নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট

ভাষাহীন বাবুই

খেয়া ঘাট › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাধনা

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:২৭

সাউথ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির এক অধ্যাপকের সাথে কথা হচ্ছিলো। বললেন- একটানা আঠারো ঘন্টা পড়ালেখা করতে হয়। পাঠ তৈরি করতে, সিলেবাস সাজাতে , নিত্য নতুন ক্যুইজ বানাতে হয়। এই দেশে প্রতিটি পেশার মানুষকেই এই সাধনা নিত্য করে যেতে হয় বলেই এই দেশটি আজ এতো উন্নত।

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সারা জীবনের পড়ালেখা ছিলো দশবারোটি প্রশ্নোত্তরের মাঝেই সীমাবদ্ধ। কেউ একটা প্রশ্নোত্তর তৈরি করলেই হলো- ঘন্টার মধ্যেই তা নীলক্ষেতে কপি হয়ে ভাইরাল হয়ে যেতো। একবার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলের নোট দেখে বাপ অবাক হয়ে বললেন-পানিপথের যুদ্ধের উপর লেখা এ নোটতো আমার তৈরি করা। এ হাতের লেখা আমার। তুই কই পেলি?
ছেলে বললো- এক সিনিয়র ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়ে নীলক্ষেতে কপি করেছি।
বাপ বললেন- বাহ!! এক নোটই যুগ যুগ ধরে টিকে আছে। ডাইনোসর বিলুপ্ত হয়েছে কিন্তু আমার হাতের লেখা নোট এখনো বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে।
ছেলে বললো সমস্যা কি? পানিপথের যুদ্ধের সালতো আর বদলায়নি। তোমার সময় যা, এখনো তা।


জনৈক ছাত্র মহেশখালি ট্যুর থেকে ফিরে এসে খুব পানভক্ত, এই পানভক্ত আবার সুরা পান না। পান পাতা ভক্ত স্যারকে দুইবিরা পান উপহার দিলে। স্যার বললেন- পরীক্ষার খাতায় কত নাম্বার চাস বল। এই হলো সাধনার নমনুা।
সাধনা বাদ দিয়ে উপঢৌকন আর তৈলবাজিতে ঠিকতে না পেরে মেধাবী ছাত্র আজ আত্মহত্যা করছে।
সাধনার দরকার কি? যেখানে শর্টকার্টই সাফল্য।

আসল রাস্তা বাদ দিয়ে কেউ যায় বিলের পাশ দিয়ে, কেউ পুকুরের পাড় দিয়ে, কেউ জমিনের মাঝখান দিয়ে, কেউ কারো বাড়ির উঠোন দিয়ে , কেউ কোনো চিপার মধ্যে দিয়ে যে যার মতো যাচ্ছে। ফলে, মূল রাস্তা বাদ দিয়ে তৈরি হয় কোণামারা শর্টকাট পথ। এরকম কোনামারা পথ কি অন্য কোনো দেশে আছে? এই শর্টকার্ট পথেই মানুষ সাফল্য, খ্যাতি তালাশ করছে এবং দিনে দিনে এটা মহামারির পর্যায়ে পৌঁছেছে। ক্রমাগত দৈনিক ষোলঘন্টা খেটে একটানা ২০০ দিনের পরিশ্রমের ফল হলো চায়না এ্যাপস টিকটক। আর এটা দিয়ে ২০ সেকেণ্ডেই মানুষ গায়ক,নায়ক হওয়ার দৌড়ে নেমেছে। সাধনাহীন কত সস্তায় মানুষ আনন্দ পাচ্ছে, আনন্দ দিচ্ছে। অতিসহজ লভ্য জিনিসগুলো মানুষকে সস্তার স্রোতে ভাসাচ্ছে। এই শর্টকার্টের স্রোতে লেখক, সাংবাদিক, গায়ক, নায়ক থেকে শুরু করে শুরু হয়েছে এমপি বনার দৌড়। বদির বউ শর্টকার্টে এমপি হতে পারলে সানির বউ মৌসুমি মনে করছে- তাহলে আমার হতে দোষ কি ? টেলিফোনের বিল আর আইনের বিল, কেরাম আর কোরামের পার্থক্য না বুঝেও মানুষ এবার এমপি হবেই। যে হারে নায়ক, নায়িকা,গায়ক, গায়িকা এমপি হওয়ার দৌড়ে নেমেছেন- সংসদভবন এবার এফডিসি'র ভবনে রুপ নেবে নাতো?? অনিউজগুলো গুলো নিউজ হচ্ছে। আহা!! একসময় সাংবাদিকরা ভালো সংবাদ "ছাপানোর" জন্য অর্থ পেতো। এখন ভালো সংবাদ "চাপানোর" জন্য অর্থ পায়। যা চাপার কথা তা ছাপছে, আর যা ছাপার কথা তা চাপছে।

সাধনাহীন বলেই আজ আমাদের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়, কোনো নায়ক, কোনো গায়ক, কোনো চিন্তাবিদ, কোনো একটি বই, নাটক, কোনো ছবিই বিশ্বের সাফল্যের কাতারে নেই। মাঝে মধ্যে য দুএকজন ধ্রুবতারা হয়ে আকাশে উদিত হন। একমাত্র সাধনা করে যাচ্ছেন- এদেশের শ্রমিক,কৃষক এবং জেলে। ফলে বিশ্ব র‌্যাঙকিঙ এ তাদের অবস্থানও ২য়, চতুর্থ আর পণ্চম।

বাংলাদেশের কৃষক, শ্রমিক আর জেলেরা যে সাধনা করে সেই সাধনা টুকু যদি এদেশের শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, আমলা, চিন্তাবিদ, বুদ্ধিজীবী, লেখক,সাহিত্যিক, এমপি, মন্ত্রীরা করতেন তবে এদেশ অনেক আগেই সোনা হয়ে যেতো।

আপনার যদি সেলফোন, ল্যাপটপ, টিভি, কার এসবের যেকোনো একটি থাকে-তবে জানবেন এসব তৈরির অন্যতম সাবস্টেন্স হলো কলটান। আর কলটানের খনি হলো আফ্রিকার কঙ্গো আর উগান্ডা। কিন্তু এমন প্রাচুর্য্যের খনি পেয়েও সাধনাহীন আর দূর্নীতির জন্য দেশগুলো এতো এতো গরীব। আর সাধনার জোরে ২য় বিশ্বযুদ্ধে পুড়ে যাওয়া দেশ জাপান এতো উন্নত।

ভয় হচ্ছে সাধনা বাদ দিয়ে অতি সস্তা সাফল্য আর খ্যাতির দিকেই শুধু আমরা ছুটছি। আর সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য সস্তা জিনিসের পেছনে ঘোরছি, সরি ঘুরছি।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ২:৪৫

রাফা বলেছেন: উদ্ভাবনিতে বাংলাদেশ একেবারে তলানীতেই পড়ে আছে।দুর্ণিতী আর সর্টকাটে বিত্ত নির্মানে ব্যাস্ত সমগ্র জাতি। এ থেকে উত্তরণ ব্যাতিত অগ্রসর হওয়া খুবই কঠিন।

ধন্যবাদ,খে.ঘাট।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.