তার ভালোবাসার কথা কেমন করে বলবে। তাই সে কোনোদিন তার সামনেও যায়নি। সাহস করে তার গোপন প্রেমের কথাও বলেনি।এখন শুধু মাঝে মাঝে হাসপাতালে গিয়ে চুরি করে ক্যামিলিয়াকে দেখে আসে। তবে রাসেল একটা কথা খুব ভালো করেই জানে। ওর কোনো ছবির আজ কোনো কদর নেই। কিন্তু ও মৃত্যর পর ওর আঁকা ছবি একদিন পুরো পৃথিবীতে বিখ্যাত হবে। এমনকি গল্পকাররা ওর আঁকা ছবি নিয়ে চমৎকার সব গল্প লিখবেন। ও সত্যিই একদিন নামকরা ছবিয়াল হবে।
গতরাতে প্রচন্ড ঝড়, বৃষ্টি আর তুফান হয়েছে। হাসপাতালের জানালার ভিতর দিয়ে বিদ্যুতের চমকে ঘুমন্ত ক্যামেলিয়া বারবার জেগে ওঠে। প্রচন্ড দমকা বাতাসে জানালার কবাট জোরে জোরে বন্ধ হয়েছে কতবার। ও অনেক কষ্টে জানালার পাশে গিয়ে এবার জানালাটা খুলে। ভয়ে ভয়ে রুগ্ন গাছটির দিকে তাকায়। গতরাতের প্রকাণ্ড ঝড়ে নিশ্চয়ই গাছে আর কোনো পাতা থাকার কথা না। কিন্তু এ যেন বিশ্বাস হয়না- গাছে কী সুন্দর একটি অলৌকিক পাতা দোল খাচ্ছে। জীবনের অন্ধকার ভেদ করে চাঁদের ম্রীয়মান আলোয় দেখা যায় মরা গাছের ডালে একটা পাতা প্রাণের স্পন্দন হয়ে লেগে আছে।মনের ভিতর যেন ছোট একটু আশার কুঁড়ি জেগে ওঠে। সারাটাদিন ওর খুব ভালো যায়। তবে কি ও নতুন জীবন ফিরে পাচ্ছে আবার। এ যেন বিশ্বাসই হয়না।
পাতাটির দিকে চেয়ে চেয়ে তার সারাটি দিন যায়। একসময় রাত হয়। গভীর রাতে ওর প্রার্থনা আরো গভীরতর হতে থাকে। পরদিন সূর্য্য ওঠার সাথে সাথেই আবার জানালার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। গতরাতেও বেশ ঝড়, বৃষ্টি হলো। আজ নিশ্চয়ই গাছটির শেষ পাতাটি ঝরে যাবে। জীবনের তবে এই শেষক্ষণ আজ। ও জানালা খুলে অবাক হয়ে দেখে- গতকালের পাতার সাথে আজ আরেকটা নতুন পাতার কুঁড়ি। এমন সুন্দর দৃশ্য যেন এই পৃথিবীতে আর একটাও নেই।
এভাবেই প্রতিদিন যায়। একটা, দুটো নতুন পাতা গাছে জন্মাতে থাকে। ক্যামিলিয়া একদিন সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে। তারপর, আজ কতদিন হলো। কত মাস গেলো। একদিন দুতলার জানালায় চেয়ে আছে পথের দিকে। চেয়ে থাকতে থাকতে ওর মনটা যেন কেমন বিষণ্ন হয়। সেই নাম না জানা ছবিওয়ালা ছেলেটাকে আর রাস্তায় দেখা যায়না। ছেলেটি ওর বাড়ীর পথ ধরে হেঁটে যেতো । পথে যেতে যেতে অপলক চেয়ে থাকতো ওর জানালার দিকে । আর দৈবাত চোখাচোখি হলে লজ্জায় নামিয়ে নিতো চোখ।
কাজের ছেলেকে ডেকে ক্যামিলিয়া জিজ্ঞাসা করে- আচ্ছা , তুই কি জানিস ? সেই ছেলেটিকে । যে এই পথ ধরে রোজ ছবি ফেরী করে বেড়াতো।
কাজের ছেলেটি বলে- ও ঐ ছবি পাগল আঁকিয়ে ছেলেটা। সেতো তুমি যে হাসপাতালে ছিলে তার বাইরে এক মরা গাছে রাত গভীর হলেই ছবি আঁকতো। প্রচণ্ড বাতাসে প্রদীপ নিভে গেলে চাঁদের আলোতেই চলতো তার সারা রাত জেগে আঁকা। যখন ভোরের আলো ফোটতো ঠিক তখন সে বড় ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরতো । সে এক অদ্ভূত ছবি আঁকিয়ে। রাতের পর রাত গাছে পাতা আর কুঁড়ি এঁকে মরা গাছটিকেই জীবন্ত করে তোলেছিলো। তারপর শুনলাম কোন এক রাতে ছবি আঁকতে আঁকতেই ছেলেটি সেই গাছের নীচেই মারা গেলো। আপু,তুমি যাবে সেই ক্যামিলিয়া গাছটি দেখতে?
