নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার জন্ম টাঙ্গাইলের হামজানি গ্রামে। শৈশব, কৈশোরে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ছিলাম; বাবার সরকারী চাকুরীর জন্যে। কলেজ ছিল টাঙ্গাইল জেলায়। তারপর পড়াশুনা ঢাবি\'র ফিন্যান্স বিভাগ। গত নয় বছর যাবত প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মজীবন চলছে। www.facebook.com/khokonz

খোরশেদ খোকন

এই শহরে কিছু কিছু শব্দ কলম নয় হ্রদয় থেকে নেমে আসে, একা। এই শহরে বিনয় ঝুলে থাকে মরা গাছের ডালের মতো, একা।

খোরশেদ খোকন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মকথা-১: কলেজ জীবনের স্মৃতি আর একটি বিদায়...

০৫ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৪৬

১৯৯৫ সালে এস.এস.সি. পরীক্ষা শেষ করার পর সাধ ছিল ঢাকায় গিয়ে কলেজে পড়বো। ঢাকায় থাকার মতো নিকট আত্মীয় সে সময় আমার ছিল না। আমার গ্রামের এক বড় ভাই (নাম সালাউদ্দিন) তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় পড়তো আর স্যার এ.এফ. রহমান হলের জি-২ নাম্বার রুমে (তখন টিন শ্যেডে ওই রুমটা ছিল, এখন নেই) থাকতো। আমি সালাউদ্দিন ভাইকে এক ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়ীতে পেয়ে বললাম, “ঢাকার কলেজে পড়তে চাই।“ সে বলল, “আমার ঠিকানায় চলে এসো, একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।“



তারপর একদিন এস.এস.সি. পরীক্ষার রেজাল্ড বের হলো; আমি বাবার কাছ থেকে ২০০০ টাকা নিয়ে কাক-ডাকা এক ভোরে টাঙ্গাইল থেকে ঝটিকা বাসে চেপে ঢাকা রওনা হলাম, একা একা...।



ঢাকার পথে যখন গাজীপুরের চৌরাস্তার ক্রাসিং পাড় হয়ে দেখলাম রাস্তাটা অনেক বড় হয়ে গেলো; তখন হটাত বুকের ভেতর একটা ভয় কাজ করলো, মনে হলো ঢাকায় যাচ্ছি... এতো বড় শহর, একা একা সব গুছাতে পারবো তো...!?



ঢাকায় এসে নামলাম মহাখালী (তখন সেখানে ফ্লাইওভার ছিল না)। বাস থেকে নেমে রাস্তায় এলোমেলো কিছুক্ষণ হাঁটলাম তারপর রাস্তার এপার-ওপার ঘুরলাম। এক পথচারী লোককে জিজ্ঞেস করলাম, ভাই শাহবাগ যাবো কোন বাসে? সে বলল, তিন নম্বর বাসে চলে যাও। আমি তিন নাম্বার বাসে উঠলাম। তিন নাম্বার বাস মহাখালী থেকে উত্তরার দিকে যাচ্ছিল। বাস কিছু দূরে যাবার পর, আমি বাসের হেল্পারকে বললাম, ভাই আমি শাহবাগ নামবো। হেল্পার আমাকে বলল, আপনে রাস্তার ওই পারে গিয়া তিন নাম্বার বাসে উইঠা পরেন। (আমি আসলে রাস্তা ক্রস করে তিন নাম্বার বাসে গুলিস্তান টু উত্তরার দিকে যাচ্ছিলাম, হা হা হা...)



যাই হোক, অবশেষে শাহবাগ পৌছালাম। শাহবাগ থেকে হেটে চারুকলা এবং গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভাগে গেলাম। সেদিন চারুকলায় সালাউদ্দিন ভাইয়ের সাথে দেখা হল। তারপর তার সেই স্যার এ.এফ. রহমান হলের জি-২ নাম্বার রুমে ডাব্লিং করে থাকা হল।



ঢাকার ঢাকা কলেজ, আজমজী ক্যান্ট কলেজ, সিটি কলেজ, কমার্স কলেজ আর তিতুমীর কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলাম। তিতুমীর কলেজের ক্যাম্পাসটা খুব সুন্দর আর টাঙ্গাইল যাবার রাস্তাটা (মহাখালী) কলেজের খুব কাছে ছিল বলেই হয়তো তিতুমীর কলেজেই ভর্তি হলাম।



তারপর শুরু হল, ঢাকায় থাকার জন্য মেস খোঁজার পালা। অনেক খোঁজা-খুঁজি করে গ্রিনরোডে মানে ফার্মগেটের কাছে (ফুড ল্যান্ডের গলিতে) থাকার একটা মেস পেলাম। সেই মেসের সবাই ছিল সিনিয়র, চারজন রুমমেটের মধ্যে আমিই কলেজে পড়তাম বাকিরা সি.এ. পড়তো আর চাকুরি করতো।



যাই হোক, তারা সন্ধ্যার পর তাস-খেলা আর চা-সিগারেট নিয়ে মেতে থাকতো রাত ১২টা পর্যন্ত। আমি ছিলাম তাদের বাজার করার লোক; মানে তাদের চা-সিগারেট আনতে আর ফরমায়েশ পুরন করতে করতে একটা বছর চলে গিয়েছিল। পড়াশুনা যাকে বলে; তার কিছুই করা হয়নি...!?



