নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

নৈতিকতার কত কথা

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৩৪

১) আমাদের শিশুদের পড়ানো জাতীয় ছড়া হলো- "হাটটিমা টিমটিম, তারা মাঠে পাড়ে ডিম। তাদের খাঁড়া দুটো শিং, তারা হাটটিমা টিমটিম।"এ এক অদ্ভুত আজগুবি ছড়া। পৃথিবীতে এমন কিছু কি আছে যারা ডিম পাড়ে আবার মাথায় শিং ও আছে? হাঁস, মুরগী, পাখি এরা ডিম পাড়ে কিন্তু এদের কারো মাথায় কি শিং আছে? আবার গরু, ছাগল, মহিষ এদের মাথায় শিং আছে , কিন্ত এরা কি ডিম পাড়ে? তাছাড়া, ডিম পাড়ার জন্য খোলা মাঠই বা কই? সবতো ভূমি দস্যুরা খেয়ে হজম করে ফেলেছে।

২) একজন প্রথিতযশা শিক্ষক যিনি নামেই পুরো দেশে পরিচিত বলেছিলেন-শিশুদের মনে ফ্যান্টাসি তৈরি করতে হবেনা?কল্পনা শক্তি তাদের শৈশবেই বুনে দিতে হবে। ইউরোপ, আমেরিকার শিশুরা কি হ্যারিপটার, স্পাইডারমান এসব বইগুলো পড়ে বড় হচ্ছেনা??
আহা! কী অপূর্য যুক্তি। উনারা বিদগ্দজন। উনাদের চিন্তার জগৎটাও তাই আলাদা। ঠিক তেমনি আলাদা পাশ্চাত্যের সাথে আমাদের সমাজ ব্যবস্থাটাও।ওদের শিশুরা হোভার বোর্ডে এখন ওড়ে বেড়ায়, আর আমাদের শিশুরা এখনো ভাঙ্গা সাঁকো পায়ে হেঁটে স্কুলে যায়। ওদের বাবা-মায়েরা উইকএন্ডে মায়ামী বীচের পাশে বসে থাকেন।আমাদের বাপ চাচাদের উইকএণ্ড বলতে কিছু নেই। কাজের ফাঁকে জমিনের আইলে বসে জিরিয়ে নেন।ওরা বড় হলে আর কারো জন্য চিন্তা করতে হয়না।আমাদের বড় হওয়া সন্তানদের বাবা-মা, ভাই,বোন পরিবারের সবাইকে নিয়ে চিন্তা করতে হয়।ওদের সমাজে বিবাহ বহির্ভূত সন্তান অহরহ, আমাদের সমাজে সেটা কল্পনাও করা যায়না। তাই এ উদ্ভট ফ্যান্টাসীগুলো ওদের সাথে চলে, আমাদের সাথে চলেনা।

৩) "সবুজসাথী" নামে আমাদের শৈশবে চমৎকার একটা বই ছিলো। সেখান থেকে শ্রুতলিপি পড়ানো হতো।সদা সত্য কথা বলিও, কখনো মিথ্যা বলিও না।গুরুজনকে মান্য করিও। সকালে ওঠিয়া আমি মনে মনে বলি-সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি। শিশুরব করে রব, রাত্রি পোহাইলো, কাননে কুসুম, কলি সকলে ফুটিলো- ইত্যাদি কতো নীতিকথা আমাদের স্যারেরা দরাজ কন্ঠে বলে যেতেন আর আমরা বড় বড় অক্ষরে সুন্দর করে লিখতাম। শিশুদের ব্যাগে থাকতো বই, চক আর শ্লেট। সেদিন দেখলাম- এক স্কুল পড়ুয়া ছাত্রের ব্যাগের ভিতর পাওয়া গেছে ইয়াবার ট্যাবলেট। শিশুর নৈতিকতা ফ্যান্টাসীতে রিপ্লেস হলে দশাতো এরকমই হবে।একটা শিশুর মনে ফ্যান্টাসি তৈরী করার চেয়ে তার মনে নৈতিক ভিত্তি তৈরী করাটাই জরুরি নয় কি?