- আরিফ মাহমুদ
আটলান্টা, জর্জিয়া।
০২/২৭/২০১৬
(ও হেনরির গল্পের ছায়া অবলম্বনে লেখা)
২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:২৫
জনৈক অচম ভুত বলেছেন: অলৌকিক এবং মর্মান্তিক।
গল্প ভাল লেগেছে। ট্রিপল সেঞ্চুরীর জন্য অভিনন্দন।
৩| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:২৬
শাহাদাত হোসেন বলেছেন: চমৎকার গল্প। ৩০০ তম পোষ্টের
অভিনন্দন।
৪| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:৩৪
আরজু পনি বলেছেন:
বাহ...মৃত্যুহীন জীবন...
ভালো লাগলো পড়তে ।
আর অবশ্যই তিনশততম পোস্টের অভিনন্দন...
আপনার মনে আছে পাঁচশততম কমেন্টটি আমার ছিল ?
৫| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:২২
হামিদ আহসান বলেছেন: ৩০০ তম পোস্টে অভিনন্দন ৷
ভাল লেগেছে গল্পট
৬| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৩৪
বিজন রয় বলেছেন: আপনাকে আপনার ১১০০১তম মন্তব্য করলাম।
অভিনন্দন।
৭| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৪৯
সুমন কর বলেছেন: ৩০০তম পোষ্টের শুভেচ্ছা...
লেখা ভালো হয়েছে।
৮| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৩৪
অগ্নি সারথি বলেছেন: ৩০০ তম পোষ্টের অভিনন্দন।
৯| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:২২
পুলহ বলেছেন: তিনশত তম পোস্টে অভিনন্দন! গল্প ভালো লেগেছে
আন্তরিক শুভকামনা রইলো আপনার প্রতি
১০| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:২৯
রেজওয়ানা আলী তনিমা বলেছেন: সুলিখিত গল্প। ব্যতিক্রমী স্বাদ পেলাম।হিন্দি 'লুটেরা' থেকে সামান্য অনুপ্রাণিত মনে হল।
ভালো থাকবেন।
১১| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৫৩
হাসান মাহবুব বলেছেন: গল্প ভালো লাগলো। হ্যাপি ব্লগিং।
১২| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:১৯
অলওয়েজ ড্রিম বলেছেন: ভাল গল্প। দৃষ্টিভংগি বদলে গেলে অসম্ভবও সম্ভব হয়ে যায়। গাছটির পুনর্জীবন প্রাপ্তি ক্যামেলিয়ার দৃষ্টিভংগি বদলে দিয়েছিল।
১৩| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:২৬
কল্লোল পথিক বলেছেন: ৩০০ তম পোষ্টের অভিনন্দন।
গল্প ভালো লেগেছ।
১৪| ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৪৯
উল্টা দূরবীন বলেছেন: ৩০০ তম পোস্টে অভিনন্দন।
১৫| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৫৬
প্রবাসী পাঠক বলেছেন: ৩০০ তম পোস্টের শুভেচ্ছা আরিফ ভাই।
১৬| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:৪৫
চুঙ্গিওলা বলেছেন: ত্রিপল সেঞ্চুরি পুরণ হওয়াতে অভিনন্দন
১৭| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:০৭
খেয়া ঘাট বলেছেন: বিনম্র ধন্যবাদ আর সবার জন্য নিরন্তর শুভকামনা রইলো। দূর থাকলেও , ভার্চুয়াল জগতে বিচরণ করলেও আপনারা সবাই অনেক আপন।
১৮| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ২:১৪
দেওয়ান কামরুল হাসান রথি বলেছেন: ৩০০ তম পোষ্টের অভিনন্দন আরিফ ভাই।
১৯| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:০৬
নেক্সাস বলেছেন: ৩০০ তম পোষ্টের জন্য অভিনন্দন
২০| ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১২
আহমেদ জী এস বলেছেন: খেয়া ঘাট ,
এক কষ্টের নদীতে খেয়া ভাসিয়ে দিলেন । ঘাট কই ? খেয়াঘাট কি খুব বেশি দূর ?
ছবি আঁকিয়ে ছেলেটি কি নদীর পারে একটা ক্যামেলিয়া গাছের নীচে নোঙর ফেলা একটা নাও এঁকে দিতে পারেনা ????
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ৮:০৬
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ৩০০ তম পোষ্টের অভিনন্দন।
ছবিয়ালের দারুন প্রেমোখ্যানে মুগ্ধ।