সালাউদ্দিন ভাইয়ের সাথে দেখা করে বললাম, ভাই আমার পড়াশুনার খুব বাজে অবস্থা, কি করা যায়? সে বলল, তুমিই বলো কি করতে চাও। আমি বললাম, আমি টাঙ্গাইল চলে যেতে চাই। সেখানে এক বছর পড়ে এইচ.এস.সি. পরীক্ষা শেষ করার পর আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য আসতে চাই।



সে বলল, আমার বন্ধুর বাবা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে চাকরী করে, চলো আমরা তার কাছে যাই। আমরা সেখানে গেলাম। তারপর সালাউদ্দিন ভাইয়ের সেই বন্ধুর বাবার সহায়তায় তিতুমির কলেজ থেকে টি.সি. নিয়ে টাঙ্গাইল লায়ন নজরুল কলেজে ভর্তি হলাম দ্বাদশ শ্রেণীতে...(একাদশ শ্রেণীটা ফাও চলে গেলো...!?)



১৯৯৬ থেকে ১৯৯৭ সালের এইচ.এস.সি. পরীক্ষা পর্যন্ত লায়ন নজরুল কলেজে এক বছরের কিছু বেশি সময় ছিলাম। কলেজটা নতুন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল টাঙ্গাইল শহর থেকে প্রায় ৭/৮ কিলোমিটার দূরের একটা গ্রামে। সেখানে আমরা ছিলাম ২য় ব্যাচের শিক্ষার্থী। কলেজ হোস্টেল ছিল টিনের ঘর, সেখানে আমরা ৫০ জনের মতো থাকতাম। কলেজটির আশেপাশে ভাল-খাবারের দোকান পর্যন্ত ছিল না।



যাই হোক, সে কলেজে আমাদের অর্থনীতি পড়াতেন সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করা রাশিদা ম্যাডাম। ম্যাডাম প্রতিদিন টাঙ্গাইল থেকে কলেজে আসতেন। এক ঈদের ছটিতে কলেজ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তাই ম্যাডাম আমাকে বললেন, “ভাল মতো পড়াশুনা করবে।“ তিনি তারপর বললেন, “তুমি আমাকে ঈদের দাওয়াত দিলে না!?”



আমি বলেছিলাম, “ম্যাডাম, আমার বাসাতো শেরপুর, আমি চাইলেও আপনি অতো দূরে যাবেন না, তাই দাওয়াত দেই নাই।“



তারপর দুষ্টামি করে বলেছিলাম, “আমি কথা দিচ্ছি; যেদিন আমি অ্যাফেয়ার করে বিয়ে করবো, সেদিন আপনি হবেন আমার বিয়ের ৫ জন অতিথির মধ্যে অন্যতম একজন।“ ... সেদিন কথাগুলো শুনে, ম্যাডাম খুব হেসেছিল...!?



তারপর, একদিন ম্যাডাম ভাল চাকরী আর নতুন বিয়ের কারনে আমাদের কলেজের চাকরীটা ছেড়ে দেন। বিদায়ের সময় আমার হোস্টেলের রুমে এসে, আমার সাথে দেখা করে বিদায় নিয়ে যান।



আমার মনে আছে, তিনি বলেছিলেন, “সেদিন তুমি আমাকে তোমার বিয়ের যে দাওয়াত দিয়েছিলে, সেই দাওয়াত খুব আন্তরিকতাপূর্ণ ছিল, আমি তোমার চোখ দেখে বুঝেছিলাম। আমি তোমার বিয়েতে অবশ্যই উপস্থিত থাকবো।“



বিদায়ের দিন রাশিদা ম্যাডাম একটা উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন, “জীবনে কখনও উদ্দেশ্য খারাপ করবে না, দেখবে জীবনটা সুন্দর আর সার্থক হয়ে যাবে।“



এই ক্ষুদ্র জীবনে, কতো মানুষের সাথে দেখা হলো..., কতো মানুষের সাথে কথা হলো..., কিন্তু গত ১৮ বছরে একবারও সেই ম্যাডামের সাথে দেখা হলো না...!? যদিও, আমি তার সেই উপদেশ এখনো মনে রেখেছি...।



(পুনশ্চঃ ১) সালাউদ্দিন ভাই এখন স্কয়ার ফার্মাতে চাকরী করেন। ২) যদিও আমার বিয়েটা অ্যাফেয়ার ম্যারেজ ছিল কিন্তু রাশিদা ম্যাডাম উপস্থিত ছিলেন না)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.