৪) একটু উপরের ক্লাসে পড়েছিলাম শিক্ষকের মর্যাদা নামক চমৎকার একটা কবিতা। কবিতার কয়েকটি সুন্দর ভাবনা জাগানিয়া শক্তিশালী পঙক্তিমালা এরকম-
"শিক্ষক আমি শ্রেষ্ঠ সবার দিল্লীর পতি সে তো কোন ছার,
ভয় করি না'ক, ধারি না'ক ধার, মনে আছে মোর বল
বাদশাহ শুধালে শাস্ত্রের কথা শুনাব অনর্গল।"

সেই কবিতাগুলো নাকি এখন আর পাঠ্য বইয়ে নেই। শিক্ষকের মর্যাদাও নেই। এইতো কিছুদিন আগে দেখা গেলো উত্তেজিত ছাত্ররা ক্যাম্পাসে এক শিক্ষককে ধাওয়া করছে। এখন কবিতা পাল্টে হয়ে গেছে-
নেতা আমি শ্রেষ্ঠ সবার,শিক্ষক সেতো কোনো ছার,
ভয় করি না'ক, ধারি না'ক ধার,ক্ষমতা, ক্যাডারই আসল বল।
শাস্ত্রের কথা ভিজিয়ে রাখো-এসবে আজ আর নাই কোনো ফল।

৫) শৈশবেই শিশুর পীঠের ওপর আজ বিশাল বিদ্যার বোঝা। তার শরীরের ওজনের চেয়ে ব্যাগের ওজন বেশী। শিশু যত বড় হতে থাকে-এই ব্যাগের বোঝা তত কমতে থাকে।কমতে কমতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের পীঠে বইয়ের ব্যাগ থাকাতো দূরের কথা , তার হাতে আর কোনো বইও থাকেনা। কিন্তু এটাতো পুরোটাই উল্টো হওয়ারই কথা ছিলো। আহা! বই ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই কত সুন্দর পাশ করে যায়। একদিন সন্ধ্যার পর লাইব্রেরিয়ান ভাই চুপিচুপি জিজ্ঞাসা করা- আরিফ ভাই-আপনাদের কোনো পরীক্ষা চলছে নাকি?
আমি বললাম- হ্যাঁ। ফাইনাল চলছে। তা,আপনি কীভাবে বুঝলেন?
উনি বললেন- কেন ভাই বুঝবোনা। ফাইনাল পরীক্ষার আগেইতো বইয়ের পাতাগুলো ব্লেড দিয়ে কাটা হয় আর ইচ্ছেমতো পৃষ্ঠা গুলো ছেড়া হয়।
ওনার কথা শুনে সত্যিই খুব কান্না এসেছিলো।পরীক্ষা পাশই যদি অসত পথে হয়-তবে তার জীবিকার পথও তো অসত পথেই হবে।

৬) "অস্ত্র শিক্ষা- একসাথে চলেনা"।ক্যাম্পাসে একটা জনপ্রিয় শ্লোগান । মজার কথা হলো- প্রতিপক্ষকে হুশিয়ারি করে দেয়ার জন্য মিছিল থেকে গুলি ছোড়েই এবং অস্ত্র উঁচিয়েই এই শ্লোগান দেয়া হয়। একবার মজা করে এক আর্মস ক্যাডার বন্ধুকে বলেছিলাম- কীরে- তোদের শ্লোগানের সাথেতো তোদের কর্মের কোনো মিল নাই। ও বললো- মিল হবেনা কেন? শিক্ষা আসে কোত্থেকে? বই থেকে নিশ্চয়ই। আমি বললাম হ্যাঁ।
তবেতো। মিল শতভাগই আছে। আমাদের হাতে বই আর অস্ত্র কি একসাথে কখনো দেখেছিস? সেজন্যইতো শ্লোগান দেই- অস্ত্র-শিক্ষা -একসাথে চলেনা। বন্ধুটিকে আমরা ফাইটার হিসাবে ডাকতাম। বাস্তব জীবনে এখন ও উগান্ডায় শান্তিপ্রতিষ্ঠায় ফাইট করছে। অন্ততঃ ওর অভিজ্ঞতা সাথে চাকুরি পুরোটাই মিলে গেছে। ডাক্তারী পড়ে পুলিশ ক্যাডার কিংবা সাহিত্য পড়ে কাস্টমস অফিসার হতে হয়নি।


৭) সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অবস্থাতো ভয়াবহ রকমের শোচনীয়। এগুলোর অবস্থা হলো বর্ষাকালে কাদামাটিতে রাখা ইটের টুকরোর মতো। একেবারে অক্ষম না হলে যেখানে কেউ পা রাখতে চায়না। যার একটু সামর্থ্য আছে সেই তার সন্তানের জন্য কেজি, ইংরেজী মিডিয়ামের স্কুলগুলো বেছে নেয়। এরাই আবার সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য তুমুল প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়। এমনকি কোনো দুই নাম্বারি পথে ভর্তি হতেও কুন্ঠিত হয়না। কিন্তু বুঝা উচিত ছিলো- ভবনের ভিত শক্ত না হলে কোনো ভবনই ভালোভাবে ঠিকে থাকেনা।


৮) দেশে শিক্ষাভবনের উন্নয়ন যে হয়নাই তা কিন্তু ঠিকনা। গ্রামের স্কুলগুলোও এখন পাকা। তবে সে অনুযায়ী শিক্ষার মান কি উন্নত হয়েছে? আগের জমানায় যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ও পাশ করেছিলেন- তাদের পড়ালেখা ছিলো কত নিঁখুত। আর এখন ঠিক চিহ্নের বদৌলতে লেখাপড়া টিটকারীর পর্যায়ে চলে গেছে। সেসময়ের বিদ্যালয় ছিলো কাচা কিন্তু বিদ্যা ছিলো পাকা। এখন বিদ্যালয় হলো পাকা কিন্তু বিদ্যা হলো কাচা। সেদিন আড্ডায় -এক বড়ভাই বলছিলেন- পড়ালেখা কাচাপাকা যাই হোক। দেশের জিডিপি কিন্তু ঠিকই বেড়েছে। এটা শুনে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি পড়ান এক বড়ভাই বললেন- জিডিপিতো দুইটা। একটা হলো "গ্রস ডমেস্টিক প্রডাক্ট" আর আরেক জিডিপি হলো "ঘুষ দূর্নীতির পরিমাণ" ? আপনি কোন জিডিপি'র কথা বলছেন?

ওপরের কথাগুলো নৈতিকতার সাথে সম্পর্কিত। আমরা আস্তিক-নাস্তিক দ্বন্দ্ব করি, নামাজপড়ি, রোজা রাখি, ধর্ম কর্ম করি, সেমিনার করি, সিম্পোজিয়াম করি, টকশো করি,বদলে দেয়ার কথা বলি, বদলে যাওয়ার কথা বলি। কিন্তু আমাদের নৈতিকতার মানের কতটুকু উন্নত হয়েছে? খুব অল্পতেই রেগে যাই, এতোটুকু সমালোচনাকে শত্রুতা মনে করি, প্রকাশ্যে পিটিয়ে জ্যান্ত মানুষ মেরে ফেলে উল্লাস করি,
খেলা দেখতে গিয়ে সীটগুলো ভেঙ্গে আনন্দ প্রকাশ করি, মতের সামান্য অমিল হলেই চটে গিয়ে মারতে ছুটে যাই। এইতো কয়েকদিন আগে উত্তরায় সাত তলা এক ফ্লাট থেকে অগ্নিদগ্ধ মহিলা নামতে নামতে পুরো বিল্ডিংএ চীৎকার করেও কারো এতোটুকু সাহায্য পেলেননা। অথচ সেই বিল্ডিং এর বিভিন্ন তলায় প্রফেশনাল মানুষরাই শুধু না খবরে দেখেছি মানবাধিকার এক কর্মকর্তাও নাকি ছিলেন।
মহিলার দুই সন্তান জীবন্ত ভস্মীভূত হলো। পুরো বিল্ডিং এ একটা চাদর উনার ভাগ্যে জুটলো না।অবশেষে এক ভ্যানগাড়ীর ড্রাইভার মহিলার সাহায্যে এগিয়ে আসলেন। তাহলে কি বলা যায়না- আমাদের ১০০ জন শিক্ষিতের মাঝে ৯৯ জনই নৈতিকভাবে অশিক্ষিত।
তাই, আজকের শিশুরাই যদি আগামী দিনের ভবিষ্যত হয়-তবে ওদের কচি, সবুজ মনে নৈতিকতার বীজই সবার আগে বুনে দিন। জিপিএ এ প্লাসের ফ্যাক্টরি তৈরী করার চেয়ে সুন্দর, নীতিবান, আদর্শবান মানুষের এ প্লাস জীবন তৈরীই সবচেয়ে জরুরি নয়কি?


মন্তব্য ১১ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:০১

আমিই মিসির আলী বলেছেন: প্রথম বিষয়টা নিয়ে একটু বলি : সবকিছুর অস্তিত্ব খুজা কি ঠিক। বাস্তবতা ছাড়াই এ ছড়া অনেক সুন্দর। কল্পনা থেকে যদি এমন সুন্দর কিছু হয় তবে তো কল্পনাই ভালো।

লেখা ভালো লাগছে।

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:০৭

খেয়া ঘাট বলেছেন: কল্পনা থেকে যদি এমন সুন্দর কিছু হয় তবে তো কল্পনাই ভালো। +++++++++++++++++++++++++

২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:০৮

বিজন রয় বলেছেন: বিশ্লেষণমুলক লেখা।
++++

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:২০

খেয়া ঘাট বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই।

৩| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৩০

শাহাদাত হোসেন বলেছেন: নেতা আমি শ্রেষ্ঠ
সবার,শিক্ষক সেতো
কোনো ছার,
ভয় করি না'ক, ধারি
না'ক ধার,ক্ষমতা,
ক্যাডারই আসল বল।
শাস্ত্রের কথা
ভিজিয়ে রাখো-এসবে
আজ আর নাই কোনো
ফল।

ঠিক বলেছেন এখন সমাজে গুরুজন দের সম্মান নাই। লেখায় ++

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৮:৩৫

খেয়া ঘাট বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ রইলো।

৪| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:২০

আব্দুল্লাহ তুহিন বলেছেন: লিখাটা ভালো লাগছে, অসাধারণ।
তবে ভ্রাতা,, অনেক কল্পনার ই অর্থ থাকে না।

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:২৬

খেয়া ঘাট বলেছেন: অনেক কল্পনার ই অর্থ থাকে না। ভালো বলেছেন। ধন্যবাদ রইলো

৫| ০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৩০

আহমেদ জী এস বলেছেন: খেয়া ঘাট ,




আসলেই আমাদের ১০০ জন শিক্ষিতের মাঝে ৯৯ জনই নৈতিকভাবে অশিক্ষিত।

আজকের শিশুরাই যদি আগামী দিনের ভবিষ্যত হয়-তবে ওদের কচি, সবুজ মনে নৈতিকতার বীজই সবার আগে বুনে দিতে হবে।

জিপিএ এ প্লাসের ফ্যাক্টরি তৈরী করার চেয়ে সুন্দর, নীতিবান, আদর্শবান মানুষের এ প্লাস জীবন তৈরীই সবচেয়ে জরুরি ।

০৪ ঠা মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৫৯

খেয়া ঘাট বলেছেন: বিনম্র ধন্যবাদ রইলো।

৬| ০৫ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:০২

হাসান মাহবুব বলেছেন: হাট্টিমাটিম টিমকে নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। ননসেন্স রাইমকে আমার সাহিত্যের একটা উল্লেখযোগ্য দিক বলেই মনে হয়। বাকি বিষয়গুলো ভাববার মতো, ভাবি প্রায়ই